দেশাত্মবোধ ও আন্দোলনের মৌলিকতা
২৫ জুলাই ২০২৪ ১৪:৫৬
বাঙালির ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে দেশাত্মবোধ চেতনা একটি অপরিহার্য মৌলিক উপাদান। স্বাধীনতার সংগ্রাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন অধিকার আদায়ের আন্দোলন পর্যন্ত, দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধের ভূমিকা অতুলনীয়। তবে বর্তমান সময়ে কিছু আন্দোলন ও স্লোগান এমন দিকনির্দেশনার অভাবে সংকটে পড়েছে। যা আমাদের ঐতিহ্য ও দেশাত্মবোধের মূলগত বিষয়গুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
দেশাত্মবোধ চেতনা হলো একটি জাতির আত্মপরিচয়ের মূল ভিত্তি। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের স্লোগান ‘তুমি কে, আমি কে, বাঙালি বাঙালি’ দেশপ্রেম ও মুক্তির অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল। এ স্লোগান আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, এবং জাতীয় গর্বের বহিঃপ্রকাশ ছিল। দেশে যেকোনো সংকট ও আন্দোলনের সময় ওই দেশাত্মবোধ চেতনা আমাদেরকে একত্রিত করে। আমাদের জাতীয় পরিচয়ের প্রতি দায়বদ্ধ করে তোলে।
আন্দোলনের সফলতা নির্ভর করে তার মৌলিক উদ্দেশ্য ও চেতনায়। একটি আন্দোলনের উদ্দেশ্য যতই যৌক্তিক হোক না কেন, যদি তা দেশাত্মবোধ চেতনায় সমৃদ্ধ না হয়, তাহলে সেই আন্দোলনের মৌলিক মূল্য কমে যায়। সাম্প্রতিক কোটাব্যবস্থা বাতিলের আন্দোলনে ‘রাজাকার’ স্লোগানের ব্যবহার উদ্বেগজনক ছিল। যদিও কিছু সময় পর আন্দোলনকারীরা ওই স্লোগান পরিবর্তন করেছিলেন। যাইহোক, রাজাকার শব্দটি স্বাধীনতার বিরোধী শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অবজ্ঞা করা হয়। এই ধরনের স্লোগান আন্দোলনের আদর্শ ও উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। জাতীয় ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান অনেকেই অপরিপক্কভাবে বা প্ররোচনার প্রভাবে আন্দোলনকারীরা ব্যবহার করেছেন। যদিও এটি আন্দোলনের গতি বা কর্মসূচির অংশ হয়, তবে এর মাধ্যমে জাতির মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অমর্যাদা প্রকাশ পায়। যারা আন্দোলন স্লোগান হিসেবে রাজাকার শব্দ ব্যবহার করেছেন, তাদের উচিত ওই স্লোগানের জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং জাতীয় চেতনাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে কাজ করা।
যেকোনো আন্দোলনের বিজয় তখনই স্থায়ী হবে, যখন তা দেশাত্মবোধ চেতনায় শাণিত হবে। দেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতীয় পরিচয়কে সম্মানিত করার মাধ্যমে আন্দোলনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও মূল্য সংরক্ষিত থাকবে। তাই, আন্দোলনের সফলতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য আমাদের উচিত দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সম্মান জানানো। এসব চেতনাবিরোধী স্লোগানের বিরুদ্ধে সবার কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত।
দেশাত্মবোধ চেতনা ও আন্দোলনের মৌলিকতা আমাদের জাতীয় সত্তার মূল ভিত্তি। কোনো আন্দোলন যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ না হয়, তাহলে বিজয় অর্জন করলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। আমাদের উচিত দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আন্দোলন পরিচালনা করা এবং জাতীয় ঐক্য ও সম্মানকে প্রাধান্য দেওয়া। এইভাবে, আমাদের আন্দোলনগুলো সঠিক দিশা ও প্রভাব রাখতে সক্ষম হবে এবং জাতির কল্যাণে অবদান রাখবে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী ও অনলাইন একটিভিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই