ধর্মীয় উগ্রবাদীতা রোধে প্রয়োজন সচেতনতার
২৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:২৭ | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:২৮
সকল ধর্মই পুরোপুরি বিশ্বাসের উপর টিকে আছে যারজন্য ধর্মকে উদ্বায়ী বা বায়বীয় পদার্থের সাথে তুলনা করা যায়। অতীতে মানুষের প্রণোদনার জন্য, নিয়ন্ত্রণের জন্য ধর্মের ব্যবহার হলেও বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় এখন মানুষই ধর্মের উপর নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বা হচ্ছে এবং এই প্রবণতা ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি পাবে, কমবে না। মানুষ এখন ধর্মকে অনেকটা তার প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। ধর্মের যে দিকটা পালন করা, ধারণ এবং নিজ স্বার্থে ব্যবহার করা সহজ সেই দিকটা আকড়ে ধরছে আর যে দিকটা নিজের পার্থিব স্বার্থ বহির্ভূত সেটা এড়িয়ে যাচ্ছে নয়তো নিজের মত করে ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে নিচ্ছে। আর বিপত্তিটা বাঁধছে সেখানেই। যার ফলাফল হলো ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিথি সরকার, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নীল মুখার্জি, মানিকগঞ্জের ডা.প্রতিমা রানী বিশ্বাস, সিলেটের একে আজাদ, ফেনীর মোহাম্মদ মিজানুল হক,কুমিল্লার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন পূজা মন্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার ঘটনা ইত্যাদি সকল ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদীতা কি হারে বাড়ছে।
বাংলাদেশের মতো ছোট ও বহুল জনসংখ্যাসম্পন্ন দেশের সমাজে ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরূপ প্রভাব চোখে পড়ার মতো।যেমন: ধর্মীয় উগ্রবাদীরা হত্যা, বোমা হামলা, বন্দি হত্যা এবং সম্পত্তি ধ্বংসের মতো সহিংস কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী। এসব ঘটনা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে এবং জনগণের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। আবার ধর্মীয় উগ্রবাদীরা বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে ঘৃণা ও বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। এর ফলে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট হয় এবং সামাজিক ঐক্যের ভিত্তি দুর্বল হয়। ধর্মীয় উগ্রবাদীরা প্রায়শই মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, যার মধ্যে রয়েছে বাক স্বাধীনতা হরণ, নির্যাতন, এবং নিরপরাধ মানুষের হত্যা। ধর্মীয় উগ্রবাদীরা প্রায়শই নারীদের উপর নির্যাতন করে এবং তাদের অধিকার কেড়ে নেয়। ধর্মীয় উগ্রবাদীরা শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে এবং তাদের নিজস্ব মতাদর্শ প্রচার করে। এর ফলে শিক্ষার মান হ্রাস পায় এবং শিক্ষার্থীদের মুক্ত চিন্তাভাবনা বিকশিত হতে বাধা পায়। ধর্মীয় উগ্রবাদের কারণে পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে যায়। এর ফলে অর্থনীতির উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি হয়। ধর্মীয় উগ্রবাদ সামাজিক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, এটি মেয়েদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস করে এবং নারীর ক্ষমতায়নে বাধা সৃষ্টি করে।
ধর্মীয় উগ্রবাদের কারণ জটিল এবং বহুমুখী। এর মূলে একক কোনো কারণ নেই, বরং বিভিন্ন কারণের সমন্বয় কাজ করে যেমন: কিছু ক্ষেত্রে, ধর্মীয় গ্রন্থ ও শিক্ষার অপব্যবহার করে মৌলবাদীরা উগ্রবাদকে ন্যায্যতা দান করে। তারা ধর্মের নামে সহিংসতা ও ঘৃণাকে প্রচার করে যা ধর্মীয় মৌলবাদ নামে পরিচিত।দ্বিতীয়ত মানুষের দারিদ্র্য, বেকারত্ব, শিক্ষার অভাব, এবং সামাজিক বৈষম্য মানুষকে উগ্রবাদের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারে।তৃতীয়ত দুর্বল শাসন ব্যবস্থা, দুর্নীতি, এবং রাজনৈতিক নিপীড়ন উগ্রবাদীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।এছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে, বৈদেশিক শক্তি নিজস্ব স্বার্থে উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করে থাকে। কিছু ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থাকতে পারে, যা তাদের সহিংসতার প্রতি আকৃষ্ট করে সবশেষে তারা উগ্রবাদীতায় জড়িয়ে পড়ে। এমনও দেখা যায় মানুষ তার নিজের ধর্মকে উঁচু প্রমাণ করতে অন্যের ধর্মকে নিচু প্রমাণ করতে গিয়ে কটুক্তি করে বসে। এই যুগের বড়ো রোগ ভাইরাল হওয়ার জন্যও মানুষ অন্য ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে উগ্রবাদীতার দিকে ধাবিত হয়।
ধর্মীয় উগ্রবাদ দমন এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বহুমুখী প্রচেষ্টার প্রয়োজন।ধর্মীয় উগ্রবাদ একটি জটিল সমস্যা এবং এর সমাধানও জটিল। তবে এটি মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে যেমন: সহিংসতা ও ঘৃণার পরিবর্তে সহিষ্ণুতা ও শান্তির বার্তা প্রচার করে ধর্মীয় শিক্ষাকে আধুনিকীকরণ করা।দ্বিতীয়ত দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।সমাজের মধ্যে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন মজবুত করা, এবং মানবাধিকার রক্ষা নিশ্চিত করা। উগ্রবাদ দমনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সকল রাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষের জন্য সহজলভ্য ও মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করা। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং এর ব্যবস্হা করা। উগ্রবাদী মতাদর্শের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো এবং বিকল্প মতাদর্শের প্রচার করা।যুবসমাজের জন্য শিক্ষা, কর্মসংস্থান, এবং বিনোদনের সুযোগ বৃদ্ধি করা।ধর্মীয় উগ্রবাদের বিপদ সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা। সর্বোপরিভাবে প্রতিটি মানুষকে তার নিজ নিজ ধর্মে জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং অন্য ধর্মকে হেয় প্রতিপন্ন করে এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। লক্ষ্যনীয় যে, ধর্মীয় উগ্রবাদীরা সমাজের একটি ছোট অংশ এবং বেশিরভাগ ধর্মপ্রাণ মানুষ শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল জীবনযাপন করে। ধর্মীয় উগ্রবাদীতার বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের সকল ধর্ম ও বিশ্বাসের মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়া বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই
আল মাসুম হোসেন ধর্মীয় উগ্রবাদীতা রোধে সচেতনতা প্রয়োজন মুক্তমত