Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষা বাজেট: মানসম্মত শিক্ষায় কতটুকু অবদান রাখবে?

ড. মিহির কুমার রায়
৩০ জুন ২০২৪ ১৭:৪৬

গত ৬ জুন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এবারের বাজেটের প্রতিপাদ্য ‘সুখী সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’ যেখানে উল্লেখ আছে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আর চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার হলো ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। ফলে আগামী বাজেটের আকার চলতি বাজেট থেকে ৩৫ হাজার ১১৫ কোটি টাকা বা চার দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট পাঁচ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বাজেটে মোট যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৪ দশমিক ২ শতাংশ।এবার জিডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। টাকার অংকে যা ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। বাস্তবতা বিবেচনা করে আগামী অর্থবছরে বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রীর বজেট বক্তব্যে শিক্ষা খাত:

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর শিক্ষা খাতের মোট তিনটি ইতিবাচক দিক উল্লেখ করেছেন — ১. ২০০৬ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ৪৫ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে ৭৬.৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে; প্রাথমিক শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল ৫৪ শতাংশ, যা বর্তমানে ৯৮.২৫ শতাংশ। কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ২০০৬ সালে ছিল ০.৮ শতাংশ, ২০২৩ সালে তা ২২ গুণ বেড়ে ১৭.৮৮ শতাংশ হয়েছে। ‘মানব উন্নয়ন সূচকে ভারত এবং পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ ১৯২টি দেশের মধ্যে ১২৯তম স্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তির হার ৭১.৮২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শিক্ষা সম্প্রসারণে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও উন্নয়ন, ছাত্র ও শিক্ষকদের বৃত্তি-উপবৃত্তিসহ আর্থিক সহায়তা, মেধার বিকাশে নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। শিক্ষার সম্প্রসারণে সহায়ক নীতিমালা ও পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিজ্ঞানভিত্তিক যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী নতুন শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ সৃজনের লক্ষ্যে দেশের ১৬০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করে যাচ্ছে;২. ‘দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষাদান নিশ্চিত করতে অফলাইন এবং অনলাইন শিক্ষার সমন্বয়ে বে¬ন্ডেড পদ্ধতি চলমান রয়েছে। জাতীয় টাস্কফোর্সের আওতায় কারিগরি শিক্ষা উপকমিটি গঠিত হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষাবিষয়ক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ সুযোগগুলো বিবেচনা করে প্রচলিত কারিকুলাম সংস্কারপূর্বক ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে সব পর্যায়ে অন্তত একটি ভোকেশনাল বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত করার কার্যক্রম চালু করা হয়েছে;৩.শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বাড়ানোর জন্য ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫৭৯ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে এবং সহকারী শিক্ষকের ২৬ হাজার ৩৬৬টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। শিক্ষার প্রধান উপকরণ বই যেন শিক্ষার্থীরা বছরের শুরুতেই পায়, সেই লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর প্রাথমিক স্থরের শিশুদের ১ জানুয়ারি ‘বই উৎসব’-এর মাধ্যমে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার স্তরে শিশুদের ঝরে পড়া রোধ করতে শতভাগ শিক্ষার্থীকে ইএফটির মাধ্যমে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। স্কুলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য হুইল চেয়ার, ক্রাচ, শ্রবণযন্ত্র ইত্যাদি ক্রয় ও বিতরণ করা হচ্ছে। তাদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের সুবিধার্থে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় র্যাম্প করা নির্মাণ করা হচ্ছে।

শিক্ষা বাজেটের সংখ্যা তাত্বিক দিক:

শিক্ষার গোড়ার বিষয়গুলো চিন্তাকরলে কারিগরি শিক্ষাকে প্রকৃতঅর্থে অগ্রাধিকার দিলে জাতীয় অর্থনীতি তার সুফল পেত, কিন্তু এসব কোনো বিষয় কিন্তু বাজেটে আসেনি। বাজেট বিশ্লেষনে দেখা যায় এই অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা খাতে এই দুই মন্ত্রণালয়ের জন্য আসন্ন অর্থবছরে মোট ৯৪ হাজার ৭১০ কোটি টাকা যা প্রস্তাব করা হয়েছে যা গত অর্থবছরে ছি ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ।প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য এবার ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে; যা বিগত অর্থবছরে ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা। মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্ররাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১১ হাজার ৭৮৩ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে যা বিগত বছরে ছিল ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায় যে জিডিপির অনুপাতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত জনগনকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার শামিল। ইউনেস্কোর মতে কোন দেশের জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা দরকার। সেখানে এ বছর শিক্ষা খাতে জিডিপির মাত্র ১. ৭৭ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত বাজেটে এটি ছিল ১. ৮৩ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে এটি ছিল ২.০৮ শতাংশ। নতুন অর্থবছরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার জন্য মোট বাজেটের ১৪ . ০০ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। বিগত অর্থবছরে তা ছিল ১২ . ০১ শতাংশ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচচশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ২০২৪-২৫ সালের উন্নয়ন বাজেট মোট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) শিক্ষা খাত ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা ( ১১.৮৮ শতাংশ )। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ অথবা এমপিওভুক্তির কোন আশা দেখা যাচ্ছে না। মাধ্যমিকের বিশাল শিক্ষা ব্যবস্থাটি এ ধরনের একটি অস্থায়ী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, মান তলানিতে অথচ রাষ্ট্রীয় টাকায় সরকার এত এত বিশ^বিদ্যালয় করছে। বেসরকারি ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হওয়ায় শিক্ষার মানের অর্ধগতি রোধ করার কথা চিšাাÍ না করে পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় বানানোর পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করা কেমন সিদ্ধান্ত তা বুঝা যায় না।। এখানে মানসম্মত শীক্ষার্থী আসবে কোথা থেকে? শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু বার্ষিক বিনিয়োগের পরিমাণ বাংলাদেশে ৫ ডলার, শ্রীলঙ্কায় ১০ ডলার, ভারতে ১৪ ডলার, মালয়েশিয়ায় ১৫০ ডলার ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৬০ ডলার; শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত একটি মানসম্মত শিক্ষার কথা বিবেচনা করে একটি নিদৃষ্ঠ সীমার মধ্যে রাখা প্রয়োজন, যা প্রাথমিক স্তরের জন্য ১ :৩০, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্থরের জন্য ১ :৩৫ এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ১ :২০-এর বেশি নয় অতছ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতিফলন এ বাজেটে ঘটেনি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সব ক্ষেত্রেই মজুরি ও বেতন এবং প্রশাসনিক ব্যয় খাতে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে অথচ প্রাথমিক শিক্ষায় উপবৃত্তি কার্যক্রমের আওতায় বরাদ্দ মাথাপিছু অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি না করায় মূল্যস্ম্ফীতি বিবেচনায় তার ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে।

শিক্ষা বাজেট বিশ্লেষন:

শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানোর মধ্য দিয়ে সরকার কি শিক্ষা সংকোচনের পথে হাঁটছে যা ভেবে দেখার বিষয়। বাজেটে বলা হয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এটি আরো বাড়িয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ লাখে উন্নীত করা হবে। ১০৯টি হাইটেক পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে ২০৩০ সালের মধ্যে ১ লাখ তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। হাইটেক ২০৪১ সালের মধ্যে ২ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। বর্তমানে ১৭৬ দেশে বাংলাদেশের ১ কোটি ৪৯ লাখ কর্মী কাজ করেন। নতুন বাজার অনুসন্ধান করা হচ্ছে। নতুন বাজার খোঁজা মানে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে আর সেজন্য দরকার শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো। স্মার্ট নাগরিক তৈরির পূর্বশর্তই হচ্ছে শিক্ষা অথচ জনগোষ্ঠীর একটা অংশকে শিক্ষার অধিকার বঞ্চিত করা হচ্ছে সুকৌশলে। অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে শিক্ষা উপকরণের দামও যেভাবে বেড়েছে সেটি উদ্যেগ জনক। যত ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা তা পাবেন মুষ্টিমেয় কিছু সরকারি শিক্ষক, আর বেসরকারি শিক্ষকদের কিছুই বাড়ছে না যদিও রাষ্ট্রের শিক্ষার বিশাল অংশের দায়িত্ব তারাই পালন করছেন। শিক্ষার এই বৈষম্য আর কতকাল থাকবে? কোনো বাজেটই কি এর প্রকৃত সমাধান পাওয়া যায়?

স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইজ করা হচ্ছে। ৫০ হাজার স্কুলে ৫৯ হাজার ল্যাপটপ, ইন্টারনেট ও সাউন্ড সিস্টেম সরবরাহ করা হয়েছে। প্রাথমিকের কোমলমতি শিশুদের পড়াশোনার পরিবেশ আনন্দঘন করতে প্রাক-প্রাথমিক নতুনভাবে সাজানো হবে। এর আওতায় একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এটি জুলাই ২০২৩-জুন ২০২৬ পর্যন্ত চলবে। এর ফলে ১০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাক-প্রাথমিক সাজানো হবে। মেয়ে শিক্ষার্থী ও নারী শিক্ষকের জন্য প্রতিটি স্কুলে আলাদা টয়লেট স্থাপন করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবার মডেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, বিজ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার বিষয়ে বাজেটে জোর দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে পাঠ্য বইয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, জলবায়ু পরিবর্তন সহ বেশকিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ২০১০ সালে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তির হার ছিল মাত্র ১ শতাংশ। বর্তমানে যা প্রায় ১৮ শতাংশ। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এই হার ৩০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের চালিকাশক্তি হিসেবে তরুণ-তরুণী ও দেশের যুবসমাজ। এ বছর এপ্রিল মাসে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে থোক বরাদ্দ না দিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দেয়। তবে শিক্ষায় কাঙ্কিত উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘ, ইউনেস্কোর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রস্তাব-সুপারিশ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৪-এর সঙ্গে সংগতি রেখে শিক্ষায় ব্যয় বরাদ্দ ও শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ক্ষেত্রে প্রচলিত বেতন কাঠামো পর্যালোচনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন-বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, ভূমিধস-এসব কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুতিমূলক কিছু সংযোজন এ বাজেটেই রাখা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রিমালে খুলনা, বরিশাল বিভাগের ৪৬ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে পুনর্বাসন/পুনর্র্নিমাণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায়, ক্ষয়ক্ষতি প্রতিকারে সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। বছরের পর বছর প্রায় বিনা বেতনে পাঠদানকারী ও প্রাপ্য পদোন্নতিবঞ্চিত বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। একইসঙ্গে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গ্রাম-শহর, ছেলেমেয়ে, তৃতীয় লিঙ্গ শিক্ষার্থী, সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষা-সব ক্ষেত্রে বৈষম্য কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এটি নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে হবে যে, ৬ জুন সংসদে পেশকৃত বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ নিয়ে অবস্থান-উপলব্ধিতে ভিন্নতা থাকলেও শিক্ষার অগ্রযাত্রার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে শতভাগ ঐকমত্য রয়েছে। এখন প্রয়োজন এ আপ্তবাক্য স্মরণে রেখে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বাজেটে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে বাংলাদেশে শিক্ষার অর্জনগুলো বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে এজন্য যে, বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ১৮৯টি সদস্য দেশের মধ্যে যে ১০টি দেশ অর্থনীতির আকারের তুলনায় শিক্ষা খাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়, বাংলাদেশ তার একটি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা খাতের বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, শিক্ষা খাতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটানের বিনিয়োগ ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, আফগানিস্তানের ৪ দশমিক ১ এবং ভারত ও পাকি¯স্তন বরাদ্দ দেয় ২ দশমিক ৯ শতাংশ। মিয়ানমার জিডিপির ২.১ শতাংশ, উগান্ডা জিডিপির ২.২ শতাংশ, কম্বোডিয়া ২.৫ শতাংশ, সেনেগাল ৫.২ শতাংশ, ইথিওপিয়াও জিডিপির ৫.২ শতাংশ বরাদ্দ দিয়েছে শিক্ষা খাতে। প্রশ্ন উঠতে পারে, শিক্ষায় জিডিপির ৫/৬ শতাংশ অথবা বাজেটে মোট ব্যয়ের ১৫/২০ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব কেন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দিয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০০ সালে সবার জন্য শিক্ষা ও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার কর্মসূচি চালুর সময় থেকে শিক্ষা জাতীয় পরিসরে সীমিত না থেকে আন্তর্জাতিক উদ্যোগে সম্প্রসারিত ও অপরিহার্য অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। ২০১৫-পরবর্তীকালে ২০৩০ সাল পর্যন্ত নির্ধারিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, বিশেষ করে এর ৪ নম্বর ধারায় বর্ণিত ‘সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষা লাভের সুযোগ সৃষ্টি’ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা, আমাদের শিক্ষা কাঠামো ও ব্যবস্থার মধ্যে বিরাজমান বৈসাদৃশ্য ও বৈষম্যগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার বা নিস্পৃহ থাকার চিন্তা বাস্তবতাবর্জিত।

লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি), সাবেক পরিচালক, বার্ড (কুমিল্লা), সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ও এলকপ মনোনীত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষন টিমের সদস্য

সারাবাংলা/এসবিডিই

ড. মিহির কুমার রায় মুক্তমত শিক্ষা বাজেট: মানসম্মত শিক্ষায় কতটুকু অবদান রাখবে?


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর