ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ঝুলিতে আরো একটা নোবেল!
১৭ মার্চ ২০২৫ ১৭:৪৫ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫ ১৭:৪৬
ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে একজন বিশ্ব অর্থনীতিবিদ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে জানেন সবাই। মস্ত বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তিনি বক্তব্য প্রদান করে থাকেন। বাংলাদেশের উত্তপ্ত ও উত্তেজিত মুহূর্তে তিনি এসে হাল ধরেছেন। সাবেক সরকার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতনের পরে তিনি দেশের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। আগে থেকেই দেশসহ পুরো বসুন্ধরার মঞ্চে উনার হাঁকডাক রয়েছে সীমাহীন। তিনি অরাজকতায় পরিপূর্ণ দেশকে সুস্থ সবল করতে অক্লান্ত কাজ করে যাচ্ছেন। সেই সাথে সফলতাও দৃশ্যমান হচ্ছে। সমস্ত জায়গায় প্রসংশা ও বাহবা পাচ্ছেন বিশ্বের দরবারে।
সম্প্রতি তিনি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে বাংলাদেশে এনে আরো একধাপ এগিয়ে গেলেন। বিশ্ব মিডিয়ায় তুলকালাম দেখালেন মহাসচিবকে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিষয়ে সমাধান করতে মহাসচিব আগ্রহ প্রকাশ করেছেন নিজ মনে। রোহিঙ্গাদের সামনে মঞ্চে সুন্দর সুললিত বক্তৃতা দিয়ে সকলের মন জয় করে নিয়েছেন। যদি এই আন্তর্জাতিক সমস্যার উত্তর খুঁজে পায় এবং রোহিঙ্গা সংকট দূর করা যায় তাহলে ভাবা যায় তিনি আবারো নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হবেন।
আমরা পৃথিবীতে কয়েক মুহূর্তে দেখেছি নোবেল পুরষ্কারের মত বিশ্বমানের পুরস্কার ডাবল অর্জন করে রেকর্ড করতে। আমরা খুবই আগ্রহের সাথে পুরো বাংলা কমিউনিটি আশা পোষণ করছি তিনি আবারো আমাদের বিশ্ব পুরস্কার এনে দিবেন। উত্তপ্ত পরিস্থিতি, উত্তেজিত জনতা ও এ্যালেজ-গ্যালেজ ভূখণ্ডকে শান্ত করার জন্য এবং রোহিঙ্গা সমস্যা নিরাময় করার জন্য সেই বিশ্ব নন্দিত মানুষদের পাশে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নাম বসতে পারে। ম্যারি ক্যুরি, জন বারডিন, ফ্রেডরিক স্যাঙ্গার, লাইনাস পলিং এবং কার্ল ব্যারি শার্পলেসের পাশে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস আসতে পারেন। যারা ইতিমধ্যেই ইতিহাসের চিত্রে দুই বার করে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন।
যদিও উনার ঝুলিতে যা পুরস্কার ও সম্মান রয়েছে তা পৃথিবীতে বিরল! পৃথিবীতে হাতেগোনা কয়েকজন ব্যাক্তির মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনুস একজন যিনি একাধারে নোবেল শান্তি পুরস্কার (২০০৬), প্রেসিডেন্টিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম (২০০৯) এবং কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল (২০১০) পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এছাড়াও তিনি আরো বহুদেশীয় আন্তর্জাতিক পুরস্কার সম্মানের সাথে অর্জন করেছেন। উনার পুরস্কার ও সম্মাননার সংখ্যা শতাধিক, যা তার মানবকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতির সাক্ষ্য বহন করে। তিনি প্রায় বিশ্বের ৫০টির বেশি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন সারাবিশ্বের নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
দেশের ক্রান্তিলগ্নে, হযবরল পরিস্থিতিতে এবং চারদিকে হাহাকার সময়ে তিনি যেভাবে দেশকে আগলে রেখে সামনে হাঁটছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। জগতের আনাচে-কানাচে এখন আবারো উনাকে নিয়ে চর্চা করা হচ্ছে। উনি দেশকে গড়ে তুলে একটি সুন্দর ভূখণ্ডে পরিণত করবেন এই আকাঙ্খা সবাই রাখে। যথেষ্ট আস্থা এবং বিশ্বাস রয়েছে এই বিশ্বমানবের উপর। সবাই তার বুদ্ধি পূর্ণ কাজ ও নিশ্চুপে কাজ করে যাওয়ার জন্য বাহবা দিচ্ছেন। দেশকে সুন্দর ও শান্তিময় করতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দেশের এই প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে চলছেন। বিশ্বের নামীদামী ব্যাক্তিদের এনে কথা বলছেন। বড় বড় দেশে গিয়ে আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা ও স্বপ্ন পৌঁছে দিচ্ছেন। আশা করি দেশ বিশ্ব মঞ্চে মাথা তুলে দাঁড়াবে। সেই সাথে আমাদের ড. মুহাম্মদ ইউনুস আবারো শান্তিতে নোবেল অর্জন করবেন।
এছাড়া ড. মুহাম্মদ ইউনুস ‘থিউরি অব থ্রি জিরোস’ (Theory of Three Zeros) বা ‘৩ শূন্যের পৃথিবী’ ধারণার মাধ্যমে একটি ন্যায়বিচারপূর্ণ, টেকসই এবং মানবিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার রূপরেখা তুলে ধরেছেন পৃথিবীতে। এই তত্ত্বের জন্য ও তিনি পৃথিবীতে সমাদৃত। ১) শূন্য দারিদ্র্য ২) শূন্য বেকারত্ব এবং ৩) শূন্য কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে তার থিউরি অব থ্রি জিরোসের মূল আকর্ষণ এবং বিষয়বস্তু। তিনি বিশ্বাস করেন, বর্তমান মূলধারার পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বৈষম্য ও পরিবেশগত ধ্বংসের জন্য দায়ী। তাই তিনি ‘সামাজিক ব্যবসা’ ধারণার মাধ্যমে একটি বিকল্প অর্থনৈতিক কাঠামো তুলে ধরেছেন। যার লক্ষ্য হবে সমাজ ও মানুষের কল্যাণ ও মুনাফা নয়। ড. মুহাম্মদ ইউনুস পৃথিবীতে একজনই আছেন।
লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম
সারাবাংলা/এএসজি