Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভিন্ন চোখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং জনতার দাবি-দাওয়া

আসহাবে কাহাফ
১৯ আগস্ট ২০২৪ ২০:০০

নবীন-প্রবীনের সমন্বয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েই শুরু করছি। যদিও প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে কোনো প্রকার শুভেচ্ছাপত্রে ও বিজ্ঞাপনে তার ছবি ব্যবহার না করার আদেশ জারি করেছেন। নিঃসন্দেহে এটা ভালো দিক। মূল কথার আগে, একটি বিষয়ের অবতারণা করতে চাই। যদি, এতে কারও বোধদয় হয়। ইতিহাসের পিছনে ফিরে গেলে, আমরা দেখতে পাই; বিভিন্ন রাজাদের শাসনামলে রাজ্যের রাজসভায় কবিদের স্থান থাকত। যেমন ১৭শ শতকের বাঙালি কবি দৌলত কাজী এবং আলাওল আরাকান রাজসভার কবি ছিলেন। সেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক প্রকারে বিরল, যদিও আহমদ ছফাকে খালেদা জিয়ার সরকারে স্থান দেওয়ার জন্য একটা ফোনের গল্প প্রচলিত আছে। তবে, সরাসরি তেমন কাউকে আর কখনোই দেখা যায়নি। যুগে যুগে অনেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মন্ত্রীসভায় থাকলেও সরাসরি কবি ছিলো না। তারপরও কেউ কেউ কবি হিসেবে রাজনৈতিক দলের কবি ছিল,এবং যারা ছিলো, তাদের অনেকেই একই সাথে কবি এবং আমলা। শেখ হাসিনা যখন বর্তমান মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তিনিও কবি কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করেছেন। কিন্তু, এখানেই আমার প্রশ্ন, কবি হয়েও তিনি কি প্রধানমন্ত্রীকে কোন উপদেশ দিয়েছেন। তিনি কি শেখ হাসিনার এ পতন আচ করতে পারেননি? আমি জানি, কবি সাহিত্যিকরা ত্রিকালদর্শী। তার অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সবকিছুই দেখতে পায়। এক্ষেত্রে, সাহিত্যের ইতিহাস থেকে, একটা উক্তি তুলে ধরি; ‘ কবিরা হচ্ছে অলিখিত আইন প্রণেতা বা ভাগ্যবিধাতা! ‘ তাহলে কি তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করতে ব্যর্থ হয়েছেন নাকি আমলা ছিলেন বলেই কবিত্বকে সেভাবে প্রকাশ করতে পারেননি? কথাগুলো বলছি, এ জন্যই ; আমাদের দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক অঙ্গনে কবি সাহিত্যিকদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। যেভাবে তাদের মূল্যায়ন করা উচিত। পত্র-পত্রিকার কবি সাহিত্যিক এবং কলামিস্টরা যে কলাম সাম্প্রতিক সময়ে লিখেছে, সে কলামগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, আওয়ামী লীগ সরকারের এ পতনের ভবিষ্যৎবাণী এবং উত্তরণের উপায় সেখানে ছিলো। কিন্তু, সরকার সেভাবে তা মূল্যায়ন বা আমল করেনি। এমতাবস্থায়, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতি অনুরোধ রইল, মাঝে মাঝে অন্তত, পত্রিকায় উঠে আসা কলাম ও লেখকদের পরামর্শকে মূল্যায়ন করা হোক, প্রয়োজনে তাদেরকেও রাজসভা তথা মন্ত্রীসভায় স্থান করে দেওয়া হোক।

বিজ্ঞাপন

ভিন্ন চোখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার! কথাটি স্রোতের বিপরীতে, যা কারও কারও ভালো নাও লাগতে পারে। তারপরও বলছি, এতে যদি উপদেষ্টাদের কোনো উপকার হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের পিছনে যে রাজনৈতিক শক্তিও ছিলো তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তারপরও যদি মেনে নিলাম, ছিলো না, তবুও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক চাওয়া পাওয়া আছে। যার কিছু কিছু বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে হয়েছে, সামনে আরও হবে। আমরা একটা বিষয় হয়তো, আজকে অনেকেই ভুলেগেছি, পরিস্থিতি সবকিছুই পরিবর্তন করে দেয়। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যারা স্থান পেয়েছে, তারা সবাই দল নিরপেক্ষ হলেও মত নিরপেক্ষ নয়! সবার কোনো রাজনৈতিক দল না থাকলেও ব্যক্তিগত মত অবশ্যই আছে। আর, সে মতামত বাংলাদেশের সবার যে ভালো লাগবে, তাও নয়। সুতরাং, সরকারে যারা উপদেষ্টা হয়েছেন, এখানেও তাদেরকে ব্যক্তিগত মতের চেয়ে জনতার মতের প্রাধান্য দিতে হবে। সেক্ষেত্রে, সরকার গঠনে সে মতের প্রাধান্য প্রতিফলিত হয়নি। একই সাথে, এটাও মনে করিয়ে দিতে চাই, সরাসরি আন্দোলনে যুক্ত সমন্বয়কদের এ উপদেষ্টা প্যানেলে থাকাটা কয়েকটি কারণে যৌক্তিক হয়নি। যার একটা হচ্ছে, তারা বয়সে অনেক তরুণ এবং তারা নির্বাচিত প্রতিনিধি নয়। যারফলে, আমলাতন্ত্রের পক্ষে তাদের সম্বোধন ও মান্যতা নিয়ে একটা হীনমন্যতা তৈরি হবে। দ্বিতীয়ত, এটা তাদের অধ্যয়নের সময় এবং ক্ষমতার আসন গ্রহণ করে, তারাও এটা বুঝিয়েছে, ক্ষমতার প্রতি তাদেরও লোভ আছে বা ছিলো। একই সাথে, তাদের মধ্যে নতুন দল গঠনেরও কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা এ সময়ে শোভন নয়। যদিও পরিস্থিতি বিবেচনায় হয়তো কেউ তাদের বিরোধিতা করছে না বা সুযোগ নেই। তাছাড়া, এ সরকারে যারা আছেন তারা সকলেই স্ব স্ব জায়গায় উজ্জ্বল কিন্তু তাদের সে মেধার যে প্রতিফলন সেটা যদি রাষ্ট্রের উপর প্রয়োগ করতেও চাই, তাদের নূন্যতম একটা সময়ের প্রয়োজন আছে, কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতালোভী দলগুলো সে সুযোগ এ সরকারকে দিবে কিনা সেটা সন্দেহজনক। এমতাবস্থায়, এ সরকারের প্রতি জনগণেরও অনেক চাহিদা আছে, সে চাহিদাগুলো মেটাতেও তাদের অনেক বেগ পেতে হবে। ফলে, সবাইকেই এমনভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে, যেন সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙ্গে।

বিজ্ঞাপন

আমাদের দেশের রীতি অনুযায়ী নির্বাচিত সরকারের কাছে যেমন জনগণের চাওয়া-পাওয়া থাকে, একই রীতিতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে, জনগণের দাবি-দাওয়া সবসময় থাকে। সে দাবি দাওয়া গুলো কী হতে পারে, তার একটা নমুনা তুলে ধরে শেষ করব। এ সরকার কতদিন থাকবে বা কবে নির্বাচন দিবে, এটা নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে না বললেও রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতে আমজনতা চাইবে, অন্তত, বছর তিনেক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা থাক এবং এ সময়ের মধ্যে, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একটা সুচিন্তিত পরিবর্তন আসুক। দ্রব্যমূল্য এবং ভোক্তাধিকার নিশ্চিন্তে এ সরকারের উপদেষ্টাবৃন্দ সুনজর দিক। গত পনের বছর আওয়ামী লীগ সরকারের লোকজন এবং বিভিন্ন আমলারা যে দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছে তার একটা শ্বেতপত্র প্রকাশিত হোক এবং প্রত্যকের বিচার করার মাধ্যমে দেশ হতে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়া আনার পাশাপাশি অবৈধ সম্পদ ও অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হোক। রাষ্ট্রের প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে ও স্বচ্ছতার সহিত কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া হোক। নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগের উপর সকল ধরনের হস্তক্ষেপ রোধ করা সহ, পুলিশ বাহিনীকে শক্তিশালী ও জনবান্ধব করা হোক। ব্যাংকিং সেক্টরের দুর্নীতির বিষয়গুলোকে জনসম্মুখে উন্মুক্ত করা হোক। চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাগুলোকে প্রভাবমুক্ত করা হোক এবং প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া বন্ধ করুক। দেশের অভ্যন্তরীণ যে চাঁদা আদায় ও ঘুষের সংস্কৃতি চালু আছে, তা পুরো দমে বন্ধ করা হোক। বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হোক। এবং সর্বশেষ গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হোক। এখন কথা হল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি মাস তিনেক কিংবা বছর খানেকও থাকে, তবে এসব করা সম্ভব কি? অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলো কি এ সরকারকে সে সময় দিবে, যাতে দেশকে নির্দিষ্ট একটা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে? আপাতত, ভয়ের কথা এই, এদ্বিমুখী সময়ের মধ্যে আদৌ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো প্রতিফলন দেখতে পাব কি? সেটাই এখন দেখার বিষয়। সে লক্ষ্যে আপাতত, শুভকামনা রইল, সবার জন্য।

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক

সারাবাংলা/এসবিডিই

আসহাবে কাহাফ ভিন্ন চোখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং জনতার দাবি-দাওয়া মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

নতুন বার্সেলোনায় মুগ্ধ মেসি
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫৫

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর