Tuesday 19 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস

মো. রাকিব
১৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:৫৮

সাধারণ ভাষায় দারিদ্র্যতা বলতে মূলত অভাবের চরম মাত্রাকে বুঝায়। অর্থাৎ একজন মানুষ যখন স্বাভাবিক ভাবে তার নিত্য প্রয়োজনীয় প্রয়োজন গুলো মেটাতে অক্ষম হয় তখন সেটিকে আমরা দারিদ্র্যতা বলতে পারি। তবে বিশ্ব ব্যাংকের মতে, দারিদ্র্যতাকে সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উচ্চারিত বঞ্চনা বলা হয় এবং এর অনেকগুলো মাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নিম্ন আয় এবং মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক পণ্য ও পরিষেবা গুলি অর্জনে অক্ষমতা। দারিদ্র্যতা এছাড়াও স্বাস্থ্য ও শিক্ষার নিম্ন স্তরের, বিশুদ্ধ পানি এবং স্যানিটেশনের দুর্বল ব্যবস্থা, অপর্যাপ্ত শারীরিক নিরাপত্তা, কণ্ঠস্বরের অভাব, এবং অপর্যাপ্ত ক্ষমতা এবং একজনের জীবন উন্নত করার সুযোগকে অন্তর্ভুক্ত করে।

বিজ্ঞাপন

বলা যায় বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে দারিদ্র্যতা। প্রতিটি দেশেই মোটামোটি দারিদ্র্য মানুষ রয়েছেন। আর এই দারিদ্র্যতাকে কিভাবে কাটিয়ে উঠা যায় মূলত সেটিকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস পালন করা হয়। ১৯৮৭ সালে ফ্রান্সের একদল মানুষ ইন্টারন্যাশনাল মুভমেন্ট ATD ফোর্থ ওয়ার্ল্ডের প্রতিষ্ঠাতা জোসেফ রেসিনস্কির সাথে দারিদ্র্য, ক্ষুধা এবং সহিংসতায় ভুক্তভোগীদের সম্মান জানাতে ট্রোকাডেরোতে মানবাধিকার ও স্বাধীনতা প্লাজায় জড়ো হয়েছিল। সেখান থেকেই মূলত আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবসের সূচনা শুরু হয়। এরপর রেসিনস্কির মৃত্যুর চার বছর পর, জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে ১৭ অক্টোবরকে দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে মনোনীত করে। অর্থাৎ ১৯৯২ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস পালিত হয়ে আসছে।

বিজ্ঞাপন

যদিও এই দিবসটিকে প্রচারের জন্য ২০০৮ সালে একটি আন্তর্জাতিক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। চরম দারিদ্র্যের জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি এবং দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিয়োজিত মানবাধিকার রক্ষকসহ এই বিষয় নিয়ে কাজ করা সদস্যদের নিয়েই মূলত এই কমিটি গঠন করা হয়। ইতিমধ্যেই জাতিসংঘ ২০২৪ সালের আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবসের প্রতিপাদ্য ঘোষণা করেছে। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ন্যায়, শান্তিপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের জন্য সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অপব্যবহার বন্ধ করা”। বর্তমান বিশ্বের জন্য দারিদ্র্যতা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই গলার কাঁটা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার বিকল্প নেই।

২০১৯ সালের একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। পিপিপি ডলারের হিসাবে ৮৫ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন ৩০ ডলারের কম আয় করে, দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ ১০ ডলারেরও কম আয় করে এবং ১০ শতাংশ মানুষ বেঁচে থাকে প্রতিদিন ১.৯০ ডলারের কম পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে। একবার ভেবে দেখুন, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ দৈনন্দিন জীবনে দারিদ্র্যতার ভুক্তভোগী। আমরা যদি ২০২৪ সালের ঘোষিত ১০ টি দারিদ্র্য দেশের দিকে লক্ষ্য করি তখন দেখবো অধিকাংশ দেশই আফ্রিকা মহাদেশের। এই তালিকায় এক নম্বরে থাকা দক্ষিণ সুদানের মাথাপিছু আয় ৪৫৫.১৬ ডলার এবং দশ নম্বরে থাকা পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইয়েমেনের মাথাপিছু আয় ২০০০ ডলার। তালিকায় থাকা বাকি দেশগুলো হচ্ছে, বুরুন্ডি, আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গনতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, মোজাম্বিক, নাইজার, মালাউই, লাইবেরিয়া এবং মাদাগাস্কার।

বিশ্বের উন্নয়নশীল অন্য দেশ গুলোর ন্যায় দারিদ্র্যতা বাংলাদেশের জন্যও একটি অভিশাপ। মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি)-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০০০-২০১০ সাল মেয়াদে গড়ে প্রতি বছর দারিদ্র্য কমেছে ১.৭৪% হারে, যা কিনা উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রতি বছর ১.২% হারে দারিদ্র্য কমানোর লক্ষ্যের চেয়ে বেশি। ১৯৯১ এবং ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৬.৭%, যা ২০১৬ সালে হ্রাস পেয়ে ২৪.৩% এ দাঁড়িয়েছে। আবার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৩ অনুযায়ী বর্তমানে দেশে গড় দারিদ্যের হার ১৮.৭% যা খালি চোখে আমাদের কাছে ইতিবাচক লাগলেও দেশের মোট জনসংখ্যার হার অনুযায়ী এটি আমাদের জন্য অশনি সংকেত।

তাহলে এই দারিদ্র্যতা কাটিয়ে উঠতে আমাদের কী করণীয়? দারিদ্র্যতা বিমোচনে আমার মতে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। দেখুন মানুষের মৌলিক অধিকার গুলো হচ্ছে, খাদ্য, বাসস্থান, বস্ত্র , শিক্ষা এবং চিকিৎসা । তবে এগুলোর সাথে বর্তমানে আরেকটি বিষয়কেও মৌলিক অধিকার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় সেটি হচ্ছে নিরাপত্তা। তাহলে একজন মানুষের যখন এসকল অধিকার গুলো পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যাবে তখন তাকে দারিদ্র্যতা গ্রাস করার কোনো সম্ভাবনাই থাকে না। এছাড়াও প্রতিটি দেশে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা, পণ্য বিনিময় প্রথা চালু করা বিকল্প খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা ইত্যাদির মাধ্যমে একদিকে যেমন মানুষদের অভাব ঘুচবে অন্যদিকে তেমনি তাদের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের দেশের সরকার যেভাবে দারিদ্র্যতা বিমোচনের চেষ্টা করেছে তা আসলেই প্রসংসনীয়। সরকার দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি হিসেবে বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছে শিক্ষা উপবৃত্তি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য, বার্ধক্য ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচি, মাতৃত্বকালীন ভাতা, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভাতা শিক্ষা উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ, ক্যানসার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগীদের সহায়তা, চা–শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি, জন্মনিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কার্যক্রম। এগুলো চালু রাখার পাশাপাশি আমাদের সুশীল সমাজের আরো নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে দারিদ্র্যতার হার কমিয়ে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতি গড়ে তুলতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম

সারাবাংলা/এসবিডিই

আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস মুক্তমত মো. রাকিব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর