Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সমস্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের মাধ্যমিক শিক্ষা: অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা

অশোক কুমার চাকমা
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৫৮

সার্বজনীন ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপারে প্রত্যেক সরকারের আমলে নীতি সমর্থন থাকার কারণে পাহাড়েও প্রাথমিক শিক্ষায় যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় পার্বত্য অঞ্চলে মাধ্যমিক শিক্ষায় অগ্রগতি হয়নি। পার্বত্য অঞ্চলের মাধ্যমিক শিক্ষা নানা সংকটে জর্জরিত। অনেক সমস্যার মধ্যে এ মুহুর্তে সবচেয়ে জরুরী সমস্যা হলো শিক্ষক সংকট। শিক্ষক সংকটের কারণে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাই পাচ্ছে না, গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা তো অনেক পরের কথা। তাই এ নিবন্ধে পার্বত্য অঞ্চলের মাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যাবলি সমাধানের লক্ষ্যে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

মাধ্যমিক শিক্ষার বর্তমান অবস্থা বুঝার সুবিধার্থে শুরুতে কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ১১টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৯টি, মিডল ইংশিল স্কুল ৫টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৯১টি, ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ১টি, পালি টোল ২০টি এবং পিটিআই ১টি। সে সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলে মাধ্যমিক শিক্ষার অগ্রগতি মন্থরই বলা যায়।

স্বাধীনতার দেশ দশক পরে (১৯৮৫ সাল মোতাবেক) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে মাত্র ৫০টি ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২২টি। তখন মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো মাত্র ১১,৭৪৯ জন।

২০২৩ সাল নাগাদ তিন পার্বত্য জেলাতে নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং স্কুল এন্ড কলেজ-এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৪৩টি। সেগুলোর মধ্যে রাঙ্গামাটি জেলাতে ১৫৫টি, খাগড়াছড়িতে ১২৮টি এবং বান্দরবানে ৬০টি। ধরন অনুসারে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১১টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২১৭টি এবং স্কুল এন্ড কলেজ ১৫টি। বালিকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২১টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বেসরকারি ১৮৯টি (৮৭.১০%) এবং সরকারি মাত্র ২৮টি (১২.৯০%)।

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যূরো (ব্যানবেইস) ২০২২-এর তথ্য অনুসারে, তিন পার্বত্য জেলায় মাধ্যমিক স্তরে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২১,১০৫। তাদের মধ্যে বালক ৫৫,৪১১ (৪৫.৭৫%) জন এবং বালিকা ৬৫,৬৯৪ (৫৪.২৫%) জন। জেলাভিত্তিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা রাঙ্গামাটিতে ৪৬,১৯০, খাগড়াছড়িতে ৪৮,৭১৮ এবং বান্দরবানে ২৬,১৯৭।

তিন পার্বত্য জেলাতে মাধ্যমিক স্তরের কয়টি বিদ্যালয় এমপিওভু্ক্ত এবং কয়টি এমপিও সুবিধার বাইরে রয়েছে সে ব্যাপারে পুরো তথ্য পাওয়া যায়নি। ব্যানবেইস তথ্যভান্ডার ২০২৩ অনুসারে, তিন পার্বত্য জেলাতে ২৬৬টি মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯২টি এমপিওভুক্ত এবং ৭৪টি বিদ্যালয় এমপিও সুবিধার আওতার বাইরে। তথ্যজ্ঞ মহলের মতে, তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যালয় বিহীন এলাকায় স্থানীয় জনগণের উদ্যোগে অনেক নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর প্রাথমিক পাঠদানের অনুমতি ও একাডেমিক স্বীকৃতি শিক্ষাবোর্ড থেকে আদায় করা সম্ভব হয়নি। ফলে এসব স্কুল ব্যানবেইসের হিসেবের বাইরে রয়ে গেছে। অর্থাৎ মাধ্যমিক স্তরের অনেক বেসরকারি বিদ্যালয় এমপিও সুবিধার আওতার বাইরে রয়ে গেছে।

এখন পার্বত্য অঞ্চলের মাধ্যমিক শিক্ষায় বিরাজমান মৌলিক সমস্যাগুলোর দিকে তাকানো যাক। এ সমস্যাগুলো দুর্গম ভৌগলিক অবস্থা ও যাতায়াত ব্যবস্থার সাথে যেমন সম্পর্কিত, তেমনি রয়েছে চরম দারিদ্র্য এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা ও দক্ষ শিক্ষকের অভাব। এছাড়া রয়েছে আইন ও নীতি প্রয়োগ হতে সৃষ্ট নানা সমস্যা ও জটিলতা। নিচে পার্বত্য অঞ্চলের মাধ্যমিক শিক্ষার মৌলিক ও জরুরী সমস্যাসমূহ সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল:

১. শিক্ষক সংকট: তিন পার্বত্য জেলার প্রত্যেকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রচন্ড শিক্ষকের সংকট আছে; তার উপর অভিজ্ঞ ও যোগ্য শিক্ষকের প্রচন্ড ঘাটতি রয়েছে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক বিশেষত ইংরেজী, গণিত ও বিজ্ঞান – এসব মৌলিক বিষয় পড়ানোর মতো শিক্ষকের প্রচন্ড ঘাটতি রয়েছে। আর এসব বিষয়ের শিক্ষকরা সাধারণত প্রত্যন্ত বা মফস্বল এলাকার বিদ্যালয়ে যেতে আগ্রহী হন না। শিক্ষক সংকট শুধু বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নয়, সরকারি বিদ্যালয়েও রয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের পাশি অনেক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ খালি পড়ে আছে বছরের পর বছর ধরে।

২. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা অপ্রতুল: তিন পার্বত্য জেলায় উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর সন্তানদের মাধ্যমিক শিক্ষা নিয়ে অভিভাবকরা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে যান। প্রতি বছর প্রত্যন্ত এলাকার অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের অভাবে মাধ্যমিক স্তরে পড়ালেখা করার সুযোগ পায় না। দৈনিক পত্রিকার সূত্র অনুসারে, তিন পার্বত্য জেলায় প্রতি বছর ২০,০০০- ২৫,০০০ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক শিক্ষার আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে। কোনো কোনো সূত্র মতে, এ সংখ্যা গড়ে ৪০,০০০-এর বেশি।

৩. শিক্ষক নিয়োগে দীর্ঘসূত্রিতা: নিয়োগ প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ‘উপযুক্ত’ শিক্ষক নিয়োগের অঙ্গীকার নিয়ে ২০০৫ সালে ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন (এনটিআরসিএ)’ প্রণয়ন করা হলেও শিক্ষক নিয়োগ সমস্যার সমাধান হয়নি। ২০১৫ সালে এসে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ও কলেজের ম্যানেজিং কমিটি/ গভর্নিং বডির কাছ থেকে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা সুকৌশলে কেড়ে নেওয়া হয়। বর্তমানে এনটিআরসিএ-এর সুপারিশ ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ সম্ভব নয়। এনটিআরসিএ আইনের ফলে পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষক সংকটের সমাধান তো হয়নি, বরং আরো জটিল হয়েছে। এনটিআরসিএ-এর উদ্দেশ্য মহৎ হলেও অতি কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা হওয়ার কারণে এটি পার্বত্য অঞ্চলের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনেনি। এনটিআরসিএ-র কাছে ৫-৬ বছর আগে শিক্ষকের চাহিদা দেওয়া হলেও পার্বত্য অঞ্চলের অনেক বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এখনো পর্যন্ত শিক্ষক পায়নি।

৪. অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা ও শিক্ষা উপকরণের অভাব: পার্বত্য অঞ্চলের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধাদির প্রচন্ড অভাব রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রেণিকক্ষ নেই, চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ নেই, শিক্ষার্থীদের জন্য টয়লেট ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য বিজ্ঞানাগারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ নেই।

৫. আবাসনের সমস্যা: পার্বত্য অঞ্চলের ৫০%-এর বেশি শিক্ষার্থী প্রত্যন্ত অঞ্চলে পড়ালেখা করে। বিদ্যালয়ের সাথে আবাসিক ছাত্রাবাসের সুবিধা না থাকায় প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ মাধ্যমিক স্তর থেকে ঝরে যায়। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠার কথা অঙ্গীকার করা হলেও এ ব্যাপারে এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

৬. মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান: শিক্ষার গুণগত মান অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন, পর্যাপ্ত শিক্ষকের সংখ্যা, ভৌত অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা ও শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষকদের পেশাগত প্রশিক্ষণ, বেতন-ভাতা ও প্রণোদনা, শ্রেণির আকার ইত্যাদি। এসব সুযোগ সুবিধার কথা দূরের কথা, পার্বত্য অঞ্চলের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে পড়ানোর মতো প্রয়োজনীয় শিক্ষকই নেই। ফলে পার্বত্য অঞ্চলে গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা বরাবরই একটা বড় ইস্যু হিসেবে রয়ে গেছে।

৭. আইন ও নীতি বাস্তবায়নে সমস্যা: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ১৯৯৭-এর পরে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন (সংশোধনী) ১৯৯৮ অনুসারে মাধ্যমিক শিক্ষাকে সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের হস্তান্তরিত করা হয়। ২০১৪ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিপত্রে মাধ্যমিক শিক্ষা বিষয়ে পার্বত্য জেলা পরিষদের জন্য ১৫টি কার্যাবলি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়ন, পরিচালনা, তত্ত্বাবধান, সমন্বয় সাধন ও নিয়ন্ত্রণ; মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য স্থানীয়ভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন; মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ; শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ ও শৃংখলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১৩ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ‘মাধ্যমিক শিক্ষা হস্তান্তর চুক্তিপত্র’ কার্যকর করার বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে উক্ত চুক্তিপত্র বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলকে তিনি অনুরোধ জানিয়েছিলেন। আইনি বিষয়ে এতদূর অগ্রগতি হলেও সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যকর প্রশাসনিক পদক্ষেপ এখনো শুরু না হওয়ায় মাধ্যমিক শিক্ষায় বিরাজমান নানা সমস্যা স্থানীয় বাস্তবতার নিরিখে সমাধান করা যাচ্ছে না।

এছাড়া ২০০৫ সালে প্রণীত বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) আইন এবং সে আইনের আওতায় বিধিমালা ও প্রবিধানমালা পার্বত্য অঞ্চলের প্রযোজ্য আইনের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়নি। ফলে পার্বত্য অঞ্চলের মাধ্যমিক শিক্ষা নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানের মধ্যে দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার আইনি ও প্রশাসনিক সংস্কারের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। এ প্রেক্ষিতে, পার্বত্য অঞ্চলের মাধ্যমিক শিক্ষায় উল্লিখিত সমস্যাগুলো সমাধান করার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।

১. পার্বত্য অঞ্চলে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এনটিআরসিএর ‘নিবন্ধন পাস’ শর্ত শিথিল করে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষাগত যোগ্যতা পূরণ সাপেক্ষে পার্বত্য অঞ্চলের প্রার্থীদের মাধ্যমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য বিবেচনা করা। এমপিও সুবিধা প্রাপ্তির জন্য প্রার্থীর পেশাগত ডিগ্রি যেমন বিএড/এমএড, বিপিএড বা শিক্ষা বিষয়ক ডিপ্লোমাকে বিবেচনা করা।

২. পার্বত্য অঞ্চলের বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষ, সহকারী প্রধান শিক্ষক/উপাধ্যক্ষসহ সহকারী শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মচারী নিয়োগ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডির মাধ্যমে সম্পন্ন করা। এ লক্ষ্যে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও জাতীয় পর্যায়ের নিয়োগ নীতিমালার মধ্যে সমন্বয় রেখে পার্বত্য অঞ্চলের জন্য আলাদা মাধ্যমিক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করা;

৩. শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের সময় সংশ্লিষ্ট উপজেলার যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া। পার্বত্য অঞ্চলের জাতিবৈচিত্র্য বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় এলাকায় যে জাতিগোষ্ঠীর লোকজন বসবাস করে, সে ভাষাভাষী জাতিগোষ্ঠী থেকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া। এতে করে ভাষাগত সমস্যার বহুলাংশে সমাধান করা সম্ভব হবে;

৪. শিক্ষকতার পেশায় মেধাবী তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে এমপিও সুবিধার পাশাপাশি পাহাড়ী ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি নিশ্চিত করা;

৫. তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়নের জন্য দীর্ঘ মেয়াদি বিশেষ কর্মসূচি/প্রকল্প হাতে নেওয়া;

৬. শিক্ষক-কর্মচারীদের পেশাদারিত্ব উন্নয়নের জন্য বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেওয়া;

৭. বিদ্যালয় বিহীন এলাকায় নতুন আবাসিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং বিদ্যমান বিদ্যালয়সমূহের সাথে সংযুক্ত করে আবাসিক ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা করা;

৮. সামাজিক ন্যায্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পার্বত্য এলাকার গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা করা। এ লক্ষ্যে প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা;

৯. তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে মাধ্যমিক শিক্ষা হস্তান্তর চুক্তিপত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা;

১০. শিক্ষা উন্নয়নের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের নেতৃত্বে ‘জেলা শিক্ষা উপদেষ্টা কমিটি’ গঠন করা। উক্ত উপদেষ্টা কমিটিতে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, শিক্ষা ব্যবস্থাপক, জেলার শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের অভিজ্ঞ ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা;

১১. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ১৯৯৭ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের আইনের সাথে ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন ২০০৫’-এর সুষমকরণ বা সমন্বয় সাধন করা।

লেখক: সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনাবিদ ও মুক্ত গবেষক

সারাবাংলা/এসবিডিই

অশোক কুমার চাকমা মুক্তমত সমস্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের মাধ্যমিক শিক্ষা: অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর