টেস্ট ক্রিকেটে বিবর্ণ এক দলের নাম বাংলাদেশ
২৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:০৫
ক্রিকেটের বনেদী ফরম্যাট বলা হয়ে থাকে টেস্ট ক্রিকেটকে। সেইসাথে টেস্ট ক্রিকেটকে বলা হয়ে থাকে মানসিক ও ধৈর্য শক্তির খেলা। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যেনো টেস্ট ক্রিকেট ফরম্যাটটির সাথে বড্ড বেমানান। ক্রিকেটের এই বনেদি ফরম্যাটে বাংলাদেশ ২৪ বছর পার করে ফেললেও এখনো টেস্ট ক্রিকেটের পরাশক্তি দল হয়ে উঠতে পারেনি। টেস্ট ক্রিকেট ফরম্যাটের বিবর্ণ দল হিসেবে বললেও ভুল হবে না। এর প্রধান কারণ হলো ধারাবাহিকতার অভাব।
টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় যেনো টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের জেতাটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইনিংস হার কিংবা স্পোটিং উইকেটে নিয়মিত না খেলার অনভিজ্ঞতা, ফলো অনে পড়া এই যেনো বাংলাদেশের টেস্টের নিয়মিত রুপ।
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের মতো টেস্ট খেলুড়ে দল যেখানে ৫ দিন পর্যন্ত টিকে থেকে টেস্টে জেতার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে, সে জায়গায় বাংলাদেশ ইনিংস হার এড়ানো কিংবা ড্র করার লক্ষ্যে ৫ দিন পর্যন্ত টেস্ট খেলার কথা চিন্তা করে।
কালে ভদ্রে দু একটি ম্যাচ জেতা বা সিরিজ জিতলেও তা কখনো কখনো বোলিং নৈপুণ্যে কিংবা মিডল অর্ডার ব্যাটিং নৈপুণ্যতায়। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা দু একটি ম্যাচে ভালো ইনিংসের দেখা পেলেও তা বেশিরভাগ সময় থাকে অধারাবাহিক। দেশের মাটিতে টেস্ট ত্রিকেটে টাইগাররা কখনো কখনো সফলতা পেলেও বিদেশের মাটিতে টেস্ট হারের বৃত্ত থেকে কিছুতেই বের হতে পারছেনা। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে টাইগারদের সাম্প্রতিক ফর্ম দেশের মাটিও তাদের হয়ে কথা বলছে না।
মিরপুরের যে পিচে অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের মতো দল যেখানে ধরাশায়ী হয়েছে, সে পিচে বাংলাদেশ যেনো নিজেকে হারিয়ে খুঁজছে। টেস্ট ক্রিকেটের আরেক পরাশক্তি সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে হোম সিরিজে আবারো ব্যাটিং ব্যর্থতার পরিচয় দেয় বাংলাদেশ। যার ফলে সাউথ আফ্রিকাকে নিজেদের চিরচেনা পিচে পেয়েও , হারাতে পারেনি টাইগাররা।
এর আগে দায়িত্বহীন ব্যাটিং এর সাথে বোলারদের হতশ্রী পারফরমেন্স চোখে পড়তো। কিন্তু বোলিং এর সেই হতশ্রী পারফরমেন্স থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসলেও ব্যাটিং এ এখনো বিবর্ণ অবস্থা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। যার মাশুল গুনতে হচ্ছে বিদেশে এবং দেশের মাটিতে ।
সাদা পোশাকে টাইগারদের পথ চলা দুই দশকের। এ পথচলায় তাদের টেস্ট সামর্থ্য নিয়ে বহুবার প্রশ্ন উঠেছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ১৪৪ টেস্ট খেলেছে। যার মধ্যে জয়ের সংখ্যা মাত্র ২১টি। যেখানে পরাজয় ১০৫টি, আর ড্র ১৮টি। এই ২১ টি জয়ের মাত্র বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের জয় মাত্র ৮টি।
গুটিকয়েক খেলোয়াড় ছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে এখনো ভারসাম্যপূর্ণ দল হতে পারেনি বাংলাদেশ। মির্ডল অর্ডারে মেহেদী হাসান মিরাজ, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস ভালো কিছু এনে দেওয়ার চেষ্টা করলেও বাকিদের মধ্যে সে ভাবটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি কারণ হলো অতিরিক্ত অনভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের সুযোগ দেওয়া এবং দেশের মাটিতে অনুন্নত পিচে খেলাধুলার প্রস্তুতি তৈরি করা।
আর তাছাড়াও বাংলাদেশের টেস্টে ব্যর্থতার আরো একটি বড় কারণ, বড় দলের বিপক্ষে খেলতে না পারার অনভিজ্ঞতা। শ্রীলংকা ,ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে এমন দলের সাথে তারা সিরিজ খেলে থাকে প্রায় সময় । খুবই কম সময় দেখা যায় তারা বড় দলের সাথে সিরিজ খেলতে। যদিও নিউজিল্যান্ডের মতো দলের সাথে এখন সিরিজ নিয়মিত হলেও সাউথ আফ্রিকা ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া, ভারতের মতন দলের সাথে খেলতে দেখা যায় না। তাই অভিজ্ঞতার দিক দিয়েও বড্ড পিছিয়ে বাংলাদেশ। যার ফলে যখনেই বড় দলের সাথে সিরিজ আয়োজন করা হয় তখনেই তাদের খেলার পরিকল্পনার দিক দিয়ে হেরে যায় বাংলাদেশ।
তাই বিসিবির দরকার এসব দলের সাথে নিয়মিত হোম/অ্যাওয়ে সিরিজ আয়োজন করা। তাহলে বাংলাদেশ সিরিজ হারুক, জিতুক অন্তত তাদের বিপক্ষ দলের টেস্ট ক্রিকেট খেলার ধরণ এবং আসল সমস্যাটা কোথায় তারা ধরতে পারবে।এবং সেসব দল যে কন্ডিশনে খেলে সেসব কন্ডিশনের সাথে তারা নিজেরাও পরিচিত হতে পারবে। সেই সাথে তাদের সেই কন্ডিশনের খেলার মতন প্রস্তুতিটাও করাতে হবে।
তাছাড়াও টেস্ট ক্রিকেটের জন্য যেসব ঘরোয়া ক্রিকেটের আয়োজন করা হয় সেসব দিকে কোচিং প্যানেল থেকে শুরু করে নির্বাচকদেরও সোচ্চার হতে হবে। যাতে করে ,লম্বা সময় ধরে খেলার জন্য ভালো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ক্রিকেটাররা যাতে এখান থেকে উঠে আসতে পারে।
টেস্ট ক্রিকেটকে ঘিরে প্রত্যেকটা বাইরের দেশের আলাদা করে একটা পরিকল্পনা থাকে। সেটা ব্যাটিং কন্ডিশন হোক বোলিং কন্ডিশন তাই বাংলাদেশকেও সেসব কন্ডিশনে যাতে ভালো খেলতে পারে সেই সেজন্য পিচের দিক দিয়ে সবসময় নজর রাখতে হবে। বাইরের দেশের কন্ডিশনের সাথে বাংলাদেশ যাতে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে সেসব বিষয় সময়ে ধ্যান-ধারণা এবং সেই রকম অনুযায়ী খেলার ব্যবস্থা করতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
সারাবাংলা/এসবিডিই
টেস্ট ক্রিকেটে বিবর্ণ এক দলের নাম বাংলাদেশ মুক্তমত সুমন বৈদ্য