Wednesday 27 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অপসংস্কৃতিমুক্ত হোক আমাদের সংস্কৃতি

হুমায়ুন আহমেদ নাইম
২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৫

আমরা বাঙালি হিসেবে আমাদের রয়েছে হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ছবি: সংগৃহীত

সংস্কৃতি একটা জাতির পরিচয় বহন করে। পৃথিবীর বুকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে স্বমহিমায়। দেশকে করে সম্মানিত, দেশের মানুষকে করে গর্বিত। আমি, আমরা বাঙালি হিসেবে আমাদের রয়েছে হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এ দেশের জন্মের পেছনে রয়েছে অগনিত সব স্বপ্ন আর স্মৃতির ছোঁয়া। এই স্বপ্ন একটা সুস্থ-সুন্দর সমাজের, বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক দেশের। আমাদের স্মৃতির মধ্যে ছিলো অতীতের সংগ্রামী চেতনা, গোলা ভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, নদীতে হাঁটুজল আরও ছিলো বাউল, জারি, সারি, ভাটিয়ালি, ভাওইয়া ইত্যাদি আরও কত কী! এসব কিছুই আমাদের সংস্কৃতির অংশ যার সাথে নিবিড়ভাবে মিশে আছে আমাদের স্মৃতিতে। এর জন্যই হয়তো দিজেন্দ্রলাল রায় বলেছিলেন, ‘ ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ, স্মৃতি দিয়ে ঘেরা।’

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে আমাদের সমাজের দিকে একটু দৃষ্টি দিলেই দেখা যায় আমরা কিভাবে নিজের অস্তিত্ব, নিজের সংস্কৃতি বিসর্জন দিয়ে অন্যের সংস্কৃতিচর্চায় মশগুল হয়ে আছি। একবারের জন্যও নিজের দেশ, নিজের সংস্কৃতির কথা ভাবছি না। বিষয়টা একজন বাঙালি হিসেবে খুবই হতাশাজনক। বর্তমানে পশ্চিমা সংস্কৃতির অপচর্চা এমন পর্যায়ে এসে গেছে যা বলা বাহুল্য। বিদেশি মিডিয়ার ব্যাপক প্রচার ও প্রসারে কমেছে দেশি মিডিয়ার দর্শক। বিদেশি মিডিয়াগুলোর প্রচারনাগুলো এমন যে একটা মুভি নিজের পরিবারের সাথে সাবলীলভাবে দেখার মত নয়। যা আমাদের রুচিবোধ নষ্ট করছে। এই মিডিয়াগুলো শুধু তরুন তরুনী নয় সব বয়সের মানুষদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিজ্ঞাপন

এখন আমাদের ঘরের মা-বোনেরা ঘরের কাজ শেষ করেই বসে পড়েন টেলিভিশন বা স্মার্টফোনে বিদেশি সিরিয়াল নিয়ে, যেখানে নিজের দেশের সংস্কৃতি চর্চা তো দূরে থাক, বরং কীভাবে পরিবারের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি করবে তা দেখানো হয়। যার ফলে বেড়ে যাচ্ছে সংসারে অশান্তি, বেড়ে যাচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদের পরিমান। কিন্তু তারপরও এসবের প্রতিই আমাদের সব আকর্ষণ। একবার ভেবে দেখুন কত নিখুঁতভাবে আমরা আমাদের ধ্বংস করছি। বিদেশী অপসংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের দেশের মিডিয়াগুলোও দর্শক বাড়াতে তাদের অনুসরণ করে এমন সব কন্টেন্ট নির্মান করছে; যা আমাদের গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

আমরা বর্তমান পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর অজুহাতে এখন অবাধে অপসংস্কৃতির চর্চা করছি। যা আমাদের দেশের পার্কগুলোর দিকে নজর দিলেই স্পষ্ট বোঝা যায়। বিদেশী সংস্কৃতির ভালো দিকগুলি অবশ্যই গ্রহনযোগ্য। তবে আমরা তা না করে অবাধে ছেলে -মেয়েদের মেলামেশা করার সুযোগ, টেলিভিশনে অশ্লীলতা সর্বোপরি সমাজে বেহায়াপনা ছড়িয়ে দিচ্ছি। যা একজন বাঙালি হিসেবে ব্যথিত করতে যথেষ্ট।

আমাদের সংস্কৃতি আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে সমাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে যে মিডিয়াগুলো গ্লোবালাইজেশন নামে অশ্লীলতা ছড়ায় অর্থনৈতিক সুবিধা থাকলেও সেগুলো নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। সাংবাদিক মতিউর রহমান ‘তর্ক’ নামের একটি সাময়িক পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘যদি গনতান্ত্রিক শিক্ষা বা প্রগতিশীল সংস্কৃতির প্রসার না ঘটে, তবে এই দেশের পরিবর্তন হবে না। এটার পাশাপাশি জোরদার সাংস্কৃতিক আন্দোলন লাগবে। এই জায়গায় আমরা পিছিয়ে আছি। যেখানে আমাদের বিরাট একটা পরাজয় ঘটে গেছে।’ এই পরাজয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে আমাদের মিডিয়ার প্রসার করা যেতে পারে, যেগুলোতে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সামাজিক কন্টেন্ট থাকবে, দেশীয় পন্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে, দেশীয় পোশাকের ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে।

অশ্লীলতামুক্ত সমাজ গঠনে তৃণমূল পর্যায় থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সংস্কৃতি বিষয়ক সভা-সমাবেশ, সেমিনার, বিতর্ক প্রতিযোগিতা করা যেতে পারে। তরুন প্রজন্মসহ সকলকে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্বন্ধে জানানো এবং পালনে উৎসাহিত করা যেতে পারে। প্রয়োজনে সংস্কৃতি রক্ষায় আইন প্রনয়ন করা যেতে পারে। ইউনেস্কোর ‘কনভেনশন অন দ্য প্রোটেকশন অ্যান্ড প্রোমোশন অব দ্য ডাইভারসিটি অব কালচারাল এক্সপ্রেশনস (২০১৫)’ গবেষণায় বলা হয়েছে, স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি মানুষের অনুরাগ যত বেশি, সেই সমাজে শান্তি, ঐক্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন তত দ্রুত ঘটে। তাই আমাদের সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা কেবল আবেগ নয়, এটি আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্বপ্নের বাংলাদেশ হবে সেই বাংলাদেশ, যেখানে সংস্কৃতির শিকড় গভীর থেকে গভীরতর হবে, আর আমরা সবাই একসঙ্গে গড়ব একটি সুস্থ, সুন্দর, বৈষম্যহীন সমাজ। নিজেদের সংস্কৃতি রক্ষাই হোক আমাদের পাথেয়।

লেখক: শিক্ষার্থী

সারাবাংলা/এসবিডিই

অপসংস্কৃতি সংস্কৃতি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর