Tuesday 15 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুগ্ধ উৎপাদনে চ্যালেঞ্জ: খামারিদের সুরক্ষায় করনীয় কি?

ড. মিহির কুমার রায়
৬ জুলাই ২০২৪ ১২:৪৬ | আপডেট: ৬ জুলাই ২০২৪ ১২:৪৭
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বাড়ছে যার সাথে দুগ্ধ সামগ্রির চাহিদাসহ উৎপাদন বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর ( ২০২১) এর তথ্য মতে দেশে প্রতি বছর ৯০ লাখ ২৪ হাজার টন দুধ উৎপাদন হচ্ছে কিন্তুু চাহিদা রয়েছে ১ কোটি ৫৮ লাখ টন অর্থ্যাৎ চাহিদার তুলনায় ঘাটতির পরিমান প্রায় ১০ লাখ টনের কিছু বেশি। এর মানে হলো বাংলাদেশ তার মোট প্রয়োজনের মাত্র ৬৩ শতাংশ উৎপাদন করছে এবং বাকি ৩৭ শতাংশ ঘাটতি পূরনের জন্য প্রতি বছর প্রায় এক হাজার পাঁঁচশত কোটি টাকার দুধ আমদানি করছে। বিজ্ঞজনসহ সমাজ বিশ্লেষকগন মনে করছেন যে পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা গুড়ো দুধ আমদানীতে ব্যয়িত হয় তা যদি স্থানীয় দুগ্ধ উন্নয়নে ঋন কিংবা প্রনোদনা হিসাবে ব্যবহৃত হতো তা হলে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে চাহিদার ঘাটতি পূরনের করা সম্ভব হতো। কিন্তু দেশে দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির পথে প্রধান অন্তবায় গুলো হলো জমির দুশপ্রাপ্যতা, গবাদি পশুর পর্যাপ্ত খাাবরের স্বল্পতা ও গরুর উৎপাদন ক্ষমতা। সাবির্ক ব্যবস্থাপনা তথা নীতি সহায়তা পেলে বাংলাদেশ যে দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসর্ম্পূনতা অর্জন করবে এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা বলছে প্রতি জনের প্রতিদিন ২৫০ মিলিটিার দুধ পান করা প্রয়োজন অথচ সেখানে একজন মানুষের প্রাপ্তি মাত্রা ৪০ মিলিমিটার। সেই হিসাবে বাংলাদেশ প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মতে সারাদেশে প্রতিদিন মাথা পিছু দুধের চাহিদা ১৪.৪৮ মিলিয়ন টন এবং একি সময়ে উৎপাদন হয় ৬.৯৭ মিলিয়ন টন অর্থ্যাৎ প্রতিদিনের ঘাটতি দাড়ায় ৭.৫১ মিলিয়ন টন। এই বিশাল ঘাটতি পুরনের জন্য এখন আমদানী বানিজ্যই একমাত্র ভরসা অথচ এই সকল পণ্যে যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে তা নিয়ে কেহ কোন কথা বলছে না অথচ এই শিল্পের বিকাশে বাংলাদেশে যে অপার সম্ভবনা রয়েছে তা বাস্তবায়িত করা গেলে দেশ পুষ্টিতে স্বয়ম্ভর হবে। ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং কৃষি জিডিপিতে তা ১০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। যদিও পশু পালন উপখাতে জিডিপির ভাগ কম, দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় প্রাণিজ আমিষের প্রয়োজন মেটাতে এর বিশাল অবদান রয়েছে। কয়েক বছর ধরে প্রাণিজ আমিষ যেমন দুধ, মাংস (গরু, খাসি, মুরগি) এবং ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এই সকল পণ্যের বার্ষিক গড় দরদাম তেমন বাড়ছে না, যা এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত উৎপাদনের ইঙ্গিতবাহী।

বিজ্ঞাপন

এস.ডি.জি ও দুগ্ধ খাত:

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি উপাত্তে দেখা যায় দেশের মোট ২ কোটি ৮৭ লক্ষ গৃহস্থালীর কৃষির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সংযুক্ত রয়েছে। এই কৃষির উৎখাত প্রাণি সম্পদ দেশের প্রবৃদ্ধিতে, পুষ্টি উন্নয়নেও খাদ্য নিরাপত্তায় অধিক ভূমিকা রাখছে বিশেষত: শ্রমঘন, স্বল্প পূজি ও স্বল্প জমির প্রয়োজন হেতু। বিবিএস এর বৈদেশিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান হতে দেখা যায় যে, ২০১৯২০২০ অর্থ বছরে এই খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে যথাক্রমে চামড়াজাত পণ্য (২০২৪.১০ কোটি টাকা), মাংস ও মাংজাত (৯.৮৮ কোটি টাকা), দুগ্ধজাত পণ্য (১৫.৯৭ কোটি টাকা), প্রাণিজ উপজাত (১২৬.৮১ কোটি টাকা) অর্থাৎ সর্বমোট ২১৭৬.৭৭ কোটি টাকা। আবার উৎপাদন ১২.৮৩ লক্ষ মেট্রিক টন, মাংস ৭১.৫৪ লক্ষ মেট্রিক টন এবং ডিম ১৪৯৩ কোটিতে দাড়িয়েছে। তারপরও দেখা যায় যে, দেশের বাড়তি জনসংখ্যার কারণে এই সকল উৎপাদন দেশের চাহিদা পূরণে সামর্থ হচ্ছে না এবং এখনও দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে যাদের মধ্যে শিশু ও নারীর সংখ্যাই বেশী। এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে সবার জন্যই পুষ্টি নিশ্চিত করতে হলে প্রাণী সম্পদ উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই।

সম্প্রতিক সময়ে প্রথম আলো আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে খাদ্য নিরাপত্তা তৈরি, সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করণ, কর্ম সংস্থান, নারীর ক্ষমাতয়নসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রাণি সম্পদেও গুরুত্বের কথা উঠে এসেছে। এই বিষয়গুলো জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এস.ডি.জি) এর প্রায় ৯টি লক্ষ্যমাত্রার সাথে সম্পর্কযুক্ত বিধায় এই খাতকে গুরুত্ব দিলে এস.ডি.জি এর দারিদ্য দূরীকরণ ও সুস্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে বিশেষত: ২০৩০ সালের মধ্যে। আবার বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের ভিশন-২০২১ অর্জনে জনপ্রতি দিনে দুধ ১৫০ মিলিমিটার, চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে কাজ করছে দেশের প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর। দেশকে মধ্য রেখা উন্নত আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে প্রথম প্রয়োজন মেধা যার সাথে প্রাণিজ আমিষের সম্পর্ক রয়েছে। এই বিবেচনায় সরকার প্রথমে সহ¯্রাদ্ধ উন্নয়ন লক্ষ (এম.ডি.জি) এবং পরবর্তীতে টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট (এস.ডি.জি) এর প্রাণী সম্পদ সেক্টর ৯টি অভিষ্ট ও ২৮টি লক্ষ্য মাত্রার সাথে যুক্ত হয়েছে। এরি মধ্যে এ সকল অভিষ্ট ও লক্ষ্য অর্জনে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে যে গুলোর বাস্তবায়নে প্রয়োজন আইন ও নীতিমালা সহায়তা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, ঋণ সহায়তা বৃদ্ধি, গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সেবার সম্প্রসারণ, প্রাণী সম্পদ বীমা ব্যবস্থার চালু করণ ও বেসরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধি। আবার প্রাণি সম্পদ খাতে এস.ডি.জি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গৃহীত নীতি ও কৌশল সমূহের মধ্যে রয়েছে প্রাণী সম্পদ সেবা সম্প্রসারণ, দুগ্ধ ও মাংস উৎপাদন, কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জাত উন্নয়ন, পশু-পাখীর রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিকার, প্রাণী সম্পদ গবেষনা ইত্যাদি। এখন ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাণী সম্পদ সেক্টরে এস.ডি.জি অর্জনের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে (১) জনবল সহ প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি (২) পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও বাজার ব্যবস্থার উন্নতিকরণ (৩) পরিবেশ বাজার গবাদিপশু উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা (৪) তথ্য প্রযুক্তির ঘাটতি (৫) খামার পর্যায়ের প্রণোদনার অপ্রতুলতা ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বিতরণ ও ভোক্তা পর্যায়ে অপ্রতুলতা ও নিরাাপদ খাদ্য উৎপাদন, বিতরণ ও ভোক্তা পর্যায়ে সচেতনতার অভাব। এই সকর চ্যালেঞ্জ গুলোর মোকাবেলায় রাজস্ব বাজেটে ও ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নের অগ্রগতি সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে এবং আশা করা যায় ২০৩০ সালের আগেই প্রাণী সম্পদ বিশেষত দুগ্ধ উৎপাদন সম্পর্কিত এস.ডি.জি এর লক্ষমাত্রা অর্জিত সম্ভব হবে। নিরাপদ প্রাণীজ আমিষ উৎপাদন, বিপণন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ সহ গ্রামীণ জনগণকে সার্বিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে।

দুগ্ধ উৎপাদনে চ্যালেঞ্জ:

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়াায় অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বদ্বীপ। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত বাংলাদেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয়। অথচ দেশটি এর ভুক্তভোগী। এই চ্যালেঞ্জসহ কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারকে কাজ করছে। চলতি মৌসুমের তাপমাত্রা এরই মধ্যে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রার উত্তাপ ছড়িয়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। সড়ক-মহাসড়কের কোথাও কোথাও পিচ গলে গেছে। জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষের জীবন প্রায় ওষ্ঠাগত। একই সঙ্গে প্রাণিকুলেরও। এ সময় দেশের প্রাণিসম্পদ বিশেষ করে দুগ্ধখামারিরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাপপ্রবাহের কারণে সবুজ ঘাস মরে যাচ্ছে। সংকট দেখা দিয়েছে ঘাসের। গরুর খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। তাপপ্রবাহ থেকে গরুকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখতে খামারিদের বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। একদিকে বেড়েছে ব্যয়। অন্যদিকে কমেছে দুগ্ধ উৎপাদন। ফলে খামারিরা আর্থিকভাবেও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সিরাজগঞ্জ ও পাবনা থেকে দেশে উৎপাদিত দুধের বড় অংশ আসে। বিস্তীর্ণ চারণভূমি ও উচ্চ উৎপাদনশীল বিভিন্ন জাতের গরুর আধিক্য থাকায় এ দুধ উৎপাদনে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে এ দুই অঞ্চলেই দুধ উৎপাদন কমেছে। গরমে কাঁচা ঘাস না থাকায় ও গবাদিপশু স্বাভাবিক খাবার খেতে না পারায় দুধ উৎপাদন কমেছে। তীব্র গরমে গরু মারা যাচ্ছে। নদীর পাশে যেসব খামার রয়েছে, তারা সহজেই পানি পাচ্ছে। যারা বাড়িতে খামার করেছে, সেসব খামারে গরুর উপযোগী তাপমাত্রা বজায় রাখতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। মিল্ক ভিটা সূত্র বলছে, মিল্ক ভিটার লক্ষ্য প্রতিদিন গড়ে ৯০ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করা। তবে প্রচন্ড গরমের কারণে খামারিরা ৫০-৫২ হাজার লিটারের বেশি দুধ সরবরাহ করতে পারছেন না। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন খামারিরা। প্রাণিসম্পদ খাতে খামারিরা তাপপ্রবাহের মতো চরম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতির মুখে পড়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। তাদের সহায়তায় ও সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় খামারিদের সুরক্ষায় কাজ করতে হবে । পুষ্টিমানের বিচারে দুগ্ধপণ্যের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য হলেও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এই স্থবিরতা কাটিয়ে উঠার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এখন সরকার তাদের অষ্টম বার্ষিক পরিকল্পনায় প্রাণিসম্পদের সংখ্যা উল্লেখ করেছেন যথাক্রমে: দুগ্ধবতী গাভী ২৩.৬৪ মিলিয়ন, মহিষ ১.৪৬ মিলিয়ন এবং ছাগল ২৫.৬০ মিলিয়ন। এই সকল প্রাণী থেকে বত্সরে দুগ্ধ উত্পাদন হয় ৬.৯৭ মিলিয়ন টন যা চাহিদার তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ কম। এর প্রধান কারণ বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ ও বেসরকারি খাতে উদ্যোক্তার অভাব। তাই পরিকল্পনা মেয়াদে বেশ কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হচ্ছে যেমন ডেইরিখাতে সমবায়ের উপস্থিতি, ডেইরি চাষিদের উন্নত প্রযুক্তি সরবরাহ, গবাদিপশুর খাদ্য উৎ্পাদন, প্রাণী স্বাস্থ্য রক্ষায় ভেটেরিনারি সেবা বৃদ্ধিকরণ ও ক্ষুদ্রকায় খামারিদের ঋণ সুবিধা প্রদানসহ বিপণন ব্যবস্থা জোরদারকরণ। এই বিষয়গুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে প্রয়োজন সরকারের নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা ও বাজেট বরাদ্দ। দুগ্ধ থেকে তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীর বিশাল বাজার সারাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে যার চাহিদা অফুরন্ত যদি তা ভেজালমুক্ত হয়। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে এই ভেজালবিরোধী অন্দোলনে শরিক হই এবং একটি পুষ্টিকর জাতি বিনির্মাণে এগিয়ে আসি। আমাদের শ্লোগান হোক ভেজালহীন পুষ্টিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ আর দুগ্ধশিল্প হোক তার প্রথম সারির ক্লাারি— সেটি কী কর্মহীনের কর্মসংস্থানে, আয় বৃদ্ধিতে ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে। এব্যাপারে সরকারী প্রণোদনা সহায়ক ভুমিকা পালন করতে পাড়ে। আবহাওয়াবিদরা এরই মধ্যে পূর্বাভাস দিয়ে বলেছেন, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে দেশে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হতে পারে। ফলে চলমান তাপপ্রবাহের বিপর্যয়ের মধ্যেই খাতগুলো আরেকটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সুরক্ষার আগাম পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশী শিল্প খাত টিকিয়ে রাখতে সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা কাম্য।

দুগ্ধ খামারিদের সুরক্ষায় করনীয়:

বাংলাদেশের বর্তমান গনতান্ত্রিক সরকারের লক্ষ্য ভোক্তার কাছে মানসম্মত ও গ্রহন যোগ্য মানের দুদ্ধ উৎপাদন বাড়িয়ে স্বয়ংসর্ম্পনতা অর্জন এবং এ ব্যাপারে প্রানী সম্পদ অধিদপ্তর প্রানী সম্পদ ও দুদ্ধ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দুধকে একটি আদর্শ খাদ্য বলা হয় যেখানে পুষ্টি সকল গুনাবলী গুলো রয়েছে যা বিশেষ করে শিশুদের শারীরিক গঠনে বিশেষ ভুমিকা রাখে। তাই দুধের পবিত্রতা রক্ষা করা সকলেরই দায়িত্ব বিশেষ করে উৎপাদক ( চাষী), ব্যবসায়ী (ঘোষ) ও প্রক্রিয়াজাত করন (কোম্পানী) পর্যায়ে যার সাথে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা/ খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত রয়েছে। তাই পুষ্টি, খাদ্য নিরাপত্তা ,জনস্বাস্থ্য ও শিশুর দুধে ভেজাল জনিত বিষয়গুলোর একটি শান্তি পূর্ণ নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন বিশেষত: ২০২৬ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পৌছানোর আগে অর্থ্যাৎ আমরা একটি দারিদ্রমুক্ত, পুষ্টিহীন মুক্ত, ভেজাল মুক্ত ও র্দুনীতি মুক্ত মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় সুশাসিত বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমাদের সমস্যা আছে অনেক যা একদিনে সৃষ্টি হয়নি একি ভাবে এর সমাধান একদিনেও সম্ভব নয়। এই কাজটি শুরু হয়েছে মন্থর গতিতে যেমন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্টা হওয়ার পর থেকে বাজারে বিক্রি হচ্ছে এমন সব খাদ্য সামগ্রীর মান নির্ণয়ে কোন কার্য্যকরি পদক্ষেপ গ্রহন করেননি কেবল আশ্বাস ছাড়া। সাড়া পৃথীবি ব্যাপী বিশেষত: উন্নত দেশে দুধের মান পরীক্ষার অনেকগুলো প্যারামিটার থাকে যেমন সিংগাপুরে এই সংখ্যাটি ৩৮টি আর বংলাদেশে দুধের মান নির্নয়ের প্যারামিটার মাত্র ৮ টি যার মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষা করার সামর্থ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডর্ড ও টেস্টিং ইনষ্টীটিউটের (বি এস টি আই ) নাই অতছ এর সক্ষমতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।এরি মধ্যে দুগ্ধ শিল্পের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে এবং জনস্বাস্খ্যেরও যথেষ্ঠ ক্ষতি হয়ে গেছে।এই প্রসংগে আমার বক্তব্য হলো: পুষ্টিকর খাদ্য হিসাবে দুধের অবদান অনশ্বিকার্ষ এবং পুষ্টি বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষনায় এটি প্রমান করে দেখিয়েছেন। বাংলাদেশ দুগ্ধ শিল্পের উপর শিক্ষা ও গবেষনা সুযোগ খুবি সীমিত যদিও দেশে একটি ভেটেরাইনারী ও এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় সহ দুটি- তিনটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় কিংবা পশু পালন অণুষদে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা কার্য্যক্রমে কিছু গবেষনা পরিচালিত হয়ে থাকে। এই সকল গবেষনার ফল দেশের দুগ্ধ শিল্পের বিকাশে কতটুকু অবদান রাখছে তার সম্প্রসারন ও প্রচারের দায়িত্ব সরকারের প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের উপর ন্যাস্ত। এই সংস্থাটি দেশের বিভিন্ন জেলায় বেশ কয়েকটি ডেইরি ফার্ম সরকারি কাঠামোতে পরিচালনা করছে যার মধ্যে সাভার ডেইরি র্ফাম উল্লেখযোগ্য যার উদ্দেশ্য প্রজনন ,উৎপাদন ,গবেষনা ও সম্প্রসারন । এই খামারের উৎপাদিত দুগ্ধ প্রক্রায়াকরনের মাধ্যমে ঢাকা শহরে বিপনন করা হয় যা সাভার ডেইরি হিসাবে পরিচিত। তাছাড়া মিল্ক ভিটা দুগ্ধ প্রক্রিয়াজত করনের ও দুগ্ধ সামগ্রী বিতরনের সাথে জড়িত রয়েছে। দেশে সরকারের পাশাপাশি ১৪ সরকারি কোম্পানী দুগ্ধ উৎপাদন প্রক্রিয়াজাত করন ও বিপননের সাথ জড়িত যাদের পন্য সামগ্রী মুলত: তরল দুধ, মিল্ক পাউডার, ঘি, ছানা, পনির, মাখন ইত্যাদি। দেশীয় কোম্পানী গুলো মনে করে বর্তমানে প্রচলিত দেশীয় শিল্পনীতিকে সহায়তা দিলে দেশে গ্রামে গঙ্গে অবস্থিত দুগ্ধ খামারি ও শহর কেন্দ্রীক কোম্পানীগুলো তরল কিংবা গুড়ো দুধের চাহিদা মেটাতে পারবে। আবার দুধ আমদানিতে বছরে যে পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে তা যদি দেশীয় শিল্পে বিনিয়োগ করা যেত তা হলে এই শিল্পে বাংলাদেশ ঘুড়ে দাড়াতে পারত। দেশের জনসাধারণ তাদের খাদ্য ও পুষ্টির জন্য কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের ওপর নির্ভরশীল। খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব¡। জনগণের সাংবিধানিক অধিকার পূরণে সরকারের দায়িত্ব। এ খাতের উন্নয়নে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। গ্রামান্চলে খামারিদের সহজ শর্তে লোন সুবিধা প্রদান করতে হবে। এই অবস্থায় কর্মসংন্থান তধা পুষ্টির কথা বিবেচনায় রেখে এই শিল্পকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার সময় এসেছে। আমরা একটি স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সমৃদ্ধ জতিী হিসাবে মধ্য আয়ের দেশে প্রবেশ করতে চাই আগামী দুই বছরের মধ্যে।তাই তুলনামুলক বিচারে প্রোটিন গ্রহনে আমরা যে অনেকের ছেয়ে পিছিয়ে আছি ( মাত্র ৬৬ গ্রাম মাথাপিছু) তা বাড়াতে হবে। আমাদেরও পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে প্রানিজ প্রোটিনের বিশেষত দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে। তার জন্য সরকারের নীিিত সহায়তা প্রনোদনা প্রয়োজন যার মধ্যে রয়েছে পশু খাদ্য ভর্তুকীম, কম মুল্যে পর্যাপ্ত ওষধ সরবরাহ,উন্নত প্রযূক্তি ববিহার করে নেপিয়ার ঘাস উৎপাদন,পর্যায়ক্রমে প্রানীজ খাদ্য আমদানী হ্রাস করন ইত্যাদি অআমাদের মনে রাখতে হবে বর্তমান কৃষি বান্দব সরকারের কিছু ভ্রান্ত নীতির কারনে যেন দেশের কর্মসংন্থান ও দারিদ্র বিমোচন ব্যাহত না হয়।

লেখক: অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও সাবেক জ্যাষ্ঠ সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি, ঢাকা

সারাবাংলা/এসবিডিই

ড. মিহির কুমার রায় দুগ্ধ উৎপাদনে চ্যালেঞ্জ: খামারিদের সুরক্ষায় করনীয় কি? মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

বরিশালে এনসিপির পদযাত্রা
১৬ জুলাই ২০২৫ ০১:৪৩

আরো

সম্পর্কিত খবর