কৃষি খাতে ভর্তুকি খাদ্য নিরাপত্তা সহায়ক
২৯ জুন ২০২৪ ১৮:৪৩
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রানশক্তি ও দেশজ আভ্যনমশরিন উৎপাদনে ( জিডিপির ) কৃষি খাতের অবদান ১২.২ শতাংশ। বিগত চার বছরের হিসাবে দেখা যায় ক্রমাগত ভাবে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি কমে বর্তমানে তা দাড়িয়েছে ২.৬ শতাংশ এবং এর কারণ হিসাবে উল্লেখখ করা হয়েছে কৃষরা তার বাজারজাতকৃত কৃষি পন্যের ন্যায্য মূল্য থেকে ক্রমাগত ভাবে বঞ্চিত হয়। এই বাস্তবতার নিরিখে প্রস্তাবিত আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন খাত মিলে কৃষি মন্ত্রনায়ের জন্য ৪৭ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যাা মোট বরাদ্দের ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এর মধ্যে শস্য কৃষি খাতের জন্য রাখা হয়েছে ২৭ হাজার ২১৪ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ, বাকি ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, বন ও পরিবেশ, ভূমি ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় গুলোর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে যা অপ্রতুল। চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় প্রস্তবিত নয়া বাজেটে বৃহত্তর কৃষি খাতের বরাদ্দ ৮ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা অর্থ্যাৎ ১৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমে গেছে। শতকরা হিসাবে দেখা যায় যে, অনুন্নয়ন বাজেটের ২.৬ শতাংশ এবং উন্নয়ন বাজেটের ৫.৭ শতাংশ কৃষিতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিগত ৪ বছরের মধ্যে আনুপাতিক হারে বরাদ্দ হিসাবে কৃষি মন্ত্রনায়ের বরাদ্দ কম যা মোট বাজেটর ৩.৪০ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেটের আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো কৃষি ভর্তূকি যা আলোচনার মূখ্য বিষয় । আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নয়া বাজেটে কৃষি ভর্তুকির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ২৬১ কোটি টাকা, যা গত বছরের মূল বাজেট থেকে ২৭২ কোটি টাকা কম। চলতি বাজেটে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ফসল খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। এর সঙ্গে ৮ হাজার ১১১ কোটি টাকা যোগ করে সংশোধিত বাজেটে তা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেট থেকে তা ৮ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা কম। আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম ও কৃষি যন্ত্রের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ বাড়বে। সেক্ষেত্রে ভর্তুকি হ্রাস সঠিক নয়। তাতে বাধাগ্রস্থ হবে কৃষির উৎপাদন। খাদ্যনিরাপত্তা ব্যাহত হবে। বন, জার্মানি থেকে প্রকাশিত গেøাবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস ২০২৪ বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথম সারির খাদ্যনিরাপত্তাহীন ১০টি দেশের মধ্যে অষ্টম স্থানে রেখেছে। বিবিএসের তথ্যানুসারে দেশের প্রায় ২২ শতাংশ মানুষের খাদ্যনিরাপত্তার অভাব রয়েছে।
এদিকে কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার খাত বিবেচনা করে কাজু বাদামে আমদানি শুল্ক ১৫ থেকে হ্রাস করে ৫ শতাংশ ও এসেপটিক প্যাক আমদানিতে আমদানি শুল্ক ২৫ থেকে হ্রাস করে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশে উৎপাদিত কাজু বাদামের বাজার বিকাশের উদ্দেশ্যে কাজু বাদাম আমদানিতে ১০ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে গবাদি পশু এবং হাঁস-মুরগির টেকসই জাত উন্নয়ন, সুষম খাদ্য ব্যবস্থাপনা এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উৎপাদন দ্বিগুণ করার কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন, খামারি ও জেলেদের সহায়তা এবং বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত বাজেটে ৪ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।তা ছাড়াও যেমন; কৃষি উ পকরন আমদানিতে শুল্ক হার শুন্য রাখা, চাল আমদানির উ পর শুল্ক হার বহাল রাখা; গ্রীনহাউজ প্রযুক্তীতে ব্যবহ্রত কৃষি উপকরনের উপর শুল্ক হার কমানো, কৃষিজাত দ্রব্য রফতানির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ নগদ প্রনোদনা অব্যাহত রাখা,সেচযন্থে ব্যবহ্রত বিদ্যুৎ বিলের উপর ২০ শতাংশ হারে ছাড় অব্যাহত রাখা, কৃষি গষেনা মাধ্যমে উন্নত ফসলের জাত ও বীজ উদ্ভাাব,নারীদের জন্য পৃথক সম্প্রসারন কার্যক্রম পরিচালনা, মাঠ পর্যায়ে কৃষি ও যোগাযোগ কেন্র স্থাপন। বর্তমান নতুন সরকারের এটি প্রথম বাজেট এবং এতে যেসকল প্রতিস্রুতি দেওয়া হয়েছে তার সফল বাস্তবায়নে সফলতা কাম্য। এখন বিশেষ গুরুত্বপূর্ন দিক হলো সরকার কর্তৃক প্রদ্ত্ত সেবা সাহায্য, সহযোগীতা ও ভর্র্তূকি সরাসরি উদ্দিস্ট কৃষক ও প্রান্তিক চাষীদের কাছে পৌছানোর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এরি মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে যা উৎপাদন বান্দব ও পরিবেশ উপযোগী বলে বিবেচিত। এখানে উল্লেখ্য যে, কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সেবা সহায়াতা প্রদান ( প্রত্যক্ষ ও প্ররোক্ষ) প্রতিটি গনতান্ত্রীক সরকারের আমালেই অত্যন্ত গুর্ত্বুুসহকারে স্থান পায় এবং এটি একটি অগ্রাধীকার খাত হিবাবে এখনো বিবেচিত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বাস্তবায়ণ অগ্রগতি ও যাদের জন্য এ সহায়তা তাদের কাছে কতটুকু পৌছে তা নিয়ে। বিষয়টি একধারে যেমন প্রশাসনিক অপরদিকে রাজনৈতিক অর্থনীতির অংশ। ইতহাসে দেখা যায় কৃষি ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত সার্বিক কাজটি সরকার কর্তৃক পরিচালিত হতো কিন্তু সময়েরর আবর্তে ৮০এর দশক থেকে বাজার অর্থনীতির আগমনের ফলে বেসরকারী উদ্যোগ এ প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়। এ দুটি সময়ের কার্য পরিচালনার অভিঙ্গতা থেকে দেখা যায় যে, বেসরকারী করণ বাজারে অসম প্রতিযোগিাতার জন্ম দেয় এবং এ অবস্থা থেকে কৃষি সেবা ও উপকরন ক্রয় করে ক্ষুদ্য্র প্রান্তিক চাষীদের পক্ষে চাষাবাদা চালিয়ে যাওয়া কাঠিন হয়ে দাড়ায়।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় চাহিদার তুলনায় উপকরন সরবরাহ কমা থাকায় এবং সার্বিক বিপনন ব্যবস্থার উপর সরকারী নিয়ন্ত্রন কমে যাওয়ায় এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী এর সুযোগ গ্রহন করে লাভবান হতে চায়। এতদ সংক্রান্ত গবেষনায় দেখা যায় যে, সরকার কর্তৃক প্রদ্ত্ত কৃষি সেবা গরীব কৃষকের কাছে খুব কমি পৌছে এবং এর প্রভাব দেশের সার্বিক উৎপাদন অর্থনীতির উপর প্রতিফলিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাকের সা¤প্রতিক এক প্রতিবেদন দেখা যায় যে জিডিপিতে কৃষি খাত ( শষ্য) এর অবদান কমে দাড়ায় ১০.৭ শতাংশ এবং কৃষিতে (শষ্য) প্রবৃদ্ধির হার ০.৯ শতাংশ দাড়ায় তাছাড়াও জৈব প্রযুক্তির ঘাটতির ফলে মাটির উৎপাদিকা শক্তি অনেকাংশে কমে যায় এবং এ সমস্যগুলো যেমন এক দিনে সৃষ্টি হয়নি তেমনি এর সমাধানও একদিনে সম্ভব নয়। তবে বর্তমান সরকার তাদের সময়কালে মহান জাতীয় সংসদে যে কয়টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন তার প্রত্যেকটিতে তুলনামূলক বিচারে কৃষিকে প্রাধাণ্য দেওয়া হয়েছে । সরকারের এ মহাতি উদ্দোগের বাস্তব প্রয়োগ এবং এর মাধ্যমে সার্বিক কর্মসূচীর সুফল আনয়নে আরও বাস্তব বিত্তিক প্রদক্ষেপ গ্রহন করার প্রয়োজন রয়েছে । সাথে সাথে সরকারের কৃষি প্রসাশনকে কৃষকের সমস্যা চিহ্নিত করণ এবং তাদের হাতে কৃষি সেবা পৌছানোর নিরপেক্ষ ব্যবস্থা গ্রহন কারতে হবে। এ ব্যাপারে কার্যকরি প্রদক্ষেপ গুলোর মধ্যে রয়েছে প্রথমত: কৃষকের জন্য ১০ টাকা মূল্যের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সাহায্য সহয়োগিতা গ্রহন;: দরিদ্র কৃষক কর্তৃক কৃষি পন্যের ন্যয্য মূল্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে ইউসিসিএ কে কেন্দ্র করে প্রতিটি গ্রাম সমবায়ের আওতায় কৃষি পন্যেরœর সমাষ্টিগত বিপনন ব্যবস্থা ও ফরওয়ার্ড লিংকেজ গড়ে তুলা যায় ; তৃতীয়ত: চাষাবাদ,পশু পালন, মৎস চাষ ইত্যাদি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্ভাবিত নতুন প্রজাতি সম্পর্কে ধারনা এবং গ্রহনের লক্ষ্যে মনমানসিকতা পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন জাতী গঠন মূলক বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত কৃষি ভিত্তিক প্রশিক্ষন সূমহকে সমন্বিত করে যতদুর সম্ভব কৃষকের কাছকাছি নিয়ে যাওয়া যায় ; চতুর্থত: হর্টি কালচার , পশু পালন, হাস মুরগি পালন,বনায়ন, মৌমছির চাছ ইত্যদির ক্ষেত্রে স্বীকৃত প্রশিক্ষন প্রতিষ্ঠান থেকে সফল ভাবে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত প্রত্যেক কৃষি কর্মীকে সেবা প্রদানের স্বার্থে কৃষি ভর্তুকির অংশথেকে প্রয়োজনীয় ঔষধপ্রত্র সহ একটি করে কিড বক্র সরবরাহ করা যেতে পারে ; পঞ্চমত: কৃষি উপকরনের সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করনের ক্ষেত্রে সরকারি সেবাদান প্রতিষ্ঠান সুমহের সাথে বেসরকারি প্রতিষ্ঠ্ান সুমহের একটি সহযোগী সুস্থু প্রতিযোতীতার আবহ গড়ে তুলা প্রয়েজন এবং বেসরকারী খাততে প্রয়োজনীয় উৎসাহ দেওয়ার জন্য চাষী-বান্দব একটি প্রসাশনিক উদ্দোগ কৃষি ভর্তৃকির অর্থে গ্রহন করা যায়; সর্বশেষে : বলা যায় সরকার ঘোষিত কৃষি সেবা কর্মসূচীকে বাস্তবায়ন করার জন্য সরকার, এনজিও , সিভিও, এসএসও, সমাজ কর্মী , রাজনীতিবিদসহ সকলকে একযোগে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে । তবেই বাজেটে প্রস্তাবিত ভর্তুকি এর জন্য প্রনীত লক্ষ্য অর্জন অনেকাংশে সহজতর হবে কিন্তু কৃষি সংক্লৃষ্ঠরা বলছেন কৃষি বাজেটে অনেক কিছুর উল্লেখ নেই যেমন : সেচ কাজে ডিজেল ব্যবহারের ওপর আলাদাভাবে কোন বরাদ্দ রাকা হয়নি, কৃষি গবেষনা খাতে তেমন কোন বরাদ্ধ পরিলক্ষিত হয নি, বাজেটে আমদানি নির্ভর নীতিকে প্রাধান্য দেয়ায কৃষি খাতের ভর্তুকির টাকা সার আমদনিতে চলে যাবে বিধায় গবেষনা বাজেট ছাড়া কিভাবে গবেষনা হবে ? দেশের ৪৫ শতাংশ কৃসিজীবি মানুসের জন্য বরাদ্দ মাত্র মোট বাজেটের ৩.৪ শতাংশ যা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অপ্রতুল। অর্থনীতিবিদরা মনে করছে, বাংলাদেশের মত অর্থনীতিতে টার্গেট গ্রুপ ঠিক করে ভর্তুকি দিতে হবে সরকারকে যার জন্য কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদিত পন্যের ন্যাহ্য দাম কৃষককে নিশ্চিত করতে পারলে এ খাতে ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজন হবে না।দেশে বর্তমানে ভর্তুকি প্রদান করা হয় পন্যের মাধ্যমে যা অনাহাসে নগদে প্রদান করার ব্যবস্থা করা যায় ১০ টাকা মূল্যের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ।আবার কৃষি শক্তি হিসাবে যন্ত্রের ব্যবহার বর্তমানে গ্রামে খুবি জনপ্রিয় কিন্তু অর্থৃায়নের স্বল্পতার কারনে তা ক্রয় করা সম্ভব হয়ে উঠে না বিধায় ভর্তুকি সুবিধা কৃষকের জন্য সহায়ক হতে পারে।বর্তমামে ওষদের মূল্য বেশী হওয়ায় কীট ও বালাহ নাশকে ভর্তুকি দেয়া যেতে পারে। আবার দেশীয় বীজের প্রতি র্কৃষকের অনেক আগ্রহ থাকায় এক্ষেএে লোন সহায়তা বাড়ানোর প্রস্কাব করছি ।বাংলাদেশ একটি দুযৌগ প্রবন দেশ এবং যে কোন দুর্যোগের অব্যবহিত পরে কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি শুরুকরার জন্য কৃষি দুযৌগ মোকাবেলা তহবিল গঠন করা হয়েছে র্কষি নীতিতে যার বাজেট বরাদ্ধ এবার থেকে শুরু হওয়ার প্রস্তাব করছি।ক্ষতিগ্রস্থ হাওর অন্চলের জন্য আলাদা বাজেট হওয়া সময়ের দাবি।
লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি), সাবেক পরিচালক, বার্ড (কুমিল্লা), সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি,ঢাকা ও এলকপ মনোনীত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষন টিমের সদস্য
সারাবাংলা/এজেডএস