Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাষ্ট্র সংস্কারের বিকল্প নেই

বিপ্লব বড়ুয়া
১৯ আগস্ট ২০২৪ ১৭:৪৭

ক্ষত-বিক্ষত প্রিয় স্বদেশ রাষ্ট্রভূমি বাংলাদেশ। রাষ্ট্রের অঙ্গ প্রতিষ্টানগুলো দুর্নীতির বেড়াজালে বন্দি। বিগত সরকারের নানাবিধ উন্নয়নের পরও দুর্নীতিনামক এক ভয়াল অসুস্থ প্রতিযোগিতার দৌড় ছিল রাষ্ট্রের সর্বত্র। এদেশের মানুষ যতবেশি ধর্মভীরু ততবেশি দুর্নীতিগ্রস্থ। দুর্নীতি গড়িয়েছে ধর্মপ্রতিষ্টান গুলোতেও। বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্টানগুলো একেকটি হয়ে ওঠেছিল দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দু। কথায় কথায় কাটকাট মারমার অবস্থা। বিগত শেখ হাসিনার সরকার সরকারি, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের এতবেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও দুর্নীতি কমাতে পারেনি বরঞ্চ কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেকাংশে বেড়েগিয়েছিল। রাষ্ট্রের সব সেক্টরে ঘুনে ধরেছে। রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিকলাঙ্গ হয়েগেছে। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে নবগঠিত অন্তর্বর্তি সরকারকে সতর্ক অবস্থায় এগোতে হবে। রাজনৈতিক সরকারের সময় লক্ষ্য করেছি নেতাকর্মিদের কথার ধরণ দেখে মনে হবে দেশটি তাদের বাপ-দাদার অধিকৃত রাজ্য। রাজ্য থেকে যার যেমন ইচ্ছেমতো তুলে তুলে খেয়েছে। রাষ্ট্রের সর্বনিম্ন পিয়ন থেকে সর্বোচ্চ সচিব পদমর্যাদাধারী দুর্নীতিতে সবাই সমান পারদর্শী। আধা শায়ত্বশাসিত প্রতিষ্টানেও ছিল দুর্নীতির মহোৎসব। সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্টানগুলোতে সেবার নামে সেবাপ্রত্যাশীদের পকেট কেটেছে, প্রতারিত হয়েছে পদে পদে। রাজনৈতিক দলের ছোট নেতা থেকে বড় নেতা সবাই ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। বৈষম্য ছড়িয়েছে সর্বত্র। বিভেদ বৈষম্যের বেড়াজালে বন্দি হয়ে সাধারণ নিরীহ মানুষগুলো পড়েন মহাবিপদে! ঘুষ, দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষগুলো থেকে মানুষের আসল চরিত্র বিলুপ্ত হয়েগেছে। শিক্ষিত অশিক্ষিত কোনো ভেদাভেদ নেই। কেউ বড় দুর্নীতির সাথে জড়িত, কেউ ছোট দুর্নীতির সাথে জড়িত। দুর্নীতিবাজদের কাছে নুন্যতম নৈতিকতাবোধ, মানবিকতাবোধ, শিষ্ঠাচার নেই। এইসব শব্দ কাগজের মলাটে বন্দি, বাস্তবে মানুষের অন্তরে কোনোপ্রকার কার্যকারীতা নেই। অন্তর্বর্তি সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুর্নীতিরোধে কঠোর হওয়া। নিত্যপণ্য বাজার থেকে শুরু করে সবকিছু সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলেগেছে। মানুষ স্বস্থিতে নেই। খেয়ে না খেয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসা, ভূমি, রাজস্ব, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ সর্বক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের লোকজন মানুষের গলাচেপে ধরেছে। জিনিষপত্রের দাম বাড়িয়েছে খেয়ালখুশিমতো কারো কোনোরকম জবাবদিহিতা ছিল না। দেশের মানুষ এমন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি আগে কখনো হয়নি। সাধারণ মানুষ অনেকটা একারনেই ছাত্রদের আন্দোলনের সাথে একাত্ত্বতা প্রকাশ করতে বাধ্য হন। বিগত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দমন-পীড়ন এবং কোটা আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত ৫ আগষ্ট তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ছাত্র-জনতার অনেক লড়াই সংগ্রামের পর অন্তর্বর্তি সরকার এখন ক্ষমতায়। দেশের ছাত্র-জনতার অনেক রক্ত ঝরেছে, প্রাণগেছে পাঁচশ জনের ওপরে, পুলিশ মারাগেছে ৪৪ জন। হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, আহত হয়েছে। অন্তর্বর্তি সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের অনেক প্রত্যাশা। সবার আগে খাদ্য পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতির ওপর নজরদারী বাড়াতে হবে। ভাঙতে হবে সিন্ডিকেটের তালা। উর্ধ্বমুখি বাজার মুল্যের কারণে মানুষের নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এই কয়েক বছরের শিক্ষার মান পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। বিগত সরকারের আমলে শিক্ষাব্যবস্থা ছিল হাস্যকর। এই শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অভিভাবকরা মাঠে নামলে তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা শুরু করলে অভিভাবকদের সেই আন্দোলন বেশিদূর এগোতে পারেনি। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকনেতা শুরুতে কোটা আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে যেভাবে হেয় করে অবজ্ঞাসুলভ আচরণ করেছিল ঠিক তেমনি শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আন্দোলন করা অভিভাবকদের পথে পথে হেনস্থা ও মারধরের শিকার হতে হয়েছে। যেসকল শিক্ষকগণ এনিয়ে কথা বলেছেন তাদেরকে বিভিন্নভাবে শাস্তি দিয়েছে, চাকুরিচ্যুত করেছে। শিক্ষক অভিভাবকদের চরিত্রে কালিমালেপন করেছে। আপনারা বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর একটি জরিপ চালিয়ে দেখুন, তাহলে অনায়সে বুঝতে পারবেন। এনিয়ে কী পরিমাণ মানুষের ক্ষোভ জন্মেছে। কোনো লেখাপড়া নেই, এই কয়েক বছরে শিক্ষার্থিরা অনেকবেশি পিছিয়েগেছে। বাংলাদেশে অভিভাবক সমাজ চলমান শিক্ষাব্যবস্থাকে আর দেখতে চায় না। অবিলম্বে এই শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হবে। রাজনৈতিক সরকারগুলো মুখে যা বলে তার ধারে কাছেও থাকেনা। ক্ষমতার মসনদে বসার পর জনগণের কথার সামান্যতম কানাকড়িরও ধার ধারেনি। অন্তর্বর্তি সরকারকে সেই ব্যাপারটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমলে নিতে হবে। মুখে নয় বাস্তবে প্রয়োগ ঘটাতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়েছে। আজকে দেশের নষ্ট পরিস্থিতির জন্য রাজনৈতিক দলগুলো অধিকাংশে দায়ী। রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে দেশ চালিয়েছে তা ছিল একনায়কতন্ত্র। মুখে গণতন্ত্রের বাতাস কাজেকর্মে স্বৈরাচারী মনোভাব! দেশের সাধারণ মানুষ লুটপাটের নৈরাজ্যকর ভীতিকর রাজনীতি দেখতে চায় না। তারা চায় বৈষম্যপ্রথা চুর্ণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে উঠুক। পৃথিবী দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে আর আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে তার সুফল মানুষ ভোগ করতে পারছে না। দুর্নীতি লুটপাট বৈষম্যর কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর থেকে মানুষের আস্থা বিশ্বাস উঠে গেছে।

বিজ্ঞাপন

দেশে দুর্নীতি অলিখিত স্বীকৃত হয়ে ওঠেছে। যেই ব্যক্তি যে চেয়ার বসেছে সেখানে দুর্নীতির বিস্তার ঘটিয়েছে। একেকজন আঙ্গুলফুলে কলাগাছ হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে শুধু কথা নয় কলম ধরারও কেউ সাহস পায়নি। দুর্নীতি থেকে বাদ পড়েনি পিয়ন থেকে ধর্মগুরুরাও। আমাকে কয়েকটি চরিত্র ভীষণভাবে পীড়া দিয়েছে। এদের মধ্যে আছে সরকারি দপ্তরের ড্রাইবার, পিয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নামধারী কথিত ধর্মগুরু, সাবেক পুলিশ প্রধানসহ প্রশাসনের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মর্কর্তা। পিএসসির চেয়ারম্যানের ড্রাইভার মাদারীপুরের সৈয়দ আবেদ আলী ছিলেন সাধারণ কুলি; বিসিএস’র প্রশ্ন বিক্রী করে বনেগেছেন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক , স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্রাইভার আব্দুল মালেক শত কোটি টাকার মালিক সে ঢাকার তুরাগের বাসিন্ধা, বাংলাদেশ পুলিশ এর সাবেক প্রধান বেনজির আহমদ হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক, ছাগলকা-ে জড়িত এনবিআরের কর্মকর্তা মতিউর রহমান হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পিয়ন শতশত কোটি টাকার মলিক, কথিত ধর্মগুরু জিনবোধি ভিক্ষুর কোটি কোটি টাকার উৎস কী ? যাদের কাছে রাষ্ট্রিয় সম্পদ নিরাপদ থাকার কথা তারাই হয়েছে পুকুরচুরির মূল হোতা। এদের কেউ কেউ আবার পিঠে রাজনৈতিক লেভেল লাগিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও। যিনি রাজনৈতিক টিকা মেরে জাতীয় পুরস্কার ভাগিয়ে নিয়েছে তার মধ্যে আছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কলঙ্কিত কথিত ধর্মগুরুও। নিজ সম্প্রদায়ের জনগণকে মামলা দিয়ে হয়রানি করে জায়গা-জমি মন্দির দখল করে রামরাজত্ব কায়েম করেছে। এই কথিত বৌদ্ধ ভিক্ষুটি প্রশাসনকে কথায় কথায় বিগত সরকার থেকে রাষ্ট্রিয় একুশে পদক পাওয়ার পর থেকে হুমকি দিয়ে প্রশাসনকে তটস্থ করে রাখতেন। তাকে নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ও প্রশাসিনক মহলে বহু রঙ্গ কথার ডালপাল গজিয়েছে। তার নাম জিনবোধি। ধর্মপ্রতিষ্টান দখল করে চালায় রাজনীতিক কার্যক্রম। করেন জায়গাজমির ব্যবসাপাতিও। নারীর শ্লীলতাহানীর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। মামলাও হয়েছে। দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে বুদ্ধমূর্তি এনে নিজ সম্প্রদায়কে ধোঁকা দিয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছে। তিনি সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে বহু মামলা করেছেন। যেটি বৌদ্ধধর্মের নীতিবিরুদ্ধ। এজাতীয় শিক্ষক ধর্মগুরুদের কারণে দেশ ও সমাজ আজ ধ্বংসের পথে। নৈতিকতা ভুলন্ঠিত। সরকারকে এই লেবাসধারী ভন্ড দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধেও কঠোর অভিযান পরিচালনা করতে হবে। সাধারণ কর্মচারী থেকে কীভাবে এত ভীত্তশালী হয় তা রাষ্ট্রকে খুঁজে দেখা দরকার। প্রজাতন্ত্রে এরকম হাজার হাজার কর্মচারি আছে যারা প্রতিনিয়ত ঘুষ দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে রাষ্ট্রকে ভিতরে ভিতরে বিকল করে দিচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সরকারি কোষাগারে জমা করুন। বিগত রাজনৈতিক সরকারগুলোর আমলে রাজনীতির প্রভাব খাটিয়ে এরা রাষ্ট্রকে রক্তের মতো চুষে খেয়ে মোটাতাজা করেছে। ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ মানুষগুলো এখনো অনেকে আছে বহাল তবিয়তে, অন্যদিকে দেশের কোটি কোটি জনগণ অভাব অনটনে দিনাতিপাত করছে। অসংখ্য ছাত্র-জনতার রক্ত ও প্রাণ ঝরানোর পর বহুবছর পরে দেশে আজ অন্তর্বর্তি সরকারের আগমন ঘটেছে। এদেশের মানুষ অমানিশার দুঃশাসন আর দেখতে চায় না। অন্তর্বর্তি সরকারের কাছে ছাত্র-জনতার দাবি উঠেছে দেশ দুর্নীতিমুক্ত হোক এবং নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে এনে দেশের সাধারণ জনগণ স্বস্তিতে নিঃশ্বাস ফেলুক।

বিজ্ঞাপন

লেখক: সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক

সারাবাংলা/এসবিডিই

বিপ্লব বড়ুয়া মুক্তমত রাষ্ট্র সংস্কারের বিকল্প নেই

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর