Saturday 02 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন থেকে বিশ্ব নেতাদের বার্তা

রায়হান উদ্দিন
২ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৫০

বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য, একে অপরকে সহযোগিতা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সেপ্টেম্বরে বিশ্ব নেতারা একত্রিত হয়েছেন জাতিসংঘের ৭৯ তম সাধারণ অধিবেশনে। এই সম্মেলনের মূল আহবান ছিল একযোগে সহযোগিতা করা, তাৎক্ষণিক সমস্যাগুলো সমাধান করা নয় বরং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী প্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিকীকরণ করা, যাতে ভবিষ্যতে কোন সমস্যা সৃষ্টি না হয়। বৈশ্বিক হুমকি মোকাবিলা করা হয়। আমরা বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে অনেক সমস্যা দেখতে পাই। কোন কোন রাষ্ট্র যুদ্ধ করে অন্য রাষ্ট্রের সাথে। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে অনেক বিশ্ব নেতারা তা তুলে ধরে এবং একে অপরের সাথে সহযোগিতার কথা বলে।

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন চলাকালীন সারাবিশ্বের মানুষের চোখ থাকে অধিবেশনে দিকে৷ বিশ্ব নেতাদের বক্তব্যের দিকে মুখিয়ে থাকে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের মাধ্যমে এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন হয়। এক দেশ অন্য দেশের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। এক দেশের নেতার সাথে অন্যান্য রাষ্ট্রের নেতারা সাক্ষাৎ করে, দ্বি পাক্ষীয় চুক্তি করে সম্পর্ক দৃঢ় করে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের দ্বারাই বিশ্বকে এগিয়ে নিতে এক মাইলফলক হিসেবে কাজ করে। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি অস্থির এবং বিশ্বে দায়মুক্তির মাত্রা অসহনীয়। তিনি আরও বলেন- কীভাবে শেষ হবে তার কোন ধারণা ছাড়াই যুদ্ধ জোরদার করছে। পারমাণবিক বোমা ও নতুন অস্ত্রগুলোর কারণে বিশ্বের মধ্যে অন্ধকার ছায়া ফেলছে। আমরা এক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছি, যেখানে অস্থির পরিস্থিতি সারা বিশ্বকে গ্রাস করার ঝুঁকি সৃষ্টি করছে৷ যার কারণে বিশ্বের মধ্যে অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছু নেতা জাতিসংঘের সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইন কে পদদলিত করছে বলে অভিমত পেশ করেন৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলেন ধরেন। লেবানন, ইসরায়েলি বাহিনী, হিজবুল্লাহ জঙ্গিদের মধ্যে লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করেন৷ তিনি গাজার লড়াইয়ে ‘অনুঃহীন দুঃস্বপ্ন’ বলে অভিমত দেন। এই একে অপরের সাথে লড়াই বিশ্বের জন্য অশনিসংকেত। বিশ্ব নেতাদের উচিত উস্কানি না দিয়ে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যারা ইচ্ছা করেই যুদ্ধ লিপ্ত হতে চাইবে তাদের সাথে সম্পর্ক বিনষ্ট করা। বিশ্বের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য বিশ্ব নেতাদের ভূমিকা পালন করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে অন্তবর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, যে রাষ্ট্র কাঠামো দুঃসহ হয়ে গেছে, তার পুর্নগঠনের জন্য আমাদের তরুণেরা এবং আপামর জনসাধারণ একমত হয়ে আমাদের উপর দায়িত্ব দিয়েছে। আমরা তা পালন করার জন্য বদ্ধ পরিকর। আমরা দায়িত্ব নিয়েই গভীর বিস্ময় ও হতাশার সঙ্গে দেখতে পাই সর্বগ্রাসী দুর্নীতি একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, রাষ্ট্রের মূল প্রতিষ্ঠান গুলো নির্মম দলীয়করণ করা হয়েছে। এরকম রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে পুর্নগঠন করতে হবে। জনগণের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ফিরিয়ে দেওয়া, শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং ন্যায় ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমাদের লক্ষ্য। আমরা মানুষের মৌলিক অধিকার কে সমুন্নত ও সুরক্ষিত রেখে ভয়ভীতি ছাড়াই কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া দৃঢ়প্রতিজ্ঞা। যেসব প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের মধ্যে পরিচালিত হয় প্রত্যেকের জবাবদিহি নিশ্চিত করা আমাদের অগ্রাধিকার। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দিতে হবে। এছাড়াও তিনি বলেন- জলবায়ু পরিবর্তন সবার অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ। দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলো অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে বিশ্বাস করি যে, সমগ্র বিশ্ব একসঙ্গে ‘তিন শূন্য’ এর ধারণা বিবেচনা করতে পারে, যার মাধ্যমে আমরা শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ অর্জন করতে পারি। তিনি অর্থ পাচার ফিরিয়ে আনা, যুদ্ধ অবসান ঘটানো, রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যাপ্ত সহায়তার কথা বলেন। তরুণরা চাই সমাজ জেনারেটিভ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সম্ভাবনা নিয়ে উচ্ছ্বসিত। অটোনমাস ইন্টেলিজেন্স ব্যাপারে শঙ্কা রয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে নিজের ক্যারিয়ার, বৈশ্বিক সমস্যা ও বৈশ্বিক রাজনীতি নিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আমি যা দেখেছি এবং কয়েক দশক ধরে যা আমরা করেছি। তার জন্য আমরা আমরা আশাবাদী। ভিয়েতনামের নামের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নতি হচ্ছে। এছাড়াও তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে বলেন। তিনি বলেন- রাশিয়া যুদ্ধে ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্ববাসীকে বেছে নিতে তারা আগ্রাসনের পক্ষে থাকবে নাকি বিপক্ষে থাকবে। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে বলেন- আমরা ৭ অক্টোবরের বর্বরতার কথা ভুলে যাইনি। এখনি সময় যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী পূরণ করার৷ হামাস থেকে ইসরায়েল-গাজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তিনি লেবানন-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব নিয়ে বলেন- এই দ্বন্দ্ব যদি যুদ্ধ ডেকে আনে ফলাফলে তাহলে কোন পক্ষের জন্য ভালো হবে না। এসব ছাড়াও তিনি জলবায়ু পরিবর্তন, জাতিসংঘ পুর্নগঠন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) নিয়ে কথা বলেন। বক্তব্যের শেষে নেলসন ম্যান্ডেলার একটা উদ্ধতি দিয়ে শেষ করেন। তিনি বলেন- কোন কাজ সম্পন্ন করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সেটি অসম্ভব বলে মনে হয়। একসঙ্গে কাজ করলে আমাদের সামর্থের বাইরে কিছু নেই। চলুন এক সঙ্গে কাজ করি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি বলেন, রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন এবং তাদের প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ দেওয়ার জন্য বলেন। তিনি বলেন- আমরা একটি অপরাধমূলক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। এটি ভূখণ্ডের জন্য যুদ্ধ নয় কখনো। এটি মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই। রাশিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে রুশ প্রেসিডেন্টের পরিবর্তে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী যোগ দেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হলো রাশিয়া। এই দেশের বিরুদ্ধে লড়াই করে জেতার চেষ্টার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পারমাণবিক অস্ত্রনীতিতে পরিবর্তন আনার পর এই ভাষণে পশ্চিমাদের কঠোর সমালোচনা করেন। দেশের বাহিরে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সহায়তা করবেনা বলে জানান চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, যুদ্ধ ক্ষেত্র নয় মানবতার সাফল্য দিয়ে সবার সম্মিলিত শক্তি দিয়ে নিহিত। টেকসই উন্নয়ন ও মানবকেন্দ্রীক দৃষ্টিভঙ্গি অগ্রাধিকারের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেন তিনি। স্বাধীন, স্থিতিশীল উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বলেছেন উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত কিম সং। কয়েকটি দেশ কর্তৃক এক তরফা নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেন তিনি। গাজা ও লেবাননে বর্বরতা বন্ধ করার জন্য আওয়াজ তুলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলেন- আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকায় সংঘাত হানাহানি বাড়ছে। বিশ্বের সংঘাত প্রসঙ্গে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার দ্য ক্রো। তিনি বলেন- মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে রয়েছে কিছু দুষ্টুচক্র।

জাতিসংঘের অধিবেশনে বিশ্ব নেতাদের যুদ্ধ বন্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়নের দিকে গুরুত্বপূর্ণ করতে দেখা যায়। বিশ্ব নেতারা যদি এইগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করে। নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি করে এবং উন্নয়নশীল, অনুন্নত দেশগুলোতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে তাহলে বিশ্বের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। উন্নত দেশগুলো বিভিন্ন আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা না করে জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়নের জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব দিলেই জাতিসংঘ অধিবেশন সফল হবে। বিভিন্ন রাষ্ট্র উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হতে পারবে৷ গাজা, লেবানন, ইউক্রেন সহ যে রাষ্ট্র গুলো তে বর্বরতা চলছে তা অচিরেই বন্ধ করতে বিশ্ব নেতারা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই সকল দেশ সুখি সমৃদ্ধির দেশ হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী; চট্টগ্রাম কলেজ, সভাপতি; বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা

সারাবাংলা/এসবিডিই

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন থেকে বিশ্ব নেতাদের বার্তা মুক্তমত রায়হান উদ্দিন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর