Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর ও বঙ্গবন্ধু পররাষ্ট্র নীতির সুফল

শিতাংশু ভৌমিক অংকুর
২ জুলাই ২০২৪ ১৬:০৮

বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার চীন। পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল (ঢাকা-মাওয়া-যশোর), কর্ণফুলী টানেল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, দাসেরকান্দি পয়োবর্জ্য শোধনকেন্দ্র কোথায় নেই তাদের বিনিয়োগ। শুধু বাংলাদেশ নয় ইন্দো-প্যাসেফিক অঞ্চলের ভারত ছাড়া প্রায় সকল দেশের বিনিয়োগ করছেন চীন। এখানে একটি বড় রাজনীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমেরিকা তার ইন্দো-প্যাসেফিক নীতিতে যেভাবে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে, তার বিপরীতে একসময়ের সমাজতান্ত্রিক গণচীন এখন ঋণ দিয়ে সেই নিয়ন্ত্রণকে নিজেদের আয়ত্ত্বে আনার চেষ্টা করছে। আমেরিকা সাধারণ মানুষের কাছে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তদ্রুপ গণচীন এই দেশের মানুষের কাছে উন্নয়নের বন্ধু হিসাবে বেশ সমদর্শিত হয়েছে। তবে চীন আমেরিকার এই দ্বন্দ্বের মাঝখানে অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ রাষ্ট্র ভারত। আমেরিকা ও চীন দুই দেশের মাঝখানে এশিয়ার ছোট ছোট দেশে উন্নয়ন সহযোগী বন্ধু রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিতি ও প্রভাব বিস্তার করছে ভারত। তারাও ভারত মহাসাগরে তাদের নিজেদের শক্ত অবস্থান জারি রেখেছে। কৌশলগত কারণে এশিয়ায় চীনের অর্থনৈতিক আগ্রাসন ঠেকাতে আমেরিকা ও ভারত যৌথ কৌশল অবলম্বন করছে।দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ।দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ জারি রাখতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় এই দেশ কে কেন্দ্র করে এশিয়ার জায়েন্ট অর্থনৈতিক দেশখ্যাত ভারত ও চীনের রাষ্ট্রীয় এবং বেসরকারি পর্যায়ের বিনিয়োগের প্রতিযোগিতা চলে নিয়মিত। তারই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক কালে শেখ হাসিনা সরকারের বেশ কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্ত দেশের মানুষের নজর কেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রেখে। বাংলাদেশ এখন তার সংবিধান ও বঙ্গবন্ধুর নীতিকে ধারণ করে উদ্যোগ নিয়েছে কারো সাথে বৈরিতা নয়, সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে দেশের অভ্যন্তরীণে উন্নয়ন সমুন্নত রাখার। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি ও রাজনৈতিক অবস্থা বেশ নাজুক হওয়ায় এই মুহুর্তে দেশের উন্নয়ন ও সার্বিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য জরুরি বৈদেশিক বিনিয়োগ। গত জুনের চতুর্থ সপ্তাহে ভারত সফর করে এসেছেন। সেখানে বাংলাদেশ ভারত দুই দেশের যৌথ উন্নয়নের ব্যাপারে ভারত -বাংলাদেশ একমত হয়েছে। তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি কার্যকর, বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, দুই দেশের রেল যোগাযোগে ভারত বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের সিন্ধান্ত দুই দেশের রেল যোগাযোগের এক নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও ভারতের সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের নিজেস্ব স্যাটেলাইট নির্মাণ ও উৎক্ষেপণের বিষয়ে এক সমঝোতা চুক্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। যদি এসকল সমঝোতা চুক্তি মোদি ও শেখ হাসিনা সরকার কার্যকর করতে পারে তবে দুই দেশই বেশ লাভবান হবে। তবে ভারতে সাথে বাংলাদেশের এসকল চুক্তি নিয়ে বেশ আগ্রহ ছিল চীনের। কিন্তু চীনা সরকারের সময় ক্ষেপনের কারণে বা দুই দেশের মাঝে সমোঝোতা চুক্তি এখনও সম্ভব না হওয়ার কারণে ভারত এই বিষয় গুলোতে সুযোগ নিয়ে বেশ দূরদর্শী ভূমিকা দেখিয়েছে । দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের সাথে অংশিদারিত্ব বাড়িয়ে ভারত আজ কৌশলগত রাজনৈতিক অবস্থান নিলো।তবে এতে করে চীনের মাথা ব্যাথা বেড়েছে। তাই তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় এক দশক পর জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে চীনে রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন। আগামী ৯ জুলাই বেইজিংয়ে প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হতে যাচ্ছে।এই বৈঠকে বাংলাদেশের বাজেট–ঘাটতি পূরণে আর্থিক সহায়তা এবং নতুন প্রকল্পে অর্থায়নের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।আসন্ন সফরে সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক সহযোগিতার নানা বিষয় প্রাধান্য পাবে। এর পাশাপাশি সমকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় ভূরাজনীতির বিষয়টি দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের আলোচনায় চলে আসতে পারে।

কূটনৈতিক সূত্রে আরও জানা গেছে, এবারের সফরের বিশেষ দিকটি হবে বাংলাদেশের জন্য চীনের ৭০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৪০ কোটি ইউয়ানের বেশি ঋণ। এর মধ্যে বাণিজ্য–সহায়তার আওতায় ৫০০ কোটি ডলার ও বাজেট সহায়তার আওতায় ২০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ স্থানীয় মুদ্রায় বাংলাদেশকে ঋণ দেবে চীন। এর পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে যেভাবে টাকা–রুপিতে লেনদেনের সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেই ধারাবাহিকতায় টাকা–ইউয়ানে লেনদেনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি চলছে বলে একাধিক গুলো বিশ্বস্ত সূত্র মনে করছে।

এবারের সফরের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল অগ্রাধিকার থাকতে পারে বাণিজ্য ও অর্থনীতি। দুই দেশের অসম বাণিজ্যে ভারসাম্য আনা এবং যেসব সহায়তা দরকার, তা নিয়ে আলোচনা হবে। চীনের কাছ থেকে বাণিজ্য–সহায়তা ও বাজেট সহায়তার আওতায় ঋণ নিয়ে আলোচনা চলছে। সফরে এ বিষয় চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়াও ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে। এগুলোর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির তথ্য সরবরাহ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার কথা। সমঝোতা অনুযায়ী, বাংলাদেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণে বর্ষা মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বাভাস জানাবে চীন। কারণ ব্রহ্মপুত্র নদের অর্ধেক অংশ রয়েছে চীনে। বাকি অর্ধেক বাংলাদেশ ও ভারতে। ফলে উজানের পানিতে দেশে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্য চীনের পূর্বাভাস পেয়ে বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি নেয়া যাবে। এছাড়া চীনের কাছ থেকে বাণিজ্য সহায়তা ও বাজেট সহায়তার আওতায় ঋণ, বিনিয়োগ সুরক্ষা, ডিজিটাল অর্থনীতি, ব্লক ইকোনমি, মুক্তবাণিজ্য চুক্তির সমীক্ষার ঘোষণা ও একাধিক সেতু নির্মাণ ও সংস্কার সহ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোচনায় জোর দেয়া হতে পারে।

ভারত সফরের পরই চীনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে বেশ গুরুত্বের সাথে দেখছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। শেখ হাসিনার এই সফরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নজর রাখবে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র।

লেখক: সংবাদকর্মী

সারাবাংলা/এসবিডিই

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর ও বঙ্গবন্ধু পররাষ্ট্র নীতির সুফল মুক্তমত শিতাংশু ভৌমিক অংকুর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর