Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমাদের ছাত্ররা এমন হতে পারেন না!

আজহার মাহমুদ
১৮ আগস্ট ২০২৪ ১৬:৪২

একটা মানুষের শরীর সমস্ত কাপড় খুলে উলঙ্গ করে তাকে নিয়ে নাচ-গান করা, কিংবা বাপের বয়সী প্রবীণদের কান ধরিয়ে ওঠবস করানো নিশ্চয়ই আমাদের মেধাবীদের কাজ হতে পারে না। আমি অন্তত আমাদের ছাত্ররা এতোটা নিচে নামাতে পারি না। কিন্তু এরা তাহলে কারা? প্রশ্নটা ছাত্রদের কাছেই রেখে গেলাম।

বঙ্গবন্ধুর বড়ি পুড়ানো, তার ভাস্কর্য ভাঙচুর এবং নাম নিশানা মুছে ফেলার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ রচিত হয়েছে। এই বাংলাদেশ নিয়ে এদেশের মানুষের অনেক স্বপ্ন এবং আশা রয়েছে। তবে ১৫ আগস্ট সেই আশার উপর বেশ খানিকটা ধাক্কা লাগে এদেশের মানুষের কাছে। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষীকিতে শোক জানানোর অধিকার এদেশ থেকে হারিয়ে গেছে। আওয়ামীলীগ আইনগতভাবে নিষিদ্ধ না হওয়ার আগেই তাদের সামাজিক ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন মোবাইল চেক করে করে আওয়ামীলীগ শনাক্ত করে মারধর করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

৫ আগস্টের আগেও আমরা রাস্তায় বের হতে গেলে মোবাইল থেকে আন্দোলনের সমস্ত ছবি ও ভিডিও ডিলিট করে ফেসবুক এপ আনইন্সটল করে বের হতাম। কারণ রাস্তায় ছাত্রলীগ ও পুলিশলীগ মোবাইল চেক করতো। ৫ আগস্টের মুক্তির পর ভেবেছিলাম সেই আজাব থেকে মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু সেটা ভুল প্রমাণিত হলো। বঙ্গবন্ধুর স্মরণে শোক প্রকাশ করতে গেলে মোবাইল চেক করিয়ে যাওয়া লাগতো। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মতো মুক্তিযুদ্ধার গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। একজন মুক্তিযুদ্ধা হয়েও তিনি পাননি তার যোগ্য সম্মান। ওহহ, এটা তো ২য় স্বাধীন বাংলাদেশ, এখানে নিশ্চয়ই প্রথম স্বাধীনতার কথা মনে রাখা হয় না। প্রথম স্বাধীনতার নায়কদের মনে রাখা হয় না। নয়তো এমনটা কীভাবে হয়!

অনেকেই নানানভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন এই ঘটনাগুলো সব জায়েজ। কেননা তারা দেখেছে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মর্মান্তিক মৃত্যু, তারা দেখেছে মুগ্ধ, ওয়াসিম কিংবা প্রিয়র মতো নিরপরাধ ভাইদের মৃত্যু। তাদের মৃত্যুর বিনিময়ে এসব কিছুই না। এই যে বুলিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই আওড়াচ্ছেন তারাও কি মেধাবী? এই প্রশ্নটাও রয়ে গেলো।

বিজ্ঞাপন

এদেশের আইন, আদালত বিচার বিভাগ কি এতোটাই সস্তা হয়ে গেছে যে এখন ছাত্রদের হাতে বিচারের দায়িত্ব উঠে যাবে। রাস্তায় মোবাইল চেক করা, কান ধরানো, উলঙ্গ করা, লাঠিপেটা করা এসব কি ছাত্রদের কাজ? না-কি মেধাবীদের কাজ? এই কাজ আসলে কার?

ধরে নিলাম যাদের কনা ধরিয়েছে, উলঙ্গ করেছে, পিঠিয়েছে, মোবাইল চেক করেছে কিংবা বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে এরা সবাই অপরাধী। এদের সবাই শেখা হাসিনা, পলক, আনিসুল হক কিংবা সালমান এফ রহমানের চাইতে বড় অপরাধী। তবুও এই বিচার কি ছাত্রদের করার কথা ছিলো?

গণঅভ্যুত্থান ছাত্রদের ছিলো। তবে ছাত্ররা একা এই অভ্যুত্থান সফল করেনি। ছাত্রদের সাথে অভিভাবক, শিক্ষক থেকে শুরু করে সারাদেশের মানুষ সামিল হয়েছিলো। আশাকরি এটা অস্বীকার করার সুযোগ কারও নাই। সকলের সম্মিলিত এই অর্জনের সুবিধা যদি সকলেই না পায় তাহলে এই অর্জনের কোনো মানে হয় না।

এই বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও দ্বিমত পোষণ করার অধিকার থাকার কথা। এই বাংলাদেশে সকল ধর্ম-বর্ণ ও রাজনৈতিক দলের সমান অধিকার পাওয়ার কথা। এই বাংলাদেশে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে সকলেই বসবাস করার কথা। যদি এসব বাস্তবায়ন না হয় তাহলে একদিন আবু সাঈদ এবং মুগ্ধদের কথাও আমরা ভুলে যাবো। মিশে যাবে তাদের দেওয়া রক্তের এই অর্জন।

আজ যেভাবে বঙ্গবন্ধুর শোক প্রকাশে বাঁধা এসেছে সেভাবে একদিন আবু সাঈদ-মুগ্ধদের শোক পালনেও আরেকটি অপশক্তি বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। সেদিন তাদেরও আজকের মতো খোঁড়া যুক্তিগুলো থাকবে। শুধু পার্থক্য থাকবে একটাই আর আমরা ছাত্র ছিলাম, তারা ছাত্র হবে না।

লেখক: প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক

সারাবাংলা/এসবিডিই

আজহার মাহমুদ আমাদের ছাত্ররা এমন হতে পারেন না! মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর