Saturday 02 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রুখতে আমাদের করণীয়

মিনহাজ বিন মাহবুব
২ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:০২

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ধর্মীয় জ্ঞানের চেয়েও ধর্মীয় আবেগের বেশ জোড়ালো উপস্থিতি দেখা যায়। যদি নির্দিষ্ট করে বাংলাদেশের কথা বলি, তবে হয়ত ধর্মীয় আবেগের দিক থেকে আমরা এগিয়ে থাকব, পাশ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায়। সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় সম্প্রীতি সর্বনিম্ন সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে বলা যায়। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা একটি দেশের উন্নতির ক্ষেত্রে কত বড় বাঁধা হয়ে দাড়ায় তা অকল্পনীয়। সম্প্রতি সনাতনীদের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বীভৎস সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস আমরা দেখেছি। এই অবস্থা চলতে থাকলে নিকট ভবিষ্যতে গৃহ যুদ্ধের মত অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতিও হতে পারে। ধর্মীয় সকল সাম্প্রদায়িকতা রুখতে আমাদের কিছু করণীয় সম্পর্কে কয়েকটা পয়েন্ট আলোচনা করলাম।

বিজ্ঞাপন

পরিবার

মানব শিশু জন্মের পর থেকে কথা বার্তা, নীতি নৈতিকতা, সংস্কৃতিসহ নানাবিধ শিক্ষা পরিবার থেকে পেয়ে থাকে। যদি সাম্প্রদায়িকতার মত ব্যাধি আমরা গোড়া থেকে নির্মুল করতে চাই তাহলে প্রথম পদক্ষেপটা পরিবার থেকে নিতে হবে। পারিবারিক সচেতনাই পারে অসাম্প্রদায়িক দেশগড়ার ভিত গড়ে দিতে। সন্তানকে শিখাতে হবে নীতি নৈতিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা। শিশুটি যেন ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাত না দেখে মানুষকে সম্মান ও ভালোবাসার শিক্ষা দিতে হবে। অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় সে ব্যপারে পরিবারের খেয়াল রাখেতে হবে।

ধর্মীয় বক্তা

সামনের শীতকে কেন্দ্র করে দেশে প্রচুর ধর্মীয় সভা সেমিনার, ওয়াজ মাহফিল, যাত্রাপালা, মাজারে ওরসসহ নানাবিধ ধর্মীয় অনুষ্টান হবে। এসব অনুষ্ঠানে ধর্মীয় বক্তাদের অসাম্প্রদায়িকতার ধর্মীয় বিধানগুলো তুলে ধরতে হবে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাতে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ও অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে ধারাবাহিকভাবে প্রচারণা চালাতে হবে। যে-সব কতিপয় বক্তারা সাম্প্রদায়ীক সহিংসতা নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিবেন তাদের ব্যাপারে প্রশাসন এবং প্রগতিশীল চিন্তার নাগরিকদের সচেতন হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুজব রোধ

আমি মনে করি বর্তমান সোস্যাল মিডিয়ার সবচেয়ে নেতিবাচক দিকটি হলো গুজব। বর্তমানে গুজব এমন একটি পর্যায়ে চলে গেছে, তাতে সাধারণ মানুষের পক্ষে সোস্যাল মিডিয়ার সত্য মিথ্যা যাচাই করা এক রকম অসম্ভব হয়ে গেছে। ডিপফেইক প্রযুক্তিসহ এআই-এর নানান ফিচার ব্যবহার করে তৈরী গুজবগুলো হুবহু বাস্তব তথ্যের মত। এছাড়াও অন্যজনের একাউন্ট হ্যাক করে ধর্মীয় অনুভুতিতে আগাত হয় এমন কিছু লিখা। অন্যজনের নাম এবং ছবি ব্যবহার করে ধর্মীয় সম্প্রতি নষ্ট করা সহ নানান গুজব ছড়ানো। এসব বিষয়ে প্রশাসনকে অবশ্যই আরো সতর্ক হতে হবে এবং গুজব প্রচারকারীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে্।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভুমিকা

মানব জীবনে একটি শিশুর মানবিক হওয়া কিংবা মানসিক অবস্থার ভীত গড়ে উড়ে মুলত শিক্ষকদের শিক্ষাদানের উপর ভিত্তি করে। একজন মানবশিশু যখন বাইরের জগৎকে চিনতে শুরু করে তখন তার জীবনে সবচেয়ে প্রভাব ফেলে শিক্ষকরা, কাজেই শিক্ষকদের উচিৎ অসাম্প্রদায়িক চেতনার শিক্ষা দেওয়া। পাঠ্যবইয়ের পাঠদানের পাশাপাশি মানবিকতা এবং অস্প্রদায়িক চেতনার আলো তাদের জীবনে জালিয়ে দেওয়া।

পাশাপাশি বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডি’র সদস্যদেরও খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন শিক্ষক কোমলমতি শিশুদের মনে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ঢুকাতে না পারে। প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যেন তারা যথাসম্ভব অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী হন এবং সেই চেতনা ও বোধটুকু শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চারিত করতে সর্বদা তৎপর থাকেন। পাশাপাশি শিক্ষদের মানবিকতা এবং অস্প্রদায়িকত চেতনা সঞ্চার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান আবশ্যক।

প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় কর্মসূচি

আমাদের দেশের প্রত্যেকটা নাগরিক কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক। যারা সরাসরি কোন দলের কর্মী নয় তারাও কোন না কোন রাজনৈতিক দলকে মৌন সমর্থন দেন। যদি দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায় এবং নেতা কর্মী ও সমর্থকদের সচেতন করে, তাহলে আশা করা যেতে পারে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অনেকখানি কমবে।

অসাম্প্রদায়িক উৎসবের আয়োজন

অসাম্প্রদায়িক উৎসব বলতে বুঝি, বলি খেলা, ঘোড়াদৌড়, যাত্রাপালাসহ নানা গ্রামীণ উৎসব। একটা সময় আমাদের দেশে প্রচুর অসাম্প্রদায়িক উৎসবের আয়োজন হতো। এসব উৎসবে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সব ধর্মের মানুষ একসাথে আনন্দ করতো। ইদানীং এসব উৎসব হয়না বললেই চলে। এসব উৎসব আবারো যদি আয়োজন করে সস্প্রীতির মেলবন্ধন ঘটালে, সাম্প্রদায়িক সংহিতা কিছুটা হলেও কমবে বলে আশা করা যায়।

সাংস্কৃতিক কর্মীদের দায়বদ্ধতা

আমি মনে করে সাম্প্রদায়িক সংহিতা রুখতে সাংস্কৃতিক কর্মীদের একটা বিরাট ভুমিকা হতে পারে। বিভিন্ন নাটক, টেলিভিশন সিরিজে, সিনেমা সহ নানা প্লাটফর্মে তারা নাটকের মাধ্যমে দর্শকদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মেসেজ দিতে পারে। এছাড়াও মঞ্চ নাটক, গান, কবিতা, সাহিত্যের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িকতার বার্তা দিতে পারেন।

আমি মনে করি একটি সুন্দর সমাজ গঠন করতে সুন্দর মানসিকতা এবং মানবিক মানুষের প্রয়োজন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসনকে তার যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। পাশাপাশি দেশের সচেতন নাগরিকগণের প্রতি আহবান থাকবে যে যার অবস্থান থেকে যেন সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রুখে দিতে সোচ্চার হোন।

লেখক: প্রবাসী কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

মিনহাজ বিন মাহবুব মুক্তমত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রুখতে আমাদের করণীয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর