ঢাকা শহরের যানজট থেকে মুক্তি মিলবে কবে?
২০ মার্চ ২০২৫ ১৯:৩৫
ঢাকা শহরে প্রতিদিনই মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। সে তুলনায় বাড়ছে না সড়কের পরিধি। অপ্রতুল পরিধির সঙ্গে যাত্রী অসচেতনতা ও পরিবহন চালক-শ্রমিকদের বেপরোয়া আচরণ যানজটসহ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে রাজধানীর সড়কগুলোতে। উপরন্তু রয়েছে দখল, অব্যবস্থাপনা এবং ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা- এসব কিছুই সড়কে যানজটের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকার পরিবর্তনের পর রাজধানীতে যানজট পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানজটমুক্ত জনবান্ধব সড়কের জন্য বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবস্থায় আনতে হবে। ছোট গাড়ির নিবন্ধন নিরুৎসাহিত করতে হবে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর যেন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারায় ঢাকার সড়ক। রাজধানী দখল করে নেয় অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে ঢাকায় ঢুকে পড়ে হাজার হাজার এই রিকশা, যা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে পঙ্গু করে দেয়। পরিবহন চালক ও পথচারীরা মানছেন না ট্রাফিক আইন। দোষীদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন শত শত মামলা হলেও সচেতনতার অভাবে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি যেন নিত্যদিনের ঘটনা।
বিশৃঙ্খলার আরেক নাম ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা
রাজধানীসহ সারা দেশেই এখন সড়ক-মহাসড়কসহ অলিগলিতে এক আতঙ্কের নাম ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। কোনো ধরনের নিয়মের তোয়াক্কা না করে নির্বিঘ্নে প্রধান প্রধান সড়কে বড় যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে এই তিন চাকার যানগুলো। কয়েক মাস আগেও প্রধান সড়কে খুব বেশি এগুলো দেখা যেত না। কিন্তু এখন বীরদর্পে যাত্রী নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এসব অবৈধ রিকশা। উচ্চ আদালত থেকে এসব রিকশা বন্ধের নির্দেশনা দেওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চলে। কিন্তু মব সৃষ্টি করে এসব রিকশাচালকরা রাজধানীজুড়ে তৈরি করে অরাজকতা। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে যেন আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষজ্ঞরা প্রধান সড়ক থেকে এসব অটোরিকশা বন্ধের পরামর্শ দিলেও তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না কোনোভাবেই।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য মোতাবেক, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নিতে হবে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তবে শিগগিরই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে প্রধান সড়ক থেকে সরাতে হবে। সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলোকেও আনতে হবে নিয়মতান্ত্রিক শৃঙ্খলার মধ্যে।
বাস-বে’তে থামে না বাস
রাস্তায় অনাকাক্সিক্ষত যানজট রোধে এবং গণপরিবহনে নিরাপদে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য রাজধানীতে বেশ কিছু বাস-বে থাকলেও সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে না। নির্ধারিত স্থান বাস-বে পড়ে থাকে খালি অবস্থায়। সেখানে কোনো বাস থামে না। রাস্তার মাঝখানেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঠেলাঠেলি করেই ওঠা-নামা করে যাত্রীরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মোড় ও সিগন্যাল ছাড়াও অন্যান্য স্থানেও গণপরিবহনের একই চিত্র লক্ষ করা যায়।
সরেজমিন দেখা যায়, বিমানবন্দর সড়কের বনানী সিগন্যালের দক্ষিণ পাশে ফুটওভার ব্রিজের কাছেই রয়েছে সুন্দর পরিপাটি বাস-বে এবং যাত্রী ছাউনি। কিন্তু সেখানে থামে না কোনো বাস। সিগন্যালের উত্তর অংশ থেকেই যাত্রী ওঠা-নামা করায় এই সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন গণপরিবহন। এ ছাড়াও চলন্ত অবস্থায়ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসে ওঠা-নামা করে যাত্রীরা। এতে বিঘ্ন ঘটে স্বাভাবিক যান চলাচলেও। নিয়ম না মেনে এভাবে যানবাহন চলাচল এবং যাত্রী ওঠা-নামার ফলে প্রায়ই ঘটছে মারাত্মক দুর্ঘটনা, ঘটছে প্রাণহানিও। অনেক বাস-বে দখলে নিয়ে করা হয়েছে অফিস। গুলিস্তানে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাস-বে আগে শ্রমিক লীগের দখলে থাকলেও এখন তা দখলে নিয়েছে শ্রমিক দল।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ‘ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট’ (কেস) প্রকল্পের আওতায় দুই সিটিতে যাত্রী ছাউনি সংস্কার এবং কোথাও নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। বাস থামানোর নির্দিষ্ট বে’ও করে দেওয়া হয়েছে।
এসব বাস-বে ব্যবহার না করা নিয়ে পুলিশ সার্জেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যাত্রীরা যদি বাস-বে’তে বাসের জন্য অপেক্ষা করে তা হলে বাসগুলো নির্ধারিত স্থানে গিয়ে থামতে বাধ্য হয়। এ ক্ষেত্রে যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে।
অব্যবহৃত ফুটওভার ব্রিজ
সরকার লাখ লাখ টাকা খরচ করে রাজধানীজুড়ে ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করলেও সেগুলো ব্যবহার করছে না নগরবাসী। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। কয়েক বছর আগে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য করতে বসে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু সেই ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেলে আবারও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে ফুটওভার ব্রিজগুলো। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের অনীহার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণও রয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর অনেক ওভার ব্রিজেরই ছাউনি নেই, সিঁড়িগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরা। বখাটে ও মাদকসেবীদের আড্ডাও দিতে দেখা যায় সেগুলোতে। আবার অনেক মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে লোকজন সেখানে রাতযাপন করে। অনেক ওভার ব্রিজের সিঁড়ি ঘেঁষে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী দোকানপাট। ফলে ক্রেতাদের ভিড় ঠেলে ব্রিজে উঠতে চায় না অনেকে। এ ছাড়া ওভার ব্রিজের চার পাশের রাস্তা ও ফুটপাথ হকারদের দখলে যাওয়ায় ব্রিজে ওঠার সিঁড়িও খুঁজে পেতে অনেক সময় বেগ পেতে হয়।
লাল-সবুজ বাতিতেই আস্থা
ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণে লাল-সবুজ বাতির ওপরই আস্থা সংশ্লিষ্টদের। এ লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি সড়কে অব্যবস্থাপনা রোধে ট্রাফিক পুলিশের এনফোর্সমেন্ট, অবৈধ যানবাহন উচ্ছেদ, দখলমুক্ত ইন্টারসেকশন (সিগন্যাল মোড়), নির্দিষ্ট বাস স্টপেজে যাত্রী ওঠা-নামাসহ বিশেষজ্ঞদের ছয়টি সুপারিশ বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। বিশেষ করে বুয়েটের দুজন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ট্রাফিক পুলিশ, সিটি করপোরেশন ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সমন্বয়ে যানজট নিরসনে কাজ করছে সরকার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাল-সবুজ বাতির মাধ্যমে ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করা হলে ট্রাফিক পুলিশ তাদের মূল কাজ করার সময় পাবেন। সনাতন পদ্ধতিতে সিগন্যাল ছাড়া ও বন্ধ করা ট্রাফিক পুলিশের কাজ নয়। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং চালক ও পথচারীদের সড়ক বিধি মেনে চলাচলের ওপর জোর দেওয়া তাদের কাজ। অথচ হাত দিয়ে রাস্তায় নেমে এসে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তারা সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করছেন।
সবাই ভুলে গেছে জেব্রা ক্রসিং
পথচারীদের নিরাপদে সড়ক পারাপারের জন্য রাজধানীর অধিকাংশ সড়কেই আছে জেব্রা ক্রসিং। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা ব্যবহার করছে না। দীর্ঘ অনভ্যস্ততায় পথচারীরা ভুলেই গেছে জেব্রা ক্রসিংয়ের সঠিক ব্যবহার। যানবাহনের ফাঁকে ফাঁকে ঝুঁকি নিয়েই সড়ক পার হন তারা। অন্যদিকে চালকরাও জেব্রা ক্রসিংয়ে গাড়ি থামাতে চান না। পথচারী পার হচ্ছে দেখেও দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে যেতে চান তারা। চালকদের এ প্রবণতারই নির্মম বলি হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।
রাজধানীর জেব্রা ক্রসিংগুলো যথাযথ ব্যবহার করা গেলে সড়কে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এর আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থী আন্দোলনের পর জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারে কিছুটা নজর দেওয়া হয়েছিল। জেব্রা ক্রসিংগুলো রং করা হয়েছিল। নতুন করে বিভিন্ন জায়গায় জেব্রা ক্রসিং চিহ্নিত করা হয় সে সময়। প্রত্যাশা ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও যাত্রীদের সচেতনতায় জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারের সুফল মিলবে, রাস্তা পারাপারে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। কিন্তু আদতে তা আর হয়নি।
ফুটপাথ দখলে দল বদল
রাজধানীর সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অন্যতম একটি কারণ হিসেবে দেখা হয় ফুটপাথ ও রাস্তা দখলকে। গত ৫ আগস্টের পর এ মাত্রা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফুটপাথ ও রাস্তা দখলের অন্যতম কারণ হচ্ছে চাঁদাবাজি। বিগত সরকার বিদায় নিলেও বর্তমানে নতুন নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় আগের চেয়েও বেশি করে দখল করা হচ্ছে ফুটপাথ ও রাস্তা। প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার চাঁদা ওঠানো হচ্ছে এসব ফুটপাথ থেকে। প্রশাসনেরও একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা জড়িত এ অবৈধ বাণিজ্যে। ফুটপাথ দখলে থাকায় পথচারীরা প্রধান সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার রাস্তা দখল করে অবৈধ দোকান বসানোতে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে রাস্তার পরিসর। এর পরিণতিতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।
সিএনজি অটোরিকশার লাগামহীন দৌরাত্ম্য
দীর্ঘদিনেও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্তি মেলেনি নগরবাসীর। মিটারের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা আদায় করলে জেল-জরিমানার নিয়ম করে গত ১০ ফেব্রুয়ারি জরিমানা ও কারাদণ্ডের আদেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজধানীজুড়ে মব সৃষ্টি করেন চালকরা। এক পর্যায়ে তাদের অন্যায় দাবির কাছে হার মানতে বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে বিআরটিএ। এরপর থেকে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরা।
মুখ থুবড়ে পড়েছে বাস রুট রেশনালাইজেশন
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির উদ্যোগে এখন চাপের মুখে ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ প্রকল্প। কাউন্টারভিত্তিক বাস বন্ধ ও ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করেছেন চালক ও শ্রমিকরা। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেউই কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে। সরকারি উদ্যোগ এড়িয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাস চালু করেছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। রাজধানীর নগর পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিভিন্ন রুটে বিভিন্ন রঙের বাস নির্ধারণ করে চালু করা হয় ই-টিকেটিং পদ্ধতি। কিন্তু সেই পদ্ধতিও মানছেন না চালক-মালিকরা। সৃষ্টি করা হচ্ছে বাসের কৃত্রিম সংকট।
চালক-মালিকদের দাবি, এতে তারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। যারা চুক্তিভিত্তিক বাস চালাতেন এবং অবৈধভাবে আয় করতেন, তাদের বিরুদ্ধেই এই কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগ আছে। ঢাকার আব্দুল্লাহপুর হয়ে গাজীপুর রুটে চলাচল করা বাস গোলাপি রং করে ই-টিকেটিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। প্রাথমিকভাবে ২১ কোম্পানির ২ হাজার ৬১০ বাস গোলাপি রঙের ই-টিকেটিংয়ের আওতাভুক্ত করা হয়। এরপর থেকেই মূলত রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহনের কৃত্রিম সংকট দেখা গেছে।
রুটভিত্তিক বিভিন্ন রঙের বাস চালু করে সেগুলোতে যে ই-টিকেটিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এগুলো করে যাত্রীদের সঙ্গে তামাশা করা হচ্ছে। এসব নারকীয় বাস থেকে যাত্রীদের মুক্তি দিতে নতুন বাস যুক্ত করার দাবি ।
পরিসংখ্যান
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে সড়কে ৬ হাজার ৪৭৪টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হন ৬ হাজার ৫৯৯ জন, আহত হন ১১ হাজার ৬১ জন। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ জন মানুষের প্রাণ ঝরেছে সড়কে। আর গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৯৬টি। নিহত ৫৭৮ এবং আহত কমপক্ষে ১ হাজার ৩২৭ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৭৩, শিশু ৮৭। ২৪১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২২৭ জন, যা মোট নিহতের ৩৯.২৭ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪০.৪৩ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১১৪ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৮২ জন, অর্থাৎ ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।
এসব দুর্ঘটনায় নিহতের বড় অংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার। একই সঙ্গে বাস-ট্রাক-প্রাইভেটকারের ত্রিমুখী সংঘর্ষ, অটোরিকশা ও ইজিবাইক দুর্ঘটনাও প্রতিদিন প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। সড়ক ব্যবস্থাপনায় চরম দুর্বলতা আর নানাবিধ ত্রুটি দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে সামনে এসেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য মতে, প্রতি বছর রাজধানীতে গড়ে ২ হাজার দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রতি বছর গড়ে মৃত্যু হচ্ছে ৫ শতাধিক।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইআরআই) এর তথ্য অনুযায়ী, সব ভালো ব্যবস্থা দিনশেষে কাজ করবে না যদি দুটি বিষয় আমরা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হই, তার একটি হলো সড়ক ব্যবহারকারীদের শৃঙ্খলা আর অন্যটি হলো বিশৃঙ্খলা করেও পার পেয়ে যাওয়ার মানসিকতা। টাকা খরচ করে ভালো রাস্তা তৈরি করা যায়, টাকা খরচ করে দামি গাড়ি রাতারাতি কিনে ফেলা যায়; কিন্তু টাকা খরচ করেই এই রাস্তা যিনি ব্যবহার করছেন, এই গাড়ি যিনি চালাচ্ছেন তার আচরণ পরিবর্তন করা যায় না। আচরণ পরিবর্তন দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। প্রথমত সড়কে কী করতে হবে, কী করা যাবে না, কেন করা যাবে না, করলে ক্ষতি কী আর না করলে লাভ কী এসব বিষয়ে জানা। দ্বিতীয়ত সড়কে গিয়ে সেই জানা বিষয়গুলো ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া।
সড়ক বিশেষজ্ঞের মতে, রাজধানীর সড়কে স্বস্তি ফেরাতে নিতে হবে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ। ইন্টার সেকশনগুলোতে কোনোভাবেই গাড়ি দাঁড় করানো যাবে না। রাস্তায় অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে হবে। দখলমুক্ত রাখতে হবে পার্কিং এরিয়া এবং ফুটপাত। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাস রুট ফ্রাঞ্চাইজি ব্যবস্থায় আনতে হবে। ছোট গাড়ির নিবন্ধন নিরুৎসাহিত করতে হবে। পথচারী পারাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
সারাবাংলা/এএসজি