Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আগামীর দেশ যেন হয় সম্প্রীতি ও শান্তির

তাহের উজ জামান
১২ আগস্ট ২০২৪ ২০:৩৪

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিজয়ের পর প্রথম এক সপ্তায় দেশের কী অবস্থা! অতীতের সমস্ত ইতিহাস উল্টে দিয়ে নতুন কিছুর ঘোষণায় এতদিনের দুঃশাসনের কবল থেকে মুক্তির বারতায় অধিকাংশ জনমনে একটা স্বস্তির অবস্থা তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে নৈরাজ্য।

বাংলাদেশের জনগণ আজ সর্বক্ষেত্রে, সবরকম বৈষম্যের চিরস্থায়ী বিলোপ চায়। কিন্তু ইতিমধ্যে প্রথম সপ্তাহের কর্মকাণ্ড বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাফল্যের স্বপ্নে একপোচ কালি ঢেলে দিয়েছে। এমন কোনও দুষ্কর্ম কি বাকি আছে যা সরকার পদত্যাগের পর দেশে ঘটে নাই? হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, থানায় হামলা, পুলিশ হত্যা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস, ভাস্কর্য ভাঙা, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন মন্দিরে আক্রমণ, সারা দেশের মাজারগুলোতে হামলা-ভাঙচুর এ সব কীসের লক্ষণ? এসব ধ্বংসযজ্ঞের হাত থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

জ্বলন্ত চুল্লি থেকে আমরা কি আবার ফুটন্ত কড়াই্তে এসে পড়েছি? তাহলে নূতনত্ব কই? এত সেই কথাই- ‘খাঁড়া বড়ি থোড় না হয়—থোড় বড়ি খাড়া’। প্রতিবাদে কেউ কেউ মুখ খুললেও তেমন একটা উচ্চকণ্ঠ নয়।

অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ভাঙচুর বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার কথা বললেও ‘মাজার সমূহ’কে দুষ্কৃতকারীদের হামলা ভাঙচুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার কথা কেউ বলেননি।

এরইমধ্যে সারাদেশে অনেক মাজারে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগও করা হয়েছে। অন্যান্য শতশত মাজার ও হাজার হাজার মাজারপন্থি জনগোষ্ঠী আতঙ্কে দিন পার করছে। অথচ এই মাজারপন্থি জনগোষ্ঠী এক বৈষম্যহীন মনুষ্যত্বপূর্ণ আদর্শেকে বুকে ধারণ করে এবং নিজেদের জীবন ও সমাজে তা বাস্তবায়ন করার অনুশীলন করে।

বিজ্ঞাপন

ইতিহাস বলে আমাদের উপমহাদেশে ইসলাম এসেছে অলি—আউলিয়াগণের হাত ধরে। শতশত বছর ধরে লাখলাখ মানুষ তাঁহাদের রেখে যাওয়া শান্তি ও বৈষম্যহীন এক আদর্শের অনুসারী। বরাবরই দেখা যায় দেশে যেকোনও কিছু ঘটলেই মাজার গুলোতে ও তাদের অনুসারীদের উপর আক্রমণ ভাঙচুর শুরু করে দেয় এক শ্রেণির মানুষ।

অতীতেও মাজার সুরক্ষায় সরকার যেমন উদাসীন ছিলো বর্তমানেও সেই একই উদাসীনতা। সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল সমূহ সকলেই মাজার সুরক্ষার বিষয়ে মুখে কুলূপ এটে আছেন। একটি মাত্র রাজনৈতিক দল মাজার গুলোকে রক্ষার কথা বলেছেন। হায় বৈষম্য!

মাজারগুলো আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিকড় কাটলে গাছ বাঁচে না। নিজের ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে কোনও জাতি সামনে এগুতে পারে না। অতীতের ইতিহাস ঐতিহ্যের ভিত্তির উপরই নির্মিত হয় ভবিষ্যতের সিড়ি। ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে পারলেই সামনের পথ চলা হবে সুন্দর মসৃণ। রাষ্ট্রীয় সম্পদ, মন্দির, ইতিহাস—ঐতিহ্যবাহিী ভাস্কর্য সমূহ রক্ষা করতে ছাত্র—জনতা, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল সমূহকে আরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি মাজারগুলোকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত মাজারগুলোকে পুনরায় মেরামত সংস্কার করে দেওয়ার জন্য। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা করি। নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে মাজারগুলোকে চিরস্থায়ী নিরাপত্তা প্রদানের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

হামলাকারীদেরকে বিচারের আওতায় আনা রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য কর্ম। রাষ্ট্রের কাজ সকল মত, পথ, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, পেশার সকল নাগরিকদের সমান সুরক্ষা নিশ্চিত করা।  অসাম্প্রদায়িক মানবীয় সমাজ গঠনে সুশীল সমাজকে এই বিষয়টিও ভাবতে হবে। আগামীর বাংলাদেশ যেন হয় সম মর্যাদা, সম অধিকার, সকলের সহাবস্থানের, সম্প্রীতি আর শান্তির বাংলাদেশ।

লেখক: সাংবাদিক

সারাবাংলা/এসবিডিই

তবে কী মাজার ও ভাস্কর্য ভাঙ্গা জায়েজ? তাহের উজ জামান মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে আগুনে পুড়ল ৫ দোকান
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৩৪

আরো

সম্পর্কিত খবর