খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:৩৯
অনেকগুলো কারণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচনা করা যাবে। মোটাদাগে সেশনজট ও রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস, একাডেমিক ও ল্যাব সুবিধা, সবুজায়ন ও পরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়ন, সুষ্ঠু ধারার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা এবং সফল এ্যালামনায়ের কথা আসলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবে। এসব নানাবিধ কারণে বিশ্ব র্যাংকিং এ স্থান করে নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এগুলো ছাড়াও বর্তমান প্রশাসনের নেওয়া কিছু উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো গতিশীল ও মর্যাদার আসতে নিতে সহায়তা করবে। এর মধ্যে রয়েছে, প্রতিটি ডিসিপ্লিন থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ৫ জন শিক্ষার্থীকে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও সম্মানী প্রদান করা। যেখানে মূল লক্ষ্য হচ্ছে পৃথিবীর উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষার্থী ও শিক্ষা কার্যক্রমের মানোন্নয়নের মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। এর মাধ্যমে শিক্ষা ও গবেষণার কাজ ত্বরান্বিত হবে এবং শিক্ষার্থীদের নতুন একটি অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে যা তাদের একাডেমিক, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ ও উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। এছাড়াও এডজাংক্ট ফ্যাকাল্টি রিক্রুটমেন্ট পলিসি অনুমোদন ও ফ্যাকাল্টির ব্যপ্তি, আন্ডারগ্রাজুয়েট থিসিস সাপোর্ট পলিসি, ডিসিমিনেশন এন্ড ট্রান্সফার অব রিসার্চ ফাইন্ডিং পলিসি, ডিনস্ অ্যাওয়ার্ড পলিসি, বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বৃদ্ধি, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে কোডিং ব্যবস্থা, বিভিন্ন বর্ষের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনাসহ নানা বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে বলা যায়, আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে এ ধরনের কার্যক্রম ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে।
এখন এই উদ্যোগগুলো যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীরা দেশ বিদেশের সুনামধন্য শিক্ষক- গবেষকদের সান্নিধ্যে পাবেন যা তাদের নতুন কিছু সৃষ্টি করার ইচ্ছা শক্তি বহুগুণ বাড়িয়ে দিবে। এর মাধ্যমে গবেষক ও দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হবেন তারা। আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ নতুন নতুন জ্ঞান সৃজন, বিতরণ ও পাঠদান। আশার কথা হচ্ছে, বর্তমান প্রশাসন সঠিক ভাবে কাজগুলো করতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এসব কাজের পাশাপাশি বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের মানুষের জীবন মানের পরিবর্তন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পথ-প্রদর্শক হিসেবে খুবি’কে কাজ করতে হবে।
খুলনা একসময় শিল্প নগরী হিসেবে দেশ বিদেশে পরিচিত ছিল। কিন্তু কালক্রমে এই জৌলুশ হারিয়ে গেছে। এখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কাজ হবে নিজেদের একটি গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাতারে স্থান করে নেওয়া। এরই সাথে বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের উন্নয়নে নিজেদের সদিচ্ছার বহি:প্রকাশ ঘটিয়ে তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে। এ অঞ্চলের ছোট বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বানিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সরকার পরিচালনা, চিকিৎসা বিজ্ঞান, কৃষি ও মৎস্য, ব্লু ইকোনমি এবং পর্যেটন শিল্প বিকাশে কার্যকারী ভূমিকা রাখতে হবে। যার মাধ্যমে দেশ ও মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন করা সম্ভব। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান কাজ গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান তৈরি করা ফলে এসকল বিষয়ে গবেষণার মাধ্যমে নতুন কিছু সৃষ্টি করা সম্ভব। গবেষণার কাজটা সুচারু ভাবে পরিচালনা করতে একটি এ্যাডভান্স রিসার্চ ইনস্টিটিউট চালু করতে হবে। যেখানে দেশ বিদেশের সুনামধন্য গবেষকরা ফ্যাকাল্টি হিসেবে নিয়োগ পাবেন। যারা খুলনা তথা সামগ্রিক দেশের পরিবেশগ উন্নয়নে ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কি ধরনের সমস্যা হতে পারে এবং সম্ভাব্য মুক্তির পথ নিয়ে কাজ করবেন। কারণ বর্তমান বিশ্বে সব থেকে আলোচনার বিষয় হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। এবং খুলনা অবস্থানগত কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে এটি কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে ফুড সিকিউরিটি নিশ্চিত করা, পরিবেশের ক্ষতি না করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সুন্দরবন ও ঐতিহাসিক স্থান ঘিরে পর্যেটন শিল্পের বিকাশ, নতুন ও পুরাতন কলকারখানা চালু করে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে কর্মের ব্যবস্থা করতে খুবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। এছাড়াও বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে নতুন নতুন বিভাগ ও ইনস্টিটিউট চালু করতে হবে। প্রতিটি বিভাগে গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণ করে দিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতা। এরই সাথে তথ্য-প্রযুক্তির জ্ঞান সময়োপযোগী করা, সরকার ও বর্হিবিশ্বের সাথে কোলাবোরেশন এবং গবেষণাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির মাধ্যমে আরো এক ধাপ সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যাবে। সেই প্রাণশক্তি বর্তমান প্রশাসনের দুই কান্ডারী ভিসি প্রফেসর ড. রেজাউল করিম ও প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মো. হারুনর রশিদ খানের মধ্যে রয়েছে। কারণ ইতোমধ্যে তাঁরা ৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের ফলে নানাবিধ সমস্যা মোকাবিলা করে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও গবেষণার কাজে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। এবং শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের মতো জটিল সমস্যা সমাধানের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন।
এছাড়াও ক্রিড়া ও সংস্কৃতি চর্চার কার্যক্রম জোরদার এবং শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। এ্যালামনাই ও সরকারের সহায়তায় প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মাসিক বৃত্তি প্রদান ও স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে। পাঠদানের সাথে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ক্যারিয়ার উন্নয়ন, বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ ও উদ্যোক্তা তৈরি করতে সবধরনের উদ্যোগ নিতে হবে।
তবে এসব কিছু করতে সবার আগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে রিসার্চ ফোকাসড বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এখানকার শিক্ষক শিক্ষার্থী তথা সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতা ও সঠিক পরিকল্পনা উদ্যোগ গুলো বাস্তবায়নে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে।
লেখক: প্রাক্তন শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এএসজি