রোজা লুক্সেমবার্গ: নারীর ভোটাধিকার ও শ্রেণিসংগ্রামে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:০৫
‘প্রলেতারিয়েত নারীর সাধারণ, সমান ও সরাসরি ভোটাধিকার গোটা প্রলেতারিয়েত শ্রেণিসংগ্রামকে প্রবলভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে। এবং এ কারণে আমরা নারীর ভোটাধিকার চাই এবং তা অর্জন করে ছাড়ব। নারীর ভোটাধিকারের জন্য সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা সেই সময়ের দিকে এগিয়ে চলেছি, যখন বর্তমান সমাজ মুখ থুবড়ে পড়বে এবং বিপ্লবী প্রলেতারিয়েতের হাতুড়ির আঘাতে ধ্বংস হবে।’
-[লুক্সেমবার্গের অনমনীয় ঘোষণা: ‘নারীর ভোটাধিকার ও শ্রেণিসংগ্রাম (১৯১২)’ প্রবন্ধে]
বিশ্বের কমিউনিস্ট বিপ্লবী চিন্তাবিদদের মধ্যে রোজা লুক্সেমবার্গ অন্যতম পথিকৃৎ। জার্মানসহ ইউরোপের বিপ্লবী সংগ্রামের সংগঠক এবং বিশ্ব বিপ্লবের তাত্ত্বিক হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন তাত্ত্বিক, বিপ্লবী এবং আরও বেশি কিছু। নারীর জন্য বিরূপ এক পৃথিবীকে তিনি তার নিজের বক্তব্য শুনতে বাধ্য করেছিলেন। তার কঠোর সংগ্রামী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র, বিজ্ঞান, কলা ও প্রকৃতির প্রতি তার একনিষ্ঠ অনুরাগ এবং সর্বোপরি প্রেম তাকে অনন্য অবস্থানে নিয়ে গেছে। অল্প বয়স থেকেই তিনি ছিলেন মার্ক্সের সমর্থক, যদিও তিনি তার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণকে মার্ক্সের সমালোচনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়েছেন। তার লেখা গ্রন্থ অ্যাকিউমুলেশন অব ক্যাপিটালকে (১৯১৩) ডাস ক্যাপিটালের (১৮৬৭) অন্যতম প্রধান সম্প্রসারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কমরেড রোজা লুক্সেমবার্গ ১৮৭১ সালের ৫ মার্চ পোল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জোসেস শহরে এক ইহুদী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারে ৫ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।
প্রতিক্রিয়াশীল উগ্র জাতীয়তাবাদী পোল্যান্ডে বনেদী স্কুলগুলোতে ইহুদী ধর্মাবলম্বী পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করা ছিল প্রায় অসাধ্য। কিন্তু কমরেড রোজা লুক্সেমবার্গ এই অসাধ্যকে সাধন করেছেন। তিনি স্কুলে পড়াকালীন ১৫ বছর বয়সে মার্কসবাদী একটি গোপন সংগঠনে যোগ দেন।
মার্কসবাদী গোপন সংগঠনে সক্রিয় অংশগ্রহণের পর থেকেই পোল্যান্ডের সকল মহলে কমরেড রোজা লুক্সেমবার্গের কর্মতৎপরতা দৃষ্টি কাড়ে। পোল্যান্ড সরকার রোজাকে গ্রেফতার করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। রোজা গ্রেফতার এড়াতে পোল্যান্ড সরকারকে ফাঁকি দিয়ে খ্রিষ্টান বেশে এক পাদ্রীর সহায়তায় সুইজারল্যান্ডের জুরিখে চলে যান। তখন তার বয়স মাত্র ১৮ বছর।
তিনি অর্থনীতি ও আইন শাস্ত্রের উপর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৮৮৯ সালে তিনি জুরিখ ত্যাগ করে জার্মানির বার্লিনে চলে যান। তিনি জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক লেবার পার্টি (কমিউনিস্ট পার্টি)-তে যোগ দেন।
১৯০৪ সালে জার্মান সম্রাটের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভাষণের কারণে রোজার ৩ মাস জেল হয়। জেলে বসে তিনি বন্দীদের মাঝে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালান। জেল-বন্দীদের নিকট তিনি তুলে ধরেন ফ্যাসিস্ট জার্মান সরকারের শোষণ-নিপীড়ন, ইহুদী নিধন, সমাজের শ্রেণি সংগ্রামের অার্থসামাজিক ও রাজনৈতিক তত্ত্ব তথা মার্কসবাদকে। বন্দী নারী-পুরুষেরা রোজার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন। অনেক বন্দী মুক্তি পেয়ে জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক লেবার পার্টি (কমিউনিস্ট পার্টি)-তে যোগদান করেন।
১৯০৫ সালে রাশিয়ায় শ্রমিক বিপ্লবকে তিনি উচ্চকণ্ঠে সমর্থন করেন একজন বিশ্ব বিপ্লবের নেত্রী হিসেবেই। এবং তার ভাষণে তিনি বলেন- রাশিয়ার সর্বহারা শ্রেণি এই প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছে একটি শ্রেণি হিসেবে। রোজা লুক্সেমবার্গ জার্মান সর্বহারা শ্রেণিকেও রুশ সর্বহারাদের মতো বিশ্ব বিপ্লবের নতুন মঞ্চে আবির্ভূত হবার আহ্বান জানান।
১৯০৫ সালে রুশ বিপ্লবের পরাজয়ের পর তিনি পোল্যান্ডের ওয়ারশ-তে ফিরে যান বিপ্লবে অংশ নিতে। সেখানেও তিনি গ্রেফতার হন। মুক্তির পর তিনি পুনরায় বার্লিনে ফিরে আসেন এবং ১৯০৭ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত বার্লিনে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক লেবার পার্টির স্কুলে শিক্ষকতা করেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্ব এলে সাম্রাজ্যবাদীদের কোন্দলে বিশ্ব বিভক্ত হয়ে পড়ে। সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদীরা বিশ্বকে ভাগ-বাটোয়ারার কামড়াকামড়িতে জনগণকেও বিভক্ত করে। তখন সকল দেশের সমস্ত বুর্জোয়া ও প্রতিক্রিয়াশীলদের রুখো- এই কমিউনিস্ট বিপ্লবী নীতিকে বিসর্জন দিয়ে বার্নস্টাইনের নেতৃত্বে জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক লেবার পার্টি (কমিউনিস্ট পার্টি) জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থান নেয়। অর্থাৎ তারা নিজ দেশের বুর্জোয়া শ্রেণিকে উচ্ছেদ করে শ্রমিক শ্রেণির ক্ষমতা দখল ও তার আন্তর্জাতিকতাবাদী শ্রেণি ঐক্যের লাইনকে বর্জন করে এবং গ্রহণ করে জার্মানির আগ্রাসন ও অন্যান্য জাতিসমূহকে নিজ জাতির অন্তর্ভুক্ত করার বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী রাজনীতি। বার্নস্টাইনের নেতৃত্বে “দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক”-এর অনেক নেতাই বার্নস্টাইনের এই বিশ্বাসঘাতক রাজনৈতিক লাইনে অবস্থান নেয়। বার্নস্টাইনের নেতৃত্বে এই সুবিধাবাদী নেতারাও সাম্রাজ্যবাদীদের শ্রমিক শ্রেণিকে বিভক্ত করার চক্রান্তের (অর্থাৎ যার যার দেশ রক্ষা করার নামে নিজ দেশের বুর্জোয়ার লেজুড়বৃত্তির চক্রান্তের) সাথে একাকার হয়ে পড়েন। বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনেও দুই লাইনের সংগ্রাম শুরু হয়ে যায়। একদিকে লেনিনের নেতৃত্বে বিপ্লবী অংশ, অপরদিকে বার্নস্টাইন-কাউটস্কির সুবিধাবাদী জাতীয়তাবাদী লাইন- এই দুই লাইনের সংগ্রামে রোজা অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সঠিক মার্কসবাদী লাইনে অবস্থান নেন। তিনি দ্রুতই বুঝতে সক্ষম হন বার্নস্টাইনের বিশ্বাসঘাতক সংশোধনবাদী লাইন। বার্নস্টাইনের নেতৃত্বে পার্টি আর কমিউনিস্ট পার্টি নেই তা তিনি বুঝতে পেরে জার্মানিতে নতুন একটি সঠিক কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং সে লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
১ম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকেই রোজা এবং জার্মান সমাজতন্ত্রী বিপ্লবী লাইনের নেতা কার্ল লিবনেখট ‘স্পার্টাসিস্ট’ নামে নতুন একটি বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলেন।
সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বযুদ্ধের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকতাবাদী অবস্থান (সমস্ত দেশের বুর্জোয়া ও প্রতিক্রিয়াশীলদের রুখো) নেয়ার কারণে রোজা পুনরায় গ্রেফতার হন। ১৯১৮ সালে যুদ্ধ শেষে জার্মান সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব-এর জোয়ার এবং দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক-এর প্রধান নেতারা সংশোধনবাদী হয়ে যাওয়ার এ পরিস্থিতিতে রোজা জার্মানিতে দ্রুতই বিপ্লবী নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করেন। এবং কার্ল লিবনেখটসহ তিনি স্পার্টাসিস্ট সংগঠনকে কংগ্রেসের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ জার্মান কমিউনিস্ট পার্টিতে রূপদান করেন। জার্মানিতে বার্নস্টাইন সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে নতুন একটি সঠিক বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলা ছিল অসাধ্যকে সাধন করার মতোই। তা তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথেই তা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
জার্মান ফ্যাসিস্ট শাইডেমার সরকার রোজা এবং কার্ল লিবনেখটের নেতৃত্বে এই সঠিক বিপ্লবী কমিউনিস্ট সংগঠনটিকে অঙ্কুরেই ধ্বংস করে দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ১৯১৯ সালের জানুয়ারিতে জার্মান ফ্যাসিস্ট ফিলিপ শাইডেমার সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে রোজা নেতৃত্ব দেন। কিন্তু এই বিদ্রোহে তারা ব্যর্থ হন। কার্ল লিবনেখটসহ তিনি গ্রেফতার হন। ১৫ জানুয়ারি জার্মান সেনাবাহিনী রোজাকে গুলি করে হত্যা করে এবং রোজার লাশ নদীতে ফেলে দেয়।
উনিশ শতকের শেষে বা বিশ শতকের গোড়ার দিকে যখন মার্কসবাদী শ্রেণি সংগ্রামের দর্শন বিশ্বব্যাপী বিতর্কের ঝড় তুলেছে, নব্য পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থার ভিত কাঁপিয়ে তুলছে, সে সময়ে রোজা লুক্সেমবার্গ, ক্লারাসেৎকিনের মতো নারীদের আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ বিশ্ব নারীমুক্তির ক্ষেত্রে বিশাল অগ্রপদক্ষেপ। কারণ, পশ্চাৎপদ ভারতীয় উপমহাদেশের কথা বাদ দিলেও পশ্চিমা ইউরোপীয়ান সমাজেও নারীমুক্তি, নারী স্বাধীনতা তখন ছিল অকল্পনীয় বিষয়। ইউরোপের অনেক দেশেই তখনো নারীদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এমনকি আধুনিক বুর্জোয়া নারীবাদও বিকশিত হয়নি। সেখানে রোজার মতো নারীদের কমিউনিস্ট সমাজতন্ত্রী আন্দোলনে ভূমিকা রাখা, বিশ্ব বিপ্লবে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা বিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত নারীদের জন্য মাইলফলক হয়ে আছে। রোজা লুক্সেমবার্গ কমিউনিস্ট আন্দোলনে শুধুমাত্র সক্রিয় কর্মীর ভূমিকাই পালন করেননি, তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন-এর দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক-এর প্রধান নেতারা যখন সংশোধনবাদী হয়ে যায় তখন রোজা সঠিক মার্কসবাদী লাইনের পক্ষে থেকে সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালান। এবং বিপ্লবী নেতা-কর্মীদের নেতৃত্ব দেন।
তিনি আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে বার্নস্টাইনবাদ ও মিলেরাবাদের বিরুদ্ধে এক মরণপণ সংগ্রাম পরিচালনা করেন। বার্নস্টাইনের পেটিবুর্জোয়া সংস্কারবাদী ও সুবিধাবাদী লাইনের বিরুদ্ধে তিনি ‘সংস্কার না বিপ্লব’ নামে একটি পুস্তকও রচনা করেন।
তিনি আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ঘোষক কমরেড ক্লারা সেৎকিনের সঙ্গে জার্মান কমিউনিস্ট পার্টিতে নারী বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
রোজা লুক্সেমবার্গ, যার জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি জীবনটাই ছিল বিপ্লবী সংগ্রামে ভরপুর। বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনে যার বিশাল ভূমিকা রয়েছে (বিশেষত তাত্ত্বিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে)। তা সত্ত্বেও তার দীর্ঘ বিপ্লবী সংগ্রামের জীবনে ভুল-ভ্রান্তিগুলো আমাদেরকে তুলে ধরতে হবে। তা না হলে আমরা সঠিক দিশা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বো।
উনিশ শতকের শেষে এবং বিশ শতকের গোড়ার দিকে মহান মার্কসবাদী নেতা কমরেড লেনিন-এর অবদান যখন বিকশিত হয়ে উঠেছে, রোজা তখন লেনিনীয় উচ্চতর বিকশিত লাইনগুলোর সাথে নিজেকে উন্নীত করতে পারেননি। যেমন, সাম্রাজ্যবাদ সংক্রান্ত তত্ত্ব, শ্রমিক শ্রেণির একনায়কত্বের প্রশ্ন, পার্টি গঠনের প্রশ্ন, জাতীয় প্রশ্ন- ইত্যাদি প্রশ্নে রোজা লেনিনের নতুন অবদানগুলোকে ধরতে পারেননি। লেনিনবাদের নতুনতর অগ্রসর লাইনগুলোর বিতর্কে কখনো ডান, কখনো বামে অবস্থান নিয়েছেন তিনি। এমনকি নারীমুক্তি প্রশ্নেও মহামতি লেনিন রোজাকে বিবিধ বিচ্যুতি অনুসরণ করার জন্য সমালোচনা করেছেন। ১৯০৫ সালের রুশ বিপ্লব-পূর্ব রোজা ছিলেন অনেকটাই মেনশিভিক (রুশ কমিউনিস্ট পার্টির সুবিধাবাদী অংশ) লাইনের দ্বারা আচ্ছন্ন।
মহান এই নেত্রী মহামতি লেনিনের সাথে বহুবার ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে বিতর্কে অবতীর্ণ হন। লেনিন রোজার এই ভুল লাইনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক সংগ্রাম চালান।
রোজা পরবর্তী সময়ে তার এক বন্ধুর নিকট চিঠিতে উল্লেখ করেন, মেনশেভিকীয় পন্থা পরিহার করতে আমাকে যতখানি লেনিনের তত্ত্ব ও যুক্তি প্রভাবিত করেছিল, ততখানিই প্রভাবিত করেছিল রাশিয়ার সফল বিপ্লব।
রোজার বিচ্যুতিপূর্ণ কিছু লাইন সত্ত্বেও তিনি বিশ্ব বিপ্লবে একজন অবিচল মার্কসবাদী কমিউনিস্ট নেত্রী হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি দৃঢ়ভাবে কমিউনিস্ট পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন শুধু বিশ্ব সর্বহারা শ্রেণির মুক্তির জন্যই নয়, বিশ্বের নিপীড়িত নারী জাতির মুক্তির জন্যও।
১৯১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি ফ্যাসিস্ট ফিলিপ শাইডেমার সরকার রোজাকে গুলি করে লাশ নদীতে ফেলে দিলেও ৩১ মার্চ রোজার লাশ পাওয়া গেল এক খালের মুখে। শীতের কারণে পচে গলে যায়নি। অবিকৃত লাশ। চোখে-মুখে গভীর ঘৃণা আর অভিব্যক্তিতে ফুটে উঠেছিল আহ্বান-বিপ্লবের লাল নিশান উড়িয়ে দাও দেশে দেশে।
রোজা লুক্সেমবার্গের আজীবন বিপ্লবী দৃঢ়তা ও আত্মত্যাগ এবং কমিউনিজমের আদর্শের প্রতি তার অবিচল আস্থা আমাদের দেশের নিপীড়িত নারীদের জন্যও পথের দিশারী হয়ে থাকবে, থাকবে প্রেরণার উৎস হয়ে। এবং তিনি থাকবেন বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে।
লেখক: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সারাবাংলা/এএসজি