Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায় ইয়াসমিনের সঞ্চয়িতা

মো. মাসুদ হোসেন
২৯ আগস্ট ২০২৪ ১৩:১৭

প্রতিটি নারীর সফলতার পিছনে থাকেন তিনি নিজেই। কারণ তার ইচ্ছা শক্তি এবং মনোবল তাকে নিয়ে যেতে পারে বহুদূর। নিজের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আজকের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে সামনে। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কর্পোরেট জগৎসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে নারীর সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। সেই সাথে নারীরা এখন পড়াশোনা করছেন, চাকরি করছেন- এমনকি স্বাধীন উদ্যোক্তাও হচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, যেসব নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করছেন, তারা ভালো করছেন। এমনি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লার বিখ্যাত মোমবাটিক পোশাক নিয়ে ২০১৯ সালে অনলাইনে কাজ শুরু করেন নারী উদ্যোক্তা ইয়াসমিন সুলতানা। চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা ইয়াসমিন সুলতানার বিয়ে হয়ে যায় খুব অল্প বয়সেই। শৈশব ও পড়াশোনা চাঁদপুরে হলেও স্বামীর চাকরিসূত্রে ঢাকার সাভারে তার বসবাস। বর্তমানে স্বামী-সংসার সামলে দেশীয় পণ্যের একজন ই-কমার্স উদ্যোক্তা ইয়াসমিন। অনলাইনের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায় নজর দিয়েছেন এই নারী উদ্যোক্তা। তার সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার নানা চড়াই-উতরাইয়ের গল্প লিখেছে মো. মাসুদ হোসেন।

শূন্য থেকে শুরু করে নিজের চেষ্টা, অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে কীভাবে নিজের একটা আলাদা পরিচয় তৈরি করা যায়, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অদম্য সংগ্রামী নারী ইয়াসমিন। আজ তিনি সফল একজন নারী উদ্যোক্তা। এই পথটা সহজ ছিল না। অনেক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। সেই গল্প জানতে যেতে হবে আরো অনেক পেছেনে। ইয়াসমিনের শৈশব ও কৈশোরের স্বর্ণালি দিনগুলো কাটে চাঁদপুরেই। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পড়ালেখা করেন সেখান থেকে। স্কুল-কলেজ জীবন, সবকিছুই ছিল রঙিন। কলেজ ক্যাম্পাস, পড়ালেখা, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, মুক্ত পাখির মতো ঘুরে বেড়ানো, সবকিছুই চলছিল স্বাভাবিক নিয়মে। হঠাৎ করেই বদলে গেল তার জীবনের দৃশ্যপট। তখনো সবেমাত্র পড়ছিলেন উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম বর্ষে। পারিবারিকভাবে হঠাৎ করে তাকে দেওয়া হয় বিয়ে। পরে যেতে হয় শ্বশুরবাড়িতে। শুরু হয় নতুন জীবন। স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সহযোগিতায় বিয়ের পরেও পড়াশোনা চালিয়ে পাস করেন এইচএসসি। এরপরই জন্ম দেন একটি কন্যাসন্তান। এক বছর বিরতি দিয়ে অনার্সে ভর্তি হয়ে আরো দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তিনি। পড়ালেখা করে চাকরি পাওয়া যেন সোনার হরিণ এই দেশে। পেলেও স্বামী-সংসার ও মেয়েকে সামাল দেওয়ার কেউ থাকবে না। এমনটা ভেবেই অন্যভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চিন্তা মাথায় আসে তার। স্বামীর দেওয়া হাত খরচের সামান্য কিছু টাকা জমিয়ে শুরু করেন দেশীয় পণ্যের অনলাইন ব্যবসা।

শুরুতেই বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লার বিখ্যাত মোমবাটিক এর বাহারি ডিজাইনের মেয়েদের থ্রি-পিস, ওয়ান পিস, ওড়না, হাতের কাজ করা শাড়ি, ব্লাউজ, বেডশিট তার ফেসবুক পেজ সঞ্চয়িতা থেকে লাইভে এসে প্রদর্শনী শুরু করেন। ওই লাইভ সম্প্রচারে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতাদের তিনি দেশীয় পণ্যের ব্যাপারে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হন। ক্রেতারা তার লাইভ দেখে নিজের পছন্দমতো পোশাকটি অর্ডার করতে শুরু করেন। প্রতি লাইভে অর্ডার করা পণ্য কুরিয়ারের মাধ্যমে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্রেতাদের কাছে ডেলিভারিতে পৌঁছানোর যাবতীয় কাজও ইয়াসমিন স্বামীর সহযোগিতায় করে থাকেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও মেলায় অংশগ্রহণ করে কুড়িয়েছেন অনেক সম্মাননা। পেয়েছেন আর্থিক সহযোগিতাও। দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অবদান সরূপ সর্বশেষ নিজ জেলা চাঁদপুর থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “চাঁদপুর প্রভাত সমাজকল্যাণ সংস্থা” তাকে সম্মাননায় ভূষিত করেন। জানা যায়, তার স্বপ্ন দীর্ঘ ৫ বছরের অনলাইন এই ব্যবসাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপে পরিণত করতে। যেই ভাবা সেই কাজ। চলতি মাসের গত ২ তারিখে রাজধানীর সাভার আশুলিয়া এলাকার মির্জানগর এনায়েতপুরে একটি আউটলেট উদ্বোধন করেন। স্বামী-সংসার সামলে অনলাইনের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক এই ব্যবসায়ও নিয়মিত সময় দেন সফল এই নারী উদ্যোক্তা।

উদ্যোক্তা হতে হলে কাজের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ অত্যাবশকীয় বলে মনে করেন ইয়াসমিন। সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পথে বাধা অতিক্রম করে ধৈর্য, শক্তি, সাহস, বিশ্বাস আর সততা দিয়ে স্বপ্নপূরণ করা সম্ভব বলে বিশ্বাস তাঁর। সফল এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুটা সহজ ছিল না। তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাওয়ায় পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। তবু স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দেননি। জানিয়েছেন, স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে অনুপ্রেরণা জোগান তাঁর স্বামী। স্বামীর অনুপ্রেরণায় নতুন করে শুরু করেন নিজের স্বপ্নপূরণে এগিয়ে চলা। পরিবার-সংসার সামলে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়াটা কঠিন। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা, অধ্যবসায় ও পরিশ্রম থাকলে এটি সম্ভব। তিনি বলেন, এতদিন আমার স্বপ্ন ছিল, কবে একটি শোরুম হবে। নিজের ইচ্ছাশক্তি আর স্বামীর অনুপ্রেরণায় তা সফল হতে পেরেছি। আমার ক্রেতারা অনলাইনে পণ্য ক্রয়ের পাশাপাশি এখন সরাসরি শোরুমে এসেও দেখে বুঝে তাদের পছন্দসই পণ্য কিনতে পারবেন।

লেখক: সমাজকর্মী

সারাবাংলা/এসবিডিই

প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায় ইয়াসমিনের সঞ্চয়িতা মুক্তমত মো. মাসুদ হোসেন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর