Thursday 25 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিশু নির্যাতন রোধে প্রয়োজন সম্মিলিত চেষ্টা

মো. রাকিব
২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:২৮

শিশু যৌন নির্যাতন এমন একটি অপরাধ যা শিশুদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক জীবনে ভয়ংকরভাবে বাধা সৃষ্টি করে। এটি কোমলমতি শিশুদের বিরুদ্ধে করা একটি জঘন্য অপরাধ এবং এর ফলাফল তরতাজা শিশুদের দীর্ঘমেয়াদে ভোগ করতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সব ধরনের শারীরিক, মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, অবহেলা বা এই ধরনের কোন কাজ অথবা বাণিজ্যিক বা অন্য কোনভাবে শিশুদের শোষণ করা ইত্যাদি যার ফলে কোন শিশুর শারীরিক ক্ষতি, জীবনের হুমকি, বেড়ে উঠা, মর্যাদা, দায়িত্ববোধ, বিশ্বাস বা ক্ষমতা ইত্যাদির ক্ষতি হয় বা ক্ষতির কোন আশঙ্কা থাকে তাকে শিশু নির্যাতন বলে। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি দ্বারা একজন শিশুর প্রতি যৌন আচরণ, কুৎসিত কার্যকলাপ করা বা এই জাতীয় কোনো অপরাধ করাকে আমরা শিশু নির্যাতন বলে বিবেচিত করি। এই শিশু নির্যাতন হতে পারে শারীরিক স্পর্শের মাধ্যমে, মৌখিকভাবে, অথবা এমন কিছু দেখানো বা করা যা শিশুর জন্য অস্বস্তিকর বা ক্ষতিকর।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে শিশু নির্যাতন একটি গুরুতর সমস্যা। আর সমস্যায় হারিয়ে যাচ্ছে কতো- কতো তাজা প্রাণ। তবে কিছু তাজা প্রাণ শিশু নির্যাতনের শিকার হয়ে বেঁচে থাকলেও আজীবন হীনমন্যতায় ভুগতে থাকে, ফলাফল স্বরূপ তার জীবন হয়ে উঠে বিভীষিকাময়। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে গড়ে প্রতি ১০ জন শিশুর ৯ জনই কোনো না কোনোভাবে শিশু নির্যাতনের শিকার হন। আরো একটি প্রতিবেদনের মতে, দেশের ৯৫.৮ শতাংশ শিশু ঘরে এবং বাহিরে শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, সে বছরে সরকারি হটলাইন নাম্বার ১০১ এ প্রায় ৬০ লক্ষ শিশু নির্যাতনের শিকার হওয়ার কল গ্রহণ করা হয়েছিল। তাহলে একবার চিন্তা করুন শিশু নির্যাতন আমাদের দেশে কতোটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। তবে এই নির্যাতনের হার ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি। প্রতিবেদন বলছে, দেশের কন্যা শিশুরা ঘরের পাশাপাশি বাহিরেও নির্যাতনের শিকার হন। দুঃখের বিষয় এই কন্যা শিশুরা বাহিরের চেয়ে ঘরেই সবচেয়ে বেশি শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হন। ঘরে মেয়ে শিশুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন পারিবারিক নিকট আত্মীয় স্বজন এবং প্রতিবেশীদের দ্বারা। তাছাড়াও এমন অনেক নজির ইতিমধ্যে দেখা গেছে যেখানে নিজের পরিবারের কোনো সদস্যদের দ্বারা কোনো শিশু নির্যাতিত হয়েছে। তবে, পরিবার, নিকটাত্মীয় এবং প্রতিবেশী ছাড়াও শিশুরা স্কুল এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও নির্যাতনের শিকার হন।

এবার আমরা যদি একটু শিশু নির্যাতনে বিশ্বের পরিস্থিতির দিকে তাকাই সেখানেও ভয়ংকর তথ্য দেখতে পাবো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর বিশ্বে অন্তত ১০০ কোটি শিশু বিভিন্ন ভাবে নির্যাতনের শিকার হন। চিন্তার বিষয় কী জানেন? নির্যাতনের শিকার শিশুদের সংখ্যাটা বিশ্বের মোট শিশু জনসংখ্যার অর্ধেকরও বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বের মোট শিশু জনসংখ্যার অর্ধেকরও বেশি শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি অবহেলার শিকার। তাই আমাদের শিশু নির্যাতনের ধরন, প্রতিরোধ এবং প্রতিকার সমন্ধে জানার বিকল্প নেই। চলুন এবার আমরা শিশু নির্যাতনের ধরন সমন্ধে অবগত হই। প্রথমত, শিশুকে শারীরিকভাবে স্পর্শ করা, শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা বা শিশুকে অশালীনভাবে তাদের শরীরের বিশেষ অংশে হাত দেওয়া। দ্বিতীয়ত, শিশুর সাথে অশ্লীল ভাষায় কথা বলা, অশালীন প্রস্তাব দেওয়া বা যৌন বিষয়ে কথা বলে শিশুকে অস্বস্তিতে ফেলা। তৃতীয়ত, শিশুদের সামনে অশালীন কিছু উপস্থাপন করা, শিশুদের পর্নোগ্রাফি দেখানো, পর্নোগ্রাফির কাজে জড়িত করা বা শিশুদের ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করে হয়রানি করা। তাছাড়া মানসিকভাবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নির্যাতন, হুমকি দেওয়া, হেয়প্রতিপন্ন করে কথা বলা, তাদের ছোট করার মতো বিষয় গুলোও শিশু নির্যাতনের অন্তর্ভূক্ত।

এবার আমাদের জানা উচিত শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার একজন শিশু কিভাবে নিজের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় সে বিষয়ে অবগত হওয়া। এরকম নির্যাতনে শিকার একজন শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক গঠন বিলম্বিত হয়ে যায় এতে করে ভবিষ্যত জীবনে তাকে মোকাবেলা করতে হয় নানান জটিলতা। তাছাড়া যৌন রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, বিষন্নতা এবং ভয়, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ, পরিবার ও সমাজ থেকে তাদের আস্থা হারিয়ে ফেলার মতো বিষয় গুলো তো আছেই। শিশুদের সুস্থ ও সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠার জন্য আমাদের সমাজ, দেশ ও সাধারণ মানুষের সচেতনতার বিকল্প নেই। তাছাড়া আমাদের ছোট্ট শিশুদেরও এসকল নির্যাতনের বিষয়ে সচেতন করতে হবে। তাদের জানাতে হবে ভালো ও খারাপ স্পর্শের পার্থক্য, কোন আচরণ সঠিক, কোনটি ভুল, কোন পরিস্থিতিতে কী করনীয় ইত্যাদি বিষয়। তাদের সাথে এসব নির্যাতনের বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে, তাদের সাথে মিশতে হবে যাতে তারা নির্ভয়ে আমাদের সবকিছু বলতে পারে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এসব নির্যাতনের বিষয় গুলো অন্তর্ভূক্ত করতে হবে এবং শিশুদের এসব বিষয়ে সচেতন করতে হবে।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশে শিশু নির্যাতন দমনে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, যেখানে শিশু নির্যাতনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে। আরেকটি হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ যেখানে শিশুদের হয়রানি বা দৃষ্টিকটু কিছু দেখালে শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাছাড়া সারা বিশ্বেও এই শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদে বিভিন্ন চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ ১৯৮৯ সালে গৃহীত হয়েছে যেটি শিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক নথি। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা , ইউনিসেফ এবং বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় INSPIRE নামে একটি বৈশ্বিক কৌশল চালু করেছে যা শিশুদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে। সর্বোপরি বলা যায় আমাদের সকলের একনিষ্ঠ চেষ্টা আর সচেতনতায় পারে শিশু নির্যাতন দমন করতে এবং তাদের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম

সারাবাংলা/এএসজি
বিজ্ঞাপন

১৭ বছর পর ঢাকায় তারেক রহমান
২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৪৭

আরো