Monday 21 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আজকের বর্জ্য আগামীকালের সম্পদ

প্রফেসর মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন
২১ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:২২

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ সুষ্ঠুভাবে ও নিয়ন্ত্রিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে গ্লোবাল নাগরিকের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতি, কৃষি ও শিল্প উৎপাদন সরাসরি জড়িত। উন্নতদেশ যেমন-সুইডেন, সিঙ্গাপুর, জাপান, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও নরওয়েসহ বিশ্বের অনেক দেশে বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহারযোগ্য লাভজনক ভিন্ন বস্তুতে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। এজন্য তারা অন্য দেশ থেকেও বর্জ্য আমদানি করছে। বাংলাদেশও বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে বর্জ্য সংরক্ষণ, নিরপেক্ষায়ণ, নিষ্ক্রীয়করণ অথবা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে ব্যবহার উপযোগী বিভিন্ন নতুন জিনিস উদ্ভাবনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা আবশ্যক। এতে পরিবেশ সুরক্ষার সাথে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে বিশ্ব ও বিশ্ববাসী।

বিজ্ঞাপন

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ‘5R’ পদ্ধতিটি বেশ জনপ্রিয় এবং মৌলিক সূত্র হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। ‘5R’ বলতে বুঝায়- ‘R’efuse, ‘R’educe’, ‘R’euse, ‘R’epair, ‘R’ecycle. রিফিউজ বলতে বর্জ্য উৎপাদক পণ্যকে না বলা, রিডিউস বোঝাতে কোনো পণ্যের ব্যবহার কমানো, রিইউজ অর্থ বর্জ্যরে পরিমাণ না বাড়িয়ে পণ্যকে পুনারায় ব্যবহার করা, রিপেয়ার সাধারণত মেরামত করে কোনো পণ্যকে ব্যবহারোপযোগী রাখা এবং রিসাইকেল দ্বারা কোনো পণ্যকে রাসায়নিকভাবে নতুনরুপে তৈরী করা বোঝায়।

বিজ্ঞাপন

বর্জ্য থেকে মূল বস্তু উদ্ভাবন কিংবা মূল্যবান প্রয়োজনীয় কিছু পুনরুৎপাদন করার চিন্তা-ভাবনা আজ থেকে প্রায় ৮ শত বছর পূর্বে অ্যাংলো-আইরিশ লেখক ও ধর্মযাজক জোনাথন সুইফটের ১৭২৬ সালে রচিত একটি ব্যাঙ্গাতœক ইংরেজি উপন্যাস গালিভার’স ট্রাভেলস এর তৃতীয় খন্ডের পঞ্চম অধ্যায়ের লাগাডোর গ্রান্ড একাডেমির বর্ণনায় পাওয়া যায়। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র গালিভার দেখলেন লাগাডোর সেই সুসজ্জিত গ্রান্ড একাডেমিতে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা পাত্রে মনুষ্য বর্জ্য বা পায়খানা নিয়ে আসছে। গবেষণাগারে গবেষকগণ সেই পায়খানা নিয়ে গবেষণা করে সেখান থেকে সরাসরি যে খাদ্য গুলো থেকে পায়খানা তৈরী হয়েছে সেগুলোকে মূল খাদ্য উপাদানে ফিরিয়ে আনা যায় কি, না- তা নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁদের মতে এ ধরণের গবেষণায় সফল হওয়া গেলে ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।কারণ ধান থেকে ধান উৎপাদনে সময় ও খরচ দু’টিই বেশি লাগে। কিন্তু পায়খানা থেকে সরাসরি খাদ্য আহরণ করা গেলে সেটি হবে সাশ্রয়ী ও টেকসই প্রযুক্তি। তৎকালীন বাস্তবতায় এটি ছিল অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে বা কাজে সময় নষ্ট করার দৃষ্টান্ত।আর বর্তমানের বাস্তবতায় এটি হলো বর্জ্য থেকে সম্পদ আহরণের বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টার কাল্পনিক ধারণা যা এখন বাস্তবে প্রমাণিত। নিচের উদাহরণগুলো থেকে বর্জ্য থেকে সম্পদ আহরণের কিছু বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা প্রদান করা হলো।

পৃথিবীর প্রত্যেক দেশে এমনকি আমাদের দেশেও শহরের ব্যস্ততম জায়গাগুলোতে বিশেষ করে বাস স্টেশন, রেল স্টেশন, বাজার, বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে গণশৌচারগারগুলো ব্যবহার করলে টাকা দিতে হয়। কারণ এগুলো সিটি কর্পোরেশন কিংবা পৌর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে লিজ নেয়া থাকে। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থাপিত উলসান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (ইউএনআইএসটি) আরবান অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ‘বিভি’ নামের শৌচাগারটি ব্যবহার করলে ব্যবহারকারি তথা শিক্ষার্থীরা উল্টো ১০ জিগেল ভার্চুয়াল মুদ্রা পায় যা দিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে কফি, নুডলস, ফলমূল, বইসহ বিভিন্ন পণ্য কিনতে পারেন। ‘একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৫০০ গ্রাম মল ত্যাগ করে থাকেন। এটা ব্যবহার করে যে পরিমাণ মিথেন গ্যাস তৈরি করা যায় তা দিয়ে শূন্য দশমিক ৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। অথবা এটা ব্যবহার করে ১ দশমিক ২ কিলোমিটার গাড়ি চালানো যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, একসময় আমরা মলকে শুধু বর্জ্য হিসেবেই মনে করতাম। কিন্তু এখন আমাদের কাছে মূল্যবান কোনো কিছু মনে হয়।

মানব বর্জ্য ও গৃহস্থালি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভা। সৈয়দপুর পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় ‘ওয়াটার এইড’ ও ‘এসকেএস’ নামে দুটি বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠান ‘ফেইকাল স্ল্যাজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ তৈরি করে মানব বর্জ্য ও গৃহস্থালি বর্জ্য দিয়ে কো-কম্পোস্ট জৈব সার উৎপাদন করছে।

সুইডেনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাঠামো অনেক উন্নত। Jan–Olov Sundqvist, IVL Swedish Enviromentental Research Institute August: ২০১৭ গবেষণা পত্রের সূত্রমতে সুইডেনের অর্ধেকের বেশি বিদ্যুতের যোগান দেয় নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস। সুইডেনের নবায়নযোগ্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অ্যাসোসিয়েশনের মতে, পরিবেশ সুরক্ষায় সুইডিশ নাগরিকরা বেশ উৎসাহী। বিশেষ করে সুইডিশরা বর্জ্য বাইরে না ফেলে পুনরায় নবায়ন করে ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে প্রযুক্তিগত দক্ষতায় অত্যন্ত সফল। WTE বা Waste- to- Energy প্রকল্পের অধীনে দেশটি ২০১৫ সালে ৫.৮ মিলিয়ন বর্জ্য যার মধ্যে পৌর বর্জ্য ২.৩ মিলিয়ন টন পোড়ানোর মাধ্যমে ২.৩ টেরা ওয়াট পার আওয়ার বিদ্যুৎ (১ টেরা= ১ মিলিয়ন বা ১০ লক্ষ মিলিয়ন ওয়াট পার আওয়ার) এবং ১৪.৭ টেরা ওয়াট পার আওয়ার তাপমাত্রা উৎপাদন করে যা দেশের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ এবং তাপ সঞ্চালন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত হয়। ২০১১ সালের পর থেকে দেশটিতে মাত্র এক শতাংশেরও কম গৃহস্থালি বর্জ্য পুন:নবায়ন না করে ভাগারে ফেলা হয়েছে।

আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে শহরাঞ্চলে মানবসৃষ্ট বর্জ্য তৈরিও আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সেসাথে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকায় প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ হতে দেড় কোটি লোক বাস করে এবং ঢাকা মহানগরীতে প্রতদিন প্রায় চার হাজার টন বর্জ্যের স্তুপ জমে। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ বর্জ্য সিটি করপোরেশন আহরণ করে। কয়েকটি প্লান্টের মাধ্যমে ডিজেল, কয়লা বা গ্যাসের বদলে পরিত্যক্ত বর্জ্য দিয়ে যদি দৈনিক গড়ে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবারাহ করা যেত তাহলে লোডশেডিং সমস্যারও সমাধান হতো। বাড়তি সুবিধা হিসেবে ঢাকার পরিবেশ থাকত নির্মল,বিশুদ্ধ এবং স্বাস্থ্য সম্মত।বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে প্রতিদিন ২৪০ টন জৈব সার তৈরি করা সম্ভব হবে। এর ফলে বছরে জাতীয় তহবিলের ৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। তাছাড়া কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১০ হাজার লোকের।

সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ওয়াটার এজেন্সি (পাব) এবং স্থানীয় ক্রাফ্ট ব্রিউয়ারি ব্রুরুয়ার্কজ এর সমন্বিত উদ্যোগে নর্দমা তথা টয়লেটের পানি পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে নিউব্রিউ (NEWBrew) নামের এক ধরণের পানীয় তৈরী করেছে। অতিবেগুনী রশ্মি দিয়ে নর্দমাকে জীবাণুমুক্ত করে এবং দূষিত কণা অপসারণের জন্য উন্নত ঝিল্লির মধ্য দিয়ে তরল প্রেরণ করে তারপর সেটিকে ব্যবহার করে।২০১৮ সালে একটি জল সম্মেলনে পানীয়টি প্রথম উন্মোচন হয়েছিল। পয়ঃনিষ্কাশন প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে পানীয় জল প্রস্তুতের ধারণা সমালোচনার মুখে পড়লেও গত দশকে সমর্থন লাভ করে। ইসরায়েল এবং সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত অর্থনীতি যাদের সীমিত তাজা জলের সংস্থান রয়েছে তারা ইতিমধ্যে তাঁদের সরবরাহে প্রযুক্তিটি অন্তর্ভুক্ত করেছে। লস অ্যাঞ্জেলেস এবং লন্ডনের মতো শহরগুলি এটি অনুসরণ করার পরিকল্পনা পরীক্ষা করছে।

মানুষ সহ অন্যান্য অনেক প্রাণীর দেহে রেচন প্রক্রিয়ায় শরীর থেকে বর্জ্য-বিষাক্ত জৈব, অজৈব পদার্থ এই মূত্র বা প্রস্রাবের মাধ্যমে নির্গত হয় এবং রক্তকে পরিশুদ্ধ করে। স্বল্প অম্লধর্মী ও সামান্য হলুদ বা বর্ণহীন এই তরলের ৯৫ শতাংশ পানি আর বাকি ৫ শতাংশ হচ্ছে বর্জ্য। বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি এই ৫ শতাংশ বর্জ্যের দিকে। কারণ এতে রয়েছে রাসায়নিক সারের প্রধান তিনটি উপাদান নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম। চাষাবাদের জন্য জমির উর্বরতা বাড়াতে শিল্প উৎপাদিত রাসায়নিক বা খনিজ সারের চমৎকার বিকল্প হতে পারে মানব মূত্র। ফ্রান্সের একটি কৃষি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান তপি অর্গানিক আবাদি জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে মানুষের মূত্র থেকে পরিবেশবান্ধব সার উৎপাদনে অনেকখানি এগিয়ে আছে। রাসায়নিক সার ব্যবহারে মাটির অম্লত্ব বৃদ্ধি পায়, ভূত্বক আর্দ্রতা হারিয়ে রুক্ষ হয়, উপকারী প্রজাতির অণুজীব হ্রাস পায়,কৃষকের বন্ধু কেঁচো সে মাটিতে বাঁচতে পারে না। আবার গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতন ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ বৃদ্ধি পায় এবং গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ ঘটায়। সেক্ষেত্রে মূত্র থেকে নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম আলাদা করে নিয়ে সার হিসাবে ব্যবহার করতে পারলে তা হবে একাধারে অতিমাত্রায় পরিবেশবান্ধব এবং অর্থ সাশ্রয়ী। গরুর মূত্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাধারণ শস্যসমূহের পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইতোমধ্যে গরুর মূত্র প্রয়োগের মাধ্যমে স্ট্রবেরির বেল্টাসম উইভিল, আঙুরের ছত্রাকজনিত রোগ, উঁইপোকাসহ দানাজাতীয় ফসল, শাকসবজি ও ফল জাতীয় বৃক্ষের পোকা-মাকড় ও রোগজীবাণু দমনে কার্যকর সুফল পাওয়া গেছে। সুইডেনে বেল্টাসম উইভিলের আক্রমণে স্ট্রবেরির ফলন শতকরা ৬০ ভাগ পর্যন্ত কমে যায়। বাংলাদেশে দ্রুত সম্প্রসারণশীল বাণিজ্যিক স্ট্রবেরি চাষে উক্ত পোকা দমনে ভবিষ্যতে গরুর মূত্র গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। ফার্মেন্টেড গরুর মূত্র, পিপারমিন্ট তেল এবং পানি নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে আঙুর গাছে স্প্রে করার মাধ্যমে ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। উঁইপোকা দমনে ১:৬ অনুপাতে গরুর মূত্র ব্যবহার করে ভাল ফল পাওয়া গেছে। প্লান্ট প্যাথজেনিক ফানজাই, হিউম্যান প্যাথজেনিক ফানজাই ও ব্যাকটেরিয়ায় ইতিমধ্যে গরুর মূত্রের কার্যকারিতার সুফল পাওয়া গেছে।

আমেরিকান লেখক এডওয়ার্ড এভার্ট হালে’র ১৮৮৯ সালে দ্য ব্রিক মুন নামে একটি কল্পবিজ্ঞান উপন্যাসে মহাকাশ স্টেশনে পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে গাছপালা জন্মানোর ধারণা পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্টের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) মহাকাশে উদ্ভিদ জন্মানোর গবেষণায় গবেষক দলে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ গবেষক নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়ার মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান। মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ‘লা টেক বায়োমাস’ দল মহাকাশে উদ্ভিদ জন্মানোর অনন্য উপায় নিয়ে গবেষণা করছে। বাংলাদেশী তারিকুজ্জামানসহ অন্যান্য গবেষকরা মানুষের মূত্র ব্যবহার করে মাটি ছাড়া মহাকাশে কৃষি চাষের সম্ভাবনা দেখছে।

২০০৫ সাল থেকে ১৫ বছরে দেশে জনপ্রতি প্লাস্টিকের ব্যবহার তিন কেজি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে নয় কেজি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠিন বর্জ্যের টেকসই ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেনের গবেষণা ল্যাবে প্লাস্টিক ব্যবহার করে নির্মিত সড়কের স্পেসিফিকেশন তৈরি করা হয়। সে অনুযায়ী পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গাবতলী-সদরঘাট বেড়িবাঁধ সড়কের সম্প্রসারিত ২২৫ মিটার অংশে পাথরের পরিবর্তে বিটুমিনের সঙ্গে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে।বাংলাদেশে সড়ক নির্মাণে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়। এই মানের বিটুমিনের গলনাঙ্ক ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলমান তাপপ্রবাহে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়কের পিচ গলছে। আবার ভারী বৃষ্টিতেও এই পিচের ঢালাই ভেঙে যায়। পরীক্ষাগারে দেখা গেছে, প্লাস্টিক ঢালাইয়ে ভারী বৃষ্টিতে রাস্তায় ক্ষত সৃষ্টি হয় না কিংবা অতিরিক্ত তাপে সহজে পিচ গলে না। আবার প্লাস্টিক ব্যবহারে বিটুমিন এবং পাথর আমদানি কমবে।এভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার একদিকে যেমন প্লাস্টিক জনিত দূষণ কমাবে অন্যদিকে সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এক কিলোমিটার প্লাস্টিক সড়ক বছরে ১৬০ টন কার্বন নিঃসরণ কমাবে। যা ১০৬টি গাড়ির এক বছরের কার্বন নিগর্মনের সমান। এছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে প্লাস্টিক থেকে পেট্রোল উৎপাদন করা হচ্ছে।সবকিছু মিলিয়ে প্লাস্টিকের এই প্রযুক্তিগুলো সফল হলে বাঁচবে প্রকৃতি ও পরিবেশ।

কবি ও সাহিত্যিকগণ পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে কাজ করছে। তাদের ক্ষুরধার লেখনিতে পরিবেশ সচেতনতা সহ ভবিষ্যতের রুপরেখাও তুলে ধরা হয়েছে। টি এস.ইলিয়ট এর The waste land বা বর্জ্য ভূমি একটি শক্তিশালী এবং চিন্তা-প্ররোচনামূলক কবিতা যা আমাদেরকে আধুনিক সমাজের বিভিন্ন ঘুনে ধরা সমস্যার মোকাবিলা করে একটি উন্নত ভবিষ্যত গড়ার পথ খুঁজে বের করার শক্তি জোগায়। তেমনি পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে বর্জ্যকে ব্যবহার উপযোগী সম্পদে পরিণত করার পথ দেখায় The Waste Land। ইংরেজিতে একটি কথা আছে Old things die hard অর্থাৎ পুরাতন জিনিস সহজে নষ্ট হয় না। আসুন, সবাই পুরাতন বর্জ্যকে নতুনভাবে কাজে লাগিয়ে আগামী দিনের সুন্দর বসবাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে তুলি।

লেখক: অধ্যক্ষ, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, কুড়িগ্রাম

সারাবাংলা/এসবিডিই

আজকের বর্জ্য আগামীকালের সম্পদ প্রফেসর মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন মুক্তমত

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

আজকের বর্জ্য আগামীকালের সম্পদ
২১ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:২২

সম্পর্কিত খবর