রাজনীতি হোক নাগরিকের পারস্পরিক সম্পর্ক
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:০৬
সহজ কথায় বলতে গেলে রাজনীতি হবে রাষ্ট্র ও তার নাগরিকদের পারস্পরিক সম্পর্ক, দায়িত্ব ও অধিকার – সম্পর্কিত ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু রাজনীতি শব্দটি কারোর কাছে সহজ মনে হলেও বাস্তবতা তা নয়। এর ব্যাপক বিস্তর রয়েছে। তা শুধু বলেই বা লিখেই শেষ হবে তাও নয়। কিন্তু আমরা রাজনীতি শুধু ক্ষমতা জন্যই বুঝে থাকি। বিষয়টিও তা নয়। রাজনীতি মানেই পাওয়ার অব পলিটিক্স নয়। রাজনীতি মানে শুধু মিছিল-মিটিং, শো-ডাউন বা ক্ষমতার লড়াই নয়। আমাদের চোখে রাজনীতি মানে দেশ ও জনগণের সেবা করা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, এবং মানবিক সমাজ গড়ে তোলা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে অপ্রিয় সত্য কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে রাজনীতি এক ধরনের ব্যবসায় পরিণত হয়েছে—যেখানে ক্ষমতা মানে স্বার্থ হাসিলের সুযোগ, আর জনগণের কল্যাণ পেছনে পড়ে থাকে।
একটা সভ্য ও উন্নত দেশ গড়তে হলে আমাদের মানবিক হওয়া উচিত। সত্যিকারের রাজনীতি করতে হলে মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস থাকতে হবে, যাতে দুর্নীতি, স্বৈরশাসন ও ষড়যন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। কারণ সমাজ ধ্বংস হয় অযোগ্যদের কারণে নয়, যোগ্যদের চুপ থাকার কারণেও। আর যোগ্যদের রাজনীতিতে না আসা মানেই অযোগ্যদের জায়গা করে দেওয়া। কেউ রাজনীতিমুক্ত নন। রাজনীতির উদ্দেশ্যই হচ্ছে রাষ্ট্রের কল্যাণ। আর রাষ্ট্রের কল্যাণই জণগণের কল্যাণ। আমরা দেখেছি,রাজনীতিকে অনেকেই একটা পেশা হিসেবে নেন। কিন্তু না। রাজনীতি হবে সেবা। আমরা কী অন্যান্য দেশের মত সভ্য হতে পারি না? আমাদের সমস্যা কোথায়? আমাদের সমস্যা আমাদেরকেই বের করে সমাধান করা উচিত মনে করছি। গেলো জুলাই ২৪শের আন্দোলনই মনে করিয়ে দেয় আমরা কি প্রত্যাশা করছি! ৫ আগস্টের পরেই দেয়ালের লিখনিই তার একটা জ্বলন্ত প্রমাণ। শুধু ১৭ বছরের জঞ্জাল কেনো? ইতিহাসের ৫৩ বছরও তো ভাবা যায় না কী? আমরা মূলত কি প্রত্যাশা করছি? এটাও ভাবার বিষয় নয় কি! নতুন একটি বাংলাদেশ আশা করছি। যেখানে থাকবে সাম্য ও ন্যায়। যেখানে থাকবে বৈষম্যহীন সমাজ। যেখানে মানুষের থাকবে না হতাশা। দিনশেষে রাতে মুক্তচিন্তা নিয়ে ঘুমাতে পারলেই হলো। আর ভোর হলেই দেখবে নতুন বাংলাদেশ। এমনটাই তো প্রত্যাশা আমাদের।
মানুষ সামাজিক জীব। বলতে গেলে সভ্যতার ঊষাকাল থেকেই রাজনীতির সূচনা। আর বর্তমান যুগ তো তথ্য বিপ্লবের যুগ, বিশ্বায়ন বা গ্লোবালাইজেশনের যুগ। আমাদের দেশের মানুষ রাজনৈতিকভাবে এতটাই কৌতূহলী যে, পৃথিবীর আর কোনো দেশের মানুষ রাজনীতি নিয়ে এত বেশি কৌতূহলী কি না, তা বাস্তবিকই বলা মুশকিল। তবুও কোথাও জানি থমকে যায়।
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সংস্কার প্রয়োজন। অতীতে যারা অন্যায় ও অবিচার করেছে, তাদের বিচার যেমন জরুরি, তেমনি বর্তমানে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, জনগণের অধিকার হরণ করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচনব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে হবে।
প্রথমে স্থানীয় নির্বাচন দিয়ে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, তারপর জাতীয় নির্বাচন হতে হবে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য ও অবাধ। তবে নির্বাচনই শেষ সমাধান নয়, সঠিক নেতৃত্ব নিশ্চিত করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনীতি তখনই সফল হবে, যখন নেতৃত্বে থাকবে মানবিক ও সাহসী মানুষ, ধর্মভীরু ও ন্যায়পরায়ণ, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে জানে, জনগণের কথা ভাবে, এবং দেশকে সত্যিকার অর্থে এগিয়ে নিতে চায়। মানবতা, ন্যায়বিচার আর সচেতন নেতৃত্বই পারে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে। আপনি বিশ্বাস করুন আর না করুন— নতুন বাংলাদেশে রাজনীতি এখন ফ্রেশ ইয়াং ব্লাড দরকার। শিক্ষিত এবং প্রজ্ঞাবান লোক দরকার। যারা শুধু বড় বড় বুলি ছাড়বে না। চমৎকার সব ডিসিশনের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে নিয়ে যাবে অন্যন্য এক উচ্চতায়!
নতুন বাংলাদেশে দরকার নতুন ভাবনা। তাই আসুন— নিজেরা বদলাই, দেশকে বদলাই।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইনবিভাগ, বাউবি
সারাবাংলা/এএসজি