Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সভ্যতার সঙ্গে প্রযুক্তির সম্পর্ক

মো. জাহিদুল ইসলাম
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:২৪

সভ্যতার সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির সম্পর্কের ইতিহাস প্রচলিত ধারণার চেয়েও অনেক পুরনো ও বেশ গভীর। আমাদের জন্ম থেকে শুরু করে উদ্ভাবিত সবকিছুইতেই রয়েছে প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা। মানব সভ্যতার পুরো ইতিহাসই জড়িত রয়েছে উদ্ভাবনের প্রযুক্তির সঙ্গে। আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাব অপরিসীম। কম্পিউটারের নির্ভুল ভাবে কর্ম সম্পাদন করা, দ্রুতগতিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করা, পুরনো স্মৃতি এবং নতুন তথ্য সংরক্ষণ করা, স্বয়ংক্রিয় ভাবে কাজ সম্পাদন ইত্যাদি বৈশিষ্টের জন্য তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগক্ষেত্র আজ বিশ্বজুড়ে সুবিস্তৃত।

বিজ্ঞাপন

মানব সভ্যতার সাথে প্রযুক্তি প্রতিনিয়তই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত রয়েছে। মূলত সভ্যতার বিকাশের অর্থই হলো প্রযুক্তির বিকাশ। আবার একইভাবে প্রযুক্তির বিকাশ সভ্যতার বিকাশকেই নির্দেশ করে। প্রযুক্তির বিকাশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে প্রযুক্তির অভূতপূর্ব পরিবর্তনই যুগে যুগে শিল্পবিপ্লব ঘটিয়েছিল। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বা www ছিল আবিষ্কারের ইতিহাসে যুগান্তকারী এক অকল্পনীয় উদ্ভাবন। সত্যিকার অর্থেই এটি ছিল এক অবিশ্বাস্য উদ্ভাবন যা বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের ক্ষেত্রে ও মানুষের বর্তমান জীবনধারায় এনেছিল বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আধুনিক নাগরিক জীবন গঠন এবং মানুষের জীবনে সার্বিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ ফিরিয়ে আনতে প্রতিনিয়তই অবদান রাখছে। ফলে মানুষের জীবন পরিণত হয়েছে প্রযুক্তিনির্ভর এক আধুনিক জীবনে। যেখানে আধুনিক সভ্যতা এবং উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর নাগরিক জীবন রয়েছে সেখানেই যেন প্রযুক্তির সঙ্গে সভ্যতার রয়েছে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। প্রযুক্তির এই আশীর্বাদ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে তা মানবকল্যাণে অপরিহার্য ভূমিকা রাখবে। প্রযুক্তির প্রথম যুগ ছিল বাষ্পীয় ইঞ্জিন ব্যবহারের। এরপর থেকেই বিশ্বের কোথাও কোথাও একটু ধীরগতিতে আবার কোথাও দ্রুত গতিতে প্রযুক্তি ব্যবহারে মানুষের জীবনে অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন ঘটতে থাকে। পরবর্তীতে ফসল উৎপাদনের কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার বিশ্বজুড়ে মানবজাতির কল্যাণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

সম্প্রতি কৃষি কাজে বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার বর্তমান সভ্যতাকে ভবিষ্যতের নতুন সম্ভাবনার দিকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সেচকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে গভীর নলকূপ, মোটর, জমি চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, জমিতে ফসল বপন করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে অটোমেটিক মেশিন। এভাবে ফসল উৎপাদনে প্রযুক্তির ব্যবহার প্রতিদিনই কৃষিতেও অসামান্য অবদান রাখছে। বর্তমানে জমি থেকে ফসল তোলার কাজেও সম্পূর্ণরূপে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে কৃষকেরা। এরপর বিদ্যুতের আবিষ্কারের পর শুরু হলো নতুন প্রযুক্তির আরেকটি যুগ। বিদ্যুতের ব্যাপক প্রসারে শিল্পক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন ও উৎপাদিত জিনিস মানুষের জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে।

বিদ্যুতের সংস্পর্শে মানুষের জীবনের যাত্রা পরিবর্তিত হতে লাগলো দ্রুত গতিতে। এরই ফলশ্রুতিতে পাখা ঘুরলো, বিমান উড়লো, স্টিমার, গাড়ি চললো। মানুষের স্বাভাবিক জীবনে এলো নতুন এক বিস্ময়কর অগ্রগতি। এরপর তৃতীয় যুগ শুরু হলো ইলেকট্রন, প্রোটন ও সৌরশক্তির প্রযুক্তির আবির্ভাবের মাধ্যমে। পরবর্তীতে চতুর্থ পর্যায়ে উদয় ঘটলো আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগের। বর্তমান সময়ে পুরো বিশ্বই তথ্য প্রযুক্তির উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। এদিকে আগামীর বিশ্বও প্রযুক্তির ব্যবহারে আরোও বেশি নির্ভরশীল হতে চলেছ। তাই তথ্য প্রযুক্তিকে সম্পর্কে ভালভাবে জ্ঞান লাভ করা প্রত্যেকের জন্যই জরুরী এবং অত্যাবশ্যকীয়। তাহলে তথ্য প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে একে পরিপূর্ণ ভাবে মানব জাতির কল্যাণে কাজে লাগানো সম্ভব হবে। বর্তমান আধুনিক একুশ শতকের জীবনধারা সম্পর্ণরুপে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর।

প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার সমূহ সভ্যতা ও মানব জীবনকে বলীয়ান করে তুলেছে। শুধু বলীয়ান নয় আধুনিক বিশ্বের আধুনিক মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে প্রযুক্তি। কৃষি, শিল্প ও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নির্মাণ, স্থাপত্য, ব্যাংকিং, যোগাযোগ, পরিবহন, তথ্য– সবক্ষেত্রেই প্রযুক্তির অবিশ্বাস্য অগ্রগতি বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রযুক্তি এখন পরিণত হয়েছে মানুষের জীবনের নিত্যসঙ্গী হিসেবে। এছাড়া তথ্য প্রযুক্তির কল্যানে বর্তমানে ঘরে বসে বিশ্বের যে কোন প্রান্তের অফিস বা ব্যাক্তির কোন কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। আধুনিক বিশ্বের সবকিছুই এখন সম্পূর্ণরুপে প্রযুক্তির সাথে জড়িয়ে রয়েছে যার বিচ্ছেদ একেবারেই অসম্ভব। কারণ প্রযুক্তি কল্পনাতীত অনেক অসম্ভবকেই সম্ভব করতে সক্ষম হয়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের জীবনে সুখ-শান্তি এসেছে।

এমনকি মানুষ মানবসভ্যতা ধ্বংসকারী পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার করেছে সেটাও প্রযুক্তির অবদান। বর্তমান বিশ্বে প্রতিনিয়তই যেভাবে প্রযুক্তির নির্ভরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি বৃদ্ধি পাচ্ছে এর চাহিদাও। কম্পিউটার ভিত্তিক ইন্টারনেট প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে সমগ্র বিশ্ব এখন এক গ্লোবাল ভিলেজে রূপান্তরিত হয়েছে। জীবনকে সহজ করতে পথ্য হিসেবে প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছে আধুনিক বিশ্বের সকল শ্রেণীর মানুষ। ধীরে ধীরে ম্যানুয়াল থেকে অটোনোমাস প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে এই সভ্যতা। আর সেই প্রচেষ্টায় প্রযুক্তি এখন ধাবমান হিউম্যানয়েড রোবটের দিকে যা পেশিশক্তি এবং সাস্টেইনিবিলিটির দিক থেকে কর্মক্ষম হয় মানুষের থেকেও বেশি। অবিকল মানুষের মতো দেখতে এই রোবটগুলো যেন বর্তমান এই সভ্যততার পরম দাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। হিউম্যানয়েড বলতে মনুষ্যসদৃশ কোনো কিছুকে বোঝায় যা মানুষের মতো কিন্তু মানুষ নয়। মানুষের মতো হাঁটা থেকে শুরু করে যার সব চলনভঙ্গি হয় মানুষের অনুকরণে।

বর্তমানে কিছু কিছু রোবট মানুষের সঙ্গে খোশগল্প করতেও সক্ষম। এই হিউম্যানয়েড রোবটগুলো দুই ধরনের হয়ে থাকে-অ্যান্ড্রয়েড এবং গাইনয়েড। পুরুষের আদলে তৈরি রোবটগুলোকে অ্যান্ড্রয়েড এবং নারীদের আদলে তৈরি রোবটগুলোকে গাইনয়েড বা ফেমবটও বলা হয়। বেশিরভাগ হিউম্যানয়েড রোবটগুলোর বাইরের কাঠামো বা চেহারা যান্ত্রিক হয়। তবে বিবর্তনের ধারায় আরও বেশি ‘মানবিক’ হয়ে উঠছে এই রোবটগুলো। এছারাও এই রোবটগুলোর কর্মদক্ষতা ও চেহারায়ও এসেছে অভূতপূর্ব পরিবর্তন। বর্তমান হিউম্যানয়েড রোবটগুলো গৃহস্থালির নানা কাজ, শিক্ষা ও বিনোদনের কাজেই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। আজকাল মহাকাশেও পাঠানো হচ্ছে স্পেস হিউম্যানয়েড রোবট।

আধুনিক জীবন ও প্রযুক্তি একুশ শতকের জীবনধারায় সম্পূর্ণরুপে বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত বিভিন্ন প্রযুক্তি সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সুখ-শান্তি চলে এসেছে আগের চেয়েও বহুগুণ। সাম্প্রতিক সময়ের তথ্যপ্রযুক্তির যে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে তার পেছনে রয়েছে প্রযুক্তি বিজ্ঞানের বিশেষ অবদান। নগরের আকাশচুম্বী ভবনের থেকে শুরু করে নাগরিক জীবনের সব কিছুতেই প্রযুক্তি এনে দিয়েছে অভূতপূর্ব সফলতা। যানবাহনে চলাচলের ক্ষেত্রকে করে দিয়েছে সহজ থেকে সহজতর। চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রযুক্তির ছোঁয়া আসার কারণে মানুষের জীবন হয়েছে দীর্ঘায়ুময়। নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে দুরারোগ্য কঠিন ব্যাধির চিকিৎসা করে অতি দ্রুত নিরাময় করা হচ্ছে অনেক সহজে। শিল্পাঞ্চলে উৎপাদনের প্রধান চালিকাশক্তি হলো প্রযুক্তি। গ্রামাঞ্চলে কুটিরশিল্পেও রয়েছে প্রযুক্তির ছোঁয়া।

বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি মোবাইলের সাহায্যে পথ চলতে চলতেও প্রয়োজনীয় অনেক কাজ করে ফেলা সম্ভব হচ্ছে খুব সহজেই। প্রচন্ড গরমেও এসি ঘরে বসে আবার শীতের মধ্যেও ঘরে হিটার চালিয়ে অনেক কঠিন কাজ করে ফেলা যাচ্ছে। সত্যিকার অর্থে মূল বিষয় হলো প্রযুক্তি আমাদের জীবনে যেমন আরাম এনে দিয়েছে তেমনি জীবনের চলার পথকেও করেছে অনেক সহজ ও গতিময়। এদিকে প্রযুক্তি ব্যবহারে অসুখী বা অসহিষ্ণুতা নিজেদের অজ্ঞতা থেকেই জন্ম নেয়। যদি এগুলো বাদ দেয়া যায় তবে বিজ্ঞানের এই আধুনিক প্রযুক্তিগুলো হবে আমাদের পরম বন্ধু। প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে মানব সভ্যতা হয়ে পড়বে অচল। ভবিষ্যতেও এই প্রযুক্তি বিজ্ঞানকে আরও বেশি করে কাজে লাগিয়ে তার সুফল প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এভাবেই একটি দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠতে সক্ষম হবে। যেহেতু বর্তমান জগতের মানুষ প্রযুক্তি নির্ভর তাই বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে করতে মানুষজন নিজেরাও যান্ত্রিক হয়ে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে দিন দিন নিজেদের স্বাভাবিকত্ব হারিয়ে ফেলছে।

বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি মানুষের জীবনে যেমন আয়াস ও বিলাসিতা এনে দিয়েছে তেমনি অন্যদিকে চাহিদাও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রযুক্তির আবিষ্কার আমাদের রোজকার জীবনযাত্রায় এনেছে অভূতপূর্ব সাফল্য। এমন কোনো কল্পনার জিনিস নেই যেখনে প্রযুক্তির ছোঁয়া স্পর্শ করেনি। আজকের মানব সভ্যতার এরূপ অত্যাধুনিকতার মূলে রয়েছে তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং এর ব্যপক বিস্তৃতি। যার ফলে আজকের পৃথিবী এত ছোট হয়ে গিয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির ফলে আজকের আধুনিক সভ্যতার এত দ্রুত পরিবর্তন ও মানসিক রুচির বিবর্তন ঘটছে। বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত প্রযুক্তি কখনই অমানবিক ও অনৈতিক কোন কিছুকেই সমর্থন করেনা। কিন্তু কিছু বিপথগামী মানুষ বিজ্ঞানের অপব্যবহার করে। এসব বিপথগামী মানুষদের এই সাধারণ বোধটুকু নেই যে আজকের দিনের কর্মফল আগামীকাল তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। এর ফলে কোনো না কোনো ভাবে তার নিজেরি ক্ষতি হবে। এর সাথে সাথে গোটা সভ্যতারই অধঃপতন ঘটবে। ফলশ্রুতিতে সর্বশেষ মানুষ তার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব হারাবে।

লেখক: নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এএসজি

প্রযুক্তি মুক্তমত মো. জাহিদুল ইসলাম সভ্যতা

বিজ্ঞাপন

৭ বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাৎ
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর