Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাদকের আগ্রাসন দৃশ্যমান, সামাজিক প্রতিরোধই সমাধান

আসিফ আল মাহমুদ
৬ জুলাই ২০২৪ ১০:৫৭

মাদক মানুষের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। মাদকের লোভে সে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়। দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য মাদকাসক্তি মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। মাদকের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা সত্ত্বেও এর আগ্রাসন ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। এমনকি ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, যেখানে মাদক পাচারের শাস্তি মৃত্যুদন্ড, সেখানেও এটি একটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা হিসেবে রয়ে গেছে। ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও মেক্সিকোর মতো ধনী দেশগুলোর আইনশৃঙ্খলা দীর্ঘদিন ধরে মাদকের গডফাদারদের কাছে জিম্মি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সরকারের সদিচ্ছা থাকার পরও ইয়াবা, কোকেন, হেরোইনসহ নানা ধরনের মাদক সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে বেপরোয়াভাবে দেশে প্রবেশ করছে। মাদক ব্যবসায়ীরা রাজধানীসহ সারাদেশে সমুদ্র, সড়ক, রেল ও আকাশপথে মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে। তারা চোরাচালান ও বিক্রির নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। অনলাইন প্ল্যাটফরমকে কেন্দ্র করেও দেশে আজকাল মাদকের ব্যবসা রমরমা। গত বছর বিজিবি তাদের মাদকবিরোধী বিভিন্ন অভিযানে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭৭৪ ইয়াবা, প্রায় ১৪৩ কেজি ক্রিস্টাল মেথ (আইস), ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮৩৩ বোতল ফেনসিডিল, ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৪৯ বোতল বিদেশি মদ, ৯ হাজার ২৬৩ লিটার বাংলা মদ, ৫৭ হাজার ৮৯৯ ক্যান বিয়ার, ২২ হাজার ২২৯ কেজি গাঁজা, ৩৩১ কেজি হেরোইন, প্রায় ১৩ কেজি কোকেন, ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮৯ নেশাজাতীয় ও উত্তেজক ইনজেকশন, ১ লাখ ৫৩ হাজার ২১০টি অ্যানেগ্রা বা সেনেগ্রা ট্যাবলেট, ৬৫ হাজার ৬৬৪টি ইস্কাফ সিরাপসহ আরও অনেক মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এক্ষেত্রে বেশ তৎপর। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থার প্রতিনিধিরাও স্বীকার করেছেন যে জব্দকৃত মাদকের পরিমাণ ২০ শতাংশের বেশি নয়। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, এর হার সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ। ধারণা করা হয়, মাদক পাচার ও মাদকবিরোধী অভিযানের সঙ্গে জড়িত বড় একটি অংশের মধ্যে সততার সংকট রয়েছে। সর্বাগ্রে মাদক নিয়ন্ত্রণের সাথে সংশ্লিষ্টদের সততা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধও গড়ে তোলা আবশ্যক। এদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা খুব দ্রুতই বাড়ছে। সব বয়সীদের মধ্যেই এর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তরুণদের মধ্যে এই সংখ্যা ভয়াবহ। কেউ একবার মাদকাসক্ত হয়ে গেলে, সে আর তা থেকে মুক্ত হতে পারে না। অন্যদিকে মাদকের সহজলভ্যতা বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই নতুন করে আসক্ত হয়ে পড়ছে। মাদক এখন এতটাই সহজলভ্য যে তা কেবল শহরেই নয়, প্রত্যন্ত গ্রামেও মিলছে একটু হাত বাড়ালেই। এর ফলে মাদকের প্রভাব কমানো যাচ্ছে না। বরং এর প্রভাবে সামাজিক বিপত্তি ঘটছে। সময়ের সাথে সাথে মাদকের উপকরণ পরিবর্তিত হয়েছে। কয়েক বছর আগে ইয়াবাবিরোধী অভিযানের পর ইয়াবার সরবরাহ আরও বেড়ে গিয়েছিল বলে সংবাদপত্রে খবর আসে। সে সময় অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, মাদকবিরোধী অভিযানের অ্যাপ্রোচ ঠিক ছিল না। যার কারণে তাই সমস্যা বাড়ছে, মাদকের সংখ্যা কমার পরিবর্তে বরং পরিমাণ ও উপকরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার শুধু মাদকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং আরও অনেক অপরাধের দিকে ধাবিত করে। অন্যদিকে মাদকাসক্তরা শুধু পরিবারের কাছে নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যও বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তাই ইয়াবা-আইসসহ সব ধরনের মাদক প্রতিরোধে সরকারের কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। বেশির ভাগ তরুণ-যুবকদের একটা বিশাল অংশ এই আত্মঘাতী আসক্তির শিকার। তবে যাই হোক, মাদকাসক্তি এই বয়সের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই এবং এটি প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যেও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

লেখক: শিক্ষার্থী

সারাবাংলা/এসবিডিই

আসিফ আল মাহমুদ মাদকের আগ্রাসন দৃশ্যমান- সামাজিক প্রতিরোধই সমাধান মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর