সেনাবাহিনীর অধীনে নির্মাণ চাই জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাস
১৬ আগস্ট ২০২৪ ১৭:২৬
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষার জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হলো বিশ্ববিদ্যালয়। আর বিশ্ববিদ্যালয় হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে উচ্চ শিক্ষা প্রদান করা হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক কাজকর্ম করার সুযোগ পায়। সাধারণত স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর উভয় সম্মান প্রদান করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানের চর্চার মাধ্যমে জ্ঞানের উৎপত্তিও ঘটে থাকে। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এমন প্রতিষ্ঠান যেখানে ভর্তি যুদ্ধে উন্নীত হয়ে পড়াশোনা করতে হয়। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৮৫৮ সালে। উল্লেখ্য ২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত করা হয়। এটি পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকায় অবস্থিত। এখানে ৩৮ টি বিভাগ ও ইন্সটিটিউট আছে। প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনার সুযোগ পায়। ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি হল ছিল। কিন্তু ১৯৮৫ সালে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষাার্থীদের সংঘর্ষে হলগুলো বেদখল হয়। ফলে বর্তমান শিক্ষার্থীরা বাসা ভাড়া অথবা মেসে থেকে পড়াশোনা করে। দখলকৃত হলের মধ্যে তিব্বত হল, সাইদুর রহমান হল, বাণী ভবন হল, রউফ মজুমদার হল, নজরুল ইসলাম হল, বজলুর রহমান হল, শহীদ শাহাবুদ্দীন হল, আবদুর রহমান হল, আনোয়ার শফিক হল, কর্মচারী আবাস, আজমল হোসেন হল। ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে হল উদ্ধারের আন্দোলন করেও শিক্ষার্থীরা উদ্ধার করতে পারে নি। কিন্তু আবারও বর্তমান শিক্ষার্থীরা হল আন্দোলনের উদ্যোগ নিয়েছে।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আয়তনে ছোট হলেও বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে নির্মিত হচ্ছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস। আর এর আয়তন প্রায় ২০০ একর। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত যায় সেখানে খেলাধুলা করতে। কিন্তু ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ খুবই ধীরগতিতে চলছে। নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি সীমানা প্রাচীর নির্মাণ। আর এই কাজ করতে গিয়েও নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সীমানা প্রাচীরের রড রাতের বেলা কেটে চুরি করে নিয়ে যায়। ক্যাম্পাসের আওতাভুক্ত অনেক গাছ কেটে চুরি করে বিক্রি করছে। অধিকাংশ জায়গা নিচু, এখনো মাটি ভরাট করে নি। তাছাড়া সেখানে কৃষি কাজ করছে। নানা রকম শাক সবজি, শস্য চাষ করছে। সর্বপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরদারির বাইরে আছে। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নিয়ে হাজারো শিক্ষার্থীর কত স্বপ্ন। পুরান ঢাকার ছোট্ট ক্যাম্পাসে অনেক কষ্ট, সংগ্রাম করে থাকেন। এখানে ছেলেদের কোনো হল নেই। মেয়েদের জন্য একটা হল শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল থাকলেও আসন সীমিত। শিক্ষার্থীদের আশার আলো দ্বিতীয় ক্যাম্পাস দেখালেও ধীর গতির কারণে হতাশ তারা। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের ডিজাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সবচেয়ে খুশির বার্তা এটি হবে বিশ্বের সর্বাধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়।
এই ক্যাম্পাস ঢাকার কেরাণীগঞ্জে অবস্থিত। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষ অনেক উত্তেজিত। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র করে অনেক ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে উঠবে। আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হবে। গ্রামীণ জনপদ থেকে শহুরে জনপদে রূপ নিবে। বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বতন্ত্র হবে। বর্তমানে সীমানা প্রাচীরের পাশাপাশি লেক খনন করছে। কিন্তু অনেক জায়গায় লেকের পাড় ভেঙে পড়েছে। এছাড়া নির্মাণ করা হবে সুংমিল পুল। সাধারণত এখন শূন্য উদ্যানের মত লাগে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হলে রাতে বিদ্যুতের আলোয় কেরানীগঞ্জের বাতিঘরে রূপ নিবে। এমনিতেই কেরানীগঞ্জ শিক্ষার আলো থেকে দূরে আছে। এখানে অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এমনকি দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের জমিও ছিল কৃষি জমি। এই জমি ক্যাম্পাসের জন্য কেনা হলে কিছুটা ফসল উৎপাদন কমে যায়। কিন্তু এখানে শিক্ষার হার কম। এর কারণ অনুসন্ধান করে জানতে পারি স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা করে না এখানের শিক্ষার্থী। তাদের জন্য অদুরে আছে একটি কলেজ। তবুও তারা এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার পর পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ে। আর এর অন্যতম কারণ হচ্ছে টিউটর খুঁজে পায় না। কিন্তু স্থানীয় প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। তাদের মাঝে ঐতিহ্য প্রচলিত আছে যুবক বয়সে অধিকাংশ ছেলে প্রবাসের পথ পাড়ি দেয়। প্রবাসে কাজ করে তারা অর্থ উপার্জন করে। আবার তাদের ছেলে মেয়ে বড় হলে তারা বিদেশ যায় এবং তাদের মা বাবা ছেলের উপার্জনে সংসার চালায়। তাদের মাঝে প্রবাসে যাওয়ার ধারা অব্যাহত থাকে।
এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত নয়। তবে ক্যাম্পাসের সামনে নিয়ে নির্মিত হচ্ছে মেট্রোরেল। যার কারণে অনেক দূর প্রান্তের মানুষ খুব অল্প সময়ে যাতায়াত করতে পারবে। আর ট্রেনের ঝকবাক আওয়াজ শুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মনে আনন্দ ধারা বয়ে যাবে। সর্বোপরি, বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এক আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। তাই দ্বিতীয় ক্যাম্পাস দ্রুত বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর হবে। নিরাপদ পরিবেশে ক্লাস করতে পারবে। কিন্তু নানা অনিয়মে বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নির্মাণ কাজ। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অধীনে নির্মাণ হোক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস। এতে দুর্নীতি দমন হবে। ফলে খুব দ্রুতই সেনাবাহিনীর অধীনে দৃশ্যমান হবে বিশ্বের সর্বাধুনিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট দাবি অতি দ্রুত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ হস্তান্তর করা।
লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এজেডএস
মো. আবদুল্লাহ আলমামুন সেনাবাহিনীর অধীনে নির্মাণ চাই জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাস