রিওভাইরাস: আতঙ্ক নয় প্রয়োজন সচেতনতা
২২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:১৮ | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:০৯
বর্তমান সময়ে যেসকল রোগ গুলো মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে রিওভাইরাস, Reovirus বা Reoviridae পরিবারে অন্তর্গত এক ধরনের ভাইরাস। এই ভাইরাসটি সাধারণত সর্দি, ফ্লু বা হালকা জ্বরের মতো রোগ সৃষ্টি করে। রিওভাইরাস সংক্রমণ সাধারণত গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল, শ্বাসনালী এবং ত্বকের মাধ্যমে হতে পারে। তবে এটি ভাইরাল রোগগুলির মধ্যে একাধিক রকমের উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। রিওভাইরাস মূলত বিভিন্ন প্রজাতির ভাইরাসের একটি পরিবার, যার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিতটি হচ্ছে Orthoreovirus। এই ভাইরাসগুলি মূলত মানুষ, প্রাণী ও পাখির শরীরে বাস করতে পারে। রিওভাইরাসের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি RNA ভাইরাস। এই ভাইরাস গুলি পরিবেশে স্থিতিশীল এবং সহজে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষত শ্বাসনালী বা গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল মাধ্যমে।
রিওভাইরাস মূলত নিপাহ ভাইরাসের মধ্যে থাকা একটি ভাইরাস। একটি গবেষণায় দেখা যায়, খেজুরের কাঁচা রস খেয়ে প্রতি বছর অনেকে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে। সেরকম লক্ষণ দেখে কয়েকজনের নমুনা পরীক্ষা করার পর তাদের নমুনায় রিওভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। অর্থাৎ আমরা বুঝতে পেরেছি যে রিওভাইরাসের সাথে নিপাহ ভাইরাসের মিল রয়েছে যেটির প্রদান বাহক এই শীতের মৌসুমের খেজুরের রস। মূলত খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য যেভাবে গাছ কাটা হয় সেখানে বাদুড় সহ বিভিন্ন পাখির লালায় এই রিওভাইরাসের অস্তিত্ব শুরু হয়। আর এসব রস আমরা যখন সঠিকভাবে প্রক্রিয়াকরণ না করে পান করি তখনই আমাদের রিওভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে কয়েকজনের শরীরে রিওভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে যাদের মধ্যে অনেকেই প্রক্রিয়াকরণ ছাড়াই খেজুর রস পান করেছেন। তবে পৃথিবীতে কবে থেকে এই ভাইরাসটির বিচরণ সেটা সঠিক ভাবে বলা না গেলেও এটি সর্বপ্রথম ধরা পড়ে ১৯৫০ সালে ।
তবুও রিওভাইরাসের কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখে আমরা এটিকে নির্ণয় করতে পারবো। এই সংক্রমণের লক্ষণগুলি সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের হয়ে থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যাও হতে পারে। প্রথমত, সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জ্বর, যেটি সাধারণত ১০০-১০১°F (৩৭.৮-৩৮.৩°C) এর মধ্যে হতে পারে। দ্বিতীয়ত, রোগীর শরীরব্যথা, সর্দি-কাশি ও শ্বাসনালী সংক্রমণের কারণে কাশি এবং নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও পেটের সমস্যা, ডায়রিয়া, বমি, পেটব্যথা, মাথাব্যথা, মাইগ্রেন বা সাধারণ মাথাব্যথা মতো সমস্যাগুলোও দেখা দিতে পারে।
আসুন, এবার জেনে নেই রিওভাইরাস এর প্রতিকারে আমাদের কী করণীয় সে বিষয়ে। রিওভাইরাস সংক্রমণের জন্য কোন নির্দিষ্ট এন্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই, তবে লক্ষণগুলি উপশম করতে কিছু সাধারণ উপায় অবলম্বন করা যায়। প্রথমত, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া যাতে শরীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারে। দ্বিতীয়ত, ডিহাইড্রেশন এড়াতে প্রচুর পানি, স্যালাইন সলিউশন বা ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় পান করা উচিত। তৃতীয়ত, জ্বর ও ব্যথার মতো পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনের মতো ওষুধের সেবনের মাধ্যমে শরীরব্যথা কমানো যেতে পারে। তাছাড়াও শুকনো ঠান্ডা তাপমাত্রায় থাকার পরিবর্তে উষ্ণ পরিবেশে থাকলে শ্বাসনালীতে আরাম লাগতে পারে।
এবার আমরা রিওভাইরাস এর প্রতিরোধ সমন্ধে বিস্তারিত জানবো। এটির সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য আমরা কিছু সহজ সাবধানতা অবলম্বন করতে পারি। প্রথমত, নিয়মিত ভালভাবে হাত ধোয়া এবং স্বাস্থ্যকর হাইজিন পালন করা। দ্বিতীয়ত, নাক, মুখ বা চোখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকা। কারণ এগুলোর সাহায্যে এই ভাইরাস পুরো শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তৃতীয়ত, যাদের অধিকাংশ সময় ঠান্ডা, সর্দি বা ফ্লু এর মতো সমস্যা থাকে তাদের জনসম্মুখে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। তাই রিওভাইরাসের সমন্ধে আমাদের সকলের অবগতির মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সর্বোপরি বলা যায়, রিওভাইরাস মানুষের জন্য তীব্রভাবে বিপজ্জনক নয়, তবে এটি সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তাই সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। আমরা সচেতন থাকলেই এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।
লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম
সারাবাংলা/এএসজি