Friday 11 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাঠদানের আগে প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটের নিরসন

ফাহিম হাসনাত
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:২৮

বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষা পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানী ঢাকার সদরঘাটে অবস্থিত উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর যাত্রা শুরু করে। সম্প্রতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাফল্য ও গৌরবের সাথে ২০ বছরে পদার্পণ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স প্রায় বিশ বছর হয়ে গেলেও উল্লেখ যোগ্য আমাদের কোনো ক্যাম্পাস নেই। বর্তমানে প্রায় ১০ একরের ছোট্ট ক্যাম্পাসটি ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর পড়াশোনার জন্য একদমই অপ্রতুল। শিক্ষার্থীদের চলাফেরা ত পরের কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো বাস একসাথে ক্যাম্পাসে রাখার জায়গাটুকু নেই। ক্যাম্পাস থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে ধুপখোলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি খেলার মাঠ আছে যদিও এতদিন সেটা দক্ষিন সিটি করপোরেশনের দখলে ছিল। ২০১৬ সালে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে দাবিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, আবাসন ব্যবস্থা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, খেলার মাঠ, চিকিৎসা কেন্দ্র, সুইমিংপুল, লেক নির্মাণসহ উন্নতমানের ক্যাম্পাস তৈরির মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২০০ একরের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত জানায়। ২০১৮ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক জমির চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হবার কথা ছিল ২০২০ সালের মধ্যেই। কিন্তু নানান প্রশাসনিক জটিলতায় আটকে থাকা নতুন ক্যাম্পাসের প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও এখনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই কাজে।

বিজ্ঞাপন

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একই বছর প্রতিষ্ঠিত হয়। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সম্পন্ন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তরও করা হয়। ছয় বছর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের কাজ শুরু হয়ে এবছরের জুনের মধ্যে তা শেষ হবার কথা থাকলেও কাজের উল্লেখ্য যোগ্য কোনো অগ্রগতিই নেই! অথচ এই ছয় বছরে আমরা একাধিক নতুন ভিসি পেয়েছি। সবাই আমাদেরকে আশা দিয়েছেন তাদের মেয়াদ কালেই নতুন ক্যাম্পাসের কাজ সম্পন্ন করবেন বলে।

কিছুদিন আগেও আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই যেন ভিসি পাই সে লক্ষ্যে আন্দোলন করেছিলাম এবং সফলও হই। আমাদের আকাঙ্খা ছিল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিসি পেলে হয়ত তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরন করবেন। তবে আফসোস! ভিসি আসে এবং যায়, সরকারও পরিবর্তন হয় কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি গুলো রয়ে যায় এবং থেকে যায় বাস্তবতা। সেজন্য সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতন বলতে ইচ্ছে করে – ‘কেউ কথা রাখেনি…’।

কিছুদিন আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে দেয়া সহ ৫ দফা দাবিতে আমরা শিক্ষার্থীরা সচিবালয় ঘেরাও করি। আমাদের দাবিগুলো ছিল যথাক্রমে _

১. স্বৈরাচার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রজেক্ট ডিরেক্টরকে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং সাত দিনের মধ্যে সেনাবাহিনীর দক্ষ অফিসারদের হাতে এই দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে।

২. শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট রূপরেখাসহ ঘোষণা করতে হবে যে জগন্নাথ বিশ্বাবিদ্যালয় দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

৩. অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং পুরাতন ক্যাম্পাস নিয়ে স্বৈরাচার সরকারের আমলের সব চুক্তি বাতিল করতে হবে।

৪. সম্প্রতি ইউজিসির ঘোষণা করা পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক বাজেট সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করতে হবে।

তখন বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা জনাব নাহিদ ইসলাম আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, তারা যথা সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরন করবেন।

সম্প্রতি, আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসনে প্রাথমিকভাবে ৭০০ শিক্ষার্থীর এবং পরবর্তীতে আরো ৫০০০ শিক্ষার্থীর জন্য অস্থায়ী আবাসনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। খু্ব শীঘ্রই সেটি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। তাদের এমন মহৎ উদ্যেগ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন থাকবে, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর জন্য যেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক একটা অস্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এএসজি

আবাসন সংকট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফাহিম হাসনাত মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর