নরেন্দ্র মোদির ফেসবুক এবং এক্স পোস্ট মূলত দু’টি বার্তা দেয়
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৯
বাংলাদের মহান বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক ও এক্স (টুইটার) একাউন্টে পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে সারাদেশ বিক্ষুব্ধ হয়। দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল ও দলের নেতারা প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
তিনি তার প্রদত্ত পোস্টে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্জন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়কে ‘ভারতের বিজয়’ দাবি করেছেন। আর তাতেই বাংলাদেশ জুড়ে এই ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলমান।
এখন কথা হচ্ছে তিনি কি এই প্রথম এমন কথা বললেন? নাকি পূর্ব থেকেই বলবার চেষ্টা করেছেন? স্পষ্টতই আগেও তেমনটি বলবার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশ প্রতিবাদ জানানোয় দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। ব্যস অতটুকুই। বর্তমান সময়ে হঠাৎ কী হলো মোদি বাবুর? কেন এই সময়ে এসে জেনে-বুঝেই এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে লিখে জানান দিলেন। আদতে তিনি কী বলেছেন? তিনি বলেছেন, নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ও এক্স (আগের টুইটার) হ্যান্ডলে গত ১৬ডিসেম্বর সোমবার লিখেছেন, ‘আজ, বিজয় দিবসে, ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়ে অবদান রাখা সাহসী সেনাদের সাহস ও আত্মত্যাগকে আমরা সম্মান জানাই’। তিনি বা ভারত সরকার বিষয়টিকে যেভাবেই ব্যাখ্যা করুক না কেন, বিষয়টিকে মোটেই হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। আমিও দেখছি না। প্রথমত, ভারতের অন্যতম মিত্র দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে চলছে ভারতবিদ্বেষ। যত যা-ই হোক ভারতের লেজুড়বৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসার পূর্বাপর দাবি ছিল একটা অংশের। যেহেতু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটা বড় ঝঞ্ঝা বা ক্রান্তি যাচ্ছে। বিশেষ করে জুলাই মাস ও আগস্টের ৫ তারিখ অবধি টালমাটাল পরিস্থিতিতে ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে বাংলাদেশের আরেকটি প্রভাবশালী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে চলমান সরকার এর পতন আন্দোলন বেগবান হয়। এরই প্রেক্ষিতে বিগত ৫ আগস্ট সরকার পতন হলে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এতে ভারতের ওপর বাংলাদেশের ভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো ক্রমাগত আক্রমণ করেই চলেছে। বাংলাদেশে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব নেন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি দায়িত্ব নেয়ার আগে ও পরে মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে সেভেন সিস্টার্স এ-ও প্রভাব পড়তে পারে। ভারতীয় চ্যানেল এনডিটিভি-কে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি যদি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলেন, তাহলে সেই অস্থিরতার আঁচ কিন্তু বাংলাদেশের বাইরেও মিয়ানমার, সেভেন সিস্টার্স, পশ্চিমবঙ্গ – সর্বত্রই অগ্ন্যুৎপাতের মতো ছড়িয়ে পড়বে।’ আর এই সেভেন সিস্টার্স বলতে ৭টি রাজ্যকে বোঝাতে বলা হয়ে থাকে। যাকে একসাথে বললে রূপক অর্থে সেভেন সিস্টার্স বলে। এই সাত রাজ্যের মধ্যে জাতিগত ও ধর্মীয় বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও অনেক আগে থেকেই এরা রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সদৃশ । ভারতে উত্তর-পূর্ব দিকে, চীন, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার দেশের সীমান্তে অবস্থিত। রাজ্যগুলো হলো- অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, সিকিম।
উল্লেখিত বক্তব্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা একটা স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছেন। তবে সে বক্তব্য ভারত অনেকটা হজম করে গেলেও মানতে যে পারছিল না তা দুই দেশের রাজনৈতিক নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং সম্পর্ক বেশ শিথিল হতে থাকে। যদিও বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী রাষ্ট্র হলে নিজেদের অখণ্ডতা অটুট রাখতেও অনেকটা সহজ হবে। যার কারণে বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হোক কার্যত তারা তা চাইবে না। উপরন্তু যদি অনুগত বা বন্ধুবৎসল কোন দল ক্ষমতায় থাকে তা বাড়তি পাওয়া বলেও ধরে নেয়া যায়। আর এসব কারণেই ভারত ভৌগোলিকভাবে আঞ্চলিক পরাশক্তি হয়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ড নিয়ে মাথা ঘামায়। না হলে ভারত ভেঙে কয়েকটি রাষ্ট্র হয়ে যেতে পারে। আর এক্ষেত্রে ভারত দেশমাতা বলে তাদের নাগরিকদের অখণ্ডতার মন্ত্রে উদ্দীপিত করে।
আসি মোদি বাবু হঠাৎ করে কেন বিজয় দিবসকে বেছে নিয়ে এই টুইট করলেন? আদতে মোদি সরকারের জনপ্রিয়তা এই মুহূর্তে কমতির দিকে। আবার সেভেন সিস্টার্স ও অন্যান্য প্রদেশে ভাঙনের ধ্বনিও বেশ স্পষ্ট। আর এক্ষেত্রে তারা দেশপ্রেমের ধুয়ো তুলে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে। আবার বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কয়েকটি রাজ্যে স্বাধীনতার আওয়াজ বেশ জোরেশোরে শোনা যায়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ইস্যুতেও সেইসব প্রদেশে স্বাধীনতার আওয়াজ উঠলে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ, ইন্টারনেট সংযোগের গতি শ্লথ করে কখনো ক্র্যাকডাউন করে সেনাবাহিনী ও যৌথ বাহিনীর অপারেশন চালিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
নরেন্দ্র মোদিকে বলা হয়ে থাকে ঝানু রাজনীতিবিদ। যে তৃণমূল থেকে উঠে এসে ভারতের মতো রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন একাধিকবার। আর সকল ক্ষেত্রেই মোদির অন্যতম অস্ত্র হচ্ছে দাঙ্গা। এই দাঙ্গা আবার নিছক কোন দাঙ্গা নয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের একত্রিত করে সফল হয়েছেন। যেহেতু ভারতে গোঁড়া দেশপ্রেম এবং হিন্দুত্ববাদ রয়েছে সেহেতু এই মুহূর্তে দেশপ্রেমের অস্ত্র আর যে কোন দলও খাবি খাবে। তার কারণ একটাই ভারত যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে অতিশয় কোন বক্তব্য দিবে বাংলাদেশ প্রতিবাদ করবেই। আর তাতে ভারতও তেলেবেগুনে জ্বলে উঠবে স্বাভাবিক। আর মোদি সেই অস্ত্র নিয়েই এখন মাঠে নেমেছেন বলে ধরে নেয়া যেতে পারে। এই সময়ে এসে অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার মতো অবস্থা। জ্বলছে আগুন আরো দাউদাউ করে।
মোদির পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল লিখেছেন, ‘১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ ছিল বাংলাদেশের বিজয়ের দিন। ভারত ছিল এই বিজয়ের মিত্র, এর বেশি কিছু নয়।’এর প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ জানিয়েছেন অগণিত মানুষ। মোদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এই দেশের মানুষের নিজেদের আত্মত্যাগের বিষয়ে কিছুই বলেননি। তাহলে কি বোঝা যায়? আর কি বুঝতে পারার কথা? তিনি অনেকটা সরল ভঙ্গিতেই কথাটা বলছেন মনে হলেও আসলে এর ভাব বেশ গভীরে প্রোথিত।
মোদি শুধু এবারই নয়। এর আগেও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালে শুভেচ্ছা জানিয়ে তখনকার টুইটারে পোস্ট দিয়েছিলেন। এতে বক্তব্য ছিল, ‘মহান বিজয় দিবসে আমি বীরত্ব ও আত্মত্যাগের জন্য স্মরণ করছি বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সাহসী সেনাদের। একসঙ্গে যুদ্ধ করে আমরা অত্যাচারী বাহিনীকে পরাজিত করেছি। বাংলাদেশের বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এই দিনে ভারতের জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকায় বিজয় দিবসে নানা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ উপস্থিত আছেন।’
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তিনি ২০২১সালের ধারাবাহিকতায় একটু একটু করে শম্বুকগতিতে এগিয়ে নিয়েছেন তার মনস্তত্ত্ব। তিনি যখন এই কথার শক্তিমত্তা চালিয়ে যেতে শুরু করেছিলেন তখন ভারতের মিত্র বলে পরিচিত শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায়। যদিও তখনও প্রতিবাদের মুখে পড়ে দুঃখপ্রকাশ করে পার পেয়েছিলেন। তাহলে এখন তার কি হলো?
অথচ, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। চালানো হয় নির্মম হত্যাযজ্ঞ। এরপর ২৬ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। তার আগে ৩০লক্ষ জীবন ও ২লক্ষ নারীর সম্ভ্রমহানির কথা। আবার যুদ্ধাহত অগণিত মুক্তিযোদ্ধা শরীরে ক্ষত বয়ে বেড়িয়েছেন আমৃত্যু। আর তখনই আমাদের অর্জিত বিজয় নিয়ে নিছক ছেলে খেলা। বাংলাদেশের জনগণ মানবে না। একাত্তরে সহযোগিতার পরিণাম যদি আজকের এই অবস্থা হয় তাহলে পাকিস্তানের মতো ভারতকেও ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে প্রস্তুত রয়েছি।
ওই দিন ঢাকায় স্বাক্ষরিত দলিলে বলা হয়েছিল, পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সকল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো।’
তার আগে দেশের রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য জেনে নেয়া যেতে পারে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করেন বাংলাদেশ বাহিনীর উপপ্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার। বাংলাদেশ বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর পক্ষে আরও ছিলেন এস ফোর্সের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কে এম সফিউল্লাহ, ২ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর এ টি এম হায়দার, কাদের সিদ্দিকীসহ অনেকে। যা জানতে পারা যায় তৎকালীন সময়ের পত্র-পত্রিকা পাঠে। আর যারা রণাঙ্গনে থেকে যুদ্ধে লড়েছেন তারা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কলাম, নিবন্ধ কিংবা আত্মজীবনীতে সেসব ঘটনা প্রবাহ উল্লেখ করেছেন। যা ইতিহাসের জ্বলন্ত দলিল।
ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে। ভারতীয় সেনারাও প্রাণ হারিয়েছেন। বাংলাদেশ তাদেরও শ্রদ্ধাবনতচিত্তে আজও স্মরণ করে। কিন্তু ভারত এটিকে তাদের একক কৃতিত্ব হিসেবে দেখানোর প্রবণতা রয়েছে। যা বাংলাদেশ তো নয়ই পৃথিবীর কোন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র তা মেনে নিবে না। সাতপাঁচ ভেবে বলার দরকার যে নেই তা পরিষ্কার।
নরেন্দ্র মোদির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রদত্ত বক্তব্য প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘মোদির বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। এটা অগ্রহণযোগ্য।’ মিডিয়া দেয়া বক্তব্যে এই প্রতিবাদ করেন তিনি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি একটি পত্রিকায় দেয়া অভিমতে বলেন, ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামকে যথার্থভাবে মূল্যায়ন করে না, গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে না, সেটা আরেকবার প্রমাণ করল নরেন্দ্র মোদির এই পোস্ট।
এত এত দালিলিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কেন ভারত নতুন করে ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে বিষিয়ে তুলছে? তার যৌক্তিক আরো একটি কারণ বলছি, তাহলে কি ভারত ইচ্ছে করেই বিদ্বেষ ছড়িয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে? যদি তা-ই না হবে তবে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছর পর কেন তাদের মনে এই হঠকারিতার উদয় হলো?
আমরা কি ধরে নেব ভারত ভৌগোলিক আধিপত্য বিস্তার ঘটাতে এই হেন চক্রান্তে নেমেছে পরিকল্পিতভাবে?
দ্বিতীয়ত, নরেন্দ্র মোদির কাছে আছে আরেকটি অস্ত্র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। যার কারণে এই মোদিকেই ‘গুজরাটের কসাই’ নামেও ডাকা হয়ে থাকে। ভারতের যেমন ‘চিকেন নেক’ আছে। তেমনি বাংলাদেশেরও ‘চিকেন নেক’ রয়েছে। মোদির মূল অস্ত্র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতে পারলে বাংলাদেশ কয়েক টুকরো করে তাদেরই অনুগত করে রাখতে চায়! যদি না-ই হবে তাহলে আর কি হতে পারে? সমসাময়িক বিষয়ে এই দুইটি কারণ ছাড়া আর কিছুই নেই বলে মনে হচ্ছে। একদিকে আন্তর্জাতিকভাবে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা বাঁধিয়ে দেশকে চাপে রাখা। আবার তাদের দেশের জনগণকে দেশপ্রেমের মুলো ঝুলিয়ে একত্র করা। আবার সেই দেশের বিরোধী দল এই দুই ইস্যুতে মোদির বিরুদ্ধে যাবার সুযোগ পাবে না।
আবার কোন কোন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশকে বিভিন্ন প্রদেশে ভাগ করতে চাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এটা ভৌগোলিক আয়তনে ছোট রাষ্ট্রের জন্য খুব একটা ভালো কিছু বয়ে আনবে না। কারণ ভারত কিংবা মিয়ানমার খুব ভালো প্রতিবেশী নয় এটা নিশ্চিত। আবার চীনও সহযোগিতার নামে অপরাপর প্রতিবেশীর সাথে দ্বন্দ্ব বাঁধিয়ে তারা আধিপত্য বিস্তার করতে চাইবে। চীনে উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতনের কথা কে না জানে। কেউ কি প্রতিকার দিতে পেরেছে। উল্টো আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মাধ্যমে ব্যর্থ ও অনেকটাই অকার্যকর রাষ্ট্রের তকমা পাওয়া পাকিস্তানের সাথে ভিড়তে এখন বেশ আগ্রহ দেখানো হচ্ছে। যা মোটেই সুখকর হওয়ার কথা নয়।
আমরা আশা করি, নরেন্দ্র মোদি তথা ভারত সরকারের বোধদয় হবে। তার দেয়া বিবৃতি প্রত্যাহার করে দুঃখপ্রকাশ করে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বৃদ্ধি করে সমানতালে চলতে কোন প্রকার বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। এখন নতজানু বাংলাদেশ আর নেই। বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে মাথা তুলে দাঁড়াতে শিখে গেছে। বৈশ্বিক পরিমন্ডলেও নিজেদের চিনতে শিখিয়েছে। এখন আর কোন প্রভুত্ব কাম্য নয়। প্রকৃত বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী প্রত্যাশা করি। এর ব্যত্যয় ঘটলে বাংলাদেশও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ভারতকে বাদ দিয়ে হলেও বলয় গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।
লেখক: অ্যাডভোকেট, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
সারাবাংলা/এএসজি
অ্যাডভোকেট গাজী তারেক আজিজ এক্স পোস্ট নরেন্দ্র মোদি ফেসবুক পোস্ট মহান বিজয় দিবস মুক্তমত