Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিন্ডিকেট ভাঙবে কে?

এম আর লিটন
১৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:২১

দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা দিন দিন আরও কঠিন হয়ে উঠছে। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক বিস্তার লাভ করেছে। এটি সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করেছে। বিশেষত, পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাজারের অস্থিতিশীলতা ও ভোগ্যপণ্যের সংকট ক্রমাগত মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। এই সিন্ডিকেট মূলত ব্যবসায়ী শ্রেণির শক্তিশালী গোষ্ঠী যারা রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই সিন্ডিকেট ভাঙবে কে?

বিজ্ঞাপন

সিন্ডিকেটের আধিপত্য দেশের বহু খাতে বিস্তৃত। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের জন্যই বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও নিত্যপণ্যের সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য, বাসস্থান ও পরিবহনসহ—সব জায়গায় এই সিন্ডিকেটের শৃঙ্খল খুঁজে পাওয়া যায়। একদিকে সরকারের দুর্বলতা, অন্যদিকে রাজনীতির সঙ্গে তাদের গভীর সম্পর্ক। এতে সাধারণ মানুষ ক্রমাগত কষ্টের মধ্যে পড়ছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সিন্ডিকেটের নেপথ্য ভূমিকা বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছিল। শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিশাল অর্থনৈতিক লাভবান হয়েছে কয়েকটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। আবার বর্তমান পরিস্থিতিতেও দেখা যাচ্ছে, বিএনপির সমর্থনে সিন্ডিকেটের শক্তি আরও বিস্তৃত হচ্ছে। ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, তাদের রাজনৈতিক সহযোগিদের মাধ্যমে, সরকারের দুর্বল অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছেন।

পণ্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধি শুধু সাধারণ মানুষকে বিপর্যস্ত করার মাধম্যে এটি বৃহত্তর অর্থনৈতিক সংকটের ইঙ্গিতও দিচ্ছে। মাছ, মাংস, ডিম, সবজি—এগুলো আজ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বাজারে জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি সর্বোচ্চ কষ্টের মধ্যে জীবন যাপন করছেন। রোজকার চাহিদা মেটাতে তারা প্রায়ই ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন।

বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্যের অস্থিরতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতি এর কিছু কারণ হলেও, এসবের মধ্যে সিন্ডিকেটের হাত একেবারে অস্বীকারযোগ্য। ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর অশুভ চক্রের মাধ্যমে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লাভ করছেন। এই সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্তরে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সরকারের প্রথম কাজ ছিল সিন্ডিকেটের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা। প্রাথমিকভাবে জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণে আনা এবং ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর করসাজি বন্ধ করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সরকার আজও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারেনি। বিশেষত, খাদ্য ও বাজারজাতকরণে সিন্ডিকেটের প্রভাব রয়ে গেছে এবং জনগণের চরম দুর্ভোগ অব্যাহত রয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে কিছু নেতার প্রতি জনগণের প্রত্যাশা ছিল, তারা সরকারের স্থিতিশীলতার জন্য কাজ করবেন এবং সিন্ডিকেটের চক্র ভাঙতে উদ্যোগ নিবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কিছু উপদেষ্টা বাজারের অবস্থার জন্য গণমাধ্যমকেই দায়ী করছেন, যা তাদের দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক। সরকারের উচিত ছিল, একত্রিত হয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, কিন্তু তা দেখা যাচ্ছে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ একেবারে অমূলক নয়। শেখ হাসিনার সময়ের সিন্ডিকেটের গোষ্ঠীগুলো আজও সক্রিয় রয়েছে এবং তারা সরকারের ভাবমর্যাদা বিনষ্ট করতে নানা চক্রান্তে লিপ্ত। তাদের উদ্দেশ্য, সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করা, সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা কমানো। সরকার এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে সফল হলেও, সিন্ডিকেটের শক্তি নিয়ন্ত্রণ করা এখনো সম্ভব হয়নি।

সিন্ডিকেটের শক্তিকে ভাঙা শুধু সরকারের জন্য নয়, সমগ্র দেশের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করা যায়। প্রথমত, ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে এবং বাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক কার্যকর পদক্ষেপ অপরিহার্য। যদি সরকার জনগণের আশা অনুযায়ী সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের প্রতি জনগণের আস্থা হারিয়ে যাবে এবং তা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

সুতরাং, সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে সরকারের প্রতিটি স্তরে সঠিক ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায়, তাদের জীবনমানের উন্নয়নে এবং জাতীয় স্বার্থে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

সারাবাংলা/এসবিডিই

এম আর লিটন মুক্তমত সিন্ডিকেট ভাঙবে কে?

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর