Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুলিশ স্থাপনা অন্ধকারে লজ্জিত বিস্মিত

বিপ্লব বড়ুয়া
১২ আগস্ট ২০২৪ ১৬:১৮

তিন অক্ষরের একটি নাম ‘পুলিশ’। এই নামটি নিয়ে বিগত ক’দিনে দেশে প্রচন্ড রাগ ক্ষোভ বয়ে গেছে। যা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক পুলিশ জীবন দিয়েছে; আহত হয়েছে, যা ছিল অনাকাঙ্খিত। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে পুলিশের ওপর এমন বর্বরোচিত হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ সাধারণ শ্রেণিপেশার মানুষকে হতবাক, বিস্মিত, বিচলিত করেছে। পুলিশ শব্দটি শুধু বাংলাদেশে নয় পৃথিবীর সবদেশে বিরাজমান। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রতিটি দেশেই পুলিশের রয়েছে অনন্য ভূমিকা। কিন্তু আমাদের দেশে কেন পুলিশের ওপর এরকম বর্বর নেক্কারজনক হামলা ও হত্যাকান্ডের ঘটনা হলো? তাদের অপরাধ কী ছিল? এ কেমন দেশ, এ কেমন পরিবেশ, ভাবতে গা শিউরে উঠে। আমরা কোন অন্ধকার যুগে বাস করছি; দেশজুড়ে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক বিশ্লেষণ। বিষয়টি শুধু আশ্চর্য্যরে নয়; অতিআশ্চর্য হয়ে বাংলাদেশের চোখে ধরা পড়েছে। এরকম জঘন্য নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে দেশের মানুষ লজ্জিত ঘৃনিত বিস্মিত।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের জনগণ পুলিশ বিহীন পাড় করেছে ৫টি দিন। বছরের কোনো একটি দিন বা ১ মিনিট সময়ের জন্যও যেখানে দেশের পুলিশস্থাপনা আলো নিভে না; সেখানে বিগত ৫ আগষ্ট দুপুরের পর থেকে ৯ আগষ্ট পর্যন্ত দেশের প্রায় সাড়ে চারশতাধিক থানা ও স্থাপনাগুলোতে আলো জ্বলেনি। উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের অফিসগুলোর অবস্থাও একই চিত্র। সবখানে বিরাজ করছে সুনসান নিরবতা, গুটেগুটে অন্ধকার। বিরাজ করছে হাহাকার শূন্যতা। দেশের সব থানা ও স্থাপনাগুলোতে আলো জ্বলতে আরো ক’দিন লাগতে পারে তারও কোনো সঠিক তথ্য নেই। তবে পুলিশ প্রধান তার এক বক্তব্যে গত ৮ আগষ্ট নির্দেশ জারি করেছে সকল পুলিশকে সন্ধ্যার মধ্যে নিকটস্থ জেলা পুলিশ লাইনে যোগদান করতে। ছাত্র-জনতার নামে কিছু উশৃঙ্খল দুস্কৃতিকারীরা পুলিশ ও তাদের স্থাপনায় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে; এ রকম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতায় পুলিশরা তাদের কর্মস্থলে যোগ দেওয়া থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখেন। প্রতিটি দেশের আইন শৃঙ্খলায় প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকেন পুলিশ বাহিনী। রাতদিন রোদ, ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে অপরিসীম ত্যাগ ও পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে পুলিশরা কাজ করে থাকেন; যা অন্যকোনো বাহিনীর ক্ষেত্রে তেমন একটা চোখে পড়ে না। বাংলাদেশে এইবারই প্রথম এবং বিশ্বের আর কোনো দেশে থানা আক্রমন করে কর্মরত পুলিশদের হত্যা, অস্ত্রশস্ত্র লুটপাট, দলিল-দস্তাবেজ, আসবাবপত্রসহ ভবন পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সম্ভবত এটিই প্রথম। এই ক’দিন পুলিশদেরকে এক বিভীষিকা অস্থির সময় পার করতে হয়েছে; যা ছিল অবিশ্বাস্য। পুলিশরা পানি, ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে কেউ কেউ প্রাণ বাঁচাতে পারলেও আর কিছু পুলিশকে উগ্রবাদী উশৃঙ্খল জনগোষ্ঠীর হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে। তাদেরকে মাথা, মুখে,শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতে করতে জ্বলজ্যান্ত মেরে ফেলেছে। একটি মুক্ত স্বাধীন দেশে কেউ আশা করেনি। গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের ডাকা টানা কর্মসূচীর এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকে দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ব্যাপক হামলা চালায়। সেই থেকে পুলিশ স্থাপনায় আলোর বদলে গুটগুটে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়! জনগণের নিরাপত্তার প্রধান আশ্রয়স্থল থানা, পুলিশের ওপর এমন হামলা ও হত্যাকান্ড যারা ঘটিয়েছে তারা মানুষ নামের একশ্রেণির মানুষরূপী দানব! আধুনিক এই সভ্য সমাজে এসে এরকম কর্মকা- কী কখনো ভাবা যায়!

বিজ্ঞাপন

পুলিশের অনুপস্থিতিতে এই ক’দিনে দেশব্যাপী অসংখ্য অপরাধমুলক ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলো ভয়াবহ ডাকাতের কবলে পড়ে। লুটপাট চলায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়িতে। হামলা হয় সংখ্যালুঘুদের ধর্মীয় প্রতিষ্টান ও বাসাবাড়ি। হামলা ও হত্যাকা- থেকে বাদ যায়নি সদ্য সরকার থেকে পদত্যাগী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের শত শত কার্যালয়, নেতাকর্মি ও তাদের বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্টান। ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা হত্যা, হামলা, লুটপাটে ছাত্র আন্দোলনের কেউ জড়িত নয় বলে গণমাধ্যমকে জানান। আন্দোলনের সন্বয়ক ছাত্রনেতারা এই জাতীয় কর্মকান্ডের সাথে জড়িতদের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতাকে প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছন। পুলিশের এই নড়বড়ে অবস্থা হওয়ার পিছনে রাজনৈতিক দলগুলোর দায় কোন অংশে কম নয়। স্বাধীনতার পর যে দল বা শাসকগোষ্ঠী দেশ চালিয়েছে তারা প্রত্যেকেই পুলিশকে নিজেদের বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে। পুলিশ হচ্ছে জনগণের বন্ধু এই চিরাচরিত বাণীটি পৃথিবীর সবদেশে প্রতীয়মান, শুধু আমাদের দেশে পুলিশকে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করায় প্রত্যেক শাসকগোষ্ঠি। সাধারণ জনগণের কাছে পুলিশ হয়ে ওঠে এক ভয়ংকর ও আতংকের নাম। জনগনের সার্বিক নিরাপত্তা থেকেও সরকারপার্টি সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত হতে থাকে পুলিশ। সেই সুযোগকে অপব্যবহারে কাজে লাগায় সরকারদলীয় নেতাকর্মিরা। থানা পরিণত হয় চাঁদা তোলার ক্লাব ঘরে। আজ দেশব্যাপী পুলিশ বাহিনীর এই হাল হওয়ার পিছনে রাজনৈতিক দলগুলোই একমাত্র দায়ী। আবার পুলিশ বাহিনীর কিছু কিছু উচ্চাভিলাষী অফিসারদেরও রয়েছে ব্যাপক গাফিলতি। তারা নিজেদের স্বার্থে নি¤œস্তরের পুলিশদের ব্যবহার করেছে যত্রতত্রভাবে। কিছু পুলিশ ফুটপাতের দোকানদার থেকে শুরু করে গাড়ির ড্রাইভারদের পকেট কাটে। থানায় আইনের আশ্রয় নিতে গিয়ে মানুষকে উল্টো হয়রানীর শিকার হতে হয়। যে বাহিনীকে সুদক্ষ করে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে সৎ সততা, শৃঙ্খলা ও ন্যায়ের যে প্রতিজ্ঞা পাঠ করানো হয়, চাকরিতে প্রবেশের কয়েকদিনের মাথায় তা বেমালুম ভুলে যায়। অবশ্য পুলিশ বাহিনীর সবাইকে দোষীকরা ঠিক নয়; এর মধ্যে সৎ ন্যায়নিষ্ঠবান পুলিশকেও আমরা দেখতে পাই। পুলিশের নানাবিধ কর্মকান্ডে বন্ধু থেকে আতংকে পরিণত হওয়ার কারণে রাগ ক্ষোভে আজ গণবিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটেছে বলে অনেক মনে করেন। এখন খোদ পুলিশ বাহিনীতে কর্মরতরাই সংস্কারের আওয়াজ তুলেছে। তারা চাকরি করতে হলে কয়েকটি শর্তও পুরণ দাবিও তুলে ধরেছেন।

নন বিসিএস অধস্তন পুলিশে কর্মরতরা যেসব দাবি বা শর্ত পুরণের জন্য জোটবদ্ধ হয়েছে সেগুলো হলো- পুলিশ বাহিনীর প্রচলিত পুলিশ আইন এবং পুলিশ রেগুলেশন্স অব বেঙ্গল অ্যাক্ট সংস্কার করে যুগোপযোগী এবং কার্যকর করা। সাব ইন্সপেক্টর/সার্জেন্ট পদে বিদ্যমান পদোন্নতি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা। পুলিশ পরিদর্শক পদ থেকে সহকারী পুলিশ কমিশনার পদে ৩০ শতাংশ সরাসরি এবং ৭০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা। পুলিশ হত্যাসহ সব স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওয়াতায় আনা। নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান, আজীবন পেনশন রেশন প্রাপ্তি এবং পরিবারের একজন সদস্যের সরকারি চাকরি ও আহত পুলিশ সদস্যদের আর্থিক ক্ষতিপুরণ নিশ্চিত করা। আমি মনেকরি তাদের কথাগুলো আমলে নেওয়া জরুরি, এই শর্তগুলো পুরণ হলে একটি সংসম্পূর্ণ বাহিনী হিসেবে নিজেদেরকে আবির্ভূত করতে আর কোনো বাধা থাকবে না। পুলিশ বাহিনীকে ভবিষ্যতে আর কোন রাজনৈতিক দল তাদের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত করতে না পারে সে ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি পুলিশের উর্ধ্বতন মহলকে সজাগ দৃষ্টিতে পরিচালনা করতে হবে।

পুলিশের ওপর বেপরোয়া হামলায় দেশের আইনশৃঙ্খলা নিষ্ক্রিয় হয়ে পরা এবং একই সাথে দীর্ঘসময় থানাগুলো অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে থাকায় বর্হিবিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে খুন্ন হয়েছে; দেশের ধর্মান্ধ উগ্র জনগণের কারণে দেশ সম্পর্কে ইতিমধ্যে নেতিবাচক মনোভাব পরিণত হয়েছে; যা দেশের জন্যও চরম ক্ষতি। পুলিশের ওপর যদি অনাস্থা প্রকাশ পায়, দেশ চরম ক্ষতির সম্মূখীন হবে। আইনশৃঙ্খলার অবনতির সংবাদে বিদেশী বিনিয়োগ সংকুচিত হবে, দেশের জনগণ চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে বঞ্চি হবে, দেশ হবে দরিদ্র থেকে হত দরিদ্র। অতএব দেশের স্বার্থে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুলিশ বাহিনীকে আধুনিকতার সাথে গড়ে তোলার সমস্থ রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে দেশ আবার ঘুরে দাঁড়াবে, সমৃদ্ধি ও উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে। পুলিশের ভাবমূর্তি পুনরায় ফিরিয়ে আনতে এবং তাদের মনোবল চাঙ্গা করতে মোটিভেশনমুলক কর্মসূচী গ্রহণ করা জরুরি। আর না হলে যতই পুলিশরা কর্মে যোগদান করুক না কেন তাদের মনের মধ্যে থেকে ভয়ভীতি আতংকের ছাপ গুছবে না।

লেখক: সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক

সারাবাংলা/এসবিডিই

পুলিশ স্থাপনা অন্ধকারে লজ্জিত বিস্মিত! বিপ্লব বড়ুয়া মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর