বিশ্বব্যাপী খুচরা ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব ও বিকাশ
১০ জুলাই ২০২৪ ২০:৪৮
খুচরা ব্যাংকিং, যাকে ভোক্তা ব্যাংকিংও বলা হয়, এটি ব্যবসার পরিবর্তে ব্যক্তিগত ভোক্তাদের জন্য ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদানের সাথে সম্পর্কিত। বিশ্বব্যাপী খুচরা ব্যাংকিং বাজারের আকার ২০২২ সালে প্রায় ১৯৬৩ বিলিয়ন ডলার ছিল। এই বাজার আগামী বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ ডিজিটাল ব্যাংকিং এবং মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেমগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৭০ শতাংশ পরিবার ডিজিটাল ব্যাংকিং পরিষেবা গ্রহণে নথিভুক্ত হয়েছে এবং এদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ অনলাইন ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করছে। বাজার প্রিসিডেন্স রিসার্চের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩২ সালের মধ্যে খুচরা ব্যাংকিং বাজারের আকার প্রায় ৩৪৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাতে পারে। ২০২২ সালের হিসাবে খুচরা ব্যাংকিং পোর্টফলিওর হার মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ব্রাজিল এবং ইন্দোনেশিয়াতে ছিল যথাক্রমে ৬৮.৫ শতাংশ, ৬১.৭ শতাংশ, ৫৯.৪ শতাংশ এবং ৫৪ শতাংশ।
খুচরা ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব
খুচরা ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব বহুমুখী, যা ব্যক্তিগত গ্রাহক এবং বৃহত্তর অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। এর গুরুত্বের কিছু মূল দিক এখানে উল্লেখ করা হলো:
১) আর্থিক অন্তর্ভুক্তি: খুচরা ব্যাংকিং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, গ্রামীণ এবং উপেক্ষিত এলাকাসহ বিস্তৃত ব্যক্তিদের ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদান করে। এটি দারিদ্র্য হ্রাস এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে। খুচরা ঋণের পোর্টফলিও যেসব দেশে বেশি যেমন: থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ব্রাজিলে ১৫ বছর বয়সের উপরে এমন জনসংখ্যার মধ্যে ব্যাংক বিহীন জনসংখ্যার অনুপাত ছিল যথাক্রমে মাত্র ৪.৫, ১১.৭ এবং ১৬ শতাংশ। অন্যদিকে, খুচরা ঋণ সবচেয়ে বেশি হারে বৃদ্ধি পেয়েছে ভারতে। ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ভারতে খুচরা ঋণ বৃদ্ধির হার ছিল ২৪.৮ শতাংশ। নাইজেরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়াতেও এই ঋণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
২) অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট, স্থায়ী আমানত এবং অন্যান্য বিনিয়োগ পণ্য খুচরা ব্যাংকিংয়ের অন্তর্ভুক্ত। খুচরা ব্যাংকগুলো ব্যক্তিগত সঞ্চয়কে উৎসাহিত করে। সঞ্চয়ের এই ভাণ্ডার উৎপাদনশীল বিনিয়োগের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখে। আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীণ সঞ্চয় ইন্দোনেশিয়াকে কোভিডকালীন দারুণভাবে সহায়তা করেছিল। বিশ্ব ব্যাংকের মতে, ২০১৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার মোট জাতীয় সঞ্চয় ছিল জিডিপির ৩১ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ৩৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল।
৩) ঋণের প্রাপ্যতা: খুচরা ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরণের ঋণ প্রদান করে, যেমন ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ এবং গাড়ি ঋণ। এই ঋণ প্রাপ্তি ব্যক্তিগত এবং আর্থিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে, যেমন বাড়ি/গাড়ি কেনা, শিক্ষা গ্রহণ বা ছোট ব্যবসা শুরু করা। এসডিজি বাস্তবায়নে যেসব পদক্ষেপ রয়েছে তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য হলো, যারা ব্যাংকিং সেবার বাইরে রয়েছে তাদের দ্রুত ব্যাংকিং সেবার আওতায় এনে প্রথমেই জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করা। এই জনগোষ্ঠী পরবর্তীতে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করার মাধ্যমে আস্তে আস্তে মাঝারি পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে, যদি তারা পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা পায়।
৪) সুবিধা এবং প্রাপ্যতা: ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের আগমনের সঙ্গে, খুচরা ব্যাংকিং পরিষেবাগুলো আরও বেশি সহজলভ্য এবং সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে। অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, এটিএম, শাখা এবং এজেন্ট নেটওয়ার্কগুলো গ্রাহকদের তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সহায়তা প্রদান করে। বর্তমানে বিভিন্ন অ্যাপস এই কাজে আরও দ্রুত সহযোগী হয়ে উঠেছে, ফলে গ্রাহকদের ব্যাংকের শাখায় না গেলেও কাজ চলছে।
৫) গ্রাহক সেবা এবং ব্যক্তিগতকরণ: খুচরা ব্যাংকগুলো ব্যক্তিগত গ্রাহকদের প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যক্তিগতকৃত আর্থিক পরিষেবা এবং পণ্য সরবরাহ করা শুরু করেছে। যেটি গ্রাহক সন্তুষ্টি এবং বিশ্বস্ততা বাড়াতে সাহায্য করছে। যে তিনটি কাজের মাধ্যমে বাজারের চাহিদা অনুসন্ধান এবং তার প্রতিক্রিয়া অনুমান করে খুচরা ব্যাংকিং ব্যবসার কৌশলগুলোকে আধুনিক ও উন্নত করা যাবে সেগুলো হলো: গ্রাহকের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত চাহিদা বোঝার চেষ্টা করা, বিদ্যমান কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ বজায় রাখা এবং গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ও বিপণন কৌশল প্রণয়ন করা। শুধু তাই নয়, গ্রাহকদের সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্ক উন্নয়নে নেট প্রোমোটার স্কোর (এনপিএস) এবং কাস্টমার এফোর্ড স্কোর (সিইএস) বাড়াতে সব সময় সজাগ থাকতে হবে।
৬) পেমেন্ট এবং লেনদেনের পরিষেবা: খুচরা ব্যাংকগুলো চেকিং অ্যাকাউন্ট, ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড এবং ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারসহ প্রয়োজনীয় পেমেন্ট এবং লেনদেনের পরিষেবা সরবরাহ করা। অ্যাপসের মাধ্যমে এই পরিষেবাগুলো দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেন এবং বাণিজ্যকে আরও সহজতর করে তুলেছে। স্মার্টফোনের কল্যাণে বেশিরভাগ দেশের লোকরাই এখন চার-পাঁচ ঘণ্টা সময় ব্যয় করছে বিভিন্ন অ্যাপস ব্রাউজিংয়ের পেছনে। বিশ্বে ইন্দোনেশিয়ার জনগণ সর্বোচ্চ দৈনিক ৫.৭ ঘণ্টা সময় ব্যয় করছে এই অ্যাপসের পেছনে। এই ক্ষেত্রে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে আছে সিঙ্গাপুর এবং ব্রাজিলের সাধারণ মানুষ।
৭) সম্পদ ব্যবস্থাপনা: খুচরা ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ পরামর্শ, অবসর পরিকল্পনা এবং বিমা পণ্যসহ সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিষেবা প্রদান করে। এই পরিষেবাগুলো ব্যক্তিদের তাদের সম্পদ কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে এবং তাদের ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করতে সহায়তা করে। আমাদের উপমহাদেশে এরকম কিছু সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি রয়েছে যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ভারতের আইসিআইসিআই প্রডেনশিয়াল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, এইচডিএফসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, কোটাক মাহিন্দ্রা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট; পাকিস্তানের ইউবিএল ফান্ড ম্যানেজার, ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট পাকিস্তান, এমসিবি-আরিফ হাবিব সেভিংস এন্ড ইনভেস্টমেন্ট এবং বাংলাদেশের আইডিএলসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লি., লঙ্কাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লি. এবং এইমস অব বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য।
৮) রাজস্ব আয় বৃদ্ধি: খুচরা ব্যাংকিং ঋণের উপর সুদ, ফি এবং বিভিন্ন পরিষেবার জন্য চার্জের মাধ্যমে রাজস্বের একটি উল্লেখযোগ্য আয় অর্জিত হয়ে থাকে। এই রাজস্ব আয় ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক আর্থিক স্বাস্থ্যকে সমুন্নত রাখে। আবার ডিজিটাল ব্যাংকিং মডেল অন্য দিক দিয়ে গ্রাহকদের জন্য যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে। ব্রাজিলের ডিজিটাল ব্যাংক ‘নুব্যাংক’ তাদের ডিজিটাল মডেল গ্রাহকদের ২০২৩ সালে ১১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যাংকিং ফি এবং গত ৭ বছরে পরিষেবা গ্রহণ সারিতে অপেক্ষা করা থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘণ্টার বেশি সময় বাঁচাতে সাহায্য করেছে।
৯) সম্প্রদায় উন্নয়ন: খুচরা ব্যাংকগুলো প্রায়ই ছোট ব্যবসাগুলোকে ঋণ দেওয়া এবং স্থানীয় প্রকল্পগুলোকে সহায়তা করার মতো সম্প্রদায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে। এটি সম্প্রদায়ের সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখে। যেমন, আর্নড ওয়েজ এক্সেসের (ইডব্লিউএ) কথা যদি ধরি যেটা বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের দেয়া হচ্ছে মজুরির অগ্রিম হিসেবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল, বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রতিবছর চিকিৎসা বাবদ খরচ হয় ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা। অর্থাৎ, এই টাকা যদি ৪০ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিকদের অগ্রিম দেওয়া হয়, তবে এই বাবদ ঋণ দেয়া যাবে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
১০) ঝুঁকি বৈচিত্র্যকরণ: ব্যাংকগুলোর জন্য, খুচরা ব্যাংকিং কয়েকটি বৃহৎ কর্পোরেট ক্লায়েন্টের পরিবর্তে বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিগত গ্রাহকের মধ্যে ঝুঁকি বিনিময় করে। এটি ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশে খুচরা ঋণে মন্দ ঋণের হার অন্যান্য ঋণের চেয়ে অনেক কম।
খুচরা ব্যাংকিং ব্যক্তিদের আর্থিক কল্যাণ এবং সামগ্রিক অর্থনীতির স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক পরিষেবাগুলোতে সুযোগ প্রদান, সঞ্চয়কে উৎসাহিত করা, ঋণ প্রদান এবং সম্প্রদায়ের উন্নয়নকে সমর্থন করার মাধ্যমে, খুচরা ব্যাংকগুলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা বাজায় রাখতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিশ্বব্যাপী খুচরা ব্যাংকিং বর্তমানে কী কী রূপান্তরের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে
ডিজিটাল রূপান্তর: গ্রাহকের অভিজ্ঞতা বাড়াতে, অপারেশনগুলো সহজতর করতে এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ব্যাংকগুলো ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে। মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপস, অনলাইন সেবা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট ডিজিটাল রূপান্তরে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বব্যাপী এই সেক্টরে বিনিয়োগের পরিমাণ ২০২৭ সাল নাগাদ দাঁড়াবে প্রায় চার ট্রিলিয়ন ডলার। বিনিয়োগগুলো হচ্ছে মূলত অপারেশনাল দক্ষতা বাড়াতে অটোমেশন প্রক্রিয়া জোরদার এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য উন্নত এআইয়ের ব্যবহার।
ওপেন ব্যাংকিং: ওপেন ব্যাংকিং হচ্ছে একটি আর্থিক পরিষেবা মডেল যার মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষ বা ডেভেলপার আর্থিক পরিষেবা দ্রুত প্রদানে এপিআইয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের ব্যাংকিং, লেনদেন এবং অন্যান্য আর্থিক ডাটাতে এক্সেস প্রদান করে। এটি আরও ব্যক্তিগত এবং প্রতিযোগিতামূলক ব্যাংকিং সেবা তৈরি করতে সাহায্য করছে। ওপেন ব্যাংকিংয়ের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো ভারতের ‘ইউপিআই’ এবং ব্রাজিলের ‘পিক্স’। এই দুটি প্লাটফর্মের কাঠামো ভিন্ন হলেও আর্থিক পরিষেবা বাড়ানো এবং ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তারা দারুণ কাজ করেছে, কারণ এ দুটো ব্যবস্থায় ব্যক্তি, ব্যবসা এবং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তাৎক্ষণিক রিয়েল টাইম অর্থ প্রদানের সুবিধার্থে ওপেন ব্যাংকিং নীতি ব্যবহৃত হয়েছে। ২০২৪ সাল শেষে ঘর্ষণহীন অর্থ প্রদান প্রযুক্তির বাজার ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের উন্নীত হবে। আরেকটি চমৎকার উদাহরণ হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘পিএসডিটু’ আইনী কাঠামো, যার মাধ্যমে ওপেন ব্যাংকিং সম্প্রসারণে ব্যাংকগুলোকে এপিআই সহযোগে গ্রাহকের ডাটাতে তৃতীয় পক্ষের এক্সেস প্রদান। ‘পিএসডিথ্রি’ আগমনের সাথে সাথে নিয়ন্ত্রক সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ আগামীতে আরও প্রশমিত হবে বলে অনেকে আশাবাদ করছেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাজারের আকার ২০২২ সালে ছিল ৫৪৫.১২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০৩২ সালে ২.৫৭ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। প্রিসিডেন্স রিসার্চ অনুসারে, এই শিল্প ২০২৩ থেকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত ১৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। ব্যাংক এবং বিমা কোম্পানিগুলো বেশ কয়েক বছর ধরে এআই নিয়ে কাজ করছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং এআইয়ের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার সারা বিশ্বে আর্থিক পরিষেবা খাতে নতুন পথ উন্মোচন করছে। কেওয়াইসি মূল্যায়ন, প্রতারণা শনাক্তকরণ, চ্যাটবট সহায়তা, ব্যক্তিগত বিনিয়োগ পরামর্শ প্রদান থেকে শুরু করে ট্রেডিং— সবক্ষেত্রেই এআই দ্রুত আর্থিক পরিষেবা খাতের একটি মূল অংশ হয়ে উঠছে।
ব্লকচেইন এবং সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি (সিবিডিসি): কিছু ব্যাংক নিরাপত্তা এবং লেনদেনে স্বচ্ছতা উন্নত করার জন্য ব্লকচেইন প্রযুক্তি অন্বেষণ করছে। DeFi বা বিকেন্দ্রীভূত অর্থ ব্যবস্থা ব্লকচেইনের মাধ্যমে প্রথাগত মধ্যস্থতাকারী ছাড়া আর্থিক পরিষেবা প্রদানে জোর দিচ্ছে। বিকেন্দ্রীভূত ঋণ, বাণিজ্য এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে DeFi সেক্টর বিকশিত হচ্ছে। অন্যদিকে, সিবিডিসি হলো একটি দেশের ফিয়াট মুদ্রার ডিজিটাল রূপ যা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত এবং নিয়ন্ত্রিত। পেমেন্ট সিস্টেম, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং মুদ্রা নীতির কার্যকারিতা উন্নত করার সম্ভাবনার কারণে সিবিডিসির সম্ভাবনা বিশ্বব্যাপী উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাহামা ‘স্যান্ড ডলার’ এবং পূর্ব ক্যারিবিয়ান কিছু দেশ ‘ডিক্যাশ’ নামে ইতিমধ্যে সিবিডিসি চালু করেছে। ইকুয়েডর সিবিডিসি চালু করেছে যদিও এটি এখনো ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়নি। চীনে ‘ডিজিটাল ইউয়ান (ই-সিএনওয়াই)’ নামে পাইলটিং এবং বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কানাডাতেও পাইলট প্রজেক্ট চলছে। সুইডেন সম্ভাব্য সিবিডিসি হিসেবে ‘ই ক্রোনা’র পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। উরুগুয়ে সিবিডিসির বিকল্প অন্বেষণ করছে। যদিও এই ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া তাদের কিছুটা পেছনে রয়েছে। তবে একটি ব্যাপার এখনো পরিষ্কার হয়নি, সিবিডিসিগুলো কি প্রথাগত ব্যাংক একাউন্টের মতো হবে নাকি টোকেন (ক্রিপ্টোকারেন্সি) ভিত্তিক হবে।
টেকসই এবং সবুজ ব্যাংকিং: টেকসই ব্যাংকিং গুরুত্ব পাচ্ছে, ফলে ব্যাংকগুলো সবুজ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। বিভিন্ন পণ্য প্রণয়ন, অপারেশন এবং বিনিয়োগ সিদ্ধান্তগুলোতে পরিবেশগত, সামাজিক এবং প্রশাসনিক (ইএসজি) মানদণ্ডকে মাথায় রাখছে। ২০২৪ সালে ‘নেট জিরো ব্যাংকিং’ আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাচ্ছে। প্যারিস চুক্তি এবং কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সবুজ প্রকল্পে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ করছে। নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্প, টেকসই কৃষি এবং সবুজ অবকাঠামো এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বিশ্বব্যাপী সরকারগুলো সবুজ অর্থায়নের প্রচারের জন্য নীতিগুলো বাস্তবায়ন করছে এবং প্রণোদনা প্রদান করছে। এই সমস্ত চাহিদা ব্যাংকগুলোকে গ্রিন বন্ড, টেকসই বিনিয়োগ তহবিল এবং পরিবেশ বান্ধব ঋণের মতো সবুজ আর্থিক পণ্যগুলো বিকাশ এবং অফার করতে চালিত করছে। পরিশেষে, সিএসআর উদ্যোগের অংশ হিসাবে, অনেক ব্যাংক স্থায়িত্বের লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গ্রাহক অভিজ্ঞতা উন্নয়নে ফিনটেক কোম্পানিগুলোর অবদান: ব্যাংকগুলো আরও ব্যক্তিগত সেবা প্রদানে, গ্রাহকের প্রয়োজন আরও ভালোভাবে বুঝতে ডেটা অ্যানালটিক্স ব্যবহার করছে এবং সর্বমুখী সহায়তা প্রদান করে গ্রাহক অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ফিনটেক কোম্পানিগুলো এক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা পালন করছে। ২০২৪ সালে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ ইউরোপের প্রতিশ্রুতিশীল দেশগুলোতে ফিনটেক কোম্পানিগুলোর আরও সম্প্রসারণ ঘটবে। উদ্ভাবনী আর্থিক সমাধানের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে ফিনটেক কোম্পানিগুলো তাদের অফারগুলোকে আরও শক্তিশালী করবে এবং তাদের সম্প্রসারণ চলমান থাকবে। ২০২৩ সাল নাগাদ ফিনটেকের বাজার ছিল প্রায় ৫.৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যা ২০২৭ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ১০.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি: ডিজিটাল চ্যানেল এবং উদ্ভাবনী পণ্যের মাধ্যমে আর্থিক পরিষেবার বাইরে যারা রয়েছেন তাদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার প্রচেষ্টা বাড়ছে। কেননা, আমরা জানি এখনো ১.৭ বিলিয়ন লোক ব্যাংকিং সেবার বাইরে রয়েছে, অর্থাৎ যাদের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই বা কোনো ঋণ সুবিধা পাচ্ছে না। বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই হার বেশি, কেননা ভৌগলিকভাবে দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী লোক সংখ্যা, যাতায়াত সমস্যা এবং সহজে ও কম খরচে ব্যাংকিং সার্ভিস পাওয়ার সুবিধা না থাকা।
আঞ্চলিক অংশীদারিত্ব চুক্তি: ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস (বিআইএস) ‘নেক্সাস’ প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউরোসিস্টেম টার্গেট ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সেটেলমেন্ট (টিপস), মালয়েশিয়ার রিয়েল-টাইম রিটেইল পেমেন্টস প্ল্যাটফর্ম (আরপিপি) এবং সিঙ্গাপুরের ফার্স্ট অ্যান্ড সিকিউরড ট্রান্সফার্স (ফাস্ট) এর মতো তাৎক্ষণিক পেমেন্ট সিস্টেম সংযুক্ত করে ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এই প্ল্যাটফর্মটি ১.৭ বিলিয়ন লোকের একটি বাজারকে সংযুক্ত করবে, যাতে তারা একে অপরের কাছে সহজে এবং সস্তায় তাৎক্ষণিক অর্থ প্রদান করতে পারে। আঞ্চলিক পেমেন্টকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ভারতও এই নেক্সাস প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত হতে গত ৩০ জুন সুইজারল্যান্ডের বাসেলে একটি চুক্তি সম্পন্ন করে, যেখানে বাকি অংশগ্রহণকারী দেশগুলো ছিলো মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন এবং সিঙ্গাপুর।
রেগুলেটরি টেকনোলজি (RegTech): নিয়ন্ত্রক প্রয়োজনীয়তাগুলো আরও দক্ষতার সঙ্গে মেনে চলার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় সম্মতি, রিপোর্টিং এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সমাধান। সন্দেহজনক লেনদেনগুলো পর্যবেক্ষণ করতে স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রম খরচ এবং মানবিক ত্রুটিগুলো কমাতে সাহায্য করছে। ক্রস বর্ডার লেনদেন বা অন্য যেকোনো বাণিজ্যিক সংক্রান্ত কাজে বিভিন্ন দেশের পরিবর্তিত আইন সঠিকভাবে পরিপালনে সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া স্বয়ংক্রিয় রিপোর্টিং ব্যবস্থা যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতিতে রিপোর্ট প্রদানের সময় এবং কর্মঘন্টা বাঁচিয়ে দিচ্ছে।
সাইবার নিরাপত্তা: ব্যাংকিং আরও ডিজিটাল হওয়ায়, গ্রাহকের ডেটা এবং আর্থিক সম্পদ রক্ষার জন্য মজবুত সাইবার নিরাপত্তা বিধান ফরজ হয়ে উঠেছে। সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে গ্রাহকের আস্থা অর্জন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়, এমনকি যদি আপনি তাদের দ্রুত সমস্যার সমাধান ও সার্ভিস প্রদানও করেন। সাইবার নিরাপত্তাজনিত কারণে বৈশ্বিক ব্যয় ১ ট্রিলিয়নের বেশি নষ্ট হয়েছে। আর এটা ঘটেছে ডেটা লঙ্ঘন, মেধা সম্পত্তি চুরি, আর্থিক জালিয়াতি এবং ব্যবসায়িক ক্রিয়া-কলাপে ব্যাঘাত ঘটার কারণে।
এই প্রবণতাগুলো প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, পরিবর্তনশীল গ্রাহক প্রত্যাশা এবং বিকাশমান নিয়ন্ত্রক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য খুচরা ব্যাংকিং খাতের গতিশীল প্রকৃতিকে প্রতিফলিত করে।
বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংকগুলো কি খুচরা ব্যাংক পরিচালনা করছে?
সম্প্রতি, বেশ কয়েকটি বড় ব্যাংক গ্রাহক-কেন্দ্রিক পরিষেবাগুলোতে নজর দিয়ে তাদের খুচরা ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্প্রসারিত বা প্রথমবারের মতো শুরু করেছে। যার কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো:
১. গোল্ডম্যান স্যাকস – ঐতিহ্যগতভাবে বিনিয়োগ ব্যাংকিংয়ের জন্য পরিচিত। গোল্ডম্যান স্যাকস তার ভোক্তা ব্যাংকিং প্রসারিত করার জন্য ২০১৬ সালে ‘মার্কাস’ প্রতিষ্ঠা করে, যেটি ভোক্তা ব্যাংকিং এবং খুচরা ঋণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে।
২. বার্কলেস – বার্কলেস তার খুচরা ব্যাংকিং পরিষেবাগুলোকে উন্নত করার উপর জোর দিয়ে ডিজিটাল ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদান করছে এবং এটি তার নিজস্ব নামেই পরিচালিত হচ্ছে।
৩. মরগান স্ট্যানলি – ২০২০ সালে ‘ইট্রেড’ নামে অনলাইন ব্রোকারেজ পরিষেবা অধিগ্রহণের মাধ্যমে এটি তার খুচরা ব্যাংকিং এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত করেছে।
৪. বিএনওয়াই মেলন – এটি সক্রিয়ভাবে তার খুচরা ব্যাংকিং পরিষেবাগুলো বিকাশ করছে, যার লক্ষ্য প্রথাগত এবং বিনিয়োগ ব্যাংকিং ভূমিকার বাইরে ভিন্ন আয়ের পথ অন্বেষণ করা।
৫. জে.পি. মরগান – ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জে.পি মরগান যুক্তরাজ্যে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ২২২ বছরের ইতিহাসে তারা প্রথমবারের মতো খুচরা ব্যাংকিংয়ের জগতে পা রাখে।
উপরের উদাহরণগুলো প্রমাণ করে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের হাত ধরে বড় বড় ব্যাংকগুলো অধুনা খুচরা ব্যাংকিংয়ের জগতে প্রবেশ করছে।
আগামীর ব্যাংক নির্মাণ
আগামীর ব্যাংক নির্মাণ অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এবং চ্যালেঞ্জিং কাজ। প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে ব্যাংকিং শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ এবং সৃজনশীল পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তনগুলো গ্রাহক সেবা, নিরাপত্তা, এবং দক্ষতাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। ডিজিটাল ব্যাংকিং, ব্লকচেইন প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এই নতুন ব্যাংকগুলোর মূল ভিত্তি হবে।
আগামীর ব্যাংক হবে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে গ্রাহক সেবার মান সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। গ্রাহকরা তাদের ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন সহজে এবং দ্রুত। এছাড়াও, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ব্যক্তিগতকৃত পরিষেবা প্রদান করতে সক্ষম হবে, যার মাধ্যমে তারা গ্রাহকদের প্রয়োজন এবং পছন্দের উপর ভিত্তি করে সেবা প্রদান করবে।
নিরাপত্তা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে। ব্লকচেইন প্রযুক্তি এবং উন্নত অ্যানক্রিপশন পদ্ধতি ব্যবহার করে, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের তথ্য এবং সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ব্যাংকিং প্রক্রিয়াকে আরও দক্ষ এবং সুরক্ষিত করবে।
এটি শুধু গ্রাহকদের জন্য নয়, ব্যাংক কর্মীদের জন্যও অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ সময়। নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের সাথে কাজ করে, তারা তাদের কাজকে আরও ফলপ্রসূ এবং সৃজনশীল করতে পারবে। তাদের কাজের মান বৃদ্ধি পাবে এবং তারা গ্রাহকদের আরও ভালভাবে সেবা প্রদান করতে পারবে।
তাই,আগামীর ব্যাংক নির্মাণে আমাদের সচেতন এবং উদ্ভাবনী হতে হবে। নতুন প্রযুক্তি এবং পদ্ধতির সাথে তাল মিলিয়ে, আমরা এমন একটি ব্যাংকিং সিস্টেম তৈরি করতে পারব যা গ্রাহকদের সর্বোত্তম সেবা প্রদান করবে এবং তাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠবে।
লেখক: রিটেইল ব্যাংকার, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি
সারাবাংলা/আইই