হিন্দুদের স্বাধীন হওয়ার বড় সুযোগ
১২ আগস্ট ২০২৪ ১৭:১২
যে কোনও বড় আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান মানুষের মনন জগতে, চিন্তার জগতে কিছু না কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
সরকার পতনের পর সারাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানে হিন্দুরা যে বিক্ষোভ করেছেন এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখার যথেষ্ট কারণ আছে। বিক্ষোভে তারা অনেকগুলো শ্লোগান দিয়েছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে সিগনিফিকেন্ট বক্তব্য হচ্ছে, তারা এই দেশ ছেড়ে অন্য কোনও দেশে যাবেন না। তারা এই দেশেই থাকবেন। যে কোনও সরকার পরিবর্তনের সময় হিন্দুদের ওপর হামলা হবে কেন? -এই প্রশ্নও তারা তুলেছে।
(জয় শ্রীরাম, হর হর মহাদেব এমন অনেক শ্লোগানও তারা দিয়েছেন সমাবেশগুলোতে। এই নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। এই ধরনের শ্লোগান এই দেশের হিন্দুরা কখনোই দেয়নি। এটা আরোপিত একটা শ্লোগান।)
এতো সংগঠিতভাবে, এতো শক্তি নিয়ে এই দেশের হিন্দুদের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়নি। প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে কোনও রক্তচক্ষু যে তাদের বাধা দিচ্ছে না, এটা গণ-আন্দোলনেরই সুফল। তারা রাস্তায় নেমে তাদের তাদের ওপর অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে, মনের সকল দুঃখ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এতে যে উপকার হবে: হিন্দুদের মনের ভয় কেটে যাবে। পৃথিবীর সব দেশে সংখ্যালঘুরা কমবেশি সমস্যায় থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের হিন্দুদের বড় সমস্যা হচ্ছে- তাদের মনের ভয়। এই ভয় তাদের বড় শত্রু। এই শত্রুকে জয় করতে পারলে কী করণীয় তা তারা সহজেই বুঝতে পারবেন।
সম্ভবত এবারই হিন্দুরা পরিষ্কার করে বলেছে যে, এই দেশ ছেড়ে অন্য কোনও দেশে, মানে ইন্ডিয়ায় তারা যাবে না -এটাও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। কেন যাবেন তারা, যেন যেতে হবে? এই দেশের জন্য হিন্দুদের অবদান আছে, মুক্তিযুদ্ধে রক্তক্ষরণে হিন্দুরা পিছিয়ে ছিলেন না। তবে এটা অস্বীকার করা যাবে না যে, ভারতের প্রতি, সেই দেশের শাসকদের প্রতি এই দেশের হিন্দুদের এক ধরনের মানসিক নির্ভরতা রয়েছে, যদিও এর বস্তুগত লাভের কোনও দৃষ্টান্ত নেই। এই মানসিক নির্ভরতা থেকে মুক্ত হতে পারা একটা বড় ধরনের অর্জন। এই আন্দোলন হিন্দুদের মধ্যে একটা রিয়ালাইজেশন তৈরি হতে পারে।
২.
হিন্দুদের এই জমায়েত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য আছে। প্রশ্ন হচ্ছে-
১. শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের বাড়িঘরে কি হামলা হয়নি?
২. এই হামলায় কি বিএনপির লোকজন অংশ নেয়নি?
৩. কোনও কোনও স্থানে কি আওয়ামী লীগের লোকজন অংশ নেয়নি?
(পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, কোনও কোনও স্থানে আওয়ামী লীগের লোকেরা হামলায় ইন্ধন দিয়েছে।)
৪. জামায়াত ও ইসলামী দলগুলো কি হিন্দুদের ঘরবাড়ি মন্দির পাহারা দেয়নি?
৫. অনেক স্থানে বিএনপির লোকজন কি পাহারা দেয়নি?
৬. ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন সংগঠন কি হিন্দুদের নিরাপত্তায় এগিয়ে আসেনি?
৭. কোনও কোনও স্থানে আওয়ামী লীগ করার কারণে হামলা হয়নি?
৮. আওয়ামী লীগ কি পরিকল্পিতভাবে এই বিক্ষোভ আয়োজনে ভূমিকা রেখেছে?
৯. বিজেপি এবং ইন্ডিয়ার কিছু মিডিয়া কি এই ধরনের বিক্ষোভ আয়োজনে ভূমিকা রেখেছে? (রিপাবলিক ইন্ডিয়াসহ কলকাতার কয়েকটি মিডিয়া ভুলভাল তথ্য দিয়ে ক্রমাগত হিন্দুদের উসকানি দিয়ে চলেছে, অথচ সে দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে এরা কোনও কথাই বলে না। এদের অপতৎপরতা ইতিমধ্যে হিন্দুরা বুঝতে শুরু করেছে।)
১০. ভারতীয় গোযেন্দা সংস্থা ‘র’ কি এই ধরনের বিক্ষোভের পিছনে ইন্ধন দেয়নি বা দিচ্ছে না? (বিগত পনের বছরে দেশের প্রতিটা সেক্টরে ‘র’-এর তৎপরতা যে রয়েছে সেটা তো প্রকাশ্য। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগে ‘র’-এর কোটার কথাও শোনা গেছে। ফলে হিন্দুদের মধ্যে ‘র’-এর অনুগত কিছু লোক যে তৈরি হবে বা তৈরি করা হয়েছে-এটা অস্বাভাবিক নয়।)
১১. হিন্দুরা কি দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার কারণে রাস্তায় নামে নি?
১২. ভুয়া পোস্ট দিয়ে বিষয়টাকে কি উসকে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়নি? (সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে যেসব পোস্ট দেওয়া হয়েছে দেখা যাচ্ছে তার বেশির ভাগই ভারত থেকে পোস্ট করা এবং ভুয়া।)
উল্লিখিত কোনও প্রশ্নকে কি বাদ দেওয়া যাবে? কোনও একটা প্রশ্নকে বাদ দেওয়া যাবে না। আবার কোনও একটা প্রশ্নকে কি প্রধান করা যাবে ? যাবে না। ফলে এক বাক্যে উদ্ভূত সমস্যাকে উড়িয়ে দেওয়া যেমন যাবে না, তেমনি আবার কোনও একটার মধ্যে আটকে থাকলেও চলবে না। বিষয়গুলোকে দেখতে হবে সামগ্রিকভাবে।
৩.
আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে নিজেদের মনে করা, ইন্ডিয়ার ওপর মানসিকভাবে নির্ভরতা এই দুটো বিষয়ের সঙ্গে লম্বা রাজনৈতিক ইতিহাস ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয় রয়েছে। তথ্য মতে, স্বাধীনতার পর থেকে এই যাবৎ হিন্দুদের জমিজমা দখলের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে আওয়ামী লীগ। এই ছাড়া আওয়ামী লীগের হিন্দু নির্যাতনের ইতিহাসও কম নয়। তবু হিন্দুরা আওয়ামী লীগের ওপর নির্ভরশীল কেন? তারা নিজেদের আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে দেখতে পছন্দ করে কেন?
এর অন্যতম কারণ নিশ্চয় নিরাপত্তাহীনতা। তারা মনে করে মারুক কাটুক যাই করুক, আখেরে আওয়ামী লীগই তাদের রক্ষা করবে। কেননা আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল, এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল।
এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, হিন্দুরা আওয়ামী লীগকে ছাড়া অন্য কোনও দলকে সমর্থন করবে? এমন দল কি আছে যে দলকে হিন্দুরা আস্থায় নিতে পারে? যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও অসাম্প্রদায়িক? এখানে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির কথা যদি বলি, এই দলে বেশ কয়েক জন হিন্দু নেতা থাকলেও দলগতভাবে কি তাদের ওপর আস্থায় নেয়া যায়? হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিষয়ে তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য, কর্মসূচী কি ? কিভাবে এই জনগোষ্ঠীর আস্থা অর্জন করা যায়, রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা যায় সেই রাজনৈতিক এজেন্ডা কি তাদের আছে? এদের বিশ্লেষণ হচ্ছে, সংখালঘু মানে আওয়ামী লীগকে ৮% ভোটে এগিয়ে রাখা, ফলে ভোটের পর হেরে যাওয়ার পর সব রাগ গিয়ে পড়ে হিন্দুদের ওপর। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ হেরে গেলেও আক্রোশ গিয়ে পড়ে হিন্দুদের ওপর।
অন্যান্য দলের অবস্থাও প্রায় একই রকম। ফলে হিন্দুরা নিরাপত্তার জন্য ঘুরে ফিরে আওয়ামী লীগের কাছেই যায়, যদিও সেখানে নিরাপত্তা কতোটুকু হিন্দুরা জীবন দিয়ে উপলব্ধি করে প্রতি পদে পদে। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিলেও এবং অসাম্প্রদায়িক দল প্রচারিত হলেও বিগত পনের বছরে যে দলটির ব্যাপক ক্ষয় হয়ে গেছে, পরিবর্তন ঘটে গেছে- তা হিন্দুরা উপলব্ধি করতে পারেনি।
অন্যদিকে হিন্দুদের ধারণা ইন্ডিয়া হিন্দু রাষ্ট্র, এই দেশের হিন্দুদের ভালো মন্দ সবকিছুতে এই রাষ্টের এক ধরনের নজরদারি থাকবে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরাটসংখ্যক হিন্দুকে সে দেশে জায়গা দেওয়ার বিষয়টাকে তারা রাজনীতির বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত আবেগের জায়গা থেকে বুঝার চেষ্টা করেন। এদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যেহেতু বরাবর ভালো সম্পর্ক, তাই ইন্ডিয়া ও আওয়ামী লীগকে একাকার দেখার এক ধরনের মনোভাব তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে এই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাদের উপস্থিতি এবং নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হিন্দুদের মনস্থত্ত্বকে বরাবর নারিশ করে থাকে, এইক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণও নেহাত কম নয়। এই দেশের মন্দিরগুলোর উন্নয়নে কিংবা দুর্গাপূজায় যে অনুদানগুলো দেওয়া হয় সেগুলো হিন্দুরা অত্যন্ত বদন্যতার সঙ্গে গ্রহণ করে থাকে, যা তাদের মানসিক নির্ভরতাকে আরো বাড়িয়ে তোলে। এই ধরনের বিনিয়োগ কেবল দেশটির ওপর মানসিক নির্ভরতাই তৈরি করে না, কম্যুনাল মানসিকতাকেও বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। আজকে যে জয় শ্রীরাম শ্লোগান আমরা শুনছি তার আমদানি এই পথেই হয়েছে। যে কারণে ইন্ডিয়ায় সংখ্যালঘু মুসলিম লোকদের ওপর সে দেশের সাম্প্রদায়িক সরকারের নির্যাতনের ঘটনা অনেকের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করে না। ফলে হিন্দুরা আওয়ামী লীগ, ইন্ডিয়া এই দ্বৈরথের দুষ্টচক্রের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে।
৪.
যে কোনও সংখ্যালঘুরা তাদের নিজস্ব সমস্যা সমাধানে সংগঠিত হতে পারে, রাজনৈতিক দলও গঠন করতে পারে। এদেশের হিন্দুরা তাদের জমিজমা রক্ষা, নিরাপত্তা নানা ইস্যুতে সংগঠিত হতে পারতো। কিন্তু সেই ধরনের বাস্তত কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। এখানে গঠিত হয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
এই সংগঠনটার গঠনের মধ্যেই সম্প্রদায়িকতার বীজ রয়েছে। ধর্মের বিবেচনায় ধরলে এই দেশে সংখ্যগরিষ্ঠ মানুষ হচ্ছে মুসলিম। এই সংগঠন শুরুই করেছে সেই মুসলিমদের বাদ দিয়ে কম্যুনাল একটা এপ্রোচ থেকে। মুসলমানদের শুরুতেই দূরে সরিয়ে রেখে কার কাছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আশা করছি? এই নামের কারণে ইচ্ছা থাকার পরও মুসলিমদের পক্ষে এগিয়ে আসা কঠিন। দরকার ছিল হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সংগঠন করা হবে কম্যুনাল, আর আশা করা হবে সব ধর্মের মানুষ আমার পক্ষে দাঁড়াবে- এই কেমন প্রত্যাশা। যে কারণে এই সংগঠন অনিবার্যভাবে সাম্প্রদয়িক সংগঠনের পরিণত হয়। ইন্ডিয়া ও আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে এটি একটি বড় হাতিয়ারে পরিণত হয়ে ওঠে। এই সংগঠন প্রকারন্তরে হিন্দুদের সঙ্গে সাধারণ মুসলিমদের এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়। এই সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা পেলেও তাদের তৎপরতার কারণে সাধারণ হিন্দুদের বড় ধরনের আক্রোশের শিকার হতে দেখা যায় বারে বারে।
৫.
আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ইন্ডিয়ার হস্তক্ষেপ কোনও পর্যায়ে চলে গেছে বিগত পনের বছর এই দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। বিচার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে এমন কোনও সেক্টর নেই যেখানে দেশটির সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিল না। বিগত পনের বছর ধরে আওয়ামী লীগকে ইন্ডিয়া ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে, যার কারণে আওয়ামী লীগের ওপর সাধারণ মানুষের যে ক্ষোভ তা সরাসরি গিয়ে পড়েছে ভারতের বিজেপি সরকারের ওপর। ইন্ডিয়াবিরোধী ক্ষোভের কিছুটা হিন্দুদের ওপর পড়েছে স্বাভাবিকভাবে। অভিজাত হিন্দুদের কোউ কেউ ক্ষমতা পেয়ে যে বাড়াবাড়ি করেছে তার খুঁটির জোরও যে ইন্ডিয়া এমন ধারণা অনেকের মধ্যে তৈরি হয়েছে। (এই ক্ষেত্রে ওসি প্রদীপের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।)
অন্যদিকে সাধারণ হিন্দুদের একটা অংশ আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে, এদের মধ্যে একটা অংশকে কায়েমী গোষ্ঠীর অংশীদার হয়ে বাড়াবাড়ি করতেও দেখা যায়। অবশ্য হিন্দু পাড়াগুলো আওয়ামী লীগের এতোটা নজরদারির মধ্যে চলে যায় যে, সেখান থেকে বেরিয়ে স্বাধীনভাবে অন্য কিছু করার কোনও সুযোগই ছিল না। বিগত পনের বছরে যে কয়জন হিন্দু যুবক এর বাইরে গিয়ে বা আওয়ামী শাসনের বিরোধিতা করতে গেছে তাদের কি পরিণতি হয়েছে সেটা কারো অজানা নয়। ফলে নিচের দিকের হিন্দুদের একটা অংশ যে, আওয়ামী রিজিমের মধ্যে ঢুকে পড়েছে তার মধ্যে অনেকটা উপায়হীনতাও ছিল।
৬.
ফলে, রাজনীতিতে ইন্ডিয়ার নগ্ন হস্তক্ষেপ কেবল হিন্দুদের মেরুদণ্ডই ভেঙে দেয়নি, দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও শেষ করে দিয়েছে একটা সরকারকে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখার কারণে। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে দেশে যে স্বাধীনতা অর্জিত হলো, সেটা এই দেশের হিন্দুদের স্বাধীন হওয়ার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছে। সেই সুযোগটা হিন্দুরা কিভাবে নেবে সেটা দেখার বিষয়; এই বিবেচনায় নতুন নেতৃত্বের কথা বলেছি। আমাদের সরকার গঠনে যেমন নতুন নেতৃত্ব এসেছে, তেমনি হিন্দুদের স্বাধীন হওয়া, স্বাধীনভাবে চিন্তা করার জন্য নতুন নেতৃত্ব দরকার- এটা সময়ের দাবি।
গণ আন্দোলন অনেকের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো যে, হিন্দুদের ঘরবাড়ি মন্দির পাহারা দিচ্ছেন- এটাকে খাটো করে দেখার কিছু নেই। অন্যদিকে বিএনপিও যে কর্মীদের শাস্তি দিয়েছে, হিন্দুদের পাশে দাঁড়াচ্ছে তার রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক।
এই পরিবর্তনগুলো অবশ্যই হিন্দুদের পাঁচ আগস্টের পরের চোখ দিয়ে দেখতে হবে, তাদের করণীয় ঠিক করতে হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রকাশ্যে হিন্দুদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে, যা কিছু হয়েছে তার জন্য। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটা বিরল দৃষ্টান্ত। একজন সেনা কর্মকতাকে দেখা গেছে মুসলিমদের বুঝাচ্ছেন সংখ্যালঘুদের জানমালের হেফাজতের বিষয়ে। বিষয়গুলোকে অবশ্যই হিন্দুদের পরিবর্তিত চোখ দিয়ে, খোলা মন নিয়ে দেখতে হবে। অন্যের চোখ দিয়ে নয়।
আওয়ামী লীগ এই অভ্যুত্থানের কারণের যে বয়ান দিয়ে আসছে, সেই বয়ান এখন বিজেপি দিচ্ছে; কেননা আওয়ামী লীগের শাসনের পতনকে বিজেপি নিজেদের পতন মনে করছে। আওয়ামী লীগকে ছাড়া এই দেশের অভ্যন্তরে খবরদারি প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ আপাতত নেই। ফলে বিজেপি যে কোনও ষড়যন্ত্র করতে পারে। হিন্দুরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল থেকে নিশ্চয় দূরে থাকবে।
এবং স্পস্ট করে আওয়াজ তুলতে হবে —
. এই দেশ আমাদের, এই দেশে ছেড়ে যাবো না। বিজেপি ও ইন্ডিয়া আমাদের বন্ধু নয়, আমাদের বন্ধু এই দেশের গণতান্ত্রিক মানুষ।
. আমাদের ভোট আমরা দেব, যাকে যোগ্য মনে করবো তাকে দেব, কোনও বিশেষ দলের ভোটব্যাংক হবো না।
. ভারতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
. দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইন্ডিয়ার হস্তক্ষেপ চলবে না।
. হিন্দুদের নিরাপত্তা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।
. দখল হওয়া সম্পত্তি দ্রুত উদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক
সারাবাংলা/এসবিডিই