সংস্কার কমিশন: স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কতিপয় সুপারিশ
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:৩২
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে অক্টোবরে প্রথম ধাপে রাষ্ট্রের ছয়টি খাত সংস্কারে কমিশন গঠন করে। গত ১১ সেপ্টেম্বর গঠন করা ওই ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষ করেছে সরকার। এরপর দ্বিতীয় ধাপে গত ১৮ নভেম্বর গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারীবিষয়ক ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনসহ আরো পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে আট সদস্যের স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। বিগত ১৯ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ সুপারিশমালা হস্তান্তর করেন এবং রাষ্ট্র সংস্কারে দ্বিতীয় ধাপে গঠিত প্রাথমিক সুপারিশসংবলিত এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সংস্কার প্রতিবেদনে কি আছে _
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। ঐতিহাসিকদের মতে, ভারতীয় উপমহাদেশে গণতন্ত্রের সূচনা স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিয়ে হয়েছিল, যেখানে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।পাকিস্তান আমলে করা জেনারেল আইয়ুব খান প্রবর্তিত রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার আদলে দেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে ওঠে।। যদি বর্তমানে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ সংকুচিত করা হয়, তাহলে এটি শুধু স্থানীয় পর্যায়ের শাসন ব্যবস্থাকেই দুর্বল করবে না, বরং সামগ্রিক গণতন্ত্রের পথেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ প্রস্তাব গুলোর মধ্যে রয়েছে এক: গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নতুন পদ্ধতির অধীনে নিম্নলিখিত তিনটি নতুন পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে: (ক) বর্তমানে, ১৯৬০-এর দশকের (পাকিস্তান আমলের) জেনারেল আইয়ুব খান প্রবর্তিত রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার আদলের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংসদীয় পদ্ধতির আদলে পুনর্বিন্যস্ত করা হবে। (খ) তিনটি পৃথক আইনের বদলে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদকে একটি একক আইনের অধীনে আনা হবে। একইভাবে পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোকে ভিন্ন একটি একক আইনের অধীনে আনা হবে। বর্তমানে বিরাজিত পাঁচটি পৃথক আইনের স্থলে সব প্রতিষ্ঠানকে দুটি মৌলিক আইনের অধীনে আনা যেতে পারে। (গ) নতুন আইনের অধীনে একই তফসিলে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির অধীনে আনার। এ নির্বাচন হবে সরকার ও প্রার্থী উভয়ের দিক থেকে ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী;দুই জাতীয় সংসদে যেমন নির্বাচিত সংসদ সদস্য থাকেন সব সংসদীয় কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু, গ্রাম ও নগর নির্বিশেষে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সদস্য বা কাউন্সিলররা হবেন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রধান নিয়ামক। গ্রাম-নগর নির্বিশেষে প্রতিটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সংগঠন কাঠামো দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত থাকবে; যেমন বিধানিক অংশ এবং দুই. নির্বাহী অংশ; তিন: বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া সারা দেশে স্থানীয় সরকারের পাঁচটি মৌলিক আইন রয়েছে, এগুলো হলো ইউনিয়ন পরিষদ আইন, উপজেলা পরিষদ আইন, জেলা পরিষদ আইন, পৌরসভা আইন ও সিটি করপোরেশন আইন। আইনগুলো ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ কাঠামো অসামঞ্জস্যপূর্ণ। গ্রামীণ স্থানীয় সরকারের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে তিনটি পৃথক আইনের বদলে একটি একক আইন ও নগর স্থানীয় সরকারের দুটি প্রতিষ্ঠান যথা পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনকে আরেকটি একক আইনের অধীনে এনে কাঠামোগত সামঞ্জস্য বিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে; চার: ‘এমন দুটি আইন করা হলে ওই আইনের ক্ষমতাবলে পাঁচটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো হবে একই ধাঁচের সংসদীয় পদ্ধতির। ফলে দেশের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তথা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানে পাঁচ বছরে মাত্র একবার সর্বোচ্চ দেড়-দুই মাস সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। এতে নির্বাচন ব্যবস্থাটিও ব্যয় সাশ্রয়ী ও সময় সাশ্রয়ী হবে।’
প্রস্তাবের পাশাপাশি সংস্কারে কমিশন বেশ কিছু সুপারিশ করেছে যা বিশ্লেষনের দাবি রাখে। যেমন এক : বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ সদস্য, নারী সদস্য ও চেয়ারম্যান প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হলেও উপজেলা চেয়ারম্যান, সাধারণ আসনের ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী আসনের ভিন্ন পদধারী তিনজন একই আকারের নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত হন। আবার জাতীয় সংসদ সদস্যেরও নির্বাচনী এলাকা প্রায় ক্ষেত্রে অভিন্ন। এ চার প্রতিনিধির মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত তাই অনিবার্য হয়ে ওঠে বলে মনে করছে সংস্কার কমিশন। সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘এখানে নির্বাচন ব্যবস্থা ও এখতিয়ারের ক্ষেত্র পরিবর্তন প্রয়োজন। অন্যদিকে জেলা পরিষদে জনগণের ভোট দেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। আকার ও ভোটার সংখ্যা বিবেচনায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন প্রায় অসম্ভব। সেক্ষেত্রে ওয়ার্ড সদস্যদের সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বর্তমানে জেলা ও উপজেলায় কোনো ওয়ার্ড নেই। উপজেলায় নারী সদস্য নির্বাচনের বিধান থাকলেও তা অকার্যকর। তাই ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় প্রত্যক্ষ ভোটে ওয়ার্ড সদস্য নির্বাচনের বিধান প্রস্তাব করা হলো; দুই : স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীর প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে সুপারিশ হলো, ‘বাংলাদেশের সংবিধান নারীকে প্রজাতন্ত্রের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মূল ধারায় নিয়ে আসার বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছে। সংবিধানের ২৮(২) ধারায় বলা হয়েছে, নারীরা রাষ্ট্র ও জনজীবনের সব ক্ষেত্রে পুরুষের সমান অধিকার ভোগ করবে। ধারা ২৮(৪) অনুযায়ী রাষ্ট্র নারীদের, শিশুদের বা সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করবে। এ প্রস্তাবে বিদ্যমান সংরক্ষিত নারী আসন পদ্ধতি পরিবর্তন করে পুরো পরিষদের এক-তৃতীয়াংশ ওয়ার্ড (একক অসন) ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে পুনর্গঠন করা যেতে পারে। প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় প্রতিটি পরিষদে ও কাউন্সিলে মোট ওয়ার্ডের এক-তৃতীয়াংশ প্রতি নির্বাচনে নারীদের জন্য সংরক্ষিত করা হবে। প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকারের নতুন কাঠামো অনুযায়ী সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরা পদাধিকারবলে চেয়ার ও মেয়র কাউন্সিলের নির্বাহী পরিষদের এক-তৃতীয়াংশ সদস্যপদ লাভ করবেন; তিন:’ স্থনীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক (দলীয় প্রতীক) ব্যবহার না করার সুপারিশও করা হয়েছে। কমিশনের মতে, দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভোটারদের পাশাপাশি প্রশাসনও রাজনৈতিক প্রভাবের শিকার হয়, যা উন্নয়ন ও জনসেবামূলক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে দলীয় রাজনীতি থেকে মুক্ত রেখে শুধু স্থানীয় উন্নয়ন ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা প্রয়োজন, যাতে জনগণের সেবা কার্যক্রম রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত থেকে কার্যকরভাবে পরিচালিত হতে পারে।
চার : নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি একটি সংস্কার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যেখানে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ দেয়া হয়েছে। যেমন জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করা উচিত, যাতে স্থানীয় প্রশাসন কার্যকরভাবে গঠন হতে পারে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে;পন্চম: তাদের মতে, আগে জাতীয় নির্বাচন হওয়া জরুরি, যাতে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তার তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিচালিত হতে পারে। অন্যদিকে কিছু রাজনৈতিক দল, মনে করছে যে বাংলাদেশে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া ভোটের সঠিক প্রতিফলন অতীতে খুব বেশি দেখা যায়নি। তাদের যুক্তি হলো, প্রথমে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে একটি কার্যকর ও শক্তিশালী স্থানীয় প্রশাসন গঠন করা সম্ভব হবে, যা পরবর্তী সময়ে একটি অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের জন্য ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। পাশাপাশি এটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কতটা বাস্তবায়নযোগ্য তা যাচাই করার ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে; ষষ্টত: অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন একই দিনে আয়োজন করা হলে বেশকিছু সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। প্রথমত, এতে নির্বাচনী ব্যয় কমানো সম্ভব হবে। কারণ প্রশাসনিক, লজিস্টিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা একসঙ্গে পরিচালনা করা গেলে সময় ও শ্রম সাশ্রয় হবে। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলো একই সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারবে, যা তাদের প্রচারণা ও সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরো কার্যকর করতে পারে। তৃতীয়ত, নির্বাচন কমিশনের জন্যও এটি সুবিধাজনক হতে পারে। কারণ আলাদাভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে হলে বারবার নতুনভাবে নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্র পরিচালনা ও ব্যালট সরবরাহের প্রয়োজন হয়। তবে এ পরিকল্পনার কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রথমত, জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব স্থানীয় নির্বাচনে পড়তে পারে, যা ছোট ও স্বাধীন প্রার্থীদের জন্য প্রতিযোগিতা কঠিন করে তুলতে পারে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশনের ওপর দায়িত্ব বহুগুণ বেড়ে যাবে, কারণ স্থানীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ভোট গণনা ও ফলাফল প্রকাশ জটিল হয়ে উঠতে পারে। তৃতীয়ত, নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ দ্বিগুণ হবে। কারণ দুটি স্তরের নির্বাচন একসঙ্গে হলে সহিংসতার আশঙ্কা বাড়তে পারে।এ কারণে নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যদি প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে নিশ্চিত করা যায়, তবে একই দিনে নির্বাচন আয়োজন সামগ্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরো স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করতে পারে; সপ্তমত: মেয়র ও চেয়ারম্যান সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হয়ে মেম্বারদের ভোটে নির্বাচিত হবেন। এছাড়া এ পদগুলোয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতা নির্ধারণের প্রস্তাবও করা হয়েছে, যার মধ্যে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে স্বল্পশিক্ষিত বা নিরক্ষর ব্যক্তিরা এসব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। বর্তমানে দলীয় প্রভাব ও পেশিশক্তির কারণে শিক্ষিত ও দক্ষ ব্যক্তিরা মেয়র বা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হতে পারছেন না। ফলে সমাজের গুণী ও যোগ্য ব্যক্তিরা নির্বাচন থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন, যেখানে অল্পশিক্ষিত বা নিরক্ষর ব্যক্তিরা রাজনৈতিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে নির্বাচিত হচ্ছেন। প্রশাসনের মতে, যদি মেম্বারদের ভোটের মাধ্যমে মেয়র ও চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়, তাহলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় শিক্ষিত ও দক্ষ ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হব। তবে এ ব্যবস্থায় কিছু সঙ্কট তৈরী হতে পারে। সংবিধানে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এটি সংবিধানের মৌলিক চেতনাবিরোধী হতে পারে। আবার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সরাসরি জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকেন। কিন্তু যদি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের মাধ্যমে উচ্চপদস্থ জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন, তাহলে তাদের মূল লক্ষ্য জনগণের সেবা করা না হয়ে বরং যারা তাদের নির্বাচিত করেছেন, তাদের সন্তুষ্ট রাখা। এ ধরনের পরিবর্তনের ফলে জনগণের সাংবিধানিক ভোটাধিকার হরণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নাগরিকদের অধিকার রয়েছে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে মেয়র বা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করার। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পৃষ্ঠপোষকতামূলক রাজনীতির প্রসার ঘটবে।
একটি গণতান্ত্রিক ও কার্যকর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে এর নীতিগত স্বচ্ছতা, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। স্থানীয় সরকার যদি কার্যকরভাবে পরিচালিত হয়, তাহলে এটি শুধু তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটাবে না, বরং সামগ্রিক শাসন ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই অন্তর্বর্তী সরকার এই সকল প্রস্তাব ও সুপারিশমালা বাস্তবায়নে আগ্রঞী হবেন এই প্রত্যাশা রইল।
লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি), সাবেক পরিচালক, বার্ড (কুমিল্লা), সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি
সারাবাংলা/এএসজি
ড. মিহির কুমার রায় মুক্তমত সংস্কার কমিশন স্থানীয় সরকার নির্বাচন