Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আগস্টের বন্যার কালো উপন্যাস: মানুষ মানুষের জন্য

ওমর ফারুক
২২ আগস্ট ২০২৪ ১২:৩৪

দেশের ইতিহাসে এমন ধ্বংসাত্মক শক্তিশালী বন্যা হয়েছে বলে কারো জানা নেই। বাংলাদেশের অনেক জেলা এখনো বিপদজনক। চারদিকে থইথই ও টইটম্বুর পানি আর পানি। বড় বড় দালানকোঠা ডুবে হারিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি আমাদের হানা দিবে মানুষের কল্পনার বাহিরে ছিল। আমাদের যে নদী ও সাগর জীবীকা নির্বাহ করে টিকিয়ে রাখছে সেই আঁকাবাঁকা নদী ও বিশাল সমুদ্র আজ উত্তাল। চোখ রাঙিয়ে আমাদের দেশকে অন্ধকার বানিয়ে তুলছে। কঠিন মুহূর্ত পার করতে বাধ্য করছে। যেখানে চোখের জল ও বন্যার পানি এক হয়ে আর্তনাদ করছে। মানুষের আহাজারি থামছে না। মানুষ জীবন নিয়ে কিভাবে নিরাপদ স্থানে আসবে সেই চিন্তায় বহু জীবন নিভে গেছে। আর কেউ কেউ আকাশের দিকে থাকিয়ে জমিনের মালিককে ডাকছে। আমাদের এমন পরিস্থিতি কখনো ভুলার নয়। স্বরণ কালের সবচেয়ে ক্ষতিকর বন্যা এটা। দেশের লিপিবদ্ধ ইতিহাসের কুচকুচে কালো এক উপন্যাস!

বিজ্ঞাপন

বন্যা কবলিত এলাকায় যখন মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়লো উদ্ধার করতে তখন কিছু সিন্ডিকেট বসে বসে পা নাচাচ্ছে। যেমন, অভয় মিত্র ঘাট চট্টগ্রাম ইঞ্জিন চালিত বোট ভাড়া নিলে তারা ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা চেয়েছিল। বিকাল ৪:০০ টার দিকে এক ভদ্রলোক গিয়ে মাঝি ও সমিতির সাথে কথা বলে মাত্র ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করেন। আকরাম মাঝির নাম্বার সহ নোট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা হয়। আকরাম মাঝি নিজেই বলেছেন বিষয়টা। কেউ ৩ হাজারের চেয়ে বেশি নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে এমনটাও বলেছেন।

বিজ্ঞাপন

দেশের এমন ক্রান্তিলগ্নে কিছু অসাধু ব্যবসা-সম্পৃক্ত সিন্ডিকেট দেশকে রসাতলে নিতে চাই। এমন মারাত্মক মরণময় মুহূর্তের সময়ে ভাড়া চেয়েছিল ২০/৩০ হাজার একটা বোট। এটা প্রায়ই দেখা যায় কোনো একটা অঘটন ঘটলে সিন্ডিকেট দাম হইহই করে তুলে ফেলে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। মানুষ নিজের জীবন বাজি রেখে মানুষকে সাহায্য করছে। সকল স্তরের মানুষ বন্যার কাজে উদ্ধার তত্পরতা, আর্থিক, আশ্রয় এবং খাদ্যদ্রব্যদী দিয়ে পাশে থাকতে চাইছে। শতশত বোট ও নৌকা এবং স্পিডবোট ফ্রিতে দিয়েছে। অনেক সংগঠনের পক্ষ থেকেও এমন উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে। বহু মানুষ কাজে সামিল হয়েছে মানুষকে আশ্রয় স্থানে নিয়ে আসতে।

আর কিছু মানুষ বসে থাকে দেশকে ধ্বংস করতে। সুযোগ পাইলে আকাশচুম্বী দাম নিয়ে সিন্ডিকেট ভরপুর করে। কখন মানুষ হবো আমরা? মানবিক জ্ঞান বলতে কিছু নেই মানুষের। বন্যা কবলিত মানুষের জানপ্রাণ শেষ হয়ে যাচ্ছে আর কিছু অসাধু বসে আছে ব্যবসা করতে। আমরা দেখলাম মানুষ যে যার যার জায়গা থেকে কাজ করছে। সকল ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এগিয়ে আসছে। প্রশাসনের ভূমিকা ছিল গৌরবময়। রাতদিন পানিতে সাঁতার কেটে মানুষ উদ্ধার করছে এবং সাহায্য করছে। দেশের এমন কঠিন মুহূর্তে আমাদের প্রশাসনিক যৌত বাহিনী তাঁদের বরাবরের মতো অবদান রাখছে এবং রেখে যাচ্ছে। নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁরা আপ্রান চেষ্টা করতেছে।

বন্যা হয় স্বাভাবিক ঠিক আছে। ভারত পানি ছেড়ে দেওয়ায় বন্যা সীমার বাহিরে এবং নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেছে। এমন বন্ধু দেশ আমাদের লাগবে না। যারা অমানবিক ও নিষ্ঠুরতম কাজ করে তারা কখনো প্রতিবেশি বা বন্ধু হতে পারে না। সেই বিষয়ে পরে আলোকপাত করা যাবে। আজ যেটা বলতে চাচ্ছি তা হলো সিন্ডিকেট ভেঙে ধ্বংস করে দিতে হবে। সকল স্তরে সিন্ডিকেট সুযোগের অপেক্ষায় বহমান। সিন্ডিকেট রণক্ষেত্র না করলে দেশে অরাজকতা কমবে না। বাজার সিন্ডিকেট থেকে গাড়ির সিন্ডিকেট সহ সব জায়গায় নজরদারি বাড়াতে হবে। যারা মানুষের বিপদে নিজের দেশের জনগণের রক্ত চুষে টাকা আয় করতে চাই তাদের নিঃশেষ না করলে শান্তি ফিরে আসবে না। নিজের মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে যাদের ভালো লাগে তাদের এই ভূখণ্ডে রাখা যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। দেশের ছাত্র সমাজ বিষয়টা দেখবে। ইনশাআল্লাহ!

বন্যা কবলিত মানুষজনের জন্য সমস্ত পর্যায়ের মানুষ এগিয়ে আসছে। শ্রম, আর্থিক, গাড়ি, বোট, নৌকা, হেলিকপ্টার এবং চিকিৎসা সামগ্রী সব দিয়ে মানুষ পাশে থাকার চেষ্টা করেছে এবং এখনো চলমান। তারা প্রমান করছে মানুষ মানুষের জন্য। সকল বিপদে আমাদের মতভেদ, ধর্ম বর্ণ ভুলে দুঃখদুর্দশাগ্রস্ত ও বিপদে পড়া মানুষের পাশে থাকার ও সাহায্য করার চেষ্টা চলমান। বিপদে মানুষ মানুষের কাছে না আসলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এই আশরাফুল মাখলুকাত নামের মানুষ জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে। শ্রেষ্ঠ প্রাণী হিসেব বিবেচিত মানুষ মানুষকে আপন করে নিতে হবে। ঠিক যেমনটা পূর্বে সমস্ত বিপদে হাজির হয়েছিল। আজও মানুষ মোকাবেলা করছে।

তরুণরা জীবন বাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়ছে ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালী সহ সকল বন্যা কবলিত এলাকায়। বৃদ্ধরা ফান্ড করে গাড়ি ও বোট নিয়ে রওয়ানা হয়েছে সেখানে। প্রবাসী ভাইয়েরা হেলিকপ্টার প্রস্তুত করে ফেলছে। বিভিন্ন ফান্ডে পরদেশ থেকে টাকা পাঠাচ্ছে। ছাত্র সমাজের চোখে ঘুম নেই। এক কথায় দেশের সর্ব স্তরের মানুষ এগিয়ে এসেছে এবং কাজে সামিল হয়েছে৷ দুঃখ ও কষ্ট চলে যাবে। এমন দূরাবস্থা শেষ হয়ে পূর্বের হাসোজ্জল চেহারায় ফিরবে বাংলা। লিখা থাকবে আমাদের ভ্রাত্রীয় বন্ধন। ইতিহাস হয়ে রবে আমাদের বাংলার মানুষের হুমড়ি খেয়ে পড়া কর্ম। চোখের পানিতে ভাসমান বোট নিয়ে উদ্ধার করা স্মৃতি রবে আমাদের হৃদয়ে। মানুষের ডাক মস্তিষ্কে গেঁথে থাকবে মহাকাল।

বিপদ এখনো কাটে নাই বন্যা কবলিত এলাকায়। মানুষ যথেষ্ট চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমার দেশের প্রতিটা বাহিনী জীবনের মায়া ত্যাগ করে কাজ চালাচ্ছে। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের দিখে থাকাবেন। তিনি আমাদের বিপদ সহজ করে দিবেন। মহান রব সবাইকে হেফাজত করবেন। বন্যায় বিপর্যয় হওয়ার ও কাজে সামিল হওয়া সবাইকে হেফাজত করবেন। অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ঘরবাড়ি, ধনসম্পদ, ফসল, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, পশুপাখি ও আশ্রয় স্থান হারিয়ে নাজেহাল। অধিপতি তাদের ধৈর্য দান করুক। আমরা ফিরে যাব সুন্দর সুললিত সেই পুরনো সবুজ বাংলায়। যেখানে মা হাসে, শিশু দোলনায় দোলে, কিশোর ফুটবল খেলে, কিশোরীরা চুলে ফিতা বেঁধে স্কুলে যাবে এবং রাস্তায় রিকশার বেল টিংটিং বাজবে। ফসলের মাঠ তৃণ সবুজে ভরপুর হবে। আমরা কাটিয়ে উঠবো সমস্ত বিপদ। বাংলার মানুষ হাসবে একত্রে!

লেখক: শিক্ষার্থী, সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম

সারাবাংলা/এসবিডিই

আগস্টের বন্যার কালো উপন্যাস: মানুষ মানুষের জন্য ওমর ফারুক মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

নতুন বার্সেলোনায় মুগ্ধ মেসি
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫৫

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর