Monday 14 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কর্মক্ষেত্রে আধিপত্য খাটানো সহকর্মীদের সামলাবেন কীভাবে

মো. বজলুর রশিদ
৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:২০

কর্মক্ষেত্রে ক্ষমতার ভারসাম্য অনেক সময় জটিল হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে যখন কেউ তার বসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে অন্যদের উপর আধিপত্য করার চেষ্টা করেন। এটি একটি অস্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ তৈরি করতে পারে, যেখানে সহকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা, হতাশা এবং বৈষম্যের অনুভূতি বৃদ্ধি পায়। যদি আপনার অফিসে কেউ বসের প্রভাব দেখিয়ে আধিপত্য করার চেষ্টা করে, তাহলে পেশাদার এবং কার্যকর উপায়ে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

প্রথমেই, যেকোনো পরিস্থিতিতে পেশাদারিত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। যখন কেউ তাদের সম্পর্কের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে বা প্রভাবিত করতে চায়, তখন আবেগপ্রবণ বা তাড়াহুড়ো করে প্রতিক্রিয়া দেখালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। শান্ত ও সংযত থেকে আপনি নিজের মর্যাদা রক্ষা করতে পারবেন এবং সেই ব্যক্তিকেও নিরস্ত করতে পারবেন, যিনি আধিপত্য করার চেষ্টা করছেন। যুক্তিপূর্ণ এবং পরিপক্ব মানসিকতা নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করলে সমাধান খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।

বিজ্ঞাপন

এই ধরনের আচরণের পিছনের কারণগুলি বোঝা সহায়ক হতে পারে। অনেক সময়, যারা বসের প্রভাবের উপর নির্ভর করে অন্যদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তারা নিজের কাজের দক্ষতা বা পদের বিষয়ে অনিরাপত্তার মধ্যে ভোগে। তারা তাদের এই সংযোগকে নিজের দুর্বলতা ঢাকার একটি উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এই বিষয়টি বুঝতে পারলে আপনি সেই ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতির সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেন, যা সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে।

যদি পরিস্থিতি আপনার জন্য অসহনীয় হয়ে ওঠে, তাহলে আপনাকে কিছু ব্যক্তিগত সীমারেখা স্থাপন করতে হবে। স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন যে, আপনি তাদের পদ বা সম্পর্কের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন, তবে অফিসে প্রত্যেককে যে ধরনের পেশাদারিত্ব এবং সম্মান দেওয়া উচিত, তা আপনারও প্রাপ্য। শান্তভাবে কিন্তু দৃঢ়ভাবে আপনার সীমারেখা জানালে ভবিষ্যতের জন্য সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া হবে যে, প্রভাব খাটিয়ে আধিপত্য করার চেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়।

যদি তাদের আচরণ ক্রমাগত বিরক্তিকর হয়ে ওঠে, তবে সরাসরি কথা বলাও একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। সরাসরি অভিযোগ না করে, আপনি সমস্যাটি অমার্জিতভাবে প্রকাশ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি বলতে পারেন, “আমি জানি আপনার সঙ্গে বসের ভালো সম্পর্ক আছে, তবে আমি চাই আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি, যেখানে এই বিষয়টি কোনও প্রভাব না ফেলে।” এতে করে পরিস্থিতির উত্তেজনা কমানো যায় এবং এটি প্রমাণ করে যে আপনি সকলের জন্য উপযুক্ত সমাধানের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত।

নিজের কাজের প্রতি মনোযোগী হওয়া সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে ক্ষমতার খেলাগুলি চলতে থাকে, সেখানে নিজের দক্ষতা এবং পেশাদারিত্বই সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা হতে পারে। কাজ দক্ষতার সঙ্গে এবং যত্ন নিয়ে করলে, অন্য কেউ আপনাকে হেয় করার সুযোগ পাবে না। যখন আপনার কাজ নিজেই কথা বলে, তখন অন্যরা আপনাকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।

এছাড়া, অফিসের অন্যান্য সহকর্মী এবং ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলাও জরুরি। নিজের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করলে আপনার অবস্থান মজবুত হবে এবং সেই ব্যক্তি আপনাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে তা কম কার্যকর হবে। এতে করে আপনি নিজের জন্য একটি শক্তিশালী সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে পারবেন, যা অন্যের প্রভাবকে রুখে দিতে সক্ষম হবে।

যদি সেই ব্যক্তির আচরণ দীর্ঘস্থায়ী হয় বা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে মানবসম্পদ (HR) বা ব্যবস্থাপনার সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে। তবে এটি অত্যন্ত সাবধানে করতে হবে এবং নিজের পক্ষ থেকে সমাধানের চেষ্টা করার পরেই এই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। HR এর কাছে সমস্যাটি ব্যক্তিগত নয়, বরং কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ ও উৎপাদনশীলতার উপর কীভাবে প্রভাব ফেলছে, সেই বিষয়টি তুলে ধরুন। এতে করে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হবে এবং যথাযথ সমাধান পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

অফিসে কেউ বসের প্রভাব খাটিয়ে আধিপত্য করার চেষ্টা করলে তা সামলানো কঠিন হতে পারে। তবে শান্ত থাকা, স্পষ্ট সীমারেখা তৈরি করা এবং নিজের পেশাদারিত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে আপনি এই প্রভাবের ক্ষতি কমাতে পারবেন। প্রয়োজনে সরাসরি সমস্যার মোকাবিলা করা বা HR এর সহায়তা নেওয়াও ভালো সমাধান হতে পারে। শেষ পর্যন্ত, কর্মক্ষেত্রে নিজের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সকলের প্রতি পারস্পরিক সম্মান ও সহযোগিতা থাকবে।

যদি আপনার সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সমস্যাটি সমাধান না হয়, তাহলে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রথমত, পরিস্থিতিটি বিশ্লেষণ করতে হবে এবং বুঝতে হবে কতটা গুরুতর হয়েছে। যদি সেই ব্যক্তি আপনার কাজের পরিবেশকে বিষাক্ত করে তোলে এবং আপনার মানসিক শান্তি এবং পেশাদার উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে আপনি সম্ভবত কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

একটি সমাধান হতে পারে বিষয়টি সরাসরি আপনার বস বা উচ্চতর কর্তৃপক্ষের সামনে উপস্থাপন করা। অবশ্যই, এর আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার কাছে পর্যাপ্ত তথ্য এবং প্রমাণ রয়েছে যা এই পরিস্থিতির সত্যতা নিশ্চিত করে। মিথ্যা অভিযোগ বা ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা কমানোর জন্য সবকিছু যত্নের সঙ্গে উপস্থাপন করা উচিত। এই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়, আপনার উদ্দেশ্য শুধু অভিযোগ করা নয়, বরং কাজের পরিবেশ উন্নত করার জন্য উপযুক্ত সমাধান খুঁজে বের করা।

যদি অফিসের অভ্যন্তরীণ উপায়ে সমাধান খুঁজে পাওয়া না যায়, এবং সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হয়, তাহলে আপনি আইনি পরামর্শ নিতে পারেন। যদি কোন চাকরির পরিবেশ বিশেষভাবে বৈষম্যমূলক বা দমনমূলক হয় এবং তা আপনার পেশাদার উন্নতির পথে গুরুতর প্রভাব ফেলে, তবে শ্রম আইন এবং কর্মক্ষেত্রের নীতি অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ থাকে।

অন্য একটি বিকল্প হল, আপনার নিজের পেশাগত উন্নতি এবং মানসিক শান্তির দিকে মনোযোগ দেওয়া। আপনি যদি দেখেন যে, সেই কর্মক্ষেত্রে আপনার উন্নতির কোনো সুযোগ নেই এবং সমস্যা চলতেই থাকে, তাহলে নতুন কর্মক্ষেত্র খোঁজার কথা বিবেচনা করতে পারেন। আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং আত্মবিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে এমন জায়গা খুঁজে বের করা উচিত যেখানে আপনি নিরাপদ, সম্মানিত এবং কর্মক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক পরিবেশ পাবেন।

শেষমেশ, সবসময় নিজের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের কথা ভাবা জরুরি। একটি দমনমূলক কর্মপরিবেশে কাজ করে গেলে আপনার মানসিক শান্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা আপনার পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সবকিছু বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে আপনি একটি স্বাস্থ্যকর, সহায়ক ও পেশাদার কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা পেতে পারেন।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সারাবাংলা/এসবিডিই

কর্মক্ষেত্রে আধিপত্য খাটানো সহকর্মীদের সামলাবেন কীভাবে মুক্তমত মো. বজলুর রশিদ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

জুনেই ‘ইউনূস হঠাও’ আন্দোলন!
১৪ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৫১

সম্পর্কিত খবর