যুদ্ধ সংঘাতে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি
২ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১২
বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ-সংঘাত জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা তীব্র করে তুলছে। সামরিক কর্মকাণ্ডের ফলে জ্বালানি ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার—কার্বন ডাইঅক্সাইড ও অন্যান্য গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বাড়ছে। এতে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সংঘাতের ফলে শরণার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে মানবিক সংকট সৃষ্টি করছে। এ কারণে জনবহুল অঞ্চলে চাপ বাড়ছে। যুদ্ধ খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এই পরিস্থিতি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মানব সভ্যতাকে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। তাই শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় লড়াই অপরিহার্য।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক যুদ্ধের সময়, ২০০৩ থেকে ২০১১ সালে প্রায় ১৪১ মিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসৃত হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও একই প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে ২০১১ সালের লিবিয়া যুদ্ধের সময় সামরিক কর্মকাণ্ডে পরিবেশের ওপর বিপজ্জনক প্রভাব পড়ে। এতে মাটির দূষণ ও জলাশয়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, সিএফসি গ্যাসের পাশাপাশি যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি হার বাড়ছে।
১৯৪৫ সালে জাপানে হিরোশিমায় পারমাণবিক হামলার ফলে—বায়ু, পানি, মাটি দূষিত হওয়ায় জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা দেখা দেয়। বিস্ফোরণের ফলে বিষাক্ত গ্যাস ও পারমাণবিক পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, সামরিক শিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণ ও কাঁচামাল ব্যবহারের ফলে পরিবেশের আরও ক্ষতি হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি কৃষির ওপর বিপর্যয় নিয়ে আসে। এ কারণে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ-সংঘাতের এক নতুন ধারার জন্ম দিয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এসময় প্রায় ২৪ মিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সংঘাতে জলবায়ু পরিবর্তন খাদ্য সংকটকে তীব্র করে তোলে। এতে জনসংখ্যার মধ্যে অনাহারের মাত্রা সৃষ্টি করে।
যুদ্ধ-সংঘাত জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত করছে। ভবিষতে ওই জলবায়ু পরিবর্তন আবার যুদ্ধের কারণ হতে পারে। এতে পানি সংকট ও কৃষি উৎপাদনে পরিবর্তন সংঘাতের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করবে। সুতরাং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য পরিবেশ সুরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সংঘাতের সম্ভাবনা কমানো যাবে।
বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা
জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। এতে বিভিন্ন দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পানীয় জল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলছে। গবেষণা অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত হতে পারেন।
২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের উদাহরণ আমাদের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্র তুলে ধরে। ওই সময় সিরিয়ায় ভয়াবহ খরা ছিল। এতে কৃষি উৎপাদনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। কৃষকদের উৎপাদন কমে যাওয়ায় তারা শহরের দিকে ছুটতে বাধ্য হন। এ কারণে শহরে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেড়ে যায় ও সামাজিক উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এটিই রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেয়। পরে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে।
সম্প্রতি হর্ন অফ আফ্রিকায় খাবারের অভাব ও পানি সংকটের কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেখানে খাদ্য উৎপাদন কমছে, সেখানে সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়ছে। ইথিওপিয়া, সোমালিয়া ও সুদানসহ দেশগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষত স্পষ্ট। ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই অঞ্চলে ৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, জলবায়ু পরিবর্তন যদি অব্যাহত থাকে, তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘাতের ঘটনা আরও বেড়ে যাবে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং সঙ্গে সম্পর্কিত জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের রাজনৈতিক জটিলতা বৃদ্ধি করবে। এটি বিশেষত দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।
জলবায়ু পরিবর্তন রাজনৈতিক সংকটের মূল কারণ। আগামী দিনে বিশ্বজুড়ে সংঘাত ও অস্থিরতার সূচনা করবে। এটি নিশ্চিতভাবে গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ। তবে এটি মোকাবিলা করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সচেতনতা প্রয়োজন।
অর্থনৈতিক সংকটের জন্ম
যুদ্ধ-সংঘাতে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকটের জন্ম হচ্ছে। উৎপাদন ব্যবস্থা ধ্বংস ও বাণিজ্য কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করছে। ২০২২ সালের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহের চেইন বিপর্যস্ত হয়েছে। ওই সংঘাতে গম, তেল ও সার উৎপাদন কমে যাওয়ায় খাদ্যদ্রব্যের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে। এতে বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি ও অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
২০০৮ সালে খাদ্য সংকটের সময় দেখা যায়, খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেক দেশে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সংকটটি মূলত উচ্চতর খাদ্য উৎপাদন খরচ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হয়েছিল। ইউনাইটেড নেশনস ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও) অনুযায়ী, ওই সময়ে বিশ্বের ৩৭টি দেশে খাদ্য বিক্ষোভ সংঘঠিত হয়। পরে এটি রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ২০২৩ সালে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ৮৮ কোটি মানুষ খেতে না পাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তন ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সম্মিলিত ফল।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অর্থনীতিতে আরও বৃহৎ সংকট সৃষ্টি করবে। যদি বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো টেকসই কৃষি ও জলবায়ু অভিযোজন নীতির প্রতি গুরুত্ব না দেয়, তবে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস ও মানুষের জীবনের মান হুমকির সম্মুখীন হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে খাদ্য উৎপাদন ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি না পেলে, বিশ্বের জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না। এই প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশাল। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বৈশ্বিক সহযোগিতা ও কার্যকর নীতি গ্রহণের মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা জরুরি।
সাংস্কৃতিক সংকটের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক
যুদ্ধের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন ও সাংস্কৃতিক সংকটের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। সামরিক সংঘর্ষের কারণে মানবিক বিপর্যয় ঘটার পাশাপাশি এটি পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপরও ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ৭৫টির বেশি দেশে ৬০০টির বেশি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হয়েছে।
যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষ উদ্বাস্তুর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের ফলে ১৩ লাখেরও বেশি সিরীয় প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে গিয়েছেন। এভাবে সংস্কৃতি, ভাষা ও ঐতিহ্য স্থানান্তরিত হয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে অপরিচিত হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বহু সাংস্কৃতিক সম্পদ নষ্ট হয়েছিল। ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িতসহ অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে।
যুদ্ধের কারণে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার, বোমাবর্ষণ ও অন্যান্য সামরিক কর্মকাণ্ড পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করছে। ইরাকের যুদ্ধের পর গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলগুলে মাটির গুণগত মান ও জলসম্পদের অবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনে সম্পদের অভাবের কারণে সংঘাত আরও বৃদ্ধি পাবে। এর কারণে সাংস্কৃতিক সংকটকে আরও তীব্র করবে তুলবে। এটি যদি অব্যাহত থাকে, তবে যুদ্ধে মানুষের জীবনের মান, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও পরিবেশের অবস্থার আরও অবনতি ঘটবে।
সাংস্কৃতিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ইউনেস্কো ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা যুদ্ধকালের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা ও সংকটময় এলাকায় সহায়তা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সুতরাং যুদ্ধের কারণে সাংস্কৃতিক সংকটের সমাধান ও প্রতিকার করা সম্ভব। তবে এর জন্য সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকি
বিশ্বব্যাপী সংঘাতের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকি। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর— সম্পদ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশের ধ্বংস ও জলবায়ুর ওপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৩৯-১৯৪৫ সালের মধ্যে ইউরোপে ব্যাপকভাবে শিল্পায়নের কারণে পরিবেশ দূষণ বেড়ে যায়। এতে জীববৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সংঘাত-প্রবণ অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য ২০শতাংশ কমেছে। ভবিষ্যতে আরও কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তির হার দ্বিগুণ হতে পারে। যুদ্ধের ফলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে জনসংখ্যার অভিবাসন বেড়ে যাবে। নতুন স্থানে জীববৈচিত্র্যের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, পরিবেশ সুরক্ষা ও শান্তির প্রচার প্রয়োজন। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আমাদের তৎপরতা আগামী প্রজন্মের জন্য টেকসই পৃথিবী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সামাজিক সংকট আরও জটিল
যুদ্ধ-সংঘাত সামাজিক সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে। বিশ্বব্যাপী সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে বসবাসকারী জনগণের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশেষভাবে মারাত্মক। ইউনাইটেড নেশনসের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৭০ কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সংঘাতের মুখে পড়বেন।
দক্ষিণ এশিয়ায় বিশেষ করে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো দেশে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারী ও শিশুদের ওপর প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। জাতিসংঘের একটি গবেষণা দেখিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হচ্ছে। এতে নারী ও শিশুদের জীবনমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্রাপ্তবয়স্ক নারীরা প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বিশেষ করে তাদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ছে।
২০১০ সালের হাইতি ভূমিকম্পের পর দেখা গেছে, যুদ্ধ-সংঘাতে জলবায়ু পরিবর্তন সামাজিক সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছে। ভূমিকম্পের ফলে বহু পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পুনর্গঠনের সময় ন্যায়বিচার ও সমতার অভাব দেখা দিয়েছে। ওই সময়ে গৃহহীনতা, খাদ্য নিরাপত্তার সংকট ও স্বাস্থ্যবিধির অভাব সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে ছিল।
বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, খাদ্য নিরাপত্তা সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, যুদ্ধের কারণে কৃষি উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে। এটি সরাসরি নাগরিকদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে। সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলে নারীরা সাধারণত পরিবারের খাদ্য ও স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্বে থাকেন। এতে তারা আরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ শহরাঞ্চলে বাস করবে। এতে দ্রুত নগরায়ণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও জটিল হয়ে উঠবে। এটি সামাজিক অস্থিরতা ও সংকট সৃষ্টি করবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ওই সংকটগুলো মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
অতএব, যুদ্ধ-সংঘাতের ফলে জলবায়ু পরিবর্তন যে সামাজিক সংকট সৃষ্টি করছে, তা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতা জরুরি। যাতে নারী ও শিশুদের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, এসব সংকট মোকাবিলায় মূল ভূমিকা রাখতে পারে।
তথ্যসূত্র :
১. বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন, ২০১৭
২. জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদন (ইউনেস্কো), ২০১৯
৩. আন্তর্জাতিক উদ্ভিদ সংরক্ষণ সম্মেলনের প্রতিবেদন (আইপিসিসি), ২০২১
৪. The Environmental Costs of War. / earth.org, Apr 25th 2022
৫. Climate Change and the Syrian Civil War. / Political Violence at a Glance, September 19, 2017
৬. Food Riots: Causes, Consequences and Solutions. /Centre for Governance Studies (CGS), 26 May 2022
৭. জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্রতিবেদন, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ‘খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক’ প্রতিবেদনসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার ডেটা ও বিভিন্ন পরিবেশগত গবেষণা প্রতিবেদন।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
সারাবাংলা/এসবিডিই