Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাঙালির ক্রিকেট তত্ত্ব

অলোক আচার্য
৪ জুলাই ২০২৪ ১৭:১৯

বাঙালির আবেগ ক্রিকেট। পুরো এশিয়া মহাদেশে না হলেও কয়েকটি দেশে যেমন বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান বা ইদানিং নেপাল ইত্যাদি দেশগুলোর মানুষজন ক্রিকেট নিয়েই আনন্দে মেতে থাকেন। আবার ক্রিকেট নিয়েই বিষাদে ভোগেন। যদিও ক্রিকেট আমাদের দেশের জাতীয় খেলা না তবুও ক্রিকেট নিয়েই মাতামাতি সবচেয়ে বেশি। বিশ্বজুড়ে আবার এর উল্টোটা ঘটে। বিশ্বজুড়েই ফুটবলের জয়জয়কার। একসময় বাংলাদেশেও ফুটবল নিয়েই মাতামাতি ছিল সবচেয়ে বেশি। মোনেম মুন্নাদের খেলা বা মহামেডান ও আবাহনীর মধ্যেকার ফুটবল ম্যাচ দেখতে সব কাজ ফেলে ছুটতো মানুষ। সে দিন এখন অতীত। কারণ বাংলাদেশের ফুটবলের অবস্থা যা তা। অনেক চেষ্টা চরিত্র করেও আর ফুটবলকে ফেরানো যায়নি। এরপর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলায় একটু একটু করে ভালো করতে শুরু কররো তখন মানুষ ফুটবল ছেড়ে ক্রিকেট নিয়ে মেতে থাকলো। কারণ মানুষ চায় মাঠে গিয়ে একটু আনন্দ করতে, মন খারাপ করে নিজের দেশের শোচনীয় অবস্থা দেখতে নয়। এবং সেই অর্থেই দেশের ক্রিকেটাররা কিন্তু সবচেয়ে বড় তারকা। তাদেরও জয়গান গাওয়া হয়। এই যে টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খারাপ করেছে তাতে দর্শকরা রাগ করবেন না তো কারা করবেন? যখন দেখচি বাংলাদেশের অনেক পরে ক্রিকেট খেলতে আসা দেশ ভালো করছে এবং আমার দেশে সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় যারা বিশ্ব স্বীকৃতপ্রাপ্ত তাঁরা থাকতেও দেশ খারাপ করছে সেখানে খারাপ লাগতেই পারে। লেগেছেও। বাঙালি ক্রিকেটপ্রিয় জাতি। অবশ্য ক্রিকেটের আগে বাংলাদেশে বহু রকরেম খেলার প্রচলন ছিল। সেসব গ্রামীণ খেলাধূলা এখন হারিয়ে গেছে। ফুটবলও তার জৌলুস হারিয়েছে। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ভালো খেলেছে। নেপালের সাথে ড্র না হলে অন্য রকম কিছু ঘটতে পারতো। যে কোনো খেলাতেই বাংলাদেশ ভালো খেললে আমরা উচ্ছসিত হই। আমরা আসলে ক্রিকেটপ্রিয় না খেলাধূলাপ্রিয় জাতি। বাঙালি ভালো খেললেই আমরা আবেগে ভাসি। হাততালি দেই। তাদের উৎসাহ যোগাই। যেহেতু ক্রিকেট এখন এই উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা বিশেষ করে ভারত পাকিস্থান ও বাংলাদেশে তাই এই খেলা ঘিরে উৎসাহ উদ্দীপনাও থাকে বেশি।

বিজ্ঞাপন

মাঠে-ঘাটে এখন ছোট ছোট শিশুদেরও ব্যাট-বল হাতে দৌড়াতে দেখা যায়। এর কারণ এই খেলার জনপ্রিয়তা। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে একসময় এ দেশের ছেলে মেয়েরা অন্যদেশের ক্রিকেটারদের মতো খেলতে চাইতো। বোলিং বা ব্যাটিং তাদের মতো করতে চাইতো। আজ কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টেছে। আজ বিদেশী খেলোয়াড় নয় বরং বাংলাদেশের কোনা সাকিব বা মাশরাফির মতো খেলতে চায়। কারণ বিশ্বজুড়েই এরা আইডল। তাই অযথা কেন বিদেশী খেলোয়াড়ের মতো হতে চাইবে এদেশের দামাল ছেলেরা? গর্ব করার মতো সবই তো আছে। তাদের খেলা আমাদের মুখে হাসি এনে দেয়। বাংলাদেশে এখন রয়েছে প্রতিভাবান খেলোয়াড়। যাদের ওপর আস্থা রাখা যায়। একটি দল হয়ে ওঠা সহজ কথা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোনো খেলায় একজন বিশেষ খেলোয়াড়ের নৈপূণ্যই বেশি প্রভাব ফেলে। সে যেদিন ভালো খেলে সেদিন দল জয়লাভ করে। আজ আমাদের এমন বিষয় নেই। আজ একজন না থাকলেও বিকল্পের কাছেও ভালো খেলার প্রত্যাশা করতে পারি। কারণ আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছি আমাদের খেলোয়াড়রা সবাই দক্ষ এবং দলকে জয় এনে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে। দেখা গেলো দলের ব্যাটিংটাই ভালো হচ্ছে না। টি২০ খেলার মানসিকতার যে সামর্থ্য সেই সামর্থে কোথায় যেন ঘাটতি এবারে দেখা গেছে। আবার দেশের মানুষের আর্থিক ও নৈতিক ধ্বংসও কিন্তু ক্রিকেটের মাধ্যমেই বেশি হচ্ছে। এই যে বছর জুড়ে বিভিন্ন লীগ যেমন আইপিএল বা অন্য বিদেশি লীগে যে বিপুল অংকের জুয়ায় সাধারণ মানুষ জড়াচ্ছে এবং সব শেষ করছে তার জন্যও ক্রিকেটকে দায়ী করা যায়। যদিও খেলার কোনো দায় নেই তবু বলা তো যায়। দেশে অনলাইন জুয়া এমনভাবে বাড়ছে যে এর নিয়ন্ত্রণ না নিলে ভবিষ্যতে খারাপ আছে। তবে সব বাদ দিলে ক্রিকেটটাই আমাদের খেলাধূলার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্থানের প্রতিটি অধ্যায় এদেশের মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। প্রতিটি বিশ্ব শক্তির বিরুদ্ধে জয়ের এক একটা ইতিহাস আমাদের মনে আছে। ফুটবলের আলো এদেশে বহুবছর ম্রিয়মান। তবে ক্রিকেটটা গত কয়েক বছর ধরেই অধিক উজ্জ্বল আলো ছড়াচ্ছে। বাঘা বাঘা সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে ধরাশায়ী করেছে আমাদের টাইগারা।
আমরা ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করি, ক্রিকেটারদের নিয়ে ভাবি, ক্রিকেট নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্নের কথা আজ না বলি। ক্রিকেট আমাদের কাছে আবেগ। আর ক্রিকেটের অগ্রভাগে থেকে যে লড়াকু সৈনিকরা ক্রিকেটকে আজকের অবস্থায় এনেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো সাকিব, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তামিম, মুশফিকুর, মুস্তাফিজ, লিটন, সৌম্য, তাসকিন, মিরাজ এবং এই দুরন্ত খেলোয়াড়দের সাথে যোগ হয়েছে একঝাঁক মেধাবী তরুণ খেলোয়াড় যারা নিজেদের প্রমাণ করেছে। তাদের সামর্থ্য নিয়ে আমাদের সন্দেহ নেই তবে এই বিশ্বকাপে পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তো থাকতেই পারে। কারণ এই দর্শকরাই মাঠে ক্রিকেটারদের উৎসাহ দিতে গ্যাটের পয়সা খরচ করে মাঠে যায়। সুতরাং এ অধিকার তাদের আছে। আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে অর্জন তা যেন গোটা বিশ্ব দেখেছে। বাংলাদেশকে কেউ ছোট দল মনে করার দুঃসাহসও দেখায় না। সে অবস্থা থেকে অনেক আগেই বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। সমন্বিত নৈপূণ্যে বাংলাদেশ দল আজ কোথায় পৌছে যাচ্ছে তা যেন কোন সীমায় বাধা যায় না। তবে খেলায় সেই দলীয় উত্তেজনা নেই কেন? প্রতিটি বিশ্বকাপ আমাদের কাছে একটি স্বপ্ন। আমরা একদিন অবশ্যই বিশ্বকাপ জিতব সেই বিশ্বাস আছে। কিন্তু উন্নতিটা হাতে কলমে প্রমাণ তো করতে হবে। এই বিশ্বাস থেকেই আমরা সবসময় আমাদের ক্রিকেটাদের পাশে থাকি, তাদেও উৎসাহ দেই অনুপ্রেরণা দেই। আজকের বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যে অবস্থায় দাড়িয়ে সেখানে বিভিন্ন সময়ের ক্রিকেটাররা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। দলীয় প্রচেষ্টা ছাড়া বিজয় অর্জন করা যায় না। হঠাৎ যেন কোথায় সবাই খেই হারিয়ে ফেলেছে। বর্তমান ক্রিকেট দল আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের যেকোন সময়ের চেয়ে সেরা পারফরম্যান্স করা একটি দল। এই দল একটি ভারসাম্যপূর্ণ একটি দল। যেখানে নিখাদ ব্যাটসম্যান, বোলার এবং অলরাউন্ডারের সমন্বয় রয়েছে। আজ বাংলাদেশ একটি দল হয়ে উঠতে পেরেছে। আর পারফরম্যান্স তে একটা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাপার সেও একসময় ঠিক হবে।

বিজ্ঞাপন

দল জয় লাভ করলে আমরা দারুণ উচ্ছসিত হই আবার দল হারলে আমাদের চোখেও জল আসে। আমরা ব্যথিত হই। এটা আমরা করি কারণ আমরা যেমন ক্রিকেটকে ভালোবাসি তেমনি ক্রিকেটারদেরও ভালোবাসি। সামর্থ্যরে বেশিও হয়তো মাঝে মাঝে আমরা আশা করি! এটাও ভালোবাসার দাবি থেকেই। তাই সেই আশা যখন অনেক বেশি অপূরণ থাকে তাহলে খারাপ লাগাটাও স্বাভাবিক। মাঠে আমাদের দর্শকরা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বলে চিৎকার করে। আমরা এভাবেই আমাদের ক্রিকেট দলকে নিয়ে চিৎকার করতে চাই। টি২০ ক্রিকেট একটু আলাদা ধাঁচের। এখানে একদিকে উইকেটে থাকতে হবে আবার মারতেও হবে। এটা এই খেলার একটি বিনোদন। সেই মানসিকতার ঘাটতি থাকলে ভালো প্রস্তুতি দরকার। আমাদের দেশের ক্রিকেট অনেক উন্নতি করেছে। সারা বিশ্বই বাংলাদেশকে সমীহের চোখে দেখে এই খেলার জন্যই। জয় পরাজয় একটি খেলার জাতগত বিষয় হলেও আমরা এমন অবস্থানে পৌছেছি যখন খেলোয়াড়রা বিশ্বমানের। এখানে দলীয় অবস্থান ভালো না হলে তার প্রতিক্রিয়া হতেই পারে। তবে হাল ছাড়লেও তো চলবে না। বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে একদিন এই উচ্ছাস হবে- এ আশা আমরা নিশ্চয়ই করতে পারি। একদিন আবারও ফিরবে বাংলাদেশ- রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মত করেই।

লেখক: কলামিষ্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

অলোক আচার্য বাঙালির ক্রিকেট তত্ত্ব মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

ফের দাপট দেখালেন সাকিব
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০৪

আরো

সম্পর্কিত খবর