Thursday 12 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংস্কার, নির্বাচন ও জনগণ

আজহার মাহমুদ
৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:০০ | আপডেট: ৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:৩৩

নির্বাচন কমিশনের প্রতীকি ছবি।

ইতোমধ্যে অন্তবর্তী সরকারের ১০০ দিন পূরণ হয়েছে। সেই উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণও দিয়েছেন। সেই ভাষণ দেশের অধিকাংশ জনগণই শুনেছেন বলে আমার বিশ্বাস। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরও চলছে বেশ মতপার্থক্য। একেক দলের একেক মত বেরিয়ে আসছে। গণমাধ্যমের সুবাদে সেসবও এদেশের জনগণ জানতে পারছে। কেউ আগে সংস্কার চাইছে, কেউ আবার নির্বাচন। কিন্তু এই সংস্কার ও নির্বাচন চাওয়ার অধিকার আসলে কার হাতে?

বিজ্ঞাপন

সত্যি বলতে বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতা উল্টালে কোনও কালেই এদেশের জনগণের হাতে ক্ষমতা ছিলো না। কাগজে কলমে সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ লেখা থাকলেও বাস্তবে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। ‘সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে’ এই বিতর্কে গুটিকয়েক যখন ব্যাস্ত, তখন দেশের অধিকাংশ জনগণ ভাবছে ‘দেশটাতে আসলে হচ্ছে কি!’

সত্যি বলতে এদেশের মানুষ ‘সংস্কার’ নামক এই কঠিন শব্দ বুঝে না। এদেশের মানুষ বুঝে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হাতের নাগালে থাকা, সড়কে পরিবহণ খরচ সহনীয় মাত্রায় থাকা, চিকিৎসাসেবা সহজ হওয়া। এদেশের মানুষ এতো কঠিন কঠিন ভাষা আর কাজ বুঝতে চায় না। তারা বুঝতে চায়, ইন্টারনটের দাম কম হোক, তেলের দাম কম হোক, পোশাকের দাম কম হোক। এইসব সুবিধা যারা দিতে পারবে এদেশের জনগণ তাদেরকেই ভালোবাসবে।

২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে ছাত্র-জনতার মাধ্যমে। তবে আমি সেটাকে সহজ করে বলতে চাই, ২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান জনতার মাধ্যমেই সফল হয়েছে। ছাত্র, শ্রমিক, শিক্ষক, কর্মজীবি, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী সকলই কিন্তু দিনশেষে এদেশের জনগণ। সুতারাং এদেশের জনগণই গণঅভ্যুত্থান সফল করেছে। কিন্তু এই জনগণের কথা কে ভাবছে?

অন্তবর্তী সরকারের ৩ মাসে চোখে পড়ার মতো কিছু কাজ রয়েছে। তবে এই সরকারের কাছে জনগণের যে উচ্চ প্রত্যাশা তা এখনও এই সরকার পূরণ করতে পারেনি। যদিও অল্প সময়ে এই জাজমেন্ট করার সুযোগ নেই। তবে সরকারের উচিত দৃশ্যমান কিছু কাজ করা। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টা সেটা হচ্ছে, জনগণ আসলে কি চায় সেটা বুঝতে পারা। বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।

বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে এই সরকার এখন পর্যন্ত ব্যর্থ। অথচ এই সরকারের কাছে জনগনের এটিই ছিলো অনেক বড় প্রত্যাশা। এই সিন্ডিকেট বিগত ১৬ বছর যেভাবে এদেশের মানুষের রক্তচোষে নিয়েছে এখনও নিচ্ছে। সরকার বদলেও যদি জনগণের ভাগ্য না বদলায় তাহলে জনগণ আবারও আস্থা হারাবে। জনগণের প্রাথমিক যেসব চাহিদা রয়েছে সেসব পূরণ করে জনমনে স্বস্থি ফেরানোটাই হোক প্রথম সংস্কার।

বিজ্ঞাপন

সংবিধান, আইন, নির্বাচন এসব সংস্কারের সময় আছে। জনগণকে এখন যাতে কোন শক্তি আবারও ভিন্নদিকে ধাবিত করতে না পারে সেজন্য অবশ্যই জনমনে স্বস্থি ফিরিয়ে দিতে হবে। আজকাল সাধারণ মানুষ বাজারে গেলেই হা-হুতাশ করেন। মাছ-মাংস যেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এই যখন অবস্থা তখন এই সরকারের উচিত এই সেক্টরে আরও বেশি গরুত্ব দিয়ে এই সমস্যা সমাধান করা। আমি বিশ্বাস করি এই সমস্যা থেকে জনগণ যেদিন রেহাই পাবে সেদিন, বাংলাদেশের অনেক সমস্যা আপনা-আপনি দূর হয়ে যাবে।

বর্তমান সময়ে মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। তার সাথে বেকারত্ব অনেক বড় একটা প্রতিবন্ধকতা তৈরী করেছে। এই সমস্যার মধ্যে বাজারের উর্দ্ধমূখীতা বিরটা সমস্যায় ফেলছে জনগণকে। এরমধ্যে দেশে দুযোর্গ, বিপ্লব নানান কিছু ঘটে গেলো। তার সাথে বৈদেশিক চাপ ও ষড়যন্ত্র তো আছেই। সবমিলিয়ে বর্তমান সরকারের একটা বিরটা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে এটা অস্বীকার করার সুযোগ নাই। তবে এই পরীক্ষা ও চাপ সবকিছুই এই সরকার মাথা পেতে নিয়েছে এদেশের জনগণের জন্য। এদেশের জনগণকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসতে, তাদের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে দিতে। এই সরকারের কাছে জনগণ সেটাই প্রত্যাশা করছে।

লেখক: প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক

সারাবাংলা/এসবিডিই

সংস্কার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর