Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চাইলেই কি ভারত বাংলাদেশে পানি ছেড়ে দিতে পারে?

ইমরান ইমন
২১ আগস্ট ২০২৪ ১৪:২৫

স্মরণকালের ভয়ংকর বন্যায় ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার অবস্থা ভয়াবহ। এ অঞ্চল এখন পানির নিচে, যোগাযোগব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। গত ৪১ বছরেও এ অঞ্চলের মানুষ এমন ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়নি। ইতোমধ্যে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।

সাধারণ বৃষ্টিতে এমন ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। ভারত তাদের ডম্বুর গেটের ‘ভালোবাসার পানি’ ঢেলে দিয়ে এ অঞ্চলের এ করুণ দশা তৈরি করেছে। এবং তা করেছে রাতের আঁধারেই। তারা সর্বশেষ এমন ঘটনা ঘটিয়েছিল ১৯৮৪ সালে। ভারত কি আন্তর্জাতিক আইন ও নীতি মানে? তাদের কি কখনও প্রশ্নের সম্মুখীন করা হয়েছে?

একেকবারের বন্যায় এ অঞ্চলের মানুষের কৃষি, মৎস, অবকাঠামো থেকে শুরু করে সার্বিক ক্ষতি হয় হাজার কোটি টাকা। দায় এড়াতে এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরা তখন শুধু এক প্যাকেট চিড়া-মুড়ি নিয়ে মানুষের ‘করুণ দরোজায়’ হাজির হয় আর ফটোসেশন করে নিজেদের ঢাকঢোল পিটিয়ে বড় বড় প্রতিশ্রুতির কথা বলে মানুষকে ঘুম পাড়িয়ে চলে যায়। কিন্তু স্থায়ী কোনো সমাধান তারা করে না কিংবা করতে চায় না। এখানে বড় ধরনের ‘দূরভিসন্ধি’ রয়েছে।

স্থানীয় সরকার ও মন্ত্রী-এমপিরা বারবার বিভিন্ন সময়ে ‘এ অঞ্চলের দুঃখ’ মুহুরী নদীর স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত তা নির্মিত হয়নি। কেন, কা(র)দের নির্দেশে এখানে স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মিত হয় না—সে প্রশ্ন না উঠে পারে না। এ অঞ্চলের মানুষকে এ নিয়ে সোচ্চার হতে হবে।

যত মুহূর্ত গড়াচ্ছে ততই ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশকে না জানিয়ে রাতের আঁধারে ভারতের ছেড়ে দেওয়া প্রলয়ঙ্কারী বন্যার পানিতে প্রতি মিনিটেই বাড়ছে এখানকার পানির মাত্রা। রাস্তাঘাট তলিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন, বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যন্ত। এবং পূর্বাভাস বলছে, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি, মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে। অথচ দুর্যোগের এতো ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও জনজীবন রক্ষার্থে প্রশাসন থেকে সরকারীভাবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করলেও তা দুর্যোগের ভয়াবহতার তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। তাছাড়া এদের কাছে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি তেমন নেই, যেগুলো রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কাছে রয়েছে।

গতকাল রাত থেকে এ অঞ্চলের মানুষের চোখে ঘুম নেই। এখন প্রতিটি গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে পানি ঢুকে গেছে, কোথাও ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে, কোথাও গলা সমান পানি। মানুষ বাঁচার আকুতি জানিয়ে আহাজারি করছে। স্মরণকালের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে এই জনপদ। ত্রাণ বিতরণের চেয়ে এখন মানুষের জীবন রক্ষা জরুরি। এলাকার উঁচুভবন, সরকারি-অসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। সবাই একে অপরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ডের মতো দক্ষ বাহিনীগুলোকে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য এখন মাঠে নামাতে হবে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা না করলে এ অঞ্চলে ‘ভয়াবহ ট্র্যাজেডি’ দেখা দিবে।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

ইমরান ইমন চাইলেই কি ভারত বাংলাদেশে পানি ছেড়ে দিতে পারে? মুক্তমত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর