Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জনসংখ্যায় ভারাক্রান্ত পৃথিবীতে প্রয়োজন দক্ষ মানুষ

অলোক আচার্য
১১ জুলাই ২০২৪ ১৫:৪৬

অতিরিক্ত জনসংখ্যা সম্পদ না সমস্যা এটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এটা মূলত নির্ভর করছে জনসংখ্যাকে কিভাবে গড়ে তুলছে। অর্থাৎ দেশের প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে কি না তার ওপর। অতিরিক্ত জনসংখ্যা যেমন এশটি সমস্যা সেভাবেই জনসংখ্যা কমে যাওয়াটাও একটা সমস্যা। আসলে জনসংখ্যা কম নয় প্রয়োজন নিয়ন্ত্রণ করা। বৃদ্ধি হারকে শূণ্যের কোঠায় আনা নয় বরং কমিয়ে আনা। কারণ দেশের জন্য তরুণ জনগোষ্ঠী প্রয়োজন রয়েছে। এখন দেশ যদি তাদের দক্ষ বা যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পারে তাহলেই জনসংখ্যা সম্পদে রুপান্তর করা সম্ভব হবে এবং তখন এটা কোনো সমস্যা না হয়ে সম্পদে পরিণত হবে। জনসংখ্যা জনসম্পদে পরিণত করা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের জন্য উপযুক্ত কাজ নিশ্চিত করা, তাদের কাজে উৎসাহিত করা এবং এ লক্ষ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, প্রশিক্ষণ প্রদান,ঋণ বিতরণ ইত্যাদি কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রুপান্তরিত করতে সক্ষম হলে তা সম্পদ। আর এই সম্পদই হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় সম্পদ। অন্যান্য সম্পদ আমরা এখন যা ব্যবহার করছি তা কোনো না কোনো সময় শেষ হবে। কিন্তু মানুষ যদি চেষ্টা করে তবে এর বিকল্প মানুষই উদ্ভাবন করতে পারে। এশিয়ার বৃহত্তম দেশ চীন বৃহৎ জনগোষ্ঠির দেশ। একসময় চীনে জনসংখ্যা বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে এক শিশু নীতি চালু করে। এই জনগোষ্ঠীকে চীন জনসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে ভালোভাবেই অগ্রসর হয়েছে। সেই সাথে টেনে ধরতে পেরেছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির লাগাম। একটি লক্ষ্য,পরিশ্রম এবং কর্মদক্ষতার কারণে চীন আজ বিশ্বে নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছে। এই যে নিন্ম জন্মহার এর পেছনের কারণ হিসেবে দেখা যায় যখন একটি দেশ ক্রমাগত সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করে তখন প্রত্যেকেই নিজের ক্যারিয়ারের দিকে ঝুঁকে যায়। ফলে বিয়ে এবং সন্তানধারণে ক্রমেই অনাগ্রহীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। পৃথিবী বিশাল জনসংখ্যা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এই জনসংখ্যা প্রতিটি মহাদেশে এবং প্রতিটি দেশে এক নয়। কোনো দেশ তার জনসংখ্যা বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে পেরেছে আবার কোনো দেশ চেষ্টা করছে। প্রশ্ন উঠতে পারে যে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা কত? গণমাধ্যম থেকে পাওয়া সংখ্যাটা গত ডিসেম্বরের। যুক্তরাষ্ট্রের আদম শুমারি ব্যুরো কর্তৃক বৃহস্পতিবার প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের জনসংখ্যা গত এক বছরে সাড়ে সাত কোটি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত জানুয়ারির এক তারিখে বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৮০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। আদম শুমারি ব্যুরোর পরিসংখ্যান মোতাবেক, গত বছরে বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১ শতাংশেরও নিচে। ২০২৪ সালের শুরুতে গোটা বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে ৪.৩ জনের জন্ম ও দু’জনের মৃত্যু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ০.৫৩ শতাংশ যা বৈশ্বিক সংখ্যার প্রায় অর্ধেক। ১৭ লক্ষ মানুষ যোগ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাতায় এবং নববর্ষের দিন এই দেশের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৩৩ কোটি ৫৮ লাখ। ১৯৩০-এর দশকে অর্থনৈতিক মহামন্দার ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সবচেয়ে কম ছিল। এই সময় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৩ শতাংশ। ইউএনএফপিএর সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৮০০ কোটি ৪৫ লাখ। শীর্ষ জনসংখ্যার দেশ ভারতে এখন জনসংখ্যা প্রায় ১৪২ কোটি ৮৬ লাখ। আর পরের অবস্থানে থাকা চীনে রয়েছে প্রায় ১৪২ কোটি ৫৭ লাখ মানুষ। ২০৫০ সালেও ভারত ও চীনের অবস্থান প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানেই থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। তবে জনসংখ্যার আকার ভিন্ন মাত্রা পাবে। ওই সময় ভারতের জনসংখ্যা হবে প্রায় ১৬৬ কোটি ৮ লাখ এবং চীনের কমে হবে প্রায় ১৩১ কোটি ৭ লাখ।

বিজ্ঞাপন

ভারত ও চীনের পর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ (২০২২) হিসাবে এই দেশের জনসংখ্যা ৩৩ কোটি ৭০ লাখ এবং ২০৫০ সালে এই জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ। দ্রুত বাড়ছে জনসংখ্যা ১৮০৪ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ১০০ কোটি। ২০০ কোটিতে পৌঁছাতে সময় লেগেছে ১২৩ বছর (১৯২৭ সাল)। এরপর থেকে দ্রুতই বাড়তে থাকে বিশ্বের জনসংখ্যা। ৩২ বছর পর ১৯৫৯ সালে জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৩০০ কোটিতে। এরপর ৪০০ কোটির মাইলফলক স্পর্শ করতে সময় লাগে মাত্র ১৫ বছর। ১৯৭৪ সালে ৪০০ কোটি পার হওয়ার পর এই বৃদ্ধির হার আরও ত্বরান্বিত হতে থাকে। ১৯৭৪ সালের পর প্রতি ১২-১৩ বছরে ১০০ কোটি করে বেড়েছে বিশ্বের জনসংখ্যা। ১৯৮৭ সালে ৫০০ কোটি, ১৯৯৮ সালে ৬০০ কোটি, ২০১১ সালে ৭০০ কোটি আর ২০২২ সালে ৮০০ কোটিতে দাঁড়ায় এই সংখ্যা। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা হবে ৯০৭ কোটি। আর ২১০০ সালে ১ হাজার ৪০ কোটির ম্যাজিক সংখ্যা স্পর্শ করবে। আফ্রিকার দেশগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি। যেমন নাইজেরিয়া, কঙ্গো, ইথিওপিয়া। ২০৫০ সাল নাগাদ এসব দেশ শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় চলে আসবে। বর্তমানে ভারতের তুলনায় চীনের বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ও মোট প্রজনন হার (টিএফআর) বেশ কম। ফলে ভারতের জনসংখ্যার আকার বাড়ছে। এতেই ভারত হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ।

বিজ্ঞাপন

সব দেশই তাদের জনসংখ্যাকে সম্পদে রুপান্তরের চেষ্টা করছে। কারণ দেশগুলো বুঝে গেছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করার পাশাপাশি জনসংখ্যাকে সম্পদে রুপান্তর করা। কিন্তু সত্যিকার অর্থে বিষয়টি চ্যালেঞ্জের। এর কারণ হলো প্রতিটি দেশের সামর্থ সমান নয়। তাছাড়া যেসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি সেসব উন্নত দেশ নয়। ফলে দারিদ্রতা দূর করতেই দেশগুলো যখন হিমশিম খায় তখন জনসংখ্যা বৃদ্ধির কাজটি বেশ কঠিন হয়ে যায়। কারণ দরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে অসচেনতা এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাব থাকে যা জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধের অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। তাদের অনেকের মধ্যেই সব কিছু ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। উন্নয়নের স্বাদ প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত পৌছাতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়ে আনার পাশাপাশি জন্ম ও মৃত্রুহারে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। জনসংখ্যা দারিদ্রতা সৃষ্টি করা কি না সেটা নির্ভর করে জনসংখ্যাকে কিভাবে তৈরি করা হয় তার ওপর। যেমন- প্রতিটি মানুষ যদি শিক্ষা লাভের আওতায় আসে, প্রযুক্তি জ্ঞানের অধিকারী হয় এবং আতœনির্ভরশীল হওয়ার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয় তাহলে সে নিজেকে সম্পদ হিসেবেই গড়ে তোলে। প্রতিটি মানুষই একজন সম্পদ। সেজন্য তাকে পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে হবে। সব সময় রাষ্ট্রের এই সক্ষমতা পুরোপুরি থাকে না। ক্রমে তা অর্জন করতে হয়। বিশাল জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। তার সামর্থ্য আছে এবং সে দেশের জন্য কিছু করতে পারে। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই সেই স্পৃহা আছে। যা অনেক ক্ষেত্রেই প্রকাশ পায় না। একটি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী যখন তার সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে ব্যস্ত থাকে অর্থাৎ পরিশ্রমী থাকে তাহলে নিজ থেকেই তারা জন্মহার নিয়ন্ত্রণ করবে। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে যদি বাসস্থানের সুযোগ, কাজের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি, আবাদী জমি রক্ষা, পুকুর ডোবা ভরাট থেকে বিরত থাকা সহ নানা পদক্ষেপ নিতে না পারলে সমাজে নানা প্রতিবন্ধকতা আসবে। বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য সবকিছুই প্রয়োজন যা একজন নাগরিক রাষ্ট্রের কাছে দাবি করতে পারে। ক্রমেই সেই চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। আজ যেমন পথশিশুরা অবহেলায় বা অনাদরে বড় হচ্ছে, যাদের এই সমাজে শিক্ষা থেকে সবকিছু পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তা পাচ্ছে না। এ ধরনের অধিকার না পাওয়াদের সংখ্যাও বাড়তে থাকবে। যা আমাদের দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করবে। সমাজে বিশৃঙ্খলার দেখা দিতে পারে, অস্থিরতা বাড়তে পারে, দ্বিধাগ্রস্থ যুবকের সংখ্যা বাড়তে পারে যারা আমাদের দেশের সম্পদ হতে পারে। কিন্ত তাদের সেই মেধা, সেই যোগ্যতা কাজে না লাগাতে পারলে জনসম্পদ রূপান্তর করা কঠিন হয়ে পরবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে সফল করতে হলে সবার মধ্যে চাই সচেতনতা। সচেতন না হলে কোন কার্যক্রমই ফলপ্রসু হবে না। আমাদের সম্পদ সিমিত। এই সম্পদের একটি অঢেল প্রাপ্তি হলো দক্ষ জনসংখ্যা। সীমিত সম্পদ দিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তার কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। এই সম্পদকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হবে। এ সম্পদকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের জন্য কর্তৃপক্ষ নানা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়েই এ সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরী শিক্ষায় যথাযথ গুরুত্বারোপ করতে হবে। হাতে কলমে শেখার কোন বিকল্প নাই। জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান করতে হলে অবশ্যই শিক্ষিত ও দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করতে হবে। তখন অতিরিক্ত জনসংখ্যা বোঝা না হয়ে বরং সম্পদে পরিণত হবে এবং দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

অলোক আচার্য জনসংখ্যায় ভারাক্রান্ত পৃথিবীতে প্রয়োজন দক্ষ মানুষ মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৩১

বাঘায় কৃষককে গলা কেটে হত্যা
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৩

আরো

সম্পর্কিত খবর