ফেসবুকের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?
২ আগস্ট ২০২৪ ১৮:২৩
মত প্রকাশের স্বাধীনতা বা বাকস্বাধীনতা মানুষের একটি মৌলিক অধিকার পর্যায়ে পড়ে । বাংলাদেশ জনসংখ্যা ১৭ কোটি , যার মধ্য বর্তমান সাড়ে ৬ কোটি মানুষ জনপ্রিয় সোশ্যাল সাইট ফেইসবুক ব্যাবহার করে । মত প্রকাশের স্বাধীনতায় ফেইসবুক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বর্তমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যা স্পষ্ট প্রতিয়মান। ছাগলকান্ডের মতিউর কিংবা পিএসসি প্রশ্নফাঁসের আবেদ আলী সহ সমাজের নানা অনিয়ম, দূর্নীতি সাধারণ মানুষ বর্তমান তাঁদের মতামত ফেইসবুক দিচ্ছে । এটি একটি ভালো দিক । যদিও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় তলানীতে আছে বাংলাদেশ সহ ভারত ও আফগানিস্তান।
বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগের ৩৯ ধারায় বলা হয়েছে, ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইলো’। একই ধারার ২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে –ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের এবং খ) সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হইল।
এই ধারাটির প্রথম অংশে কিন্তু পরিষ্কার বলা হয়েছে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার কথা। আমি একজন নাগরিক হিসেবে কেবল মত প্রকাশের স্বাধীনতা চাইবো কিন্তু বিবেকের জায়গাটিকে অস্বীকার করবো তাহলেতো হবে না। মত প্রকাশের স্বাধীনতা মনে হয় না পৃথিবীর কোনো দেশেই কোনো শর্ত ছাড়া নিশ্চিত করা হয়েছে ।
বলা হয়ে থাকে ব্যাধিই সংক্রামক স্বাস্থ্য নয় । তবে বর্তমানে তথ্যের অবাধ প্রবাহের ফলে এটিই হয়েছে । চিন্তার স্বাধীনতা, স্বাধীন মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকলেও এটির অপব্যবহার বেশ লক্ষনীয় । ফেইসবুকের অবাধ ব্যাবহারের ফলে একটি স্বার্থন্বেষী মহল তাদের অশুভ উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে, সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা কে পুজি করে, গুজব, অপপ্রচার চালিয়ে দেশের শান্তি বিনষ্টের অপচেষ্টা চালায় । এতে দেশপ্রেমিক সাধারণ মানুষের প্রাণ নাশ হয় , ব্যাপক জান মালের ক্ষয়ক্ষতি হয় ।
ফেইসবুক একটা প্রজন্মকে করেছ বই বিমুখ, অস্থির এবং ব্যাপক বেপরোয়া। ফেইসবুক এখন সবাই ভাইরাল ট্রেন্ডিং ইস্যুতে গা ভাষায়, ভাইরাল অর্থ কিন্তু দুষিত বাস্তবতা তাই। ফেইসবুক শুধু নতুন প্রজন্মকে অস্থির করেছে তা নয় , ৪০ উর্ধ বেশিরভাগ ইউজার সবচেয়ে অপব্যবহার করছেন সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে ।
বর্তমানে ফেইসবুক মানুষকে যেমন সবার আগে তথ্য ও সংবাদ দিচ্ছে তেমনি সবার আগে গুজব ও অপতথ্য ছড়াচ্ছে । এতে সমাজের শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে । ফেইসবুক এখন ঘন্টায় পর ঘন্টা মানুষ অপচয় ও অপব্যায় করছে । ফেইসবুক ঘেটে দেখা যায় প্রতিটি মানুষ এখানে তাঁদের ব্যাক্তিগত ব্র্যান্ডিং করতে ব্যাস্ত তাদের অর্জন, সুন্দর মুহূর্ত ইত্যাদি শেয়ার করছে । এতে তৈরী হচ্ছে হতাশা , হিংসা ও পরশ্রীকাতরতা । এর পাশাপাশি তথ্য উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে এতে নিরাপত্তার ঘাটতি ঘটে । ফেইসবুক যেমন প্রেম হয়, তেমনি হচ্ছে বিচ্ছেদ, পরক্রিয়া যার ফলে সংসার পর্যন্ত ভেঙ্গে যাচ্ছে । খারাপ ও বিরক্তিকর মানুষের সান্নিধ্য আসতে হয় । প্রতিটি উপকারী জিনিসের ক্ষতিকর দিক আছে, বাকস্বাধীনতা ও ফেইসবুকেরও তাই ।
সরকার কে নতুন প্রজন্মকে বইমুখি করতে উদ্যোগী হতে হবে । পাড়ায় পাড়ায় ব্যাক্তি উদ্যোগে পাঠাগার ও পাঠক তৈরী করতে হবে । পাঠাগারে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠাপোষকতা দিতে হবে ।
লেখা: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এজেডএস