Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আগামীর বাংলাদেশকে যেমন দেখতে চাই

ইমরান ইমন
৯ আগস্ট ২০২৪ ১৯:৪৯

ছাত্রদের ক্ষেপিয়ে, ছাত্রদের রক্ত ঝরিয়ে কেউ কখনও টিকে থাকতে পারেনি। ইতিহাসের স্রোতধারায় যারা এমন কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের সবারই করুণ পরিণতি হয়েছে। আমরা একটু পেছনে ফিরে তাকালেই তার প্রমাণ দেখতে পাবো।

আর যারা সামান্য লোভের বশবর্তী হয়ে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে কতিপয় দেশখেকোর সঙ্গে হাত মিলায় তাদের পরিণতিও শেষমেশ ভালো হয় না। ইতিহাস তাই বলে। মিরজাফররা সাময়িক ভালো থাকলেও প্রকৃতি কখনও তাদের ক্ষমা করে না, তারা ‘রিভেঞ্জ অব ন্যাচার’ থেকে কোনভাবেই বাঁচতে পারে না। কর্মের করুণ ফল তাদের ভোগ করতেই হয়।

আমরা এরও প্রমাণ দেখেছি। সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে অনেক তরুণ শহীদ হয়েছেন, যা কোনভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না। যাদের দায়িত্বহীনতা ও উস্কানিতে এতগুলো প্রাণ নির্মমভাবে ঝরে গেল, সেটারও সুষ্ঠু বিচার হতে হবে।

শেষমেশ শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাসীন সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। বায়ান্ন, ঊনসত্তর, একাত্তর আর নব্বইয়ের মতো চব্বিশেও তারুণ্যের জয় হয়েছে। আর এ জয় আগামীর বাংলাদেশের জন্য বড়ো দৃষ্টান্ত। তরুণসমাজ চাইলেই যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে, তারুণ্যের শক্তির কাছে যে সব শক্তি পরাহত হয়, এ আন্দোলন এর বড়ো দৃষ্টান্ত।

আমাদের রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, বরকত, আসাদ, মতিউর, নূর হোসেন, মাস্টারদা সূর্য সেন, বীরকন্যা প্রীতিলতাদের দেশপ্রেম ও আত্মদান এদেশের ছাত্রসমাজের রক্তে মিশে আছে। এদের প্রতিহত করবে কোন কালশক্তি?

সব কালশক্তিকে পরাজিত করে এদেশের তরুণসমাজ বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারে, অবশেষে এসেছে সে বিজয়। তরুণ প্রজন্ম যে একটা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মানবসম্পদ, সে কথা আমাদের রাষ্ট্রনায়কেরা ভুলে গিয়েছিলেন। আগামীর রাষ্ট্রনায়কদের তরুণসমাজকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে, রাষ্ট্র বিনির্মাণে তাদের চিন্তা ও মতকে গুরুত্ব দিতে হবে। তারুণ্যের এ আন্দোলন আগামীর রাষ্ট্রনায়কদের জন্য বড়ো শিক্ষা।

আগামীর বাংলাদেশকে বিনির্মাণে দেশপ্রেমিক, সৎ, শিক্ষিত, মেধাবী ও চৌকস মানুষদের গুরুত্ব দিতে হবে। অস্তিত্বহীন রাষ্ট্রীয় চারটি মূলনীতি: জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প সমূলে উৎপাটন করতে হবে। কেড়ে নেওয়া মানুষের ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা পিরিয়ে আনতে হবে, প্রতিষ্ঠিত করতে হবে মুক্তমত ও মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা।

একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনগণকে ‘খেলনার পুতুল’ বানিয়ে রাখার হাতিয়ার হলো ভোটাধিকার হরণ করে নেওয়া। জনগণের সে ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

সাম্প্রতিক বাংলাদেশের ‘অ্যালার্মিং’ টার্ম হলো ‘প্লুটোক্রেসি ইন পলিটিক্স’। আজকের বাংলাদেশের করুণ অবস্থার জন্য দায়ী এ ব্যবস্থা। রাজনীতি যখন ধনীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে যখন এ সম্প্রদায়ের প্রভাব থাকে, তখন কল্যাণরাষ্ট্র গড়ে তোলার কাঠামো পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। তখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লেজুড়বৃত্তি। দেশ চলে যায় রসাতলে।

সাম্প্রতিক বাংলাদেশের দিকে তাকালে আমরা এর নজির দেখতে পাবো। সাম্প্রতিককালে আমরা দেখেছি, একেকটা শিল্পগ্রুপ এদেশের জনগণের টাকা ও সম্পদ লুটপাট করে, বিদেশে পাচার করে কীভাবে ‘আলাদিনের চেরাগ’ বানিয়েছে। কীভাবে তারা দেশের ব্যাংকিং সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছে, কীভাবে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। এসব লুটেরাদের সবাই এদেশের রাজনীতি ও সরকারনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। এ ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে হবে।

একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, দেশ থেকে ‘গণতন্ত্র’ যাতে কোনভাবেই পেছনের দরজা দিয়ে আর না পালায়, অতীতে বিভিন্ন সময়ে যেভাবে পালিয়েছে। আরও খেয়াল রাখতে হবে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে কেউ যাতে ‘দূরভিসন্ধি’ করতে না পারে। সব সংকট পেরিয়ে রক্ত দিয়ে কেনা বাংলাদেশ ভালো থাকুক, সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলুক—এই প্রত্যাশা।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

সারাবাংলা/এজেডএস

আগামীর বাংলাদেশকে যেমন দেখতে চাই ইমরান ইমন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর