Sunday 12 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিপিএল থেকে খেলোয়াড় তৈরী করতে পারবে বিসিবি?

রায়হান উদ্দিন
১২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:২৫

বাংলাদেশ দল যখন হারে তখন আমরা ক্রিকেট ভক্তরা আজেবাজে অনেক কথা বলে থাকি। জীবনে খেলা দেখব না কত ভক্ত না বলে। সেই আমরা পরের ম্যাচে আবার টিভির সামনে গিয়ে বসে থাকি খেলা দেখার জন্য। কেউ কেউ মোনাজাত, দোয়া করতে করতে শেষ হয়ে যায় যাতে ম্যাচটি জিতে যায়। বাংলাদেশ দল যখন জয়ী হয় কতই না আমরা গর্ব করি। এই দল নিয়ে আত্মবিশ্বাসের শেষ থাকে না। কারণ হলো বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট অনেকটা ভালোবাসে। এদিক ঐদিক হলেই ক্রিকেটপ্রেমিরা মেনে নিতে পারেনা। কিন্তু যারা বাংলাদেশ দলকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, চেয়ারে বসে আছে তারা কি বাংলাদেশ দল নিয়ে ভাবে! চিন্তা করে কি কিভাবে এই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আদৌ কি কাজের মধ্যে তা প্রতিফলন করে! বাংলাদেশ দলে ভালো মানের খেলোয়াড় নিয়ে আসার জন্য পাইপলাইপ তৈরি করা উচিত। বিসিবি কি সেদিকে নজর দেয়। নাকি কোনমতে দেশের সরল মানুষ গুলোকে কোনোমতে বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করে।

বিজ্ঞাপন

এই যে ধরেন ক্রিকেটের তিন সংস্করণের মধ্যে টি-টুয়েন্টির জয়প্রিয়তা দুনিয়া জুড়ে। সবার পরে মাঠে এসে টেস্ট ও ওয়ানডের চেয়ে তরতর করে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে নিল টি-টুয়েন্টি। চার ছক্কায় মেতে উঠে ২০ ওভারের খেলা। টেস্ট ও ওয়ানডের চেয়ে টি-টুয়েন্টিতে ক্রিকেট ভক্তদের উদ্দীপনা বেশি থাকে। টি-টুয়েন্টি পাল্টে দিয়েছে ক্রিকেট খেলার দর্শন। টি-টোয়েন্টি খেলার মধ্যে দর্শকের উপস্থিতি থাকে দেখার মতো। হই হুল্লোড়ে মেতে উঠে ক্রিকেট ভক্তরা। তাই দেশে দেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ শুরু করছে প্রত্যেক বোর্ডে। ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ ও টুর্ণামেন্টের আলাদা কদর ও ভালোবাসা রয়েছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ করার মাধ্যমেই অনেক খেলোয়াড় তৈরী হয়। ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ খেলোয়াড় তৈরীর পাইপলাইন বলা যায়। এই টুর্ণামেন্টের করার মধ্য দিয়ে বোর্ড ভালো অর্থ পায়। এই সংস্করণ প্রত্যেকটি দেশের বোর্ড এবং খেলোয়াড়দের মানোন্নয়ন এবং অগ্রগতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে। আমরা যদি পাশের দেশেই দেখী আইপিএল কি রকম জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ভারত ক্রিকেট বোর্ড আইপিএল-কে এমনভাবে আয়োজন করছে যাতে কোন ঘাটতি রাখছে না। আইপিএল থেকেই ভালো মানের খেলোয়াড় তৈরী হচ্ছে। ক্রিকেটকে নতুন ভাবে চাঙ্গা করার পাশাপাশি ধারাবাহিক ভাবে খেলোয়াড় তৈরীতে ভূমিকা রাখছে। আইপিএল-কে টাকার খেলাও বলা যায়। আইপিএল থেকে অনেক ইনকাম করছে ভারত ক্রিকেট বোর্ড। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজসহ প্রত্যেক দেশে এমন আয়োজন করছে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা অনেক সুন্দর ফ্রাঞ্চাইজি লীগ আয়োজন করছে যেখানে বিদেশি নামকরা খেলোয়াড়দের নিয়ে যায়। কিন্তু উল্টো পিঠ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। বিপিএল-কে যেন বিনোদন টুর্ণামেন্ট করে ফেলছে বিসিবি।

বিজ্ঞাপন

বিপিএলের ১১তম আসর শুরু হলো ৩০ ডিসেম্বর থেকে। ঢাকায় খেলা শুরু হয়ে এখন চলছে সিলেট স্টেডিয়ামে। এবারের বিপিএলে ৭টি দল অংশগ্রহণ করছে। বিপিএলের খেলাগুলো চলবে ৩টি ভেন্যুর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট স্টেডিয়ামে। বিপিএল শুরুর আগেই তিন জায়গায় কনসার্ট করেছে বিসিবি। উপমহাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয়, পাকিস্তানের সংগীতশিল্পী রাহাত ফতেহ আলীকে নিয়ে আসছেন। ঢাকা ছাড়া সিলেট ও চট্টগ্রামেও কনসার্ট হয়েছে। জেমসসহ আরো দেশি গায়করা কনসার্ট মাতিয়েছেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগে এমন আয়োজন বাড়তি উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এবং তরুণ সমাজকে আনন্দ দেয়। কিন্তু যেমন কনসার্ট আয়োজন করা হয়েছে তেমনভাবে আরো সুন্দরভাবে বিপিএলকে সাজানো উচিত ছিল। দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল বলেন- এবারের বিপিএলে কনসার্ট হওয়া ছাড়া কিছুই দেখছি না। ক্রিকেট ভক্তরাও তামিম ইকবালের কথার সাথে একমত। বিসিবি সেখানে বাহবা পেতে পারে কিছুই করতে না পারলে বিপিএল উপলক্ষে কনসার্ট হলেও আয়োজন করেছে। একজন ভক্ত বলল কয়েকটা দলে ৪ জন বিদেশি খেলোয়াড় খেলানোর জন্য খুঁজে পাচ্ছে না। কোন ভালো মানের বিদেশি খেলোয়াড় পর্যন্ত আনতে পারলনা। দেশি কয়েকজন ছাড়া বাকিদের অবস্থা হয়েছে বিদেশি খেলোয়াড় যাদের আনছে তাদের মতো। আরেকজন ভক্ত বলল- বিদেশি খেলোয়াড় এগুলোকে হয়তো তাদের দেশেও চিনেনা মনে হয়। টি-টুয়েন্টি তারুণ্যের উৎসব বলা যায়। এই ক্রিকেটে তারুণ্য তার নিজের শক্তিতে জ্বলে উঠে। কিন্তু প্রতিবারই তরুণদের হতাশ করে বিসিবি। যেভাবে বলে কোন কিছুই করা হয় না বিপিএলে। কেন বিপিএল করে নাম নিচ্ছে বিসিবি। যদি বিপিএল থেকে খেলোয়াড় তৈরীর ইচ্ছায় না থাকে তাহলে তো এভাবে আয়োজন করত না। সরলমনা মানুষদের বুঝ দেয়ায় তাদের কাজ। প্রতিবারই সেইম অবস্থা। এবার তো আরো অবস্থা খারাপ আগের চেয়ে। চোখে পড়ছে না কোন ভালো মানের খেলোয়াড় জেসন রয়, শাহিন আফ্রিদি, হেলস ছাড়া। কেন আসতে চায় না বিপিএল খেলতে বিদেশি খেলোয়াড়রা। বিসিবি কেন উদ্যোগ নেয়না বিদেশি ভালো মানের খেলোয়াড় যাতে আসে। বিপিএল দলগুলোর মধ্যে মূল অভিযোগের জায়গা হলো ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো ঠিকমতো টাকা দেয়না। নিশ্চয়তা দেয়না বিসিবি ও খেলোয়াড়দের। এবারো তার পুনরাবৃত্তি। এক টাকাও না পেয়ে মাঠে নামল খেলোয়াড়রা। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী টুর্ণামেন্ট শুরু হওয়ার আগেই পাওনা টাকার ৫০ শতাংশ দিয়ে দেওয়ার কথা ফ্র্যাঞ্চাইজিদের। এই নিয়ম কোন দল কি মানে! তাহলে বিদেশি ভালো মানের খেলোয়াড়রা কেমনে আসবে খেলতে। নামকরা কোন খেলোয়াড় বাংলাদেশে খেলতে আসতে চায়না। তার কারণ বিসিবিকে খুঁজে বের করতে হবে এবং সমস্যা গুলোর সমাধান করতে হবে।

এবারের বিপিএলে প্রত্যেক খেলায় রান ১৯০-২০০ চলে যাচ্ছে। বোলাররা তুলোধুনো হচ্ছে। রান পাচ্ছে ব্যাটাররা। মূলত হলো লাগলেই নাকি ছক্কা, ফোর। দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল বলেন- ‘বোলারদের কথা চিন্তা করে বাউন্ডারি লাইনের দৈর্ঘ্য বাড়ানো উচিত’। বোলারদের উপর বড় চাপ তৈরী হচ্ছে। এত কাছে বাউন্ডারি দিয়ে লাভটা কি হবে, খেলার কি মানোন্নয়ন হবে! ব্যাটে কোনমতে লাগলেই হলো। টিকে থাকলে তো আর কথায় নাই। এই ছোট মাঠে ২০০ করাও সহজ হয়ে গেছে। আন্তজার্তিক ক্রিকেটে বাউন্ডারি ৬৫-৭০ মিটার হয়ে থাকে। কিন্তু বিপিএলের মাঠে কিছু বাউন্ডারি ৫৮-৬০ মিটার। সিলেটের মাঠে ৫২ মিটারে যাওয়া বল পড়ছে সীমানা ছাড়িয়ে। মিরপুরের মাঠে দেখা গেছে ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের স্কয়ার লেগের দিকে বাউন্ডারি মাত্র ৫৮ মিটার, ফাইন লেগে তা আরো কমিয়ে ৫৬ মিটার, ঠিক একইভাবে থ্যাডম্যানের দিকে ৫৬ মিটার। কাভারে রাখা হয়েছে ৬০ মিটার, লং অন ও লং অফে ৬৮ আর সোজা বাউন্ডারি রাখা হয়েছে ৭১ মিটার। যা দেখতে বিস্ময়কর রকম ছোট বাউন্ডারি। দৃষ্টিকটুও লাগছে সবার মাঝে। ছোট বাউন্ডারির কারণে বোলারদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং। এটা ঠিক উইকেট অনেক ভালো। কিউরেটরদের তার জন্য অনেক কৃতিত্ব দিতে হবে। পরিবর্তন হয়েছে ক্রিকেট বোর্ডে। বিপিএলের শুরুতেই দেখা দিয়েছিল টিকেট বিলম্বনা। বিপিএলে আগ্রহ থাকেনা স্পন্সরদের। অথচ নামি দামি অনেক কোম্পানি রয়েছে এ দেশে। বিপিএলে স্পন্সর নিয়ে তারা কেউ প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে দেখে না, তাই ইচ্ছুক থাকে না বিপিএলে স্পন্সর নিতে। বাংলাদেশে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা যেভাবে দল গঠন করে নামায়, অন্য কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগে এমনভাবে হয়না। বাংলাদেশের ফ্রাঞ্চাইজি ব্যক্তিগত পরিচিতির লাভের কারণে এমন করে। বারবার ফ্র্যাঞ্চাইজি বদল হচ্ছে বিভিন্ন কারণে। তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো আর্থিক ক্ষেত্রে টানাপোড়েন। বিপিএলের ১০-১২ বছরের ইতিহাসে কোন সাফল্য নেই বললেই চলে। নিয়মিত পরিবর্তন, অনিশ্চিত নীতিমালা, পিচ এবং কন্ডিশন নিয়ে বিতর্ক যেন কাটছেই না। বিসিবি কখন পারবে বিপিএলের নানা সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করতে ক্রিকেট ভক্তদের সেটাই দেখার অপেক্ষায় থাকে সারাবছর। বিপিএলের জন্য ভেন্যু বাড়ানো উচিত। বিদেশি ভালো মানের খেলোয়াড় আনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। খেলোয়াড়রা তাদের মজুরি সময়মতো যাতে পায় সে ব্যবস্থা করা জরুরি।

বিপিএলকে হেলা না করে বিপিএল কে কিভাবে সাজানো যায়, এগিয়ে নেওয়া যায়, কিভাবে উন্নতি করা যায় সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি বিসিবির। ক্রিকেট ভক্তরা চায় ক্রিকেটের পরিবর্তন। নতুনত্ব আসুক সব জায়গায়। ক্রিকেটের খেলোয়াড়দের পাইপলাইন মজবুত করুক। বিপিএল দিন দিন ক্রিকেট ভক্তদের হতাশ করতেছে তা পরিবর্তন ঘটিয়ে নিয়ে আসুক নতুনত্ব। বাংলাদেশের মানুষেরা চায় সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে তৈরী করা হউক বিপিএলকে। দেশের স্বার্থে, ক্রিকেটের স্বার্থে সবাইকে এক হতে হবে। সবার স্বপ্নকে বাস্তবে রুপদানের চেষ্টা করতে হবে। বিপিএল হোক অর্থবহ। সবাই দেখতে চায় দেশের ক্রিকেটের পরিবর্তন। অতীত নিয়ে পড়ে না থেকে কিভাবে দেশের ক্রিকেট কে বিপিএলকে কিভাবে নতুন আঙ্গিকে রুপদান দেওয়া যায় সেই দিকে দৃষ্টি দিতে হবে বিসিবিকে। এখন কাজ করা হউক সমস্যা সমাধান ও সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য।

লেখক: শিক্ষার্থী; চট্টগ্রাম কলেজ, সভাপতি; বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা

সারাবাংলা/এএসজি

বিপিএল বিসিবি মুক্তমত রায়হান উদ্দিন

বিজ্ঞাপন

বিয়ে করেছেন সংগীতশিল্পী পড়শী
১২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর