প্রেমে বা সম্পর্কে অনেকের জড়ানোর প্রধান প্রতিবন্ধকতা গ্যামোফোবিয়া
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৪
প্রেমে পড়তে বা সম্পর্কে জড়াতে ভয় পাওয়ার বিষয়টিকে ‘গ্যামোফোবিয়া’ বলে। গ্রিক ভাষায় গ্যামো মানে জুটিবন্ধন আর ফোবিয়া মানে তো ভয় সকলেই জানেন। গ্যামোফোবিয়া হলো, কোনো এক ধরণের স্থায়ী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার ভয়। যারা মানসিক ভাবে এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত তারা আসলে নতুন সম্পর্ক নিয়ে আতংকে থাকেন, বিবাহিত বা এক সাথে কাটানো জীবন নিয়ে একটা ভয় কাজ করে, নিজের ব্যাক্তি স্বাধীনতার জায়গাটুকু খর্ব হতে পারে কিংবা মানিয়ে চলা যাবে কিনা এধরণের একটা চিন্তায় থাকেন এই ধরণের ফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষরা।
কেনো হয় গ্যামোফোবিয়া? বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। ভেঙ্গে যাওয়া পরিবার, বিরক্তিকর পারিবারিক জীবন বা বিচ্ছেদের যন্ত্রণা গ্রস্থ মানুষকে সামনা-সামনি দেখে বেড়ে উঠা অনেকের মধ্যেই এই ফোবিয়া থাকতে পারে। তাদের হয়ত ধারণাই হয়ে যায় সম্পর্ক মানেই কোনো একদিন আর টিকে থাকবে না, ভেঙ্গে যাবে। আবার যেসব পরিবারে বাবা মা খুব ঝগড়া করেন, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্বাভাবিক সুর কেটে যায়, সেইসব পরিবারের অনেকেও গ্যামোফোবিয়ায় ভুগতে পারে। এছাড়া, অনেকক্ষেত্রেই এমন হয় সত্যিকারের প্রেম ভেঙ্গে যাওয়ার পর অনেকেই মানসিকভাবে এতোটাই ভেঙ্গে পড়ে যে, কাউকে আর তার আপন মনে হয় না। সে তখন কাউকেই আর বিশ্বাস করতে পারে না, অন্তত কমিটেড কোনো রিলেশনশীপের জন্য। আবার হীনমন্যতা কিংবা নিজের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত অবসেশনে ভোগা মানুষদেরও গ্যামোফোবিয়া হতে পারে।
লক্ষণঃ যাদের গ্যামোফোবিয়া হয় তারা সাধারণত সম্পর্কের ব্যাপারে বেশ উদাসীন থাকে। এসব নিয়ে সিরিয়াস কোনো কথা উঠলে এড়িয়ে যেতে চায়। এছাড়া, বিয়ে সংক্রান্ত যেকোনো আলোচনা তারা অপছন্দ করে। এমনকি বিয়ের আয়োজনেও তারা যেতে চায় না। বিয়ের ফর্মালিটিজকে তারা বেশ অপছন্দ করে। তারা সবসময়ই মনে করে সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়াটা হয়ত ভুল সিদ্ধান্ত হবে। এই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকাও গ্যামোফোবিয়ার একটি লক্ষণ।
গ্যামোফোবিয়ার কারণ: ১. অতীতের আঘাত, অতীতের সম্পর্কের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা, অবিশ্বাস বা বেদনাদায়ক বিচ্ছেদের কারণে অনেকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পান। ২. ব্যক্তির পারিবারিক ইতিহাসে যদি অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক, বিচ্ছেদ ও এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলেও বিয়ে ভীতি হতে পারে। ৩. ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যও গ্যামোফোবিয়ার কারণ হতে পারে। যেমন অনেকে স্বাভাবিকভাবেই খুব উদ্বিগ্ন থাকেন, আবার তারা প্রচুর স্বাধীনতা চান। এ ধরনের ব্যক্তিরা মনে করেন বিয়ে করলে স্বাধীনভাবে, নিজের ইচ্ছেমতো বাঁচা যাবে না। তাই বিয়ে ভীতিতে ভীত হন। ৪. সাংস্কৃতিক বা সামাজিক চাপ যেমন বিয়ের বিষয়ে সামাজিক প্রত্যাশা, চাপ, উদ্বেগও ভয়ের কারণ হতে পারে।
যেসব লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনি এ রোগে আক্রান্ত: আপনার মধ্যে যদি কাউকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ভয় কাজ করে, একজনের সঙ্গে জীবন কাটাতে হবে এ ভয়ে যদি সম্পর্ক থেকে পালাতে চান, বিয়ের পর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হবে ভেবে ভয় পান, সম্পর্ককে উদ্বেগ ও বিষণ্নতার কারণ মনে করেন তাহলে আপনি গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত। ভয় ও উদ্বেগ থেকে হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে, ঘাম, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি হতে পারে।
গ্যামোফোবিয়া কাটিয়ে ওঠার উপায়: গ্যামোফোবিয়া থেকে মুক্তি পেতে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। বিশেষজ্ঞ ছাড়া পাড়া-প্রতিবেশি কিংবা বন্ধুদের কাউন্সেলিং নিলে যথেষ্ট হবে না। বিশেষজ্ঞরা কগনিটিভ-বিহেভিয়ারাল থেরাপি বা সিবিটি দিয়ে থাকেন। এছাড়াও আপনার রোগের তীব্রতা বোঝে চিকিৎসা দেবেন। এর পাশাপাশি মেডিটেশন, ব্যায়াম ইত্যাদি চালিয়ে যেতে পারেন। গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্তদের কোনো গ্রুপ থাকলে সেখানে যুক্ত হতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যেখানে একই ধরনের ভয়ের কথা অনেকে শেয়ার করেন, পাশাপাশি ভয় কাটিয়ে ওঠার পরামর্শ পাওয়া যায়, সেখান থেকে উপকার পাওয়া যেতে পারে। সঙ্গী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভয় ও উদ্বেগ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলুন।
লেখক: সংবাদকর্মী
সারাবাংলা/এজেডএস
প্রেমে বা সম্পর্কে অনেকের জড়ানোর প্রধান প্রতিবন্ধকতা গ্যামোফোবিয়া শিতাংশু ভৌমিক অংকুর