পরিবেশ রক্ষায় নীরব বসন্তের সরব ভূমিকা
২ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:২৪
পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে যে কয়েকজন লেখক বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন তাদের মধ্যে রাচেল লুইস কারসন অন্যতম একজন। তিনি পেনসিলভানিয়ার স্প্রিং ডেল নামক গ্রামে পারিবারিক খামার বাড়িতে ১৯০৭ সালের ২৭ মে জন্ম গ্রহণ করেন। মাত্র আট বছর বয়স থেকেই তিনি ভাঙ্গা ভাঙ্গা শব্দে গল্প লেখা শুরু করেন। ১০ বছর বয়সেই তার প্রথম লেখা ছাপা হয় আমেরিকার বিখ্যাত শিশুপত্রিকা সেইন্ট নিকোলাস ম্যাগাজিনে। তিনি নিজেও নিকোলাস ম্যাগাজিনের একনিষ্ঠ পাঠিকা। তার ছেলেবেলা থেকেই পরিবেশ, প্রকৃতি ও বন্যজীবন সম্পর্কে ছিল গভীর আগ্রহ। তিনি একজন আমেরিকান সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী লেখক এবং সংরক্ষণবাদী। ডিডিটি স্প্রের মাধ্যমে পরিবেশের পাখি, কীট পতঙ্গ ও মাছসহ অন্যান্য প্রাণীর মৃত্যুর কারণে তিনি অকুতোভয়, সংবেদনশীল এবং দায়িত্বশীল হাতে কলম ধরলেন। রাচেল লুইস কারসন এর লিখিত সাইলেন্ট স্প্রিং এর অংশবিশেষ ১৯৬২ সালে নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনে ছাপানো হয়। তিনি সুনিপুণভাবে লিখলেন ডিডিটির প্রভাবে সেই নিথর হয়ে যাওয়া পাখিগুলোর শোকে, নিস্তব্ধ বসন্তের আর্তনাদে তার অমর বই ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’ বা ‘নিস্তব্ধ-নরক বসন্ত’। সাইলেন্ট স্প্রিং বই আকারে প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালের ৩০ জুন এবং ৩৬৮ পৃষ্ঠার প্রবন্ধমূলক বইটি সাড়া জাগালো অভূতপূর্ব। তথ্য-প্রমাণনির্ভর এই বইটিকে পরিবেশবাদী অন্দোলনের সর্বাধিক প্রভাবশালী ও সর্বপ্রথম বই হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু ডিডিটি ও রাসায়নিক ব্যবসায় বিনিয়োগকারী গোষ্ঠী, তাদের নিযুক্ত প্রতিনিধি দল ও আইনজীবীরা নানাভাবে রাচেল কারসনকে আক্রমণ করতে থাকেন। ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলের জন্য কুচক্রীরা অপবাদ বা কুৎসা রটিয়ে, কখনো বা মানহানির মামলা করে কার্সেলকে পরাস্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু রাচেল কারসন তার গবেষণা ও পরীক্ষা লব্ধ মতামতের জন্য নন্দিত হোন এবং তার জেতার মাধ্যমে রক্ষা পায় পরিবেশ ও প্রকৃতি। কিন্তু দু:খের বিষয় তার শতভাগ বিজয় তিনি নিজে উপভোগ করতে পারেন নি। কারণ বিজয় অর্জেনের অনেক পূর্বেই তিনি ১৯৬৪ সালের ১৭ এপ্রিল আমেরিকার মেরিল্যান্ডে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার মৃত্যুর পর পরিবেশ রক্ষার অন্দোলন একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিয়ে সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। তার বই সাইলেন্ট স্প্রিং-এর যে পরিমাণ সরব প্রভাব তৈরি হয়, তার ফলস্বরূপ ১৯৭০ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের প্রশাসন মার্কিন পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা সৃষ্টি করে। প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তাকে মরণোত্তর রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতা পদক প্রদান করেন। ২০০৬ সালে ডিসকভারি ম্যাগাজিন সাইলেন্ট স্প্রিংকে তাদের সর্বকালের সেরা ২৫টি বিজ্ঞান বইয়ের তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করেন।
বসন্তে মুখরিত হয় পৃথিবীর পুরো অঙ্গন। পাখিদের কিচিরমিচির ও মিষ্টি সুরে ঘোষণা করা হয় বসন্তের আগমনি বার্তা। সব পাখিই বসন্তে সৌন্দর্যের এক ভিন্ন আবহ ছড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন পাখির বিচিত্র রুপ আর মধুর কণ্ঠে মুগ্ধ হয় প্রকৃতি ও পরিবেশ। সবুজ পাতার ফাঁকে পাখির ওড়াউড়িও মন মাতিয়ে তোলে। বসন্তের শুরুতে অনেক অতিথি পাখি এসেও মুখরিত করে তোলে বিভিন্ন লেক ও হ্রদ। চোখ জুড়িয়ে যায় বাগানের রক্তিম পলাশ, অশোক, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া, কাঞ্চন, পারিজাত, মাধবী আর গাঁদার ছোট ছোট ফুলের বাহারি রঙে। আর সেই ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায় প্রজাপতি, মৌমাছি সহ অজস্র কীটপতঙ্গ। তারা যেমন ফুল থেকে মধূ বা নিজেদের খাবার সংগ্রহ করে তেমনি গাছপালার বিস্তারে পরাগায়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রকৃতিতে চলে মধুর বসন্তের সাজসাজ রব। বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব ধ্বনি।
কিন্তু সাইল্টে স্প্রিং গ্রন্থের লেখিকা এ রকম বসন্ত নয়, তিনি নিখুঁত বিবেচনাবোধ থেকে এক মুক বা নীরব বসন্তের দৃশ্যপট বর্ণনা করেছেন। লেখকের বর্ণিত বসন্ত একেবারেই শান্ত, প্রাণহীন, নিশ্চল এবং জড় সত্ত্বা। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে আধুনিক প্রযুক্তির আশীর্বাদে মানুষ যে কোন সমস্যার যাদুকরী সমাধান খুজতে থাকে। মানুষ চায় কোন সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান। মানুষ কখনও বিবেচনা করে না যে অনেক সমস্যার তাৎক্ষনিক সমাধান মানুষের জন্য কিংবা পরিবেশের জন্য সুদুর প্রসারী ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং যেক্ষেত্রে লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ কয়েক মিলিয়ন গুন বেশি। সেসময়ের এরুপ একটি সমস্যা ম্যালেরিয়া ও টাইফাস রোগ। কৃষি জমির ফসলগুলোও পোকামাকড়ের আক্রমণে বিনষ্ট হচ্ছিল। মানুষ মশা মাছি ইত্যাদি পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে মেড ইজি পন্থা বের করল ডিডিটি প্রয়োগ। কারণ সেসময় সুইস রসায়নবিদ পল হারম্যান মুলার ১৯৩৯ সালে ডিডিটির কীটনাশক গুণ আবিস্কার করে এবং এ কাজের জন্য তিনি ১৯৪৮ সালে চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
সেসময়ে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ থেকে সৈনিক ও জনসাধারণকে বাঁচাতে অনেকটা বাধ্যতামূলকভাবে মানবদেহেও স্প্রে করা হচ্ছিল ডিডিটি। শরীরে, চুলে, এমনকি জামার ভেতরেও। ডিডিটির জয়জয়কারে মুখরিত মার্কিন মুল্লুক ও সেখানকার গণমাধ্যম। বিমান থেকে স্প্রে করা হয় ডিডিটি। বিমানযোগে পোকা-মাকড় দমনের এই কর্মসূচির নাম দিয়েছিল ইনসেক্ট বোম্বিং। ফলে মাটির উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা কীট-পতঙ্গের গায়ে ছড়িয়ে গেল সেই বিষ। যে পাখির দল সেই কীট খেয়ে বেঁচে পেট ভরছিল, সেই পাখির দলও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মরে যেতে লাগল। কাতর হয়ে ডানা ঝাপটানো বন্ধ করে একে একে ঝরে পড়তে লাগল তাদের নিথর নীরব দেহ। সেই সব বিস্তীর্ণ বনে আর মাঠে পাখির দলের মধুর কলতানে মুখরিত থাকত যে বসন্ত, সেই বসন্ত হয়ে পড়ল কবরস্থানের মতো নীরব। অথচ ক্যানবেরিসহ অনেক ফল আর সবজিতে ছেয়ে গেছে ডিডিটির বিষ। সেই সময়ে অ্যাডভান্সড ক্যান্সার রিসার্চ ল্যাবে কয়েকজন বিজ্ঞানী অনুসন্ধান করে গেলেন ডিডিটির বিষ মানবদেহ ও প্রাণীর শরীরে নিশ্চিতভাবে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান!
ডিডিটি ব্যবহারের ফলে যে মারাত্মক বিষ ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশের মধ্যে, সে বিষয়ে একেবারেই অসচেতন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের জনসাধারণ। জনগণের টনক নড়ল, যখন দেখা গেল এই ডিডিটি স্প্রে করার ফলে সেই অঞ্চলের ওলগা ওয়েন্স হাকিন্সের পাখিশালার বেশ কিছু পাখি মারা যায়। যে দু‘একটি পাখি বেঁচে ছিল সেগুলো ঠিকমত দাড়াতে পারছিল না। এই আকস্মিক পাখি-মৃত্যুর কারণ খোঁজার দায়িত্ব নেন জলজীব-বিশারদ ও পরিবেশবিদ রাচেল কারসন।
কার্সন ডিডিটির ক্ষতিকর ভূমিকা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন তার লিখিত বই সাইলেন্ট স্প্রিং এ যা আমেরিকার পরিবেশ আন্দোলনে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। যে কয়েকটি বই পৃথিবীর ইতিহাস বদলাতে পারার ক্ষমতা অর্জন করেছে তন্মধ্যে সাইলেন্ট স্প্রিং অন্যতম। রাতারাতি রাচেলকে প্রচারের আলোয় নিয়ে এসেছিল এই বইটি। আধুনিক পৃথিবীতে পরিবেশ-সচেতনতার ক্ষেত্রে এই বইটিকে অগ্রদূত বলা যেতে পারে। এ রকম সাড়া জাগানো আরো কয়েকটি বইয়ের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে যেমন-এইচ বি স্ট এর “আংকেল টমস কেবিন”,উপটন সিনক্লেয়ারের “দা জাঙ্গল” এবং রালফ নাদেরের “আনসেফ এট এনি স্পীড”। পরিবেশ বিষয়ে কারসনের এই অবদানের জন্য এবং পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য তাকে সম্মান জানিয়ে ‘Mother of the environmental movement’ নামে অভিহিত করা হয়েছে।
বৈজ্ঞানিক মহলে কারসনের উপস্থাপিত অভিযোগসমূহ নিয়ে ব্যাপক আকারে গবেষণা শুরু হয়, যার বেশির ভাগ ফলাফলই কারসনের বক্তব্যকে সমর্থন করে। জনসাধারণের মধ্যে সৃষ্ট জাগরণ নিয়ে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না।
রাচেল কারসনকে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির বিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টা পর্ষদের মুখোমুখি হতে হয়। ১৯৬৩ সালে পর্ষদ তার রিপোর্ট প্রকাশ করে, যার বেশির ভাগই কারসনের বক্তব্যের পক্ষে যায়। শেষ পর্যন্ত মার্কিন সিনেট সাব কমিটি রাচেল কারসনকে ডাকেন এবং বালাই দমন নীতি তৈরিতে তার সুপারিশ জানতে চান।
মানুষ পরিবেশ নিয়ে এভাবে আগে কখনও ভাবে নি। কিন্তু বইটি প্রকাশের পর শুরু হয় পরিবেশ নিয়ে চিন্তা, যা ইদানীং কালে সচেতনতার মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। ডিডিটি ক্রমবর্ধমান রাসায়নিক ও কীটনাশক বিরোধী আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে এবং ১৯৬৭ সালে একদল বিজ্ঞানী এবং আইনজীবী ডিডিটির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। ভিক্টর ইয়ানাকোন, চার্লস এফ. ওয়ার্স্টার, আর্ট কুলি এবং গ্রুপের অন্যরা সবাই পাখি হত্যা বা পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ডিডিটিকে দায়ী করেন। ডিডিটির ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ড (EDF) সরকারের কাছে আবেদন করে এবং মামলা দায়ের করে। ডেভিড পিকাল প্যারাগ্রিন চিল এবং ক্যালিফোর্নিয়া কনডরের ডিমের খোসা পাতলা হয়ে যাবার কারণ হিসেবে ডিডিটির মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতির কথা উল্লেখ করেন। ডিমের খোসা পাতলা হবার কারণে উক্ত পাখিদের প্রজনন হ্রাসের কথা উল্লেখ করেন।
১৯৭১ সালে ইউ এস ডিস্ট্রিক কোর্ট অফ আপিল বিভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠান এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সিকে(EPA) ডিডিটি-র জন্য রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বাতিল করার নির্দেশ দেয়। ইপিএ মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ১৯৭০ সালের এক নির্বাহী আদেশে “পরিবেশের পক্ষে সমন্বিত এবং কার্যকর সরকারী পদক্ষেপের অনুমতি দেওয়ার জন্য” প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ঊচঅ’র প্রথম প্রশাসক উইলিয়াম রুকেলশাউস ডিডিটি নিবন্ধনের তাৎক্ষণিক স্থগিতাদেশ প্রত্যাখ্যান করেন, ইপিএর অভ্যন্তরীণ কর্মীদের গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে ডিডিটি একটি আসন্ন বিপদ নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের অর্থনৈতিক কীটতত্ত্ববিদদের দ্বারা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে গবেষণার ফলাফলগুলি তৈরী করা হয়েছিল।গবেষকগণ কৃষি ব্যবসার লাভের বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব প্রদান করেন এবং মানব স্বাস্থ্য, উদ্ভিদ, প্রাণী তথা পরিবেশ তন্ত্রের গুরুত্বকে খাটো করে দেখেন। ইপিএ ডিডিটি নিয়ে ১৯৭১-১৯৭২ সালে ০৭ মাস ব্যাপী শুনানী করে। যে সকল বিজ্ঞানী কীটনাশক কোম্পানীর পক্ষ থেকে এসেছিল তারা ডিডিটির পক্ষে এবং যারা পরিবেশবাদী তারা এর বিপক্ষে মতামত প্রদান করেন। ১৯৭২ সালে বিচারক রুকেলশাউস ডিডিটির অধিকমাত্রায় ব্যবহার নিষিদ্ধ করার ঘোষণা প্রদান করেন। ব্যবসায়ী ও কীটনাশক প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিষেধাজ্ঞা প্রতাহারের আবেদন জানায়। ১৯৭৩ সালে ডিস্ট্রিক্ট অফ কলম্বিয়া সার্কিটের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আপিল আদালত রায় দেয় যে ইপিএ ডিডিটি নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে কাজ করেছে। পরবর্তীতে ইপিএ অর্গানোক্লোরিন, কীটনাশক নিষিদ্ধ করে যা রাসায়নিকভাবে ডিডিটি-র মতো। এর মধ্যে রয়েছে অ্যালড্রিন, ডিলড্রিন, ক্লোরডেন, হেপ্টাক্লোর, টক্সাফিন এবং মিরেক্স।
বর্তমানে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ব্যাপারটি ভাববার প্রয়োজন আছে । কীটনাশকের মাত্রতিরিক্ত ব্যবহার, শাক সব্জি ফলমূল মাছ সংরক্ষণে ফরমালিন সহ ক্ষতিকর প্রিজারভেটিব ব্যবহার প্রাণ,প্রকৃতি ও পরিবেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? তরমুজের বিষক্রিয়ার মৃত্যু, লিচু খেয়ে অসুস্থ, সেমাইয়ে ভেজাল ইত্যাদি মনে হয় দেশটাকে মৃত্যুপুরী বানিয়ে ফেলছে। পরিবেশ নিয়ে আমরা কতটা সচেতন তা নিয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে।মিষ্টি বিক্রেতা মনে করে,আমি তো মিষ্টি খাই না। তাই এতে ভেজাল করলে আমার কোন সমস্যা নাই। বেকারির মালিক মনে করে,আমিতো বিস্কুট খাই না। তাই পঁদচা ডিম-ময়দা দিয়ে বানালে আমার কোন সমস্যা নাই। ফল বিক্রেতা মনে করে,আমিতো ফল খাই না। তাই ফরমালিন মিশালে আমার কোন সমস্যা নাই। মাছ বিক্রেতা মনে করে, আমিতো ফরমালিনযুক্ত মাছ খাই না। তাই ফরমালিন মিশালে আমার কোন সমস্যা নাই। দিনের শেষে-মিষ্টি বিক্রেতা মিষ্টি বিক্রি করে বিস্কুট, ফল, মাছ কিনে নিয়ে বাসায় যা বেকারির মালিক বিস্কুট বিক্রি করে মিষ্টি, ফল, মাছ কিনে নিয়ে বাসায় যায়।ফল বিক্রেতা ফল বিক্রি করে মিষ্টি, বিস্কুট, মাছ কিনে নিয়ে বাসায় যায়। মাছ বিক্রেতা মাছ বিক্রি করে ফল, বিস্কুট, মিষ্টি কিনে নিয়ে বাসায় যায়েআর ভেজাল জিনিষগুলো সবাই খেয়ে বিভিন্ন ধরণের দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়। আমাদের পরিবেশ সচেতনতা অনেকটা এরকমই। যার ফলে সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। এ অবস্থা থেকৈ বের হতে হলে আমাদের জন্যও সাইলেন্ট স্প্রিং এর প্রাসঙ্গিকতা অপরিহার্য। পরিবেশষ তথা মানব সম্প্রদায়কে বাঁচাতে হলে পরিবেশ কেন্দ্রিক ধ্যান, উপাসনা ও প্রার্থনার প্রয়োজন। আর এসবই আধ্যাতিক চেতনা ও বিজ্ঞান সম্মতভাবে উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠেছে রাচেল লুইস কারসনের লেখায়।
লেখক: অধ্যক্ষ, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, কুড়িগ্রাম
সারাবাংলা/এসবিডিই
পরিবেশ রক্ষায় নীরব বসন্তের সরব ভূমিকা প্রফেসর মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন মুক্তমত