বিপ্লবীদের লড়াই শেষ হয় না
১৫ আগস্ট ২০২৪ ১৮:৪৮
বিপ্লবীদের লড়াই কখনো শেষ হয় না। তারা দেশের জন্য জীবনকে তুচ্ছ করে, সর্বস্ব বিসর্জন দিয়ে, সমাজের অন্যায়, অনিয়ম শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান। কিন্তু একজন বিপ্লবী কি শুধু একদিন, একমাস বা একবছরের জন্য লড়াই করেন? নাকি তার সংগ্রাম একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ? একজন সত্যিকারের বিপ্লবীর সংগ্রাম একটি জীবনব্যাপী প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, যেখানে তাকে প্রতিনিয়ত নানা ঘাত-প্রতিঘাত, বাধা-বিপত্তি ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে হয়।
লেখক হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, ‘একবার রাজাকার মানে চিরকাল রাজাকার; কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা মানে চিরকাল মুক্তিযোদ্ধা নয়।’ এই উক্তিটি আমাদের সামনে একটি গভীর সত্য তুলে ধরে। একজন রাজাকার বা দেশদ্রোহীর পরিচয় জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকে, কারণ তাদের কর্ম ও বিশ্বাসের সঙ্গে তারা চিরকাল চিহ্নিত থাকে। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা বা বিপ্লবীর ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। মুক্তিযোদ্ধা বা বিপ্লবী হওয়া একটি সম্মানজনক বিষয়, তবে এটি নির্ভর করে ওই ব্যক্তির আদর্শ, সংগ্রাম ও দায়িত্বের ওপর। একজন মুক্তিযোদ্ধা যদি তার আদর্শ ও দায়িত্ব থেকে সরে আসেন, তবে তিনি তার পরিচয় থেকে বিচ্যুত হতে পারেন।
বিপ্লবীদের লড়াই শুধুমাত্র বাইরের শত্রুর বিরুদ্ধে নয়। তাদের লড়াই অন্তর্দ্বন্দ্ব, সমাজের গোঁড়ামি ও নিজের দুর্বলতার সঙ্গেও। তাদের প্রতিনিয়ত নিজেদের আদর্শের প্রতি অটল থাকতে হয়। তাদের প্রতিনিয়ত নিজেদের মূল্যবোধের সঙ্গে আপোষ না করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এটি একটি অবিরাম সংগ্রাম, যেখানে জয় বা পরাজয় কখনো চূড়ান্ত নয়। এখানে প্রতিনিয়ত নিজেদের সচেতন ও সজাগ রাখাই আসল বিষয়।
বিপ্লবীরা সমাজের পরিবর্তন আনতে চান, তারা একটি নতুন দিনের স্বপ্ন দেখেন, যেখানে মানুষে মানুষে কোনো বিভেদ থাকবে না, থাকবে না শোষণ বা অত্যাচার। কিন্তু ওই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে তাদের সবসময় লড়াই করতে হয়। ওই লড়াই কখনো কখনো অস্ত্রের, কখনো বা কলমের, কখনো বা কণ্ঠের। বিপ্লবীরা সবসময় নতুন চিন্তা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও নতুন সম্ভাবনার জন্ম দেন।
এখানে প্রশ্ন আসে, কেনো একজন বিপ্লবী তার জীবনের সমস্ত সময় ও শক্তি ওই লড়াইয়ে ব্যয় করেন? কারণ, তারা বিশ্বাস করেন, সমাজের উন্নয়ন, মানবতার মঙ্গল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা তাদের দায়িত্ব। তারা সমাজের শোষিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের পক্ষে দাঁড়াতে চান। তারা একটি ন্যায্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চান। ওই বিশ্বাস, ওই দায়িত্ববোধই তাদের লড়াইয়ে অনুপ্রাণিত করে এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ওই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে বাধ্য করে।
অতএব, একজন সত্যিকারের বিপ্লবী তার লড়াই কখনো থামান না। তারা বুঝতে পারেন অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। সময়ের সঙ্গে লাড়াইয়ের রূপ ও ধরন পারির্তন হয়। কিন্তু লাড়াই কখনো শেষ হয় না। সমাজে যখনই অন্যায় বা শোষণ দেখা দেয়, বিপ্লবীরা তখনই সামনে এগিয়ে আসেন এবং ওই নতুন লড়াইয়ে শামিল হন। তাদের জীবন হচ্ছে একটি নিরন্তর লড়াই, যেখানে শুধুমাত্র ন্যায়ের জয়ই শেষ লক্ষ্য।
সত্যিকারের বিপ্লবী কখনো পরাজিত হন না, কারণ তারা জানেন তাদের সংগ্রাম শুধু বর্তমানের জন্য নয়, ভবিষ্যতের জন্যও। তাদের লড়াই অন্যদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন এবং তাদের আদর্শ পরবর্তী প্রজন্মকে লড়াইয়ে অনুপ্রাণিত করে। ওই কারণেই একজন বিপ্লবীকে শুধুমাত্র তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিচার করা যায় না, তাকে বিচার করতে হয় তার জীবনব্যাপী সংগ্রামের মাধ্যমে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
সারাবাংলা/এসবিডিই