Wednesday 12 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গণতন্ত্রের উল্লাস নাকি নাগরিকের সর্বনাশ?

মীর আব্দুল আলীম
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:৫০

ঢাকার রাজপথে হাঁটছেন? সাবধান! যেকোনো মুহূর্তে নিজেকে এমন এক গণজমায়েতের মাঝে আবিষ্কার করতে পারেন, যেখানে না আছে দাঁড়ানোর জায়গা, না আছে নিরাপদে ফিরে যাওয়ার সুযোগ। এই শহরে গণজমায়েতের পরিস্থিতি এমন যে, একদিকে বিক্ষোভ মিছিল, অন্যদিকে যানজট, আর মাঝখানে অসহায় পথচারী! অনেকটা যেন দুই পক্ষের রাজনৈতিক লাঠির আঘাতের মাঝখানে পড়ে থাকা জনগণের মাথায় কোন দিক থেকে কী আসবে বলা মুশকিল!

আঘাতে রক্তাক্ত না হলেও গণজমায়েতের মাঝে পড়লে আপনি তিনটি জিনিস নিশ্চিতভাবে পাবেন- ১. রাজনৈতিক নেতাদের গগনবিদারী বক্তৃতা। ২. পুলিশের বাঁশির করুণ সুর। ৩. সাধারণ মানুষের দীর্ঘশ্বাস।

বিজ্ঞাপন

ঢাকার গণজমায়েত এমন এক আয়োজন, যেখানে কেউ স্বেচ্ছায় আসে না, কিন্তু সবাই কোনো না কোনোভাবে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য হয়!

আপনি অফিস থেকে ফিরছেন, হঠাৎ সামনে বিশাল মিছিল। মনে হলো, কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকলেই পথ পরিষ্কার হয়ে যাবে। কিন্তু পাঁচ মিনিটের জায়গায় পঁচিশ মিনিট কেটে গেল, তারপর এক ঘণ্টা। এক সময় বুঝতে পারলেন, আপনি শুধু দাঁড়িয়ে থাকেননি গণজমায়েতের অংশ হয়ে গেছেন!

এখন প্রশ্ন হলো, ঢাকার মানুষ কি প্রতিদিন ইচ্ছা করে এই ভোগান্তির মুখে পড়ে? মোটেই না! কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদরা মনে করেন, ঢাকার রাজপথই তাদের বক্তৃতা দেবার মঞ্চ, আর জনগণই তাদের শ্রোতা। জনগণের ইচ্ছার তোয়াক্কা না করে তারা এমনভাবে রাস্তা দখল করে নেন, যেন এই শহর তাদের পৈতৃক সম্পত্তি!

গণজমায়েত বনাম ঢাকাবাসী: কে বাঁচবে?

রাজনৈতিক সমাবেশ ঢাকার নিত্যদিনের বাস্তবতা। এসব জমায়েতের মূল উদ্দেশ্য যতটা না জনগণের কল্যাণ, তার চেয়ে বেশি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা। ফলে দেখা যায়, একটি পক্ষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাইকের দাপট দেখাচ্ছে, আরেক পক্ষ প্রেস ক্লাবের সামনে স্লোগানের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আর আমাদের অবস্থা? একবার যে রাস্তায় ঢুকেছে, সে না পারছে সামনে যেতে, না পারছে পেছনে ফিরতে—ঠিক যেন ধাঁধার গোলকধাঁধি!

বিজ্ঞাপন

ঢাকার রাজপথ নাকি মানুষের দীর্ঘশ্বাস?

একটা গণজমায়েত শুরু মানেই পুরো ঢাকায় যান চলাচল বন্ধ। শুধু গাড়ির নয়, মানুষের চলাচলও কঠিন হয়ে পড়ে। মনে হয়, ঢাকার রাস্তাগুলো গণজমায়েতের স্বার্থে নির্মিত, যেন জনগণের হাঁটার অধিকার নেই! গণজমায়েত মানেই হর্নের শব্দ, পুলিশের বাঁশির সুর, রাজনৈতিক নেতাদের বক্তৃতার বজ্রধ্বনি, আর সাধারণ মানুষের দীর্ঘশ্বাস।

একবার এক বন্ধুকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বের হয়েছিলাম, সামনে গণজমায়েত। বন্ধুটি জিজ্ঞেস করল,
ভাই, এখন কী করব?

– ধৈর্য ধর, ভাই। এক ঘণ্টার মধ্যে যদি গাড়ির চাকা এক ইঞ্চি নড়ে, তবে আমি গণজমায়েত সমর্থন করব!
এক ঘণ্টা পরও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। বন্ধুটি বলল,
– ভাই, হাঁটলে কি ফার্মগেট পৌঁছানো যাবে?
– হাঁ, তবে আগামী নির্বাচনের আগে না!

বিকল্প কি নেই?

উন্নত বিশ্বে গণজমায়েতের জন্য নির্দিষ্ট স্থান থাকে। লন্ডনের হাইড পার্ক, নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্ক, সিঙ্গাপুরের হং লিম পার্ক—সব জায়গায় নিয়ম মেনে সমাবেশ হয়। অথচ ঢাকায় গণজমায়েত মানেই রাস্তা বন্ধ, অফিস টাইমে কর্মজীবীদের দুঃস্বপ্ন, এবং ফায়ার সার্ভিস বা অ্যাম্বুলেন্সের জন্য এক মহাবিপদ।

তাহলে কি ঢাকায় সমাবেশ নিষিদ্ধ করা উচিত? মোটেই না! গণতন্ত্রে মতপ্রকাশের অধিকার থাকা জরুরি, তবে সেটা ঢাকার প্রাণবিন্দুতে নয়। কেন না সাভার, কেরানীগঞ্জ, রূপগঞ্জ, টঙ্গী বা আমিনবাজারের মতো জায়গাগুলোতে নির্দিষ্ট সমাবেশস্থল তৈরি করা হবে না? তাতে রাজনৈতিক নেতারা আরামে বক্তৃতা দিতে পারবেন, আর ঢাকার মানুষও আরামে শ্বাস নিতে পারবে।

গণজমায়েত বনাম গণতন্ত্র

একবার এক রাজনৈতিক কর্মী আমাকে বলল,
– ভাই, গণজমায়েত করা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার!
আমি বললাম,
– নিশ্চয়ই, তবে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করার অধিকার আপনাদের কে দিল?

গণতন্ত্র মানে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, সেটা আরও কঠিন করা নয়। ঢাকার রাজনীতিবিদরা যদি সত্যিই জনগণের কথা ভাবতেন, তবে তারা এমন গণজমায়েতের নামে জনজীবন অচল করে দিতেন না।

ঢাকাকে বাঁচাতে হলে…

যদি ঢাকাকে বাসযোগ্য রাখতে হয়, তাহলে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে:
১. ঢাকার ভেতরে বড় গণজমায়েত নিষিদ্ধ করতে হবে।
২. বিকল্প জায়গা নির্ধারণ করতে হবে, যেখানে দল বা সংগঠন শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে পারবে।
৩. জরুরি পরিষেবা যেন ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. উন্নত বিশ্বের মতো গণজমায়েতের জন্য নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করতে হবে।

শেষ কথা

গণজমায়েত জনগণের অধিকার, তবে সেটা জনগণের দুর্ভোগের কারণ হওয়া উচিত নয়। উন্নত দেশে নির্দিষ্ট সমাবেশস্থল থাকে, সেখানে সমাবেশ হয়, কিন্তু শহরের কার্যক্রম ব্যাহত হয় না। আমাদেরও সেই পথে হাঁটতে হবে। সরকার যদি এখনই উদ্যোগ নেয়, তাহলে ঢাকার জীবনযাত্রা স্বাভাবিক থাকবে, এবং গণতান্ত্রিক চর্চাও অব্যাহত থাকবে। অন্যথায়, আমরা একদিন দেখব, গণজমায়েতের কারণে ঢাকার রাস্তায় হাঁটার জন্যও অনুমতি লাগবে!

লেখক: সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব-কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ

সারাবাংলা/এএসজি

গণতন্ত্রের উল্লাস নাগরিক মীর আব্দুল আলীম মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

ডিএনসিসির নতুন প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:৪৩

ভাঙা ট্রলিই সচল রেখেছে বেলালের জীবন
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:৪৩

জুটি হলেন সোহেল মণ্ডল ও তানিয়া
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১৮

আরো

সম্পর্কিত খবর