শক্তের ভক্ত নরমের যম
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:১১
ছাড়া ক্ষেতে মাতব্বরের গরু এসে ঘাস খেলে সেটা হয় ছাড়া মালিকের সৌভাগ্যের বিষয় আর রহমান চাষির গরু এসে ঘাস খেলেই যত দোষ। আমাদের দেশ সমাজ এভাবেই চলে আসছে। এটাই একটা সামাজিক হিপোক্রেসি! এখানে চাইলেই হিরো আলমকে ডেকে নিয়ে শাসিয়ে দেওয়া যায়। বলে দেওয়া যায় ‘এই গান আর গাইতে পারবিনা, এই গানে সুর দিতে পারবিনা!’ নামের সাথে হিরো লাগাতে পারবিনা। এছাড়াও তাকে এরকম আরও অনেক জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা যায়। তাই বলে সমাজে যারা টাকার জোরে নাম অর্জন করেছন অথচ কোনো খ্যাতি নেই এমন কেউ বছর বছর বেসুরা গলায় গান গেয়ে মানুষের ঘুম হারাম করে দিলেও তাকে কিছু বলা যাবেনা। তাকে জবাবদিহিতা করা যাবেনা। কতিপয় লোকেরা নাম আর টাকার জোরে ঠিকই শিল্পকে নিজের মতো করে বিকৃত করে যান, তখন তাদের বলার মতো কেউ থাকেনা। থাকলেও বলা যাবেনা, কেননা সমাজে তাদের টাকার একটা অভিযাত্র ক্ষমতা আছে, অবস্থান আছে। এইগুলা যারা বিচার করে বেরান তাদেরকেই বলা আজকের প্রশ্ন, শক্তের ভক্ত নরমের যম। কাউকে একটু নরম পেলেই তার উপরে চড়াও হওয়া এক শ্রেনির মানুষের রোগ। এটাকে আমি রোগ বলেই আখ্যা দিব। কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ এর শেষ উপন্যাস ‘দেয়াল’ সেখানে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর এক আলোচনায় উঠে আসে তিনি বাংলাদেশের জনগণকে বলেছিলেন ‘ বাংলাদেশ শক্তের ভক্ত’ তখন জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ছিলেন। জিয়াউর রহমান ঠিকই ধারণা করেছিলেন। বাংলাদেশ যদি শক্তের ভক্ত হয় তারমানে নরমের যম। কেননা মানুষের একটা স্বভাবগত দোষ একটার রাগ বা ঘোষা অন্যটার উপর প্রয়োগ করে থাকে।
রাজনীতিতেও দেখলাম এই রোগের বিদ্যমান রূপ। এরা চাইলেই ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে বস্তির ছেলে অথবা টুকাই নুরু বলে গালি দিতে পারেন। কেননা নুরুর বাবা দাদা কেউ কোনো মন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি না। সে কোনো দেশের স্থপতির নাতিও নয়। নুরু সাধারণ ঘর থেকে উঠে আসা ছেলে। এইদেশে সাধারণ ঘর থেকে উঠে এসে নেতৃত্ব দেওয়া বহুল কঠিন বেপার, সে যতই যোগ্য হোক না কেন। অথচ মন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির ছেলে নাতিরা রাজনীতি বুঝোক আর নাই বুঝোক যোগ্যতা থাকুক আর নাই থাকুক তারা চাইলে ঠিকই নেতৃত্বে আসতে পারেন। আর যেহুতু তাদের একটা শক্ত অবস্থান আছে সুতরাং তারা ভুল করলে বা ভুলভাল বক্তব্যে দিলেও তাদেরকে কেউ কিছু বলবে না। বরং আরও বাহবা দিবে! কেননা বাংলাদেশের জনগণ শক্তের বক্ত ঠিক তেমনি বিপরীতভাবে নরমের জম। নরম কাউকে পেলে তারা তখন আর ছেরে কথা বলবেনা। এইযে যেমন মন্ত্রীরা উল্টা পাল্টা বক্তব্য দিচ্ছেন এইজন্য তাদের কয়জনকে জবাবদিহিতা করা হচ্ছে। কাউকেই না। উনারা উনাদের মতো একের পর এক বিব্রতকর ও উল্টা পাল্টা বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছেন, যাবেনও।
তারপর রাস্তায় রিকশাওয়ালা মামা ভুল করলে খুব করে কথা শুনিয়ে দেওয়া যায়, গায়েও হাত দেওয়া যায় ! তাই বলে এসি চালিত গাড়ির কোনো মালিক যদি কোনো ভুল করেন তাকে এতো সহজে কিছু বলা যাবেনা। কেননা তাদের গাড়িরও একটা দাম আছে, পোশাকের দাম আছে। একটু নরম বা দুর্বল জায়গা পেলেই তার সাথে যা তা ব্যবহার করা যায়। সেখানে হিতের বিপরীত হওয়ার ঘটনা কম, কেননা সে দুর্বল। তাই তার উপর চড়াও হতে হবে। অথচ শক্তিশালীদের ভুলের জায়গা গুলোতে জবাবদিহিতা করাতে পারলে দুর্বল জায়গা গুলো এমনিই ঠিক হয়ে যেতো। বিপরীতে এই এক শ্রেনি শক্তিশালীদের চাটুকারিতা করবেই। শক্তিশালীদের ভুল যেন ভুল’ই না। এটাও মানুষের অন্ধত্বের পরিচয় বহন করে। তবে এগুলো যখন শিক্ষিত শ্রেনির মানুষের মাঝে দেখা যায় তখন সেটা জাতির জন্য দুঃখজনক।
নরম পেলে খামচে ধর,
শক্ত হলে মশাই মশাই,
শক্তের ভক্ত হয়ে
নরমের সঙ্গে যা খুশি করছো তাই!
ব্যক্তি থেকে রাজনীতি, রাজনীতি থেকে সমাজ সব জায়গায়’ই শক্তের ভক্ত নরমের জম এই নীতি বিদ্যমান। আমাদের কতিপয় সমাজ গুলোও চলছে এমনিই গরিবের ও দুর্বলেরে শাষন শোষণ করে। সমাজে কোনো ক্ষমতাবান লোকের অপরাধের বিরুদ্ধে মুখ তোলে দাড়ানোর সাহস কেউ দেখাবে না, তবে কোনো দুর্বলের যদি কোনো একটা খুত পেয়ে যায় তখন তাকে আর ছেড়ে কথা বলবেনা, পারলে তো ছিড়ে খেতে পারলে সেটাই করতো। এইযে যেমন আমাদের দেশে অর্থ পাচার হচ্ছে, দুর্নীতি হচ্ছে এগুলো কিন্তু ক্ষমতাবান লোকেরাই করছে। তাদেরকে কিন্তু সরাসরি জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা এতো সহজ নয়। কেননা এই দেশ এভাবেই চলে আসছে! চলবেও…
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এএসজি